রাজনীতিও করবেন আবার নির্বাচনেও যাবেন না, এটা হতে পারে না: আমীর খসরু
Published: 27th, July 2025 GMT
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘যারা নির্বাচনকে ভয় পায়, তাদের রাজনীতির দরকার নেই। তারা প্রেসার গ্রুপ হিসেবে কাজ করুক। এনজিও হিসেবে কাজ করতে পারে। আপনি রাজনীতিও করবেন, আবার নির্বাচনেও যাবেন না, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করবেন, এটা তো হতে পারে না।’
আজ রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ভাসানী জনশক্তি পার্টি ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের উদ্যোগে এক আলোচনা সভায় আমীর খসরু এ কথাগুলো বলেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর উপলক্ষে এই সভা হয়।
আমীর খসরু বলেন, যেসব দেশে এ ধরনের বিপ্লব হয়েছে এবং সে দেশগুলোর মধ্যে যেখানে নির্বাচনকে বিলম্বিত করার চেষ্টা হয়েছে, সেখানে বিভাজন হয়েছে। গৃহযুদ্ধ হয়েছে। ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। যারা দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে ফিরে যেতে পেরেছে, তারা আর্থিক, সামাজিক ও গণতান্ত্রিকভাবে ভালো করেছে।
সবকিছুতে ঐকমত্য হবে না উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন দল; সবকিছুতে ঐকমত্য হবে না। জাতীয় বিষয়ে এক থাকতে হবে। কিন্তু রাজনৈতিক আদর্শ, চিন্তা, দর্শন আলাদা। এই বিভেদ না থাকলে তো গণতন্ত্র হবে না। একদলীয় শাসন, বাকশাল করতে বসিনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভিন্নমত থাকতে পারে, কিন্তু একে অপরের প্রতি সহনশীল হতে হবে। সাংঘর্ষিক রাজনীতিতে যাওয়া যাবে না। দ্বিমত থাকবে, কিন্তু শ্রদ্ধা থাকতে হবে।’
শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশের মানুষের মনস্তত্ত্বে পরিবর্তন এসেছে বলে মন্তব্য করেন আমীর খসরু। যেসব দল ও ব্যক্তি এই পরিবর্তনকে বুঝতে পারছে না, তাদের কোনো রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নেই। পরিবর্তন মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আনতে হবে, বলেন তিনি।
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘আমার কথা শুনলে নির্বাচন মানব, না শুনলে নির্বাচনে যাব না। এটা অগণতান্ত্রিক আচরণ। গণতন্ত্রের কথা বলে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার প্রক্রিয়া। শেখ হাসিনাও যা বলত, তা–ই মানতে হতো। আমাদের কোনো অধিকার ছিল না।’
আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জুলাই সনদের খসড়া পৌঁছে দেওয়া হয়েছে: আলী রীয়াজ
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে জুলাই সনদের খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেছেন, ‘সে খসড়ায় জাতীয় সনদের পটভূমি, গঠনপ্রক্রিয়া, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন এবং জাতীয় সনদ তৈরি প্রক্রিয়ার বিষয়ে যে বর্ণনা আমরা সেটা রেখেছি।’
আজ সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের ২০তম দিনের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন আলী রীয়াজ। সনদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে এবং যেসব বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে, সেগুলো আমরা অন্তর্ভুক্ত করিনি। কারণ হচ্ছে এগুলো এখন পর্যন্ত আলোচনা হচ্ছে। যদিও প্রথম পর্যায়ে অনেকগুলো বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, কিন্তু সে বিষয়গুলোর সঙ্গে এখন যে বিষয়গুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করছি, সেগুলো জড়িত থাকার ফলে এই মুহূর্তে আমরা একমত হওয়া বিষয়গুলোকেও রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠাচ্ছি না। আমরা মনে করছি, সমন্বিতভাবে দিলে কাজের জন্য সুবিধাজনক হবে।’
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা তাদেরকে অনুরোধ করেছি ৩০ জুলাই বুধবার দুপুর ১২টার মধ্যে তাদের যদি কোনো সুপারিশ থাকে, পরামর্শ থাকে, পরিবর্তনের কথা তারা বলতে চায় সেগুলো আমাদেরকে জানানোর জন্য। আমরা আশা করছি, পরামর্শগুলোকে সমন্বিত করে সনদের টেক্সটা ওই দিনই তৈরি করতে পারব। ইতিমধ্যে আলোচনায় যেহেতু অগ্রগতি হচ্ছে, যেসব বিষয়ে মতৈক্য হবে, সেগুলো তার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে।’ তিনি বলেন, ‘অবশ্যই আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে এই সনদের ব্যাপারে অঙ্গীকারের বিষয়গুলোকে উল্লেখ করেছি। যদি রাজনৈতিক দলগুলো অঙ্গীকারের সঙ্গে আর কিছু যোগ করতে চায়, পরামর্শ দেয়, সেটি নিয়ে কাজ করা হবে।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে চলমান রাজনৈতিক সংলাপে সোমবারের বৈঠকে চারটি গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগপ্রক্রিয়া এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাঠামো নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে।
আজকের আলোচনা দুটি নির্ধারিত বিষয়ের ওপর ছিল বলে জানান আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, একটি হলো সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি), মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও ন্যায়পাল নিয়োগ; অন্যটি সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্ব—যদিও দ্বিতীয় বিষয়ে আলোচনা শুরু করা সম্ভব হয়নি।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, সরকারি কর্ম কমিশনের নিয়োগপ্রক্রিয়া নিয়ে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল সংবিধানের ১৩৭ অনুচ্ছেদ সংশোধনের পক্ষে মত দিয়েছে। তবে বিএনপি ও কয়েকটি দল নিয়োগবিধান আইনের মাধ্যমে নির্ধারণের পক্ষে অবস্থান জানিয়েছে। তিনি বলেন, ‘নিয়োগপ্রক্রিয়া কীভাবে নির্ধারিত হবে, সে বিষয়ে ভিন্নমত থাকলেও পিএসসিকে স্বাধীন ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখার ব্যাপারে দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য রয়েছে।’
দুদককে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের প্রস্তাবকে বেশির ভাগ দল সমর্থন করলেও বিএনপি ও কয়েকটি দল ভিন্নমত দেয়। তবে সংশোধনীসহ আলোচনা এগোচ্ছে বলে জানান অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
জুলাই সনদের খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পৌঁছে দেওয়ার কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক আলী বলেন, ‘সেখানে কেবল ইতিমধ্যে যেসব বিষয়ে একমত হওয়া গেছে, সেগুলো রাখা হয়েছে। এখনো আলোচনাধীন বিষয়গুলো পরবর্তী সময়ে সমন্বিতভাবে সংযোজন করা হবে।’
বৈঠকের একপর্যায়ে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে হঠাৎ ফায়ার অ্যালার্ম বেজে ওঠে, ফলে কিছু সময়ের জন্য আলোচনা স্থগিত রাখতে হয়। এ ঘটনাকে উদ্বেগজনক উল্লেখ করে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘জাতীয় নেতৃবৃন্দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একাডেমির দায়িত্ব ছিল। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়েছে।’
এ বিষয়ে ফরেন সার্ভিস একাডেমির রেক্টরের সঙ্গে বৈঠক করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি। রেক্টর ইতিমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন এবং প্রতিবেদন শিগগিরই দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
সন্ধ্যার দিকে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগসংক্রান্ত একটি নতুন প্রস্তাব মৌখিকভাবে উপস্থাপন করা হয়। তারা ‘র্যাংক চয়েস’ (বাছাই কমিটির সুপারিশকৃতদের ক্রম অনুসারে) পদ্ধতি মেনে নিতে আগ্রহ দেখালেও সেটি গোপন ব্যালটের পরিবর্তে ওপেন ব্যালটে করার প্রস্তাব দেন।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সব রাজনৈতিক দল তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিষয়ে একমত। তবে নিয়োগ কমিটির সিদ্ধান্তপ্রক্রিয়া নিয়ে ভিন্নমত রয়ে গেছে।’ তিনি আরও জানান, বিএনপি এখনো এই প্রস্তাব পুরোপুরি মেনে নেয়নি। তবে কমিশন আশাবাদী যে আগামীকাল সকালের মধ্যেই এ বিষয়ে একটি সম্মিলিত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হবে।
আজকের বৈঠকে সময়স্বল্পতার কারণে সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্ব নিয়ে আলোচনা করা যায়নি। তবে আগামী দুই দিনের মধ্যে এ বিষয়েও আলোচনা হবে বলে কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
আজকের আলোচনা শেষে প্রতিদিনকার মতো সাংবাদিকদের ব্রিফ না করে বেরিয়ে যায় বিএনপি। এর আগে সকালে আলোচনা শুরুর কিছুক্ষণ পর বৈঠক থেকে ওয়াকআউট করে দলটি। অবশ্য কিছুক্ষণ পর আবার সংলাপে অংশ নেয় তারা।