রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য ১০টি শর্তে পোষ্য কোটা ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত ভর্তি উপকমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

উপাচার্যের দায়িত্বে নিযুক্ত সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন সভায় সভাপতিত্ব করেন। পরে রাত আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এদিকে পোষ্য কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যা সাতটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা চত্বর থেকে একটি মিছিল বের করা হয়। পরে রাত পৌনে আটটার দিকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডের পাশে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ছাত্রদল, ছাত্রশিবিরসহ রাকসু নির্বাচনের বিভিন্ন প্রার্থী অংশ নিয়েছেন। এ সময় তাঁরা ‘পোষ্য কোটার বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘অ্যাকশন টু অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ প্রভৃতি স্লোগান দিচ্ছেন। রাত সাড়ে আটটার দিকে বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আল শাহরিয়ার (শুভ) বলেন, ‘নির্লজ্জ প্রশাসন পোষ্য কোটা আবার ফিরিয়ে এনেছে। আমরা এখানে রাকসু নির্বাচন বানচালের চেষ্টা লক্ষ করছি। কিন্তু আমরা তা হতে দেব না।’

পোষ্য কোটা পুনর্বহালের ক্ষেত্রে ১০টি শর্ত দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেগুলো হলো শুধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ঔরসজাত সন্তান এই ভর্তির সুযোগ পাবেন; ভর্তির প্রাথমিক আবেদনের জন্য বিজ্ঞাপিত যোগ্যতা ও শর্ত প্রযোজ্য হবে; মেধার ভিত্তিতে ভর্তির জন্য নির্ধারিত আসনসংখ্যার অতিরিক্ত হিসাবে এ প্রক্রিয়ায় ভর্তির বিষয়টি বিবেচনা করা হবে; ভর্তির ক্ষেত্রে প্রাপ্ত নম্বর বিবেচনা করে মেধা অনুসরণ করা হবে; ভর্তির আবেদন বিবেচনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিভাগের নির্ধারিত শর্তাবলিসহ অবশ্যই ন্যূনতম পাস নম্বর থাকতে হবে; কোনো বিভাগে দুজনের অধিক ভর্তির সুযোগ থাকবে না; কোনো শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সন্তানকে তাঁর কর্মরত বিভাগে ভর্তি করানো যাবে না; এ সুবিধার আওতায় নিজেদের মধ্যে ‘অটো মাইগ্রেশন’ ছাড়া শিক্ষার্থীর বিভাগ পরিবর্তনের কোনো সুযোগ থাকবে না; ভর্তির ক্ষেত্রে এবং পরবর্তী সময়ে কোনো অভিভাবকের অনিয়মের আশ্রয় নেওয়ার বিষয় প্রমাণিত হলে ছাত্রত্ব বাতিলসহ সংশ্লিষ্ট অভিভাবকের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত শৃঙ্খলাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে মর্মে অঙ্গীকারনামায় উল্লেখ করতে হবে এবং এ সুবিধার আওতায় ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী কোনোভাবেই আবাসিক হলে আসনের জন্য আবেদন করার সুযোগ পাবেন না।

এর আগে গত ২ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পোষ্য কোটা বাতিল ঘোষণা করেন উপাচার্য সালেহ্ হাসান নকীব। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো পোষ্য কোটা থাকবে না বলে তিনি জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চাই, আমি ১ শতাংশ পোষ্য কোটা রাখারও পক্ষে নই। আমি অঙ্গীকার করছি, এই পোষ্য কোটা রাখা হবে না। ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষেই এটি বাস্তবায়ন করা হবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এটি বাতিল ঘোষণা করা হবে।’

এরপর পোষ্য কোটা পুনর্বহালের দাবিতে কয়েক দফা আন্দোলনে নামেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সর্বশেষ গতকাল বুধবার পোষ্য কোটা পুনর্বহালসহ তিন দাবিতে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়া হয়। দাবি না মানলে ২১ সেপ্টেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর মকর ত উপ চ র য অ য কশন র জন য ভর ত র

এছাড়াও পড়ুন:

ক্রেডিট কার্ডে বাংলাদেশিদের খরচ বেড়েছে যুক্তরাজ্যে

বিদেশে ক্রেডিট কার্ডে বাংলাদেশিদের খরচ করার মোট হিসাব কিছুটা কমলে একক দেশ হিসেবে যুক্তরাজ্যে বেড়েছে। 

দেশের বাইরে বিভিন্ন দেশে গিয়ে বাংলাদেশিরা ক্রেডিট কার্ডে সেবা ও পণ্য কিনে চলতি বছরের জুলাইয়ে ৮৮৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা খরচ করেছেন, যা জুনের চেয়ে ৬৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা কম। জুনে এই ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৯৫৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

আরো পড়ুন:

ট্রাম্পকে ইউক্রেনের পাশে থাকার আহ্বান রাজা চার্লসের

যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ৩ পুলিশ নিহত

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

একসময় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ক্রেডিট কার্ডে বাংলাদেশিরা সবচেয়ে বেশি খরচ করতেন। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এই প্রবণতা ক্রমেই নিম্মমুখী হয়েছে।

যুক্তরাজ্যে ক্রেডিট কার্ডে বাংলাদেশিদের খরচ বেড়েছে, যেখানে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেশ কয়েকটি দেশে বাংলাদেশিরা ক্রেডিট কার্ডে বেশি খরচ করে। এর মধ্যে জুলাইয়ে শীর্ষে রয়েছে ক্রমান্বয়ে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড, ভারত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর। বিদেশে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ডে খরচের ৫০ শতাংশের বেশি এই কয়েকটি দেশে হয়েছে। তবে জুনের চেয়ে জুলাইয়ে যুক্তরাজ্যে বেশি খরচ করেছে বাংলাদেশিরা। বিপরীত দিকে আমেরিকায় খরচ কমিয়েছে।

বাংলাদেশিদের একটি বড় অংশ ভারতে ভ্রমণ ও চিকিৎসার জন্য যেতেন। ভিসা কড়াকড়ির কারণে ভারতে খরচ কমেছে। বিপরীতে যুক্তরাজ্য, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশিদের ভ্রমণ বেড়েছে; ফলে ভারতের চেয়ে খরচও বেড়েছে।

প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চলতি বছরের জুলাইয়ে যুক্তরাজ্যে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশিরা ১৪৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা খরচ করেছেন, যা মোট খরচের ১৬ দশমিক ২১ শতাংশ। যুক্তরাজ্যে খরচের এ অঙ্ক জুনে ছিল ৯৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা। একইভাবে জুলাইয়ে আমেরিকায় ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশিরা ১২১ কোটি ২০ লাখ টাকা খরচ করেছেন, যা মোট খরচের ১৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ। আমেরিকায় খরচের এ অঙ্ক জুনে ছিল ১২১ কোটি ৯০ লাখ টাকা। জুলাইয়ে থাইল্যান্ড গিয়ে বাংলাদেশিরা খরচ করেছেন ৬৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা, যা মোট খরচের ৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ। ভারতে ৬০ কোটি এবং মালয়েশিয়ায় ৫৯ কোটি এবং সিঙ্গাপুর ৫৪ কোটি টাকা কার্ডে খরচ করেছেন বাংলাদেশিরা।  

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, একজন বাংলাদেশি নাগরিক বিদেশে গিয়ে প্রতি বছর ১২ হাজার ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করতে পারেন। এই অর্থ কার্ডের মাধ্যমে খরচ করতে পারেন, আবার বিদেশে যাওয়ার সময় নগদ ডলারও সঙ্গে করে নিয়ে যেতে পারেন। তবে কার্ডের মাধ্যমে ডলার পেমেন্ট করতে গেলে একবারে সর্বোচ্চ ৩০০ ডলার পর্যন্ত খরচ করার সুযোগ রয়েছে।

ঢাকা/নাজমুল/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ