আল্লাহর সান্নিধ্যের পথ একাকীত্ব
Published: 12th, October 2025 GMT
মানুষ স্বভাবতই বন্ধুবৎসল এবং সামাজিক প্রাণী। আমরা প্রিয়জনদের সঙ্গে থাকতে, তাদের সঙ্গে সময় কাটাতে ভালোবাসি। তবে জীবনের যাত্রায় মাঝে মাঝে এমন মুহূর্ত আসে যখন একাকীত্বের ছায়া ঘনিয়ে আসে।
এই একাকীত্ব কখনো ক্ষণস্থায়ী, কখনো দীর্ঘস্থায়ী—কিন্তু এটি সর্বদা কষ্টকর নয়। অনেক সময়, ভিড়ের মাঝেও বা একই ছাদের নিচে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে থেকেও অন্তরের গভীরে একঘেয়ে নীরবতা অনুভূত হয়।
সমাজতত্ত্ব এবং মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে, একাকীত্ব প্রায়শই কষ্টদায়ক একটি অনুভূতি হিসেবে বিবেচিত হয়। মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর মধ্যে অন্যের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন (need to belong) একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। দীর্ঘমেয়াদি একাকীত্ব শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে—যেমন, বিষণ্ণতা, উদ্বেগ, ঘুমের সমস্যা, এমনকি হৃদরোগ এবং জ্ঞানীয় হ্রাসের ঝুঁকি বাড়ায়।
একাকীত্ব সর্বদা নেতিবাচক নয়। ক্ষণিকের জন্য এটি আমাদের নিজেকে জানার, অন্তরকে শুদ্ধ করার এবং আধ্যাত্মিকভাবে গভীরতা লাভের সুযোগ দেয়।একটি রিভিউতে দেখা গেছে যে, শিশু ও কিশোরদের মধ্যে একাকীত্ব মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার সঙ্গে উল্লেখযোগ্যভাবে যুক্ত। এছাড়া, একাকীত্ব মানসিক রোগ যেমন বিষণ্ণতা, অ্যালকোহল অপব্যবহার এবং ব্যক্তিত্ব-জনিত ব্যাধির কারণ হতে পারে। এমনকি সামাজিক বিচ্ছিন্নতা মানসিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে যুক্ত হয়ে জীবনকাল কমিয়ে দিতে পারে।
আরও পড়ুনপার্থিব জাঁকজমক যেন আধ্যাত্মিকতার বাধা না হয়০৭ মে ২০২৫তবু একাকীত্ব সর্বদা নেতিবাচক নয়। ক্ষণিকের জন্য এটি আমাদের নিজেকে জানার, অন্তরকে শুদ্ধ করার এবং আধ্যাত্মিকভাবে গভীরতা লাভের সুযোগ দেয়। বিশেষ করে ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে, একাকীত্বকে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের একটি দরজা হিসেবে দেখা হয়।
মুফতি ইসমাইল মেন্ক বলেছেন, ‘আপনি যখন একাকীত্ব অনুভব করবেন তখন নিজেকে স্মরণ করিয়ে দেবেন, আল্লাহ–তায়ালা অন্য সবাইকে দূরে সরিয়ে নিয়েছেন যেন তখন আপনার অন্তরে শুধু তিনিই থাকতে পারেন।’
দুনিয়ার চাকচিক্য এবং ব্যস্ততায় আমরা প্রায়ই প্রতিপালকের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করি। হয়তো তাই আল্লাহ আমাদের একা করে দেন, যাতে আমরা তাঁর কাছে ফিরে আসি। একাকীত্বে নিজেকে জানা, অন্তরকে হালকা করা এবং প্রতিপালকের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার বিকল্প খুব কম।
পূর্বসূরিদের বিভিন্ন লেখায় ‘একা থাকা’কে অপ্রত্যাশিত ‘আশীর্বাদ’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, যা আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির দিকে নিয়ে যায়।পূর্বসূরিদের বিভিন্ন লেখায় ‘একা থাকা’কে অপ্রত্যাশিত ‘আশীর্বাদ’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, যা আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির দিকে নিয়ে যায়।
কিছুকালের জন্য একাকীত্ব মোটেও খারাপ নয়—বরং এটি মহা সুফল বয়ে আনতে পারে। যে ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্য করে, সে কখনো সত্যিকারের একাকীত্ব অনুভব করে না। একাকীত্বকে সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য লাভের সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করলে অন্তরে শান্তি এবং তৃপ্তি আসে।
মুসলিম সমাজে একাকীত্ব মোকাবিলায় আধ্যাত্মিক অনুশীলন, যেমন দোয়া এবং সাম্প্রদায়িক সংযোগ, একটি সমন্বিত পদ্ধতি হিসেবে সুপারিশ করা হয়।
আরও পড়ুনপবিত্র কোরআনের পাঁচটি আশার আলো ছড়ানো আয়াত২১ মে ২০২৫একটি অন্তর শীতলকারী হাদিস এই একাকীত্বের মর্যাদা আরও উজ্জ্বল করে। আবু হুরায়রা (রা.
এই হাদিস আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, একাকীত্ব যদি আল্লাহর স্মরণে রূপান্তরিত হয়, তাহলে এটি কিয়ামতের দিনের ছায়ার মতো একটি বিশেষ মর্যাদা লাভ করে।
তো ভয় কী আর একা হতে! সবাই এসেছি একা, যেতে হবে তো একাই। মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে একাকীত্বের স্বাদ নিন—সবার মাঝে থেকেও একা হয়ে যান। তখনই আপনি অনুভব করবেন আল্লাহর সান্নিধ্যে অন্তরের কতটা শান্তি।
হে আল্লাহ, আপনার সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার জন্য একাকীত্বকে আমাদের জন্য প্রশান্তিকর করে দিন। আমরা যেন এই একাকীত্বকে কষ্টের পরিবর্তে আপনার নৈকট্যের সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করি। আমিন।
আরও পড়ুনমাতৃত্বের কষ্ট সহ্য করা ইবাদত২২ জুন ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এক ক ত ব ম আল ল হ আম দ র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
সম্পদ ও সন্তান লাভের জন্য প্রার্থনা
জীবনের এমন অনেক মুহূর্ত আসে যখন মনে হয়, সবকিছু যেন থমকে দাঁড়িয়েছে। আয়ের উৎস শুকিয়ে যাওয়া, পরিবারের উদ্বেগ বাড়তে থাকা বা জীবনে বরকতের অভাব—এসব চাপে মানুষের মন ভারী হয়ে ওঠে। ইসলামে এমন সময়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
এমন একটি দোয়া মহানবী মুহাম্মদ (সা.) তাঁর সেবক আনাস ইবনে মালিক (রা.)-এর জন্য করেছিলেন। এই দোয়া শুধু ধন-সম্পদ ও সন্তানের বৃদ্ধি চায় না, বরং সবকিছুতে আল্লাহর বরকত কামনা করে।
দোয়ার উৎস ও প্রেক্ষাপটহাদিসে বর্ণিত, আনাস (রা.)-এর মা উম্মে সুলাইম নবীজিকে বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আপনার এই সেবক আনাসের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করুন।’ তখন নবীজি (সা.) দোয়া করেন: ‘আল্লাহুম্মা আকসির মালাহু ওয়া ওয়ালাদাহু, ওয়া বারিক লাহু ফীমা আ'তাইতাহু।’
এই দোয়ার ফলাফল অবিশ্বাস্য: আনাস (রা.) ১০৩ বছর বেঁচে ছিলেন এবং পৌত্রাদি মিলিয়ে তিনি ১২০-এরও বেশি সন্তান লাভ করেন। তাঁর জীবন ছিল বরকতের জীবন্ত উদাহরণ।আরও পড়ুনতাকওয়া মুমিনের সবচেয়ে বড় সম্পদ৩০ জুন ২০২৫অর্থাৎ, হে আল্লাহ! তার ধন-সম্পদ ও সন্তান বাড়িয়ে দাও এবং তুমি যা দান করেছ, তাতে তার জন্য বরকত দান করো। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৩৪৪)
আনাস (রা.) তখন মাত্র দশ বছরের একটি ছেলে, যিনি নবী (সা.)-এর সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। এই দোয়ার ফলাফল অবিশ্বাস্য: আনাস (রা.) ১০৩ বছর বেঁচে ছিলেন এবং তাঁর তিনি পৌত্রাদি মিলিয়ে ১২০-এরও বেশি সন্তান লাভ করেন (সহিহ মুসলিম থেকে বর্ণিত)। তাঁর জীবন ছিল বরকতের জীবন্ত উদাহরণ।
দোয়ার উদ্দেশ্য শুধু ধন নয়, বরকতএই দোয়ার সৌন্দর্য এতে যে এটি ধন-সম্পদের পাশাপাশি বরকতের জন্য প্রার্থনা করে। ইসলামে ধনকে শুধু সঞ্চয় নয়, বরং আল্লাহর নেয়ামত হিসেবে দেখা হয়। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘ধন বেড়ে গেলেও যদি বরকত না থাকে, তাহলে তা ধুলোর মতো উড়ে যায়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৪৩৯)
আরও পড়ুনসন্তান প্রতিপালনে ধর্মের দাবি১৯ মে ২০২৫ধন বেড়ে গেলেও যদি বরকত না থাকে, তাহলে তা ধুলোর মতো উড়ে যায়।’সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৪৩৯আধুনিক জীবনে এর প্রাসঙ্গিকতা আরও বেশি। অর্থনৈতিক সংকট, চাকরির অনিশ্চয়তা বা পরিবারের চাপে অনেকে কষ্ট পান। কিন্তু এই দোয়া স্মরণ করিয়ে দেয় যে, সত্যিকারের সমৃদ্ধি আল্লাহর রহমতে। সন্তানের ক্ষেত্রেও তাই—সন্তান লাভের সঙ্গে তাদের সুস্থতা, শান্তি ও ইমানের বরকত চাওয়া জরুরি।
আজকের দিনে, যখন পরিবারের আকার ছোট হচ্ছে এবং অর্থের চাপ বাড়ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ধর্মীয় অনুশীলন (যেমন দোয়া) মানসিক চাপ কমায় এবং জীবনে ইতিবাচকতা বাড়ায়। ইসলামি ঐতিহ্যে এই দোয়া শুধু ব্যক্তিগত নয়, পরিবারের জন্যও ব্যবহার করা যায়।
দোয়ার সঙ্গে সদকা দেওয়া, কোরআন তিলাওয়াত এবং হালাল উপার্জনের চেষ্টা করুন—এগুলো বরকতের দরজা খোলে।
আরও পড়ুনসন্তান প্রতিপালনে মহানবী (সা.)-এর ১০টি নির্দেশনা২০ আগস্ট ২০২৫