কাতারে মুসলিম দেশগুলোর জরুরি সম্মেলনে ইসরায়েল প্রশ্নে নেতারা কে কী বললেন
Published: 16th, September 2025 GMT
কাতারের দোহায় আরব ও মুসলিম দেশগুলোর একটি জরুরি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো কাতারের প্রতি সংহতি এবং গত সপ্তাহে দোহায় ইসরায়েলি বোমা হামলার নিন্দা জানিয়েছে।
গতকাল সোমবার আরব লিগ ও ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) যৌথ সম্মেলনে প্রায় ৬০টি সদস্যদেশ অংশ নেয়। এসব দেশের নেতারা বলেছেন, ইসরায়েলের নজিরবিহীন আগ্রাসনের মধ্যে একটি ঐক্যবদ্ধ বার্তা দেওয়ার জন্য এ বৈঠক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গত সপ্তাহে দোহায় হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতাদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল। এ সময় হামাস নেতারা যুক্তরাষ্ট্র–সমর্থিত একটি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করছিলেন। নজিরবিহীন ওই হামলায় অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরব ও মুসলিম দেশগুলোসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে নিন্দার ঝড় ওঠে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক, সম্মেলনে কোন দেশের নেতারা কী বলেছেন:
কাতার
কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি তাঁর স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ‘আমার দেশের রাজধানী একটি বিশ্বাসঘাতী হামলার শিকার হয়েছে। হামাস নেতাদের পরিবার এবং সংগঠনটির আলোচক প্রতিনিধিদলের আবাসস্থলকে লক্ষ্য করে এ হামলা করা হয়।’
শেখ তামিম বলেন, গাজায় যুদ্ধের অবসান ঘটাতে আগ্রহী নয় ইসরায়েল। কারণ, তারা আলাপ-আলোচনা ব্যাহত করার চেষ্টা করছে।
কাতারের আমির বলেন, ‘যদি তারা জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে চায়, তবে কেন সব আলোচককে হত্যা করল? ইসরায়েল যেখানে আমাদের দেশে ড্রোন ও যুদ্ধবিমান পাঠিয়ে হামলা চালাল, সেখানে আমরা কীভাবে ইসরায়েলের প্রতিনিধিদলকে আমন্ত্রণ জানাব?’
শেখ তামিম আরও বলেন, নেতানিয়াহু আরব অঞ্চলকে ইসরায়েলের প্রভাবক্ষেত্র হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছেন। এটি বিপজ্জনক বিভ্রম। ইসরায়েল এখনো তার একগুঁয়ে মনোভাব বজায় রেখে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জেদ দেখাচ্ছে।
তুরস্ক
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেন, ‘একটি রাষ্ট্রের সন্ত্রাসী মানসিকতার মুখোমুখি হচ্ছি আমরা, যা অরাজকতা ও রক্তপাতের ওপর টিকে আছে। এই মানসিকতা স্পষ্টভাবে জাতিসংঘের বিধান লঙ্ঘন করে এবং নিয়মতান্ত্রিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করে। অপরাধের শাস্তি না হওয়ায় এ মানসিকতা বদলাচ্ছে না।’
এরদোয়ান আরও বলেন, ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের মধ্যে লোভী ও রক্তপিপাসু মনোভাব বিদ্যমান। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তিনি বলেন, তারা হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাওয়ার এবং মধ্যপ্রাচ্যকে আরও অরাজকতার দিকে ঠেলে দেওয়ার অপচেষ্টা করছে।
এরদোয়ান বলেন, ইসরায়েলের ওপর অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগ করতে হবে। অতীতের নজির অনুযায়ী এমন চাপ কার্যকর। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুতি, জাতিগত নিধন কিংবা বিভাজন মেনে নিতে পারি না।’
মিসর
মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি বলেন, কাতারের ভূখণ্ডে এই ঘৃণ্য হামলা আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন। এটি একটি বিপজ্জনক নজির স্থাপন করছে।
ফাত্তাহ আল-সিসি বলেন, ‘আমি ইসরায়েলের জনগণকে বলছি, যা এখন ঘটছে তা বিদ্যমান শান্তিচুক্তিগুলোকে ভন্ডুল করে দিচ্ছে। এর ফলাফল ভয়ংকর হবে।’ তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলকে বুঝতে হবে যে তাদের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব জোরজবরদস্তি দিয়ে অর্জিত হবে না, বরং অন্য রাষ্ট্রের আইন ও সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান দেখিয়ে হতে পারে।
ইরান
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, ‘নেতাদের ঐক্য ও সংহতি দৃঢ় করা উচিত, যাতে তাঁরা একজোট হয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারেন। আমাদের এই হুমকির মোকাবিলা করতে হবে। আর কোনো অপরাধ সহ্য করা হবে না। গাজা, বৈরুত কিংবা ইয়েমেনে যা হচ্ছে, তাতে চুপ করে থাকার সুযোগ নেই।’
ইরাক
ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানি বলেছেন, ‘যেকোনো আরব বা ইসলামি দেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা আমাদের সম্মিলিত নিরাপত্তার অবিচ্ছেদ্য অংশ।’
আল-সুদানি আরও বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে শুধু নিন্দা নয়, বরং সমন্বিতভাবে সম্মিলিত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।’
আল–সুদানি একটি যৌথ আরব-ইসলামিক কমিটি গঠন করার প্রস্তাব দেন, যা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ও সাধারণ পরিষদ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক ফোরামে আরব ও মুসলিম দেশগুলোর অবস্থান তুলে ধরবে। একই সঙ্গে যুদ্ধবিরতির জন্য একটি বিস্তৃত রূপরেখা তৈরিরও আহ্বান জানান তিনি।
জর্ডান
জর্ডানের রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহ বলেছেন, ইসরায়েল যে সীমাহীন হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে, তারই জীবন্ত প্রমাণ দোহায় হামলা। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিক্রিয়া হতে হবে স্পষ্ট, দৃঢ় এবং সবচেয়ে বড় কথা—প্রতিরোধমূলক।’
বাদশাহ আবদুল্লাহ জোর দিয়ে বলেন, ইসরায়েলকে মোকাবিলা করা, গাজায় যুদ্ধ থামানো এবং ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুতি ঠেকাতে এই শীর্ষ সম্মেলনকে অবশ্যই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
ফিলিস্তিন
ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানাই, তারা যেন ইসরায়েলের অপরাধ এবং আমাদের দেশ ও জনগণের ওপর বারবার হামলার জন্য দেশটিকে দায়ী ও জবাবদিহি করে। তারা যেন তাদের দায়িত্ব পালন করে। এ ধরনের সহিংসতার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে, সে জন্য আমরা কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাই।’
মাহমুদ আব্বাস আরও বলেন, ‘ইসরায়েলের উগ্র ডানপন্থী সরকার আমাদের অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তার কোনো অংশীদার হতে পারে না। এই দুষ্ট রাষ্ট্র এবং তার আচরণের অবসান ঘটাতে আরব ও মুসলিম দেশগুলোর শক্ত অবস্থান এবং যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।’
মালয়েশিয়া
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, নিন্দা করলে ক্ষেপণাস্ত্র থামবে না। রাষ্ট্রের স্বীকৃতি ফিলিস্তিনকে মুক্ত করবে। কড়া ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কে জড়ানো বন্ধ করার পাশাপাশি সম্পর্ক ছিন্ন করা উচিত।
ইন্দোনেশিয়া
ইন্দোনেশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট জিবরান রাকাবুমিং রাকা বলেন, ‘ফিলিস্তিন প্রশ্ন শুধু ফিলিস্তিনকে কেন্দ্র করে নয়। এটি আমাদের জাতির টিকে থাকা, আমাদের জনগণের মর্যাদা এবং আন্তর্জাতিক আইনের পবিত্রতারও প্রশ্ন।’
ইন্দোনেশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, এই সম্মেলন থেকে শুধু ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সম্মিলিত নিন্দা জানালেই চলবে না। বরং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে কঠোর ও জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।
আরও পড়ুনগাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধন চালাচ্ছে ইসরায়েল: প্রথমবারের মতো বলল জাতিসংঘ৬ ঘণ্টা আগেপাকিস্তান
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ কাতারের প্রতি পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করে হামলার তীব্র নিন্দা জানান। ওই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন এবং একটি ন্যায্য ও স্থায়ী দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানান।
উপসাগরীয় সহযোগিতা সংস্থা
উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের (জিসিসি) মহাসচিব জাসেম মোহামেদ আল-বুদাইয়ি বলেন, ‘আমাদের কৌশলগত অংশীদার যুক্তরাষ্ট্রের কাছে প্রত্যাশা, তারা ইসরায়েলের ওপর নিজেদের প্রভাব ব্যবহার করবে, যাতে তারা এই আচরণ বন্ধ করে।
আরও পড়ুনফিলিস্তিনের পক্ষে জাতিসংঘের সামনে ইহুদিদের অবস্থান৬ ঘণ্টা আগেওআইসি
ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) মহাসচিব হিসেইন ব্রাহিম ত্বহা বলেন, ‘এই সম্মেলন ভয়াবহ ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ও দৃঢ় অবস্থান গ্রহণের একটি সুযোগ।’
ব্রামিহ বলেন, ‘আমরা কাতারের রাষ্ট্রীয় ও ভৌগোলিক সার্বভৌমত্বে হামলার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা পুনর্ব্যক্ত করছি।’
ওআইসির মহাসচিব আরব ও ইসলামি দেশগুলোকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘দৃঢ় সিদ্ধান্ত’ নেওয়ার আহ্বান জানান এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ‘দায়িত্ব নিতে’ ও ইসরায়েলকে তার অপরাধের জন্য জবাবদিহি করতে জোর দেন।
আরব লিগ
আরব লিগের মহাসচিব আহমেদ আবুল গেইত বলেন, অপরাধের প্রতি নীরব থাকা নিজেই একটি অপরাধ। আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘনের প্রতি নীরবতা আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে দুর্বল করে।
আরও পড়ুনযেখানেই থাকুন, হামাস নেতারা রেহাই পাবেন না: নেতানিয়াহুর হুঁশিয়ারি১১ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আহ ব ন জ ন ইসর য় ল র আরও বল ন পদক ষ প সহয গ ত অবস থ ন র জন য বল ছ ন আম দ র ইসল ম ইসর য র অবস অপর ধ র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্পকে ইউক্রেনের পাশে থাকার আহ্বান রাজা চার্লসের
বিশ্বের সবচেয়ে জটিল কিছু সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেছেন ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস। একই সঙ্গে তিনি ‘স্বৈরাচারের (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন) বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন’ দেওয়ার জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান। খবর বিবিসির।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফরের প্রথম দিনে উইন্ডসর ক্যাসলে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে দেওয়া বক্তৃতায় এ কথা বলেন রাজা।
আরো পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ৩ পুলিশ নিহত
সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প
জবাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সম্পর্কের প্রশংসা করে বলেন, এ সম্পর্ককে ‘বিশেষ’ শব্দ দিয়ে যথাযথভাবে বোঝানো যায় না।
উইন্ডসর ক্যাসলে ১৬০ জন অতিথির জন্য আয়োজিত জাঁকজমকপূর্ণ এই নৈশভোজে রাজার বক্তৃতায় দুই দেশের গভীর বন্ধন এবং সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়।
ট্রাম্পের রাষ্ট্রীয় এ সফর চলবে আজ বৃহস্পতিবারও। এদিন নানা অনুষ্ঠানে মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের সঙ্গে অংশ নেবেন ব্রিটিশ রানি ক্যামিলা ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস।
রাজকীয় অ্যাপায়ন শেষে ট্রাম্পের আজকের কর্মসূচি রাজনৈতিক আলোচনায় রূপ নেবে। আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে তার সরকারি বাড়ি চেকার্সে বৈঠক করবেন। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনও হবে।
বুধবারের (১৭ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় ভোজ ছিল আড়ম্বর ও রাজনীতির সমন্বয়ে সাজানো এক বিশেষ আয়োজন। ভোজে রাজা, রানি ও রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের উপস্থিতিতে ট্রাম্পকে স্বাগত জানানো হয় উইন্ডসরে।
উইন্ডসর ক্যাসলের মনোরম প্রাঙ্গণে পৌঁছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও মেলানিয়া রাজকীয় ঘোড়ার গাড়ি থেকে নামেন। সেখানে সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো সেনাদলের অভিবাদন গ্রহণ করেন তারা।
যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।
যুক্তরাষ্ট্রের অতিথিকে স্বাগত জানাতে প্রিন্স ও প্রিন্সেস অব ওয়েলসও উপস্থিত ছিলেন। তারা প্রেসিডেন্ট ও মেলানিয়ার সঙ্গে উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ এক বৈঠকও করেন।
ভোজসভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রিন্স উইলিয়ামের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে তিনি হবেন ‘অসাধারণ সফল নেতা’। প্রিন্সেস অব ওয়েলস ক্যাথরিনকে তিনি আখ্যা দেন ‘উজ্জ্বল, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও সুন্দরী’ হিসেবে।
ট্রাম্পের ঐতিহাসিক এ দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফর প্রমাণ করেছে রাজা ও তাঁর মধ্যে সম্পর্ক বেশ ভালো। সফরে আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজে তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মুহূর্তও দেখা গেছে।
এরপর রাজপ্রাসাদে ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানান রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলা। ট্রাম্প যখন রাজার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন, তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ের ছয়টি কামান থেকে একযোগে ৪১ বার তোপধ্বনি করা হয়। একই সময়ে টাওয়ার অব লন্ডন থেকে একই রকম তোপধ্বনি হয়।
ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানানোর এ আয়োজনে অংশ নেন ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর ১ হাজার ৩০০ সদস্য। ছিল শতাধিক ঘোড়া।
যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।
বিবিসি বলছে, রাজকীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি, বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা থাকবে।
যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফর হলো একধরনের নরম শক্তির কূটনীতি, যা গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য রাজকীয় আকর্ষণ ব্যবহার করে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কেউ নেই।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্টারমার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আর্থিক সেবা, প্রযুক্তি এবং জ্বালানি খাতে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় গড়ে তুলে যুক্তরাজ্যকে আমেরিকান বিনিয়োগের প্রধান গন্তব্য হিসেবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করছেন। এর মাধ্যমে তিনি নিজ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করতে চাইছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফর শুরু হওয়ার সাথে সাথে, মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর সঙ্গে যুক্তরাজ্যে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের একটি বড় প্রযুক্তি চুক্তি ঘোষণা করা হয়েছে। যার মধ্যে মাইক্রোসফট থেকে ২২ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং পারমাণবিক শক্তিতে সহযোগিতা দেখা যাবে।
ট্রাম্পের সফরের আগে গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট যুক্তরাজ্যের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণায় ৫ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প-স্টারমারের বৈঠক থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়িক চুক্তির ঘোষণাও আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ঢাকা/ফিরোজ