সীমান্তে ‘বিএসএফ ও ভারতীয় নাগরিকদের হাতে নিরীহ বাংলাদেশি নাগরিক হত্যা’র ঘটনায় বাংলাদেশের উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে উদ্যোগ নেওয়ার অঙ্গীকার করেছে ভারত।

দুই দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর মহাপরিচালক পর্যায়ের সীমান্ত সম্মেলন শেষে বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) এক যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি এ তথ্য জানানো হয়েছে।

আরো পড়ুন:

ঠাকুরগাঁও সীমান্ত দিয়ে ১১ জনকে ঠেলে পাঠল বিএসএফ 

আটক ৫ বাংলাদেশিকে ফেরত দিল বিএসএফ

সম্মেলনে বাংলাদেশি, ভারতীয় ও বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার (পুশ-ইন) ঘটনায়ও উদ্বেগ জানায় বিজিবি। ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়, ভারতে থাকা অবৈধ বাংলাদেশিদের সমঝোতার মাধ্যমে গৃহীত প্রক্রিয়া মেনে ফেরত পাঠানো হবে।

সম্মেলনে সীমান্তে আক্রমণ, নির্যাতন ও হামলার ঘটনা শূন্যে নামিয়ে আনাসহ ১০ বিষয়ে উভয় পক্ষ একমত হয়েছে। সীমান্ত দিয়ে মাদক, অস্ত্র-গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক দ্রব্য, স্বর্ণ, জাল নোট এবং অন্যান্য চোরাচালান প্রতিরোধে সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার গুরুত্ব তুলে ধরে উভয় পক্ষ পাচার ও পাচারকারীদের সঠিক সময়ে তথ্য শেয়ার এবং অধিক সচেতনতার মাধ্যমে এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে সতর্ক ও দৃঢ় থাকার বিষয়ে দুইপক্ষ সম্মত হয়েছে।

সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ২১ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ করে। বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছাড়াও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, সড়ক বিভাগ, ভূমি জরিপ অধিদপ্তর, যৌথ নদী কমিশন এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও প্রতিনিধিত্ব করেন।

অপরদিকে, বিএসএফ মহাপরিচালক দালজিৎ সিং চৌধুরীর নেতৃত্বে ১১ সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধি দল সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে। ভারতীয় প্রতিনিধি দলে বিএসএফের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছাড়াও ভারতের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মকর্তারাও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।

উভয়পক্ষ কোনো ধরনের আকাশসীমা লঙ্ঘন না করার বিষয়ে একমত হয়। ভবিষ্যতে যাতে কোনো ভুল বোঝাবুঝি না ঘটে সেজন্য পূর্বনির্ধারিত ফ্লাইট সম্পর্কে সঠিক সময়ে তথ্য শেয়ারের মাধ্যমে পরস্পরকে অবহিত করার বিষয়ে সম্মতি জানায়।

নিজ নিজ দেশের গণমাধ্যমে পরস্পরবিরোধী বিভ্রান্তিকর অপপ্রচার, গুজব ছড়িয়ে সীমান্তে যাতে কোনো উত্তেজনা সৃষ্টি না হয় সে ব্যাপারে উভয় দেশের গণমাধ্যমকে পরামর্শ প্রদানের বিষয়ে একমত হয় দুই পক্ষ।

বিজিবি-বিএসএফ সীমান্তবর্তী জনগণকে আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করে অনুপ্রবেশ, চোরাচালান, মানবপাচার, সীমান্ত স্তম্ভ উপড়ে ফেলা ও অন্যান্য আন্তঃসীমান্ত অপরাধ থেকে বিরত রাখার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে একমত হয়।

বিজিবি ও বিএসএফ সীমান্ত শূন্যরেখা থেকে ১৫০ গজের মধ্যে পূর্ব অনুমোদন ছাড়া কোনো উন্নয়নমূলক কাজ না করার পাশাপাশি সীমান্তবর্তী এলাকায় চলমান উন্নয়নমূলক কাজগুলো দ্রুত সম্পন্ন করার বিষয়ে একমত হয়। এছাড়া যৌথ নদী কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ সহজতর করা এবং সীমান্তবর্তী অভিন্ন নদীগুলোতে অননুমোদিত কাজ বন্ধ রাখার ব্যাপারে একমত হয়।

এছাড়াও ‘কানেক্টেড বাংলাদেশ’ প্রকল্পের আওতায় তিনবিঘা করিডরের মাধ্যমে দহগ্রামকে সংযুক্ত করার জন্য অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক স্থাপনের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার বিষয়ে বিএসএফ মহাপরিচালক ভারতের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, সংস্থার কাছে উপস্থাপন করে তা সমাধানের আশ্বাস দেন।

উভয় প্রতিনিধি দল আন্তঃসীমান্তে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী অবস্থান করলে সে ব্যাপারে ‘জিরো টলারেন্স’ অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে এবং সঠিক সময়ে তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে একমত হয়।

ঢাকা/মাকসুদ/সাইফ 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এসএফ কর মকর ত ব এসএফ গ রহণ

এছাড়াও পড়ুন:

সুন্দরবনের ভারতীয় অংশের বিএসএফের হাতে আটক ১৯ বাংলাদেশি মৎস্যজীবী

অবৈধভাবে ভারতীয় জলসীমায় প্রবেশের অভিযোগে ১৯ জন বাংলাদেশি মৎস্যজীবীকে গ্রেপ্তার করেছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ।

বিএসএফ সূত্রে জানানো হয়েছে, সুন্দরবনের ভারতীয় অংশের উত্তাল নদীতে দীর্ঘক্ষণ ধাওয়া করে তাদের আটক করা হয়।  ধৃত মৎসজীবীরা বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগের ভোলা জেলার পুরালিয়া গ্রামের বাসিন্দা। মাছ ধরার ট্রলার ও জালসহ তাদেরকে আটক করা হয়। 

আরো পড়ুন:

কলকাতায় সম্মিলিত সেনা সম্মেলন উদ্বোধন নরেন্দ্র মোদির

অবৈধ অভিবাসীদের প্রতি নরম হওয়ার দিন শেষ: ট্রাম্প

বিএসএফ জানায়, রবিবার সীমান্তের সুন্দরবন অংশে রুটিন টহল দেয়ার সময় গোসাবা রেঞ্জের বাঘমারি জঙ্গল এলাকায় বাংলাদেশি অবৈধ ট্রলারের উপস্থিতি নজরে আসে বিএসএফ জওয়ানদের। বিএসএফ জওয়ানদের পেট্রোল বোট ট্রলারটির কাছে যাওয়ার চেষ্টা করতেই ট্রলারটি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। দ্রুততার সঙ্গে ট্রলারের পিছু ধাওয়া করা হয়। দীর্ঘক্ষণ ধাওয়া করে পরবর্তীতে পাকড়াও করা হয় বাংলাদেশি ট্রলারটিকে। অবৈধ অনুপ্রবেশ এর অভিযোগে আটক করা হয় এতে থাকা ১৯ জন বাংলাদেশি মৎস্যজীবীকে। বাজেয়াপ্ত করা হয় ট্রলারটি।

বিএসএফ আরো জানায়, আটকের পর দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্তরা অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগের বিপরীতে কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখাতে পারেনি। ফলে জিজ্ঞাসাবাদের পরে তাদের স্থানীয় সুন্দরবন কোস্টাল থানার পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। আজ সোমবার তাদের আলিপুর আদালতে তোলা হবে।

ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাংবিধানিক আদেশ ও গণভোটের সুপারিশ, একমত নয় দলগুলো
  • সাতক্ষীরা সীমান্তে ১৫ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর করল বিএসএফ
  • সাতক্ষীরা সীমান্তে ১৫ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর
  • সুন্দরবনের ভারতীয় অংশের বিএসএফের হাতে আটক ১৯ বাংলাদেশি মৎস্যজীবী
  • সব দলের সম্মতিতে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পক্ষে এবি পার্টি