প্রাইভেট কারে ঘুরে ফাঁদ পেতে চুরি করতেন অটোরিকশা, আটক ৪
Published: 28th, July 2025 GMT
ময়মনসিংহ শহরে এক নারী যাত্রীকে নিয়ে অটোরিকশায় গন্তব্যের দিকে যাচ্ছিলেন চালক জাকির হোসেন। বাড়েরা পুল আকন্দবাড়ী রোডসংলগ্ন এলাকায় গিয়ে চালককে হঠাৎ থামতে বলেন তিনি। এ সময় একটি বাড়ি দেখিয়ে জাকিরকে ৫০০ টাকার নোট দেন ওই নারী। তাঁকে বাড়িটির ভেতরে গিয়ে এই টাকা কেয়ারটেকারকে দিয়ে আসতে পাঠান। জাকির বাড়িটিতে গিয়ে কাউকেই পাননি। পরে সড়কে ফিরে দেখেন, তাঁর অটোরিকশাটি নেই।
২২ জুলাই ঘটনাটির দৃশ্য ধরা পড়ে একটি সিসিটিভি ক্যামেরায়। পরে চক্রটির ৪ সদস্যকে আটক করেছে র্যাব। সংস্থাটি জানায়, প্রাইভেট কারে ঘুরে ফাঁদ পেতে অটোরিকশা চুরি করত চক্রটি। আজ সোমবার দুপুরে ময়মনসিংহ শহরে র্যাব-১৪–এর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান অধিনায়ক নয়মুল হাসান।
আটক ব্যক্তিরা হলেন শাহিদ (৩০), রেহেনা আক্তার ওরফে সাদিয়া (৩৫), মোস্তফা (৬২) ও মোস্তফা মিয়া (৩৯)। এদের মধ্যে শাহিদ ঢাকা, সাদিয়া নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ, মোস্তফা কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ ও মোস্তফা মিয়া তারাকান্দা উপজেলার বাসিন্দা। গতকাল রোববার রাতে গৌরীপুর ও তারাকান্দায় পৃথক অভিযান চালিয়ে তাঁদের আটক করা হয়।
র্যাব জানায়, মুক্তাগাছা উপজেলার খেরুয়াজানি গ্রামের জাকির হোসেন ময়মনসিংহ শহরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালাতেন। গত মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ময়মনসিংহের দাপুনিয়া বাজার থেকে বাড়েরার পুল এলাকায় যাওয়ার জন্য অটোরিকশাটি ভাড়া করেন মোস্তফা। মোস্তফা জানান, তাঁর ম্যাডাম গাড়িটি করে সেখানে যাবেন। রেহেনা নামের ওই যাত্রী ঘটনাস্থলে গিয়ে অটোরিকশাটি থামাতে বলেছিলেন। এরপর জাকিরকে ৫০০ টাকা দিয়ে ওই বাড়ির কেয়ারটেকার মোস্তফাকে দিয়ে আসতে পাঠান। জাকির টাকা নিয়ে বাড়িটিতে গিয়ে অনেকক্ষণ ডাকাডাকি করলেও সারা পাননি। পরে ঘটনাস্থলে ফিরে এসে দেখেন, ওই নারীসহ তাঁর অটোরিকশাটি উধাও।
বিষয়টি নিয়ে পরদিন গত বুধবার র্যাব-১৪ কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন জাকির হোসেন। র্যাব ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখে, ঘটনাস্থলে অটোরিকশাটি থামার পর চালক সেখান থেকে পেছনের দিকে যেতে থাকেন। এর মধ্যে চক্রটির এক সদস্য অটোরিকশার কাছে অবস্থান নেন। সুযোগ বুঝে যানবাহনটি নিয়ে সটকে পড়েন। পরে ওই নারী অটোরিকশা থেকে নেমে কিছু দূর হেঁটে যান। এর মধ্যেই সাদা রঙের একটি প্রাইভেট কার গিয়ে ওই নারীর সামনে দাঁড়ায়। মুহূর্তেই সেটিতে উঠে পড়েন তিনি।
র্যাব-১৪ জানায়, চক্রটি ৯ মাস ধরে কৌশলে অটোরিকশা চুরি করছিল। ওই চক্রের প্রধান প্রাইভেট কারের চালক শাহিদ। তাঁরা রাজধানীর পুরান ঢাকা, বনানী, মহাখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় অটোরিকশা চুরি করেছেন। ময়মনসিংহে গিয়েও প্রাইভেট কার দিয়ে অটোরিকশা চুরি করে তারাকান্দার মোস্তফা মিয়ার কাছে বিক্রি করতেন। মোস্তফা মিয়া অটোরিকশাটির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ খুলে আলাদা করে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করতেন।
র্যাব আরও জানায়, জাকির হোসেনের অটোরিকশাটি ৫২ হাজার টাকায় মোস্তফা মিয়ার কাছে বিক্রি করে দেন চক্রটির সদস্যরা। সেটির যন্ত্রাংশ আলাদা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিক্রি করে দিয়েছেন মোস্তফা মিয়া। এ কারণে অটোরিকশাটি উদ্ধার করা যায়নি। এ চক্রের সঙ্গে আরও কয়েকজন সদস্য জড়িত। তাঁদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বেপরোয়া গতির যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন
ময়মনসিংহের সড়ক-মহাসড়কে সাড়ে তিন বছরে ৭৭২ জনের মৃত্যু—এই ভয়াবহ পরিসংখ্যান কেবল সংখ্যা নয়, বরং প্রতিদিনের রূঢ় বাস্তবতা। প্রতিটি প্রাণহানি একটি পরিবারকে শোকে নিমজ্জিত করেছে, অনিশ্চয়তায় ঠেলে দিয়েছে। একই সময়ে গুরুতর আহত ও অঙ্গহানির শিকার হয়েছেন প্রায় এক হাজার মানুষ। এই পরিস্থিতি আমাদের সড়কব্যবস্থার নৈরাজ্য ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়াবহ দুরবস্থা তুলে ধরে।
বিআরটিএর তথ্য বলছে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক এবং ময়মনসিংহ-হালুয়াঘাট আঞ্চলিক সড়ক দুর্ঘটনার ‘হটস্পট’। বেপরোয়া গতি, ওভারটেকিং, আঁকাবাঁকা সড়ক এবং থ্রি-হুইলারের অবাধ চলাচল—সব মিলিয়ে এই সড়কগুলোকে মৃত্যুকূপে পরিণত করেছে। চার লেনের মহাসড়ক হলেও উল্টো পথে গাড়ি চলা, গতিসীমা অমান্য করা এবং হাইওয়েতে ধীরগতির থ্রি-হুইলার চলাচল পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক করছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে সতর্কবার্তা ও গতিসীমা নির্ধারণ করেছে, কিন্তু চালকদের অনিয়ম ও বেপরোয়া গতির কারণে তা কোনো কাজে আসছে না। অনেক চালক মনে করেন, ভালো রাস্তা মানেই বেশি গতি। এই মানসিকতা ভাঙতে কঠোর নজরদারি ও শাস্তির বিকল্প নেই।
প্রশ্ন হচ্ছে, এই মৃত্যুর মিছিল থামাতে প্রশাসনের ভূমিকা কোথায়? সড়কে নিয়ম ভাঙা, বেপরোয়া গতি, ওভারটেকিং রোধে কেন কঠোর নজরদারি ও শাস্তি নেই? জাতীয় মহাসড়কে থ্রি–হুইলার নিষিদ্ধ থাকলেও বিকল্প পরিবহন না থাকায় এবং দুর্বল নজরদারির কারণে সেগুলো নির্বিঘ্নে চলছে।
ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় প্রশাসন দুর্ঘটনার পর উদ্ধারকাজে সক্রিয় হলেও প্রতিরোধমূলক উদ্যোগের ঘাটতি প্রকট। শুধু দুর্ঘটনার পর উদ্ধার নয়, দুর্ঘটনা প্রতিরোধই হতে হবে মূল লক্ষ্য। এ জন্য বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করে হাইওয়ে পুলিশের উপস্থিতি ও নজরদারি বাড়ানো এবং দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় স্পিড ক্যামেরা বসানো জরুরি।
এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক উপেক্ষিত হচ্ছে—জনসচেতনতা ও চালকের প্রশিক্ষণ। অধিকাংশ দুর্ঘটনা চালকদের অসতর্কতা, অভ্যাসগত আইন ভাঙা এবং প্রতিযোগিতামূলক গতির কারণে ঘটছে। যাত্রীদেরও সচেতন হতে হবে, যাতে তাঁরা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাতে চালকদের বাধ্য না করেন। পাশাপাশি থ্রি-হুইলারের বিকল্প হিসেবে নির্ভরযোগ্য লোকাল পরিবহনব্যবস্থা চালু না করলে এসব দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে না।
বাংলাদেশের সড়ক দুর্ঘটনাগুলোকে নিছক দুর্ঘটনা বলা যায় না; এগুলো একধরনের ‘কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড’। দায়িত্বশীলদের গাফিলতি ও অবহেলার কারণে আর কোনো প্রাণ যেন সড়কে না ঝরে—এখনই সেই দাবি তুলতে হবে এবং কার্যকর ব্যবস্থা নিতে বাধ্য করতে হবে। ময়মনসিংহের সড়কগুলোতে বেপরোয়া গতির যানবাহনের বিরুদ্ধে পুলিশকে অবশ্যই দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।