‘আমরা মরে যাচ্ছি’, গণঅনাহারে বৈশ্বিক নীরবতায় গাজার ধিক্কার
Published: 26th, July 2025 GMT
উপকূলীয় অঞ্চল ঘিরে ইসরায়েলের অবিরাম অবরোধের মধ্যে আরো মানুষ অনাহারে মারা যাওয়ায় গাজা উপত্যকার ফিলিস্তিনিরা সাহায্যের জন্য আকুতি জানাচ্ছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে অনাহারে ভুগে অপুষ্টিজনিত কারণে নতুন করে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।
২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলের গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এ ধরনের মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১২২ জনে, যার মধ্যে অন্তত ৮৩ জনই শিশু।
আরো পড়ুন:
‘আজ তুমি কিছু খেয়েছো?’ গাজায় অনাহার আর টিকে থাকার গল্প
গাজা যুদ্ধে প্রশ্নের মুখে বিবিসির সম্পাদকীয় নীতি
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, “আমরা জরুরিভিত্তিতে দুর্ভিক্ষের অবসান, সব সীমান্তপথ খুলে দেওয়া এবং এখনই শিশুদের জন্য দুধ সরবরাহের অনুমতি দাবি করছি; সঙ্গে প্রতিদিন ৫০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক ও ৫০টি জ্বালানিবাহী ট্রাক প্রবেশের সুযোগ দিতে হবে।”
“আমরা এই গণহত্যার জন্য ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী, যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন, যুক্তরাজ্য, জার্মানি এবং ফ্রান্সসহ অন্যান্য ‘ছায়াযোদ্ধা’ রাষ্ট্র এবং সামগ্রিকভাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সম্পূর্ণ দায়ী মনে করি।”
গাজার দক্ষিণে খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালের সূত্রগুলো শনিবার সকালে আলজাজিরাকে জানায়, ছয় মাস বয়সি এক শিশু অপুষ্টিজনিত জটিলতায় মারা গেছে।
এই সপ্তাহে গাজায় অনাহারে মৃত্যুর সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে, কারণ ইসরায়েল অঞ্চলটিতে কঠোর অবরোধ অব্যাহত রেখেছে, যার ফলে ফিলিস্তিনিদের জন্য খাদ্য, পানি, ওষুধ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
মধ্য গাজার নুসেইরাত এলাকার একজন স্বাধীন সাংবাদিক নুর আল-শানা আলজাজিরাকে বলেছেন, চরম ক্ষুধা গাজা উপত্যকার জীবনের সব দিককে প্রভাবিত করছে।
তিনি বলেন, এখন প্রতিদিন মাত্র এক বেলার খাবার জোগাড় করতেও তাকে লড়াই করতে হচ্ছে, আর তার চারজন আত্মীয় খাদ্যের সন্ধানে গিয়ে নিহত হয়েছেন; তাদের হত্যা করা হয়েছে বারবাড নামে পরিচিত ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত জিএইচএফ পরিচালিত ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছে।
“পৃথিবী শুধু বলছে ‘ফিলিস্তিনকে মুক্ত করো’। আমরা আর কথা চাই না, আমরা সমাধান চাই,” বলেন তিনি।
“আর না, আমরা ক্লান্ত,” কাঁদতে কাঁদতে বলেন আল-শানা। “আমরা দম বন্ধ হয়ে মরছি। আমরা এখানে ধুঁকে ধুঁকে মরছি।”
‘ইচ্ছাকৃত গণঅনাহার’
গাজার বিভিন্ন হাসপাতালের সূত্রগুলো আলজাজিরাকে জানিয়েছে, শুক্রবার ভোর থেকে ইসরায়েলি হামলায় পুরো উপত্যকাজুড়ে অন্তত ৩৮ জন নিহত হয়েছেন।
এর মধ্যে অন্তত ছয়জন ফিলিস্তিনি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র থেকে খাবার সংগ্রহ করার সময় নিহত হন।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ-এর প্রধান ফিলিপ ল্যাজারিনি শুক্রবার জিএইচএফ-এর কঠোর সমালোচনা পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি একে একটি ‘নিষ্ঠুর’ এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রসূত উদ্যোগ বলে অভিহিত করেন, যা ‘জীবন বাঁচানোর চেয়ে বেশি জীবন কেড়ে নিচ্ছে’।
ল্যাজারিনি জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর মজুদ ত্রাণ গাজায় প্রবেশের অনুমতির আহ্বান জানান এবং সতর্ক করে বলেন, গাজা বর্তমানে ‘ইচ্ছাকৃত গণঅনাহারের’ শিকার।
তিনি এক্সে (সাবেক টুইটার) একটি পোস্টে বলেন, “আজ আরো শিশু মারা গেছে, ক্ষুধায় তাদের দেহ কঙ্কালসার। এই দুর্ভিক্ষ শুধু রাজনৈতিক সদিচ্ছার মাধ্যমে রোধ করা সম্ভব।”
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এই সংকটের জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে দায়ী করেছে। তাদের দাবি, ত্রাণবাহী ট্রাকগুলো গাজার ভেতরে রয়েছে কিন্তু জাতিসংঘ ত্রাণ বিতরণে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে।
তবে জাতিসংঘ কর্মকর্তারা এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং বারবার তারা বলেছেন, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ তাদেরকে ত্রাণ বিতরণের জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদন দেয়নি।
জাতিসংঘ এবং অন্যান্য মানবিক সংস্থাগুলো জিএইচএফ পরিচালিত ত্রাণ বিতরণ পরিকল্পনার সঙ্গে কাজ করতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তারা বলছেন, এই পরিকল্পনা মানবিক নীতিমালা- যেমন নিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতা মেনে চলে না।
ঢাকা/রাসেল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র ইসর য় ল ত র ণ ব তরণ অন হ র র জন য ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
পায়রা বন্দরসহ দুই প্রকল্পের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন
পায়রা বন্দরের জন্য সংশ্লিষ্ট পরিসেবাসহ দুটি শিপ টু শোর ক্রেন সরবরাহ এবং নারায়ণগঞ্জের খানপুরে অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার এবং বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পে কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। প্রস্তাব দুটিতে ব্যয় হবে ৪৫০ কোটি ১১ লাখ ১০ হাজার ২৫৪ টাকা।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সচিবালয়ে মন্ত্রি পরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় কমিটির সদস্য ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভা সূত্রে জানা যায়, পায়রা সমুদ্র বন্দরের প্রথম টার্মিনাল এবং আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ (২য় সংশোধিত)’ প্রকল্পের আওতায় সংশ্লিষ্ট পরিসেবাসহ দুটি শিপ টু শোর ক্রেন সরবরাহ এবং স্থাপন কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হলে ৪টি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দাখিল করে। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে (১) এইচপি এবং (২) এনজে, চায়না প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ১৬২ কোটি ২ লাখ ১১ হাজার ৫৬৮ টাকা।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ‘নারায়ণগঞ্জের খানপুরে অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার এবং বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্পের প্যাকেজ নম্বর দুইয়ের পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এ জন্য উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ২টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। দরপত্রের সকল প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে (১) স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স এবং (২) এসএস রহমান ইন্টারন্যানাল লিমিটেড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ২৮৮ কোটি ৮ লাখ ৯৮ হাজার ৬৮৬ টাকা।
ঢাকা/হাসনাত//