উপকূলীয় অঞ্চল ঘিরে ইসরায়েলের অবিরাম অবরোধের মধ্যে আরো মানুষ অনাহারে মারা যাওয়ায় গাজা উপত্যকার ফিলিস্তিনিরা সাহায্যের জন্য আকুতি জানাচ্ছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে অনাহারে ভুগে অপুষ্টিজনিত কারণে নতুন করে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।

২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলের গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এ ধরনের মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১২২ জনে, যার মধ্যে অন্তত ৮৩ জনই শিশু।

আরো পড়ুন:

‘আজ তুমি কিছু খেয়েছো?’ গাজায় অনাহার আর টিকে থাকার গল্প

গাজা যুদ্ধে প্রশ্নের মুখে বিবিসির সম্পাদকীয় নীতি

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, “আমরা জরুরিভিত্তিতে দুর্ভিক্ষের অবসান, সব সীমান্তপথ খুলে দেওয়া এবং এখনই শিশুদের জন্য দুধ সরবরাহের অনুমতি দাবি করছি; সঙ্গে প্রতিদিন ৫০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক ও ৫০টি জ্বালানিবাহী ট্রাক প্রবেশের সুযোগ দিতে হবে।”

“আমরা এই গণহত্যার জন্য ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী, যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন, যুক্তরাজ্য, জার্মানি এবং ফ্রান্সসহ অন্যান্য ‘ছায়াযোদ্ধা’ রাষ্ট্র এবং সামগ্রিকভাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সম্পূর্ণ দায়ী মনে করি।”

গাজার দক্ষিণে খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালের সূত্রগুলো শনিবার সকালে আলজাজিরাকে জানায়, ছয় মাস বয়সি এক শিশু অপুষ্টিজনিত জটিলতায় মারা গেছে।

এই সপ্তাহে গাজায় অনাহারে মৃত্যুর সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে, কারণ ইসরায়েল অঞ্চলটিতে কঠোর অবরোধ অব্যাহত রেখেছে, যার ফলে ফিলিস্তিনিদের জন্য খাদ্য, পানি, ওষুধ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

মধ্য গাজার নুসেইরাত এলাকার একজন স্বাধীন সাংবাদিক নুর আল-শানা আলজাজিরাকে বলেছেন, চরম ক্ষুধা গাজা উপত্যকার জীবনের সব দিককে প্রভাবিত করছে।

তিনি বলেন, এখন প্রতিদিন মাত্র এক বেলার খাবার জোগাড় করতেও তাকে লড়াই করতে হচ্ছে, আর তার চারজন আত্মীয় খাদ্যের সন্ধানে গিয়ে নিহত হয়েছেন; তাদের হত্যা করা হয়েছে বারবাড নামে পরিচিত ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত জিএইচএফ পরিচালিত ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছে।

“পৃথিবী শুধু বলছে ‘ফিলিস্তিনকে মুক্ত করো’। আমরা আর কথা চাই না, আমরা সমাধান চাই,” বলেন তিনি।

“আর না, আমরা ক্লান্ত,” কাঁদতে কাঁদতে বলেন আল-শানা। “আমরা দম বন্ধ হয়ে মরছি। আমরা এখানে ধুঁকে ধুঁকে মরছি।”

‘ইচ্ছাকৃত গণঅনাহার’

গাজার বিভিন্ন হাসপাতালের সূত্রগুলো আলজাজিরাকে জানিয়েছে, শুক্রবার ভোর থেকে ইসরায়েলি হামলায় পুরো উপত্যকাজুড়ে অন্তত ৩৮ জন নিহত হয়েছেন।

এর মধ্যে অন্তত ছয়জন ফিলিস্তিনি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র থেকে খাবার সংগ্রহ করার সময় নিহত হন।

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ-এর প্রধান ফিলিপ ল্যাজারিনি শুক্রবার জিএইচএফ-এর কঠোর সমালোচনা পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি একে একটি ‘নিষ্ঠুর’ এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রসূত উদ্যোগ বলে অভিহিত করেন, যা ‘জীবন বাঁচানোর চেয়ে বেশি জীবন কেড়ে নিচ্ছে’।

ল্যাজারিনি জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর মজুদ ত্রাণ গাজায় প্রবেশের অনুমতির আহ্বান জানান এবং সতর্ক করে বলেন, গাজা বর্তমানে ‘ইচ্ছাকৃত গণঅনাহারের’ শিকার।

তিনি এক্সে (সাবেক টুইটার) একটি পোস্টে বলেন, “আজ আরো শিশু মারা গেছে, ক্ষুধায় তাদের দেহ কঙ্কালসার। এই দুর্ভিক্ষ শুধু রাজনৈতিক সদিচ্ছার মাধ্যমে রোধ করা সম্ভব।”

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এই সংকটের জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে দায়ী করেছে। তাদের দাবি, ত্রাণবাহী ট্রাকগুলো গাজার ভেতরে রয়েছে কিন্তু জাতিসংঘ ত্রাণ বিতরণে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে।

তবে জাতিসংঘ কর্মকর্তারা এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং বারবার তারা বলেছেন, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ তাদেরকে ত্রাণ বিতরণের জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদন দেয়নি।

জাতিসংঘ এবং অন্যান্য মানবিক সংস্থাগুলো জিএইচএফ পরিচালিত ত্রাণ বিতরণ পরিকল্পনার সঙ্গে কাজ করতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তারা বলছেন, এই পরিকল্পনা মানবিক নীতিমালা- যেমন নিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতা মেনে চলে না।

ঢাকা/রাসেল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র ইসর য় ল ত র ণ ব তরণ অন হ র র জন য ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

তুরস্কের সঙ্গে উত্তেজনা: সাইপ্রাসকে ‘এস–৩০০’–এর চেয়েও ভয়ংকর ‘বারাক এমএক্স’ দিল ইসরায়েল

সাইপ্রাসে গত সপ্তাহে উন্নতমানের বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সরবরাহ করেছে ইসরায়েল। গত ডিসেম্বর থেকে এ ধরনের প্রতিরক্ষাব্যবস্থার তৃতীয় চালান এটি। তুরস্কের সঙ্গে ক্রমে উত্তেজনা বেড়ে চলার মধ্যে সাইপ্রাসকে এ ব্যবস্থায় সজ্জিত করল ইসরায়েল। বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত একাধিক সূত্র মিডল ইস্ট আইকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, লিমাসলের বন্দর দিয়ে একটি ট্রাক ‘বারাক এমএক্স’ ব্যবস্থার বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নিয়ে যাচ্ছে। এ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ১৫০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।

সাইপ্রাসের সংবাদমাধ্যম রিপোর্টার জানিয়েছে, বারাক এমএক্স ব্যবস্থার সরবরাহ এখন সম্পন্ন হয়েছে। চলতি বছরই এটি আকাশ প্রতিরক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে।

এই সরবরাহের আগে গত জুলাইয়ে ইসরায়েল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজের (আইএআই) বহিঃসম্পর্ক বিভাগের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট শাই গাল একটি নিবন্ধে লিখেছিলেন, ইসরায়েলের উচিত সাইপ্রাস নীতি পুনর্বিবেচনা করা এবং সামরিক পরিকল্পনা তৈরি করা; যাতে এ দ্বীপের উত্তরাঞ্চলকে তুর্কি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ থেকে ‘মুক্ত’ করা যায়। বারাক এমএক্স তৈরি করেছে ইসরায়েলি সংস্থাটি।

আরও পড়ুনইসরায়েলের আগ্রাসন কীভাবে মোকাবিলা করবে তুরস্ক৩০ আগস্ট ২০২৫

গাল লিখেছিলেন, ‘ইসরায়েলকে গ্রিস ও সাইপ্রাসের সঙ্গে সমন্বয় করে এ দ্বীপের উত্তর অংশ মুক্ত করার বিকল্প পরিকল্পনা করতে হবে। এতে তুরস্কের পুনরায় সেনা পাঠানোর পথ বন্ধ হবে, উত্তর সাইপ্রাসের বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস হবে, গোয়েন্দা ও কমান্ড সেন্টারগুলো গুঁড়িয়ে যাবে এবং শেষ পর্যন্ত তুর্কি বাহিনী সরে যাবে। এর মাধ্যমে সাইপ্রাসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃত সার্বভৌমত্ব ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।’

গ্রিসের সঙ্গে একীভূত করার লক্ষ্য নিয়ে সাইপ্রাসে এক অভ্যুত্থানচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর ১৯৭৪ সালে সেখানে আক্রমণ চালায় তুরস্ক। সেই থেকে দ্বীপটি দুই ভাগে বিভক্ত—দক্ষিণে আন্তর্জাতিক স্বীকৃত সাইপ্রাস প্রজাতন্ত্র ও উত্তরে তুরস্ক-সমর্থিত উত্তর সাইপ্রাস, যা শুধু আঙ্কারার স্বীকৃত।

এই সরবরাহের আগে গত জুলাইয়ে ইসরায়েল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজের (আইএআই) সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট শাই গাল একটি নিবন্ধে লিখেছিলেন, ইসরায়েলের উচিত সাইপ্রাস নীতি পুনর্বিবেচনা করা এবং সামরিক পরিকল্পনা তৈরি করা; যাতে এ দ্বীপের উত্তরাঞ্চলকে তুর্কি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ থেকে ‘মুক্ত’ করা যায়।

এখন পর্যন্ত আঙ্কারা নতুন প্রতিরক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে বারাক এমএক্সে রয়েছে উন্নত নজরদারি ও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের ক্ষমতা। এর থ্রিডি রাডার সর্বোচ্চ ৪৬০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত কার্যকর, যা দক্ষিণ তুরস্কের একটি বড় অংশের আকাশসীমা আয়ত্তে আনতে পারে।

আরও পড়ুনইসরায়েল ও তুরস্ক কখন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে?২৪ জানুয়ারি ২০২৫

১৯৯৭ সালে দক্ষিণ সাইপ্রাস রাশিয়ার তৈরি দুটি এস–৩০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কেনার চেষ্টা করলে তুরস্কের সঙ্গে তার যুদ্ধ বাধার উপক্রম হয়। সে সময় আঙ্কারা পুরোদমে সামরিক জবাব দেওয়ার হুমকি দেয়। পরে সে সংকট মেটে গ্রিস ওই ক্ষেপণাস্ত্র নিজেদের ভূখণ্ডে নিয়ে গেলে ও সাইপ্রাস বিকল্প ব্যবস্থা খুঁজতে শুরু করলে।

এ ব্যবস্থা এস-৩০০ থেকেও অনেক বেশি বিপজ্জনক। ১৯৯৭ সালে রাশিয়া থেকে সাইপ্রাস যে এস-৩০০ অর্ডার দিয়েছিল, তা কখনো মোতায়েন করা হয়নি। ইসরায়েল ও গ্রিসের সঙ্গে সাইপ্রাসের বর্তমান সামরিক ঘনিষ্ঠতার কারণে এ শক্তিশালী প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ও রাডার পূর্ব ভূমধ্যসাগরে ইসরায়েলের গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠবে।আরদা মেভলুতোগলু, তুরস্কের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক

তুরস্কের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক আরদা মেভলুতোগলু বলেন, এই ব্যবস্থা এস–৩০০ থেকেও অনেক বেশি বিপজ্জনক। ১৯৯৭ সালে রাশিয়া থেকে সাইপ্রাস যে এস–৩০০ অর্ডার দিয়েছিল, তা কখনো মোতায়েন করা হয়নি। ইসরায়েল ও গ্রিসের সঙ্গে সাইপ্রাসের বর্তমান সামরিক ঘনিষ্ঠতার কারণে এ শক্তিশালী প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ও রাডার পূর্ব ভূমধ্যসাগরে ইসরায়েলের গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠবে।

ইসরায়েলের আশদোদে আইএআই বারাক এমএক্স বিমান প্রতিরক্ষা লঞ্চার। ১২ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজীপুরে মুখ থুবড়ে পড়েছে ২৪ কোটি টাকার পানি প্রকল্প
  • প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ গেল ভারতে
  • তুরস্কের সঙ্গে উত্তেজনা: সাইপ্রাসকে ‘এস–৩০০’–এর চেয়েও ভয়ংকর ‘বারাক এমএক্স’ দিল ইসরায়েল
  • গুদামে খাওয়ার অনুপযোগী চাল নিয়ে রাজশাহী খাদ্য বিভাগে তোলপাড়, ৮ তদন্ত কমিটি
  • ‘কেনতো পারমু না, হেইতে ইলশার সুরতটা দেইখ্যা যাই’
  • বাংলাদেশ ব্যাংক এক দিনে ২৬ ব্যাংক থেকে ৩৫ কোটি ডলার কিনল কেন
  • নিলামে ৩৫৩ মিলিয়ন ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক
  • যুক্তরাজ্য থেকে আসছে মাদক এমডিএমএ, গ্রেপ্তার ৫
  • চাপে পড়ে নয়, অনুরোধে ভারতে ইলিশ পাঠানোর অনুমোদন: ফরিদা আখতার
  • ভোটের সরঞ্জাম আসছে ইসিতে