রাজশাহীর তানোরে কোচিং সেন্টারে গিয়ে ‘মব’ সৃষ্টি করে এক শিক্ষককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন কয়েকজন যুবক। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি কোচিং সেন্টারের ছাত্রীদের হোয়াটসঅ্যাপে আপত্তিকর বার্তা পাঠান। তবে, এ অভিযোগের কোনো প্রমাণ পায়নি পুলিশ।

তানোরের মুণ্ডুমালায় ঘটনাটি ঘটেছে গত শুক্রবার। সোমবার (১৩ অক্টোবর) একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে, কোচিংয়ের শিক্ষক রোকনুজ্জামান রোকন তার চেয়ারে বসে আছেন। কয়েকজন যুবক তাকে অশ্লীল ভাষায় গালি দিচ্ছেন। একপর্যায়ে মো.

শাকিব নামের এক যুবক তাকে চড়-থাপ্পড় মারেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুণ্ডুমালা বাজারে অবস্থিত অ্যাডভান্স কোচিং সেন্টারে এ ঘটনা ঘটে। এখানে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কোচিং করানো হয়। ভুক্তভোগী শিক্ষকের নাম রোকনুজ্জামান রোকন। মুণ্ডুমালা পৌরসভার মোহাম্মদপুর মহল্লায় তার বাড়ি। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী ও কোচিং সেন্টারের পরিচালক।

অভিযুক্ত শাকিবের বাড়ি পৌর এলাকার কাদিপুর মহল্লায়। ভিডিও ভাইরালের পর থেকে তিনি এলাকায় নেই। কোচিং সেন্টারও বন্ধ আছে। শতাধিক শিক্ষার্থী এ কোচিং সেন্টারে পড়েন।

ভুক্তভোগী শিক্ষক রোকনুজ্জামান রোকন বলেছেন, “আমরা কয়েকজন মিলে কোচিং সেন্টারটি চালাই। মুণ্ডুমালায় আরো কয়েকটি কোচিং সেন্টার থাকলেও আমাদেরটি ভালো চলত। সেজন্য ষড়যন্ত্র করে আমাদের কোচিং সেন্টারটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।”

তিনি বলেন, “আমি নাকি ছাত্রীদের হোয়াটসঅ্যাপে আপত্তিকর ম্যাসেজ দিয়েছি। কিন্তু এর কোনো প্রমাণ নেই। এই ছেলেগুলো আগে আওয়ামী লীগ-যুবলীগ করত। ৫ আগস্টের পর তারা বিএনপি-যুবদল হয়ে গেছে। তারা মব সৃষ্টি করে আমাকে মারধর করে এবং কোচিং সেন্টারটি বন্ধ করে দেয়। আসলে তাদের অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই। তাহলে মারধরের সময় তো মেয়েরাও থাকত। সেখানে কোনো মেয়ে ছিল না।”

তিনি আরো বলেন, “যখন আমাকে মারধর করা হয়, তখনো তিনজন শিক্ষক ক্লাস নিচ্ছিলেন। তারা মুণ্ডুমালা পুলিশ ফাঁড়িতে খবর দেন। পুলিশ এসে আমাকে ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। কিন্তু, অভিযোগের কোনো প্রমাণ পায়নি বলে আমাকে ছেড়ে দেয়। এখন আমি আমার ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করে মামলা-মোকদ্দমা করতে যাইনি। ভয়ে কোচিং সেন্টারও খুলতে পারছি না।”

মুণ্ডুমালা পৌর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক রেজাউল ইসলাম বলেছেন, “রোকনুজ্জামান আমার পরিচিত। তাকে ভালোই মনে হয়। কেন এ ঘটনা ঘটল, তা জানি না। যারা ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের বিএনপি বা যুবদলে কোনো পদ নেই। এমনিই তারা ওঠা-বসা করতে পারে।”

অভিযোগের বিষয়ে জানতে শাকিবকে কয়েক দফায় ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। তার বাবা মো. ভুট্টু বলেছেন, “ঘটনার ব্যাপারে লোকমুখে শুনেছি। কী হয়েছে, সঠিক বলতে পারছি না। যারা ঘটনাস্থলে গিয়েছিল, তারাই বলতে পারবে। আমার ছেলে তো নাই। সে রাজশাহীতে আছে।”

মুণ্ডুমালা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ কমলেশ হেমব্রম বলেছেন, ‘রোকনুজ্জামান মব জাস্টিসের মধ্যে পড়ে গিয়েছিল। পুলিশ গিয়ে তাকে নিরাপদে বের করে এনেছে। আপাতত কোচিং সেন্টার বন্ধ আছে। তবে, তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তার সত্যতা আমরা পাইনি। এ ব্যাপারে কোনো পক্ষ অভিযোগও করেনি। অভিযোগ পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকা/কেয়া/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বল ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

এইচএসসি পরীক্ষার্থী সাদিয়া এক দিনের নরওয়ের রাষ্ট্রদূত

এইচএসসি পরীক্ষার্থী সাদিয়া এক দিনের জন্য গত শনিবার (১১ অক্টোবর) বাংলাদেশে নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পঞ্চগড়ে জন্ম ও বেড়ে ওঠা সাদিয়া সব সময় ন্যায়বিচার ও সমতার পক্ষে কাজ করে আসছেন এবং ইতিমধ্যে শিশু অধিকার ও জেন্ডার সমতার একজন তরুণ কণ্ঠস্বর হিসেবে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন।

এ বছরের আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস পালিত হয়েছে ১১ অক্টোবর। এবারের বৈশ্বিক প্রতিপাদ্য ‘The girl I am, the change I lead: Girls on the frontlines of crisis’ এবং জাতীয় প্রতিপাদ্য ‘আমি কন্যাশিশু—স্বপ্ন গড়ি, সাহসে লড়ি, দেশের কল্যাণে কাজ করি।’ এ প্রতিপাদ্যগুলোই মনে করিয়ে দেয় যে সংকটের সময় মেয়েরাই পরিবর্তনের অগ্রভাগে থাকে।

এ ব্যাপারে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্লান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ জানিয়েছে, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের বৈশ্বিক এ কর্মসূচির অংশ হিসেবে কিশোরীরা প্রতীকীভাবে বিভিন্ন দূতাবাস, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও উন্নয়ন সংস্থার নেতৃত্বে আসছে। এই উদ্যোগে কিশোরীরা প্রতীকীভাবে দূতাবাস, সরকারি দপ্তর, উন্নয়ন সংস্থা ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বের আসনে এক দিনের জন্য অধিষ্ঠিত হয়—নেতৃত্ব বিকাশ ও প্রচলিত ধ্যানধারণাকে চ্যালেঞ্জ করার লক্ষ্যে।

সাদিয়া বলেন, ‘এই টেকওভার উদ্যোগ আমাকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। আমি আশা করি, আমার এই অভিজ্ঞতা অন্য কিশোরীদেরও উৎসাহিত করবে নিজেদের মূল্যবোধে বিশ্বাস রাখতে এবং এমন একটি পৃথিবী গড়তে, যেখানে সমতা বাস্তবতা হয়ে উঠবে।’

পঞ্চগড়ে জন্ম ও বেড়ে ওঠা সাদিয়া ন্যায়বিচার ও সমতার পক্ষে কাজ করে আসছেন

সম্পর্কিত নিবন্ধ