মৌলভীবাজারে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) হাজতখানার ভেতর থেকে মোকাদ্দুস (৩২) নামে আসামির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি করেছে পিবিআই।

সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ভোরে মৌলভীবাজার জেলা শহরের টিভি হাসপাতাল সড়কে পিবিআইর হাজতখানা থেকে এ লাশ উদ্ধার করা হয়। 

মোকাদ্দুস কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের কোনাগাঁও (বৃন্দাবনপুর) গ্রামের মৃত লাল মিয়ার ছেলে। তিনি আলোচিত লিটন হত্যা মামলার আসামি ছিলেন।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত ৯ আগস্ট কমলগঞ্জ উপজেলার ২ নম্বর পতনঊষার ইউনিয়নের কোনাগাঁও (বৃন্দাবনপুর) গ্রামের ধানক্ষেত থেকে লিটন নামের এক যুবকের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর থেকে মোকাদ্দুস পলাতক ছিলেন। রবিবার রাত ৮টার দিকে কমলগঞ্জ থানায় আত্মসমর্পণ করেন মোকাদ্দুস। পরে তাকে লিটন হত্যার মামলার তদন্ত সংস্থা পিবিআইর কাছে হস্তান্তর করে থানা পুলিশ।

পিবিআই জানিয়েছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর খাওয়া-দাওয়া শেষে মোকাদ্দুসকে ৭-৮ জন আসামির সঙ্গে হাজতখানায় রাখা হয়। সোমবার ভোর ৬টার দিকে ডিউটি অফিসার গিয়ে দেখেন, মোকাদ্দুস নিজের লুঙ্গি দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়েছেন। পরে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও মোকাদ্দুসের পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।

১১ সেপ্টেম্বর লিটনের বাবা সাত্তার মিয়া অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে কমলগঞ্জ থানায় মামলা করেন। এ মামলায় শামিম নামের আরেকজনকেও গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই। 

এ বিষয়ে মৌলভীবাজার পিবিআইর পুলিশ সুপার মো.

জাফর হুসাইন বলেছেন, লিটন হত্যা মামলার তদন্ত আমাদের হাতে। মোকাদ্দুস রবিবার রাতে কমলগঞ্জ থানায় আত্মসমর্পণ করেন। পরে তাকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সোমবার সকালে হাজতখানায় আত্মহত্যা করেন তিনি। বিষয়টি আমরা সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানিয়েছি।

ঢাকা/আজিজ/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ল শ উদ ধ র কমলগঞ জ প ব আইর হ জতখ ন প ব আই

এছাড়াও পড়ুন:

শান্তি স্থাপনের লক্ষ্যে আত্মসমর্পণ ও অস্ত্রত্যাগের প্রস্তাব মাওবাদীদের

ভারতীয় যৌথবাহিনীর সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে সংঘর্ষবিরতির আর্জি জানিয়েছে মাওবাদী ও নকশালবাদীরা। গত ৯ মাসে ২১০ জন সদস্যের মৃত্যুর পর ভারত সরকারের কাছে প্রথমবারের মতো শান্তির দাবি জানাল মাওবাদীরা। সশস্ত্র এই বামপন্থী সংগঠনটির পক্ষে এক প্রেস বিবৃতির মাধ্যমে জানানো হয়েছে, শান্তি স্থাপনের লক্ষ্যে হাতিয়ার ছেড়ে বৈঠকে বসতে রাজি তারা।

মাও-কেন্দ্রীয় কমিটি জানিয়েছে, তারা আত্মসমর্পণ ও অস্ত্রত্যাগ করতে রাজি। যাতে সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে দুই পক্ষ সমাধানের পথে আসতে পারে। তবে সেই আলোচনার পথে সরকার যেন কোনোরকম চালাকি না করে।

আরো পড়ুন:

মাদক পাচারে অভিযুক্ত ১৬ হাজার বিদেশিকে বহিষ্কার করবে ভারত

অনুষ্ঠান করে স্ত্রীকে বিয়ে দিলেন স্বামী

জানা গেছে, গত ১৫ অগাস্ট সরকারকে এই প্রস্তাব পাঠিয়েছিল মাওবাদীরা। 

১৫ অগাস্ট লেখা চিঠিতে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, একমাস ধরে এই সংঘর্ষবিরতি জারি রাখার আর্জি জানিয়েছিল মাওবাদীরা। তারপর নিজেদের মধ্যে আলোচনা চালাতে চায় তারা। মাওবাদীদের সাধারণ সম্পাদক অভয়ের নাম উল্লেখ করা হয়েছে চিঠিতে। তবে মোদি সরকারের পক্ষ থেকে মাওবাদীদের এই চিঠির কোনো জবাব এখনও দেওয়া হয়নি বলেই খবর। 

মাওবাদী নেতা অভয়ের ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই সংঘর্ষ যাতে থামে সেটা আমরাও চাই। আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত বদল করেছি। তবে এই বিষয়ে আমাদের শীর্ষ নেতৃত্বকে জানানো উচিত। যদি সরকার সত্যিই আলোচনা চায় তাহলে আমাদের এক মাসের সময় দেওয়া হোক। এই সময়ে জেলবন্দি শীর্ষ মাওবাদী নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করতে চায় তারা। তবে এই এক মাস যাতে কোনো অভিযান না চলে সেটাও জানানো হয়েছে মাওবাদীদের তরফে।

মাও সংগঠনের বার্তা, “এই সময়কালে তাদের উপর যেন নিরাপত্তবাহিনী কোনোরকম অভিযান না চালায়। সরকার যদি চায় তবে কাল থেকেই ভিডিও কলের মাধ্যমে আলোচনা চালাতে প্রস্তুত আমরা।”

প্রসঙ্গত ২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে এখনও পর্যন্ত নকশাল বিরোধী অভিযানে কেন্দ্র ও রাজ্যে সরকারগুলোর যৌথ নিরাপত্তা বাহিনী উল্লেখ্য সাফল্য অর্জন করেছে। এই সময়ের মধ্যে অন্তত ৪৯৮ জন মাওবাদী নিকেশ হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৬১৬ জনকে।

২০২৬ সালের মার্চ মাসের মধ্যে মাওবাদমুক্ত ভারত গড়ার বার্তা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ছত্তিশগড়ে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর মাওবিরোধী অভিযান আরো গতি পেয়েছে। এরমধ্যে ২০২৪ সালে বস্তার অঞ্চলে নিরাপত্তাবাহিনীর অভিযানে মৃত্যু হয়েছে ২৮৭ জন মাওবাদীর। পাশাপাশি আত্মসমর্পণ করেন ১ হাজার ৬৬৬ জন। ২৪-এর পর ২০২৫ সালে অভিযানের ঝাঁজ আরো বেড়েছে। রিপোর্ট বলছে, গত ৯ মাসে এনকাউন্টারে মৃত্যু হয়েছে ২১০ জন মাওবাদীর। এদের মধ্যে শুধুমাত্র ছত্তিশগড়ে ১৩ জন শীর্ষ মাওবাদী নেতার মৃত্যু হয়েছে। যাদের মাথার দাম ছিল ন্যূনতম ২০ লাখ থেকে এক কোটি রুপি পর্যন্ত। কেবলমাত্র ছত্তিশগড়েই ৬৫টি নতুন সুরক্ষা ক্যাম্প খোলা হয়েছে।

অনুমান করা হচ্ছে, একের পর এক শীর্ষ কমান্ডারের মৃত্যুর পর নকশালদের মনোবল ভেঙে পড়েছে। তারা এখন বেশ কিছুটা ব্যাকফুটে। আশঙ্কার আবহও মাওবাদীদের মধ্যে। আর সে কারণেই তাদের পক্ষ থেকে বারবার সংঘর্ষবিরতির আর্জি জানানো হচ্ছে। তবে সরকার মাওবাদীদের সে দাবি মানবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।

ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শান্তি স্থাপনের লক্ষ্যে আত্মসমর্পণ ও অস্ত্রত্যাগের প্রস্তাব মাওবাদীদের