সন্তান চায় পিতার পরিচয়, স্ত্রী চায় স্বামীর
Published: 26th, August 2025 GMT
২২ বছর আগে বিয়ে করেছেন আরজিনা ও এমারত। তাদের সন্তানের বয়স এখন ২১ বছর। জাতীয় পরিচয় পত্র হলেও সন্তানকে মেনে নিচ্ছে না পিতা। জাতীয় পরিচয়পত্র করার কারণে দিচ্ছেন হুমকি। এখন ঘরবন্দি ও জীবননাশের হুমকিতে কাটছে মা-সন্তানের জীবন।
অভিযুক্ত স্বামী মো. এমারত হোসেন (৪০) গাজীপুর মহানগরীর ভারারুল জামতলা এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে।
জামতলা এলাকার আব্দুল কাদেরের মেয়ে আরজিনার সঙ্গে সম্পর্ক হয় একই এলাকার এমারতের সাথে। এরপর ২০০৩ সালে হুজুর ডেকে বিয়ে করেন দু’জন। পরে তাদের ঘরে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। এরপর থেকেই তাদের সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে। একপর্যায়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে এমারত আরেকটি বিয়ে করেন। তারপর থেকে সন্তান এমরানকে নিয়ে বসবাস করছেন আরজিনা। ছেলের বয়স ১৮ বছর হলে জাতীয় পরিচয়পত্র বানানো হয়। এরপর থেকে শুরু হয় নানা ধরনের হুমকি।
অভিযুক্ত স্ত্রী আরজিনা আক্তার বলেন, “আমার ভরণপোষণ দেন না। তবে গোপনে সম্পর্ক রেখেছে। শুধুমাত্র আমাদের ঈদের সময় খরচ দিতো। এখন আমার সন্তান প্রাপ্তবয়স্ক হয়েছে। ওর পরিচয় দরকার, পরে স্বামীর সঙ্গে কথা বলে ভোটার আইডি কার্ড করি। এখন ভোটার আইডি করার কারণে আমাদের হুমকি দিচ্ছে। আমাকে এবং আমার সন্তানকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। আমরা জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তায় আছি।”
আরজিনার সন্তান এমরান বলেন, “আমার পিতা এমারত। তবে তিনি আমাকে অস্বীকার করেন। এখন আমার নামে বিভিন্ন মামলা দিচ্ছে। আমার মাকে নিয়ে অনিরাপদ জীবনযাপন করছি। আমাকে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়।”
এবিষয়ে জানতে চাইলে এমারত হোসেন বলেন, “আমার সঙ্গে তার কোন বিয়ের সম্পর্ক নেই। আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা হচ্ছে। একজন চাইলেই স্বামী ও পিতার পরিচয় দেওয়া যায় নাকি? তাদের উদ্দেশ্য ভিন্ন।”
ঢাকা/রেজাউল/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র সন ত ন আরজ ন
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রেন থেকে পড়ে ৮ দিন ধরে হাসপাতালে ছেলে, ফেসবুকে ছবি দেখে ছুটে এলেন মা
প্রতিদিনের মতো কাজ শেষে গতকাল সোমবার বাসায় ফিরছিলেন নাজমা বেগম। ঢাকার টঙ্গী এলাকায় থাকেন তিনি। পরিচিত এক ব্যক্তি তাঁকে হঠাৎ ফোন করে জানান, তাঁর নিখোঁজ ছেলের সন্ধান পাওয়া গেছে। দ্রুত ওই ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করেন নাজমা। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা একটি ভিডিও দেখান নাজমাকে। সে ভিডিওতে দেখতে পান, তাঁর ১০ দিন ধরে নিখোঁজ ছেলে আবদুল্লাহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি।
ছেলের খোঁজ পেয়ে আজ মঙ্গলবার সকালে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ছুটে আসেন তিনি। রেলস্টেশন থেকে সরাসরি চলে আসেন চমেক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগে। এখানেই ৮ দিন ধরে ভর্তি আবদুল্লাহ।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ৮ সেপ্টেম্বর আহত অবস্থায় আবদুল্লাহকে হাসপাতালে আনা হয়। সে সময় তার নাম-ঠিকানা কিছুই জানা যায়নি। অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবেই হাসপাতালের নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে নেওয়া হয় তাকে। পরদিন তার অস্ত্রোপচার হয়। গত শনিবার আবদুল্লাহর জ্ঞান ফেরে। এরপর নিজের ও বাবা-মায়ের নাম আর বাসার ঠিকানা জানায় সে।
চিকিৎসকেরা সেই সূত্রে ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ নানাভাবে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেন। ফেসবুকে আবদুল্লাহর ছবি দিয়ে খোঁজ চাওয়া হয় বাবা-মায়ের। সেই ছবি পরিচিতদের মাধ্যমে দেখেন নাজমা বেগম। এরপর ছুটে আসেন চট্টগ্রামে। হাসপাতালে এসেই নার্সদের সহায়তায় যান নিউরোসার্জারি বিভাগে। সেখানে হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ)চিকিৎসাধীন আবদুল্লাহকে দেখেন।
আজ বিকেলে হাসপাতালের নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডের সামনে কথা হয় আবদুল্লাহর মা নাজমা বেগমের সঙ্গে। সকালেই চট্টগ্রাম পৌঁছেছেন তিনি। জানালেন, তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে ১০ বছর বয়সী আবদুল্লাহ সবার বড়। ছোট মেয়ের বয়স পাঁচ ও আরেক ছেলের বয়স দুই। আবদুল্লাহ সুস্থ আছে জেনে স্বস্তি পেলেও দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি। কারণ, এটিই প্রথমবার নয়, এর আগেও কয়েকবার ঘর থেকে কিছু না বলে বেরিয়ে যায় সে।
নাজমা বেগম বলেন, প্রায়ই আবদুল্লাহ ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। এদিক–সেদিক চলে যায়। পরে আবার ফিরে আসে। এর আগেও ঢাকার আশপাশে এদিক-সেদিক চলে গিয়েছিল সে। ৬ সেপ্টেম্বর সে ভাত খাওয়া থেকে উঠে হঠাৎ চলে যায়। সে ফিরে আসবে এই আশায় থানায় যাননি। কিন্তু ১০ দিন হয়ে যাওয়ায় এদিক–সেদিক খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। ঢাকায় বিভিন্ন স্টেশনে ছেলের খোঁজে গেছেন বলে জানান নাজমা।
চমেক হাসপাতালে চিকিৎসকেরা আবদুল্লাহর বরাত দিয়ে জানান, বাসা থেকে বেরিয়ে সে কক্সবাজার যাচ্ছিল। পথে চট্টগ্রামে ট্রেন থামলে সে ট্রেন থেকে পড়ে যায়। চিকিৎসার পর এখন সুস্থ হয়ে উঠছে সে।
চিকিৎসকেরা জানান, আবদুল্লাহকে যখন আনা হয় তার মাথায় গুরুতর আঘাত ছিল। তার মাথার এক পাশের হাড় ভেঙে গিয়েছিল। ট্রেন থেকে পড়ার কারণে মাথায় আঘাত লাগে। হাড়ের কিছু অংশ মস্তিষ্কের ভেতরে গেঁথে যায়। অস্ত্রোপচারও সফল হয়েছে। তবে জ্ঞান না ফেরায় তার পরিচয় জানা যায়নি। জ্ঞান ফেরার পর তার তথ্য নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করা হয়।
শুরু থেকে আবদুল্লাহর অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসা করেছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিউরোসার্জারি বিভাগে সহকারী অধ্যাপক মু. ইসমাইল হোসেন। তিনি বলেন, ‘তার হাড় ভেঙে মস্তিষ্কের ভেতরে চলে গিয়েছিল। অস্ত্রোপচারের পর স্বাভাবিকভাবে সেটি জোড়া দেওয়া হয়েছে। এখন সে পুরোপুরি সুস্থ। তাকে আমরা আজ-কালের মধ্যে ডিসচার্জ করে দেব। শিশুকে পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দিতে পেরে আমরাও আনন্দিত।’