রংপুরে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলাকারীদের বিচারের দাবি নাহিদের
Published: 29th, July 2025 GMT
রংপুরে হিন্দু জনগোষ্ঠীর বাড়িঘরে হামলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবি জানিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘রংপুরে যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে। যিনি ধর্ম অবমাননা করেছেন, তাঁকেও বিচারের আওতায় আনতে হবে। আমরা ধর্মীয় সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়তে চাই, ইনসাফের বাংলাদেশ গড়তে চাই, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে চাই।’
আজ মঙ্গলবার দুপুরে টাঙ্গাইলে এনসিপির জুলাই পদযাত্রা উপলক্ষে আয়োজিত পথসভায় নাহিদ ইসলাম এসব কথা বলেন।
শহরের নিরালা মোড়ে আয়োজিত পথসভায় নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘রংপুরের গঙ্গাচড়ায় আমাদের হিন্দু জনগোষ্ঠীর বাসভবনে বাড়িঘরে হামলা চালানো হয়েছে, লুটপাট চালানো হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের নবীজি (সা.
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘নবীজি (সা.) সব সময় অন্য ধর্মের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেন। ফলে এ ঘটনা যারা ঘটাচ্ছে তাদের উদ্দেশ্য ধর্মীয় নয়, তাদের উদ্দেশ্য রাজনৈতিক, তাদের উদ্দেশ্য সাম্প্রদায়িক এবং তাদের উদ্দেশ্য লুটপাট করা।’ তিনি বলেন, ‘এ রাজনীতি শুরু করেছিল আওয়ামী লীগ, সংখ্যালঘুদের জমি দখল এবং লুটপাটের রাজনীতি ও বিচার না করার রাজনীতি।’
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, মাওলানা ভাসানীর মতো মহান রাজনীতিক পুরুষ, যাঁরা এ বাংলাদেশের স্থপতি, তাঁদের বাদ দিয়ে বাংলাদেশের জাতির পিতা শুধু এক ব্যক্তিকে ঘোষণা করা হয়েছে। এক ব্যক্তিকে পূজা করা হয়েছে গত ৫৪ বছর ধরে। কিন্তু মাওলানা ভাসানী না থাকলে শেখ মুজিব সৃষ্টি হতে পারতেন না। যে ’৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব নিয়েছে, সেই অভ্যুত্থানের অন্যতম কারিগর নেপথ্যের পুরুষ ছিলেন মাওলানা ভাসানী। তিনি কৃষক–শ্রমিকের জন্য লড়াই করেছেন, গণমানুষের জন্য লড়াই করেছেন। আমরা মাওলানা ভাসানীর সেই আদর্শকে ধারণ করে জাতীয় নাগরিক পার্টিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।’
এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘মাওলানা ভাসানী শুধু রাজনীতিবিদ ছিলেন না, ছিলেন রাজনৈতিক দার্শনিক। আমরা ভাসানীকে বাংলাদেশের অন্যতম ফাউন্ডিং ফাদার মনে করি। বাংলাদেশে কোনো একজন জাতির পিতা নয়, বাংলাদেশে অনেকজন জাতির পিতা রয়েছেন। তার মধ্যে অন্যতম মাওলানা ভাসানী।’
সমাবেশে এনসিপির উত্তরাঞ্চলের প্রধান সমন্বয়কারী সারজিস আলম বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে ফ্যাসিবাদের পছন্দের কিছু জেলা বাদ দিয়ে, বাকি জেলাগুলোকে ইচ্ছাকৃতভাবে বঞ্চিত করা হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইল তাদের স্বকীয়তায় বাংলাদেশের জনগণের কাছে এবং বহির্বিশ্বে যতটা গুরুত্বের জায়গায় থাকতে পারত, কিন্তু কিছু ব্যক্তিস্বার্থের মানুষ তাঁদের ব্যক্তিগত এবং দলীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে এত বড় একটি ঐতিহ্যবাহী জেলার স্বার্থকে প্রতিনিয়ত বিসর্জন দিয়ে এসেছে।’
সারজিস আলম আরও বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে আরেকটা কথা বলি, আমরা মিডিয়াকে কোনো ব্যক্তিগোষ্ঠীর বা দলের দালাল হিসেবে দেখতে চাই না। এই মিডিয়া যেন কোনো ব্যক্তি বা দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য কাজে না লাগে। এই মিডিয়া যেন প্রোপাগান্ডা বাস্তবায়নের সেলের অংশ হিসেবে কাজ না করে।’ তিনি বলেন, “’২৪–পূর্ববর্তী সময়ে কয়েকটি মিডিয়া অন্ধভাবে দলের দালালি করেছে। তাদের সংবাদকর্মীরা আজ যে সেই চ্যানেলে কাজ করে, সেটা বলতেও লজ্জা পায়। আমরা চাই না ’২৪–পরবর্তী বাংলাদেশে কোনো মিডিয়ার আর এই করুণ দশা হোক।’
এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক নাহিদা সারওয়ার, জ্যেষ্ঠ সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সাইফুল্লাহ হায়দার, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) অলীক মৃ, সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) আজাদ খান ভাসানী, কেন্দ্রীয় সদস্য মেজর (অব.) সালাহউদ্দিন, জেলার প্রধান সমন্বয়কারী মাসুদুর রহমান প্রমুখ। সমাবেশে এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান সমন্বয়কারী হাসনাত আবদুল্লাহ উপস্থিত থাকলেও অসুস্থতার কারণে বক্তব্য দেননি।
পদযাত্রার আগে সকালে শহরের একটি হোটেলে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ কেন্দ্রীয় নেতারা জুলাই আন্দোলনে টাঙ্গাইলের শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
এনসিপির এই পদযাত্রা ও সমাবেশকে কেন্দ্র করে শহরে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়।
সোমবার রাতে এনসিপির নেতারা টাঙ্গাইলে পৌঁছানোর পর সন্তোষে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর কবর জিয়ারত করেন।
দুপুর ১২টার দিকে এনসিপি নেতারা শহরের শামসুল হক তোরণের সামনে থেকে পদযাত্রা শুরু করেন। এতে কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেন।
শহরের কেন্দ্রস্থল নিরালা মোড়ে এনসিপির সমাবেশের কারণে সকাল থেকেই ভিক্টোরিয়া সড়ক, কবি নজরুল সরণি ও মেইন রোডের কিছু অংশে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে শহরের অন্যান্য সড়কেও যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে দুর্ভোগে পড়তে হয় শহরবাসীকে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন হ দ ইসল ম পদয ত র এনস প র র জন ত আম দ র শহর র
এছাড়াও পড়ুন:
থমথমে পরিস্থিতিতে এক পক্ষের বিক্ষোভের ডাক
চট্টগ্রামের রাউজানে গতকাল মঙ্গলবার বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ-গোলাগুলিতে অর্ধশত নেতা-কর্মী আহত হওয়ার ২২ ঘণ্টা পরও মামলা করেনি কোনো পক্ষ। ঘটনার পর থেকে পুরো উপজেলায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ অবস্থায় বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীরা বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে। আজ বুধবার বিকেল চারটায় উপজেলা সদরের মুন্সির ঘাটায় এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার বিকেলে রাউজানের সত্তারঘাট এলাকায় চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সদ্য বিলুপ্ত কমিটির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার ও বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান (পদ স্থগিত) গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ছররা গুলিতে আহত হন গোলাম আকবর খন্দকার নিজেও। তিনি দাবি করেন, তাঁর গাড়িবহরে হামলা করা হয়েছে গিয়াস উদ্দিন কাদেরের নির্দেশে। এতে দুই পক্ষের অর্ধশত নেতা-কর্মী আহত হন।
সংঘর্ষের পর গতকাল রাতে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল রাত আটটার দিকে কেন্দ্রীয় বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা এক চিঠিতে কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণা দেওয়া হয়। জানতে চাইলে বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন উত্তর জেলা বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক বেলায়েত হোসেন। এ ছাড়া আরেকটি চিঠিতে স্থগিত করা হয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর পদও।
এ ঘটনার পর গোলাম আকবর খোন্দকার পক্ষের লোকজন মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রাম নগরের চকবাজার এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে। দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা অব্যাহত থাকায় নতুন করে সহিংসতার আশঙ্কা করছেন উপজেলার বাসিন্দারা।
গোলাম আকবর খোন্দকারের অনুসারী রাউজান উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি নিজেও আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁর পা ভেঙে দিয়েছেন গিয়াস কাদেরের লোকজন। গোলাম আকবরকেও তাঁরা গুলি করেছেন। তিনি বলেন, তাঁরা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আজকের মধ্যে মামলার এজাহার দেওয়া হবে। পাশাপাশি সংবাদ সম্মেলন করে হামলার বিস্তারিত তুলে ধরবেন।
গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী এবং উপজেলা বিএনপির প্রচার বিভাগের আহ্বায়ক কাজী সরোয়ার খান প্রথম আলোকে বলেন, হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় আজ বিকেলে তাঁরা বিক্ষোভ মিছিল করবেন। সেখান থেকে অপপ্রচারের জবাব দেওয়া হবে।
ঘটনার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পক্ষ অপর পক্ষকে দোষারোপ করে স্ট্যাটাস, ছবি ও ভিডিও শেয়ার করছেন বিএনপির দুই পক্ষের নেতা-কর্মীরা। এতে পাল্টা উত্তেজনা ও পুনরায় সহিংস ঘটনা ঘটার পরিবেশ তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির তৃণমূলের নেতা–কর্মীরা।
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া আজ বেলা একটায় প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দুই পক্ষের হামলা সংঘর্ষের ঘটনায় কোনো পক্ষ মামলা করেনি। কাউকে গ্রেপ্তারও করা যায়নি। মামলা করলে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে।
উল্লেখ্য, রাউজানে গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত সহিংসতায় মোট ১৩টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১০টি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয় অন্তত শতাধিকবার। তিন শতাধিক মানুষ এসব ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হন।