পৃথিবীতে মানুষ আবির্ভূত হওয়ার পর থেকে প্রায় তিন লাখ বছর ধরে প্রাণিজগতে সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রজাতি হিসেবে টিকে আছে মানুষ। কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের দ্রুত উন্নতি সেই শ্রেষ্ঠত্বের অবস্থানকে দীর্ঘদিন অক্ষুণ্ন রাখবে কি না, তা নিয়ে এখনই প্রশ্ন উঠছে। বিজ্ঞানীদের একাংশ মনে করছেন, এমন এক সময় দ্রুত এগিয়ে আসছে, যখন এআই প্রযুক্তি মানুষের মস্তিষ্কের ক্ষমতাকেও ছাড়িয়ে যাবে। এ মুহূর্তটিকেই তাঁরা বলছেন ‘সিঙ্গুলারিটি’। যে বিন্দু থেকে শুরু হবে এমন এক যুগ, যেখানে যন্ত্র চিন্তা করবে মানুষের চেয়েও দ্রুত ও নিখুঁতভাবে। সম্প্রতি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান এআইমাল্টিপল একটি বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে ৮ হাজার ৫৯০ জন বিজ্ঞানী ও উদ্যোক্তার পূর্বাভাস পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সিঙ্গুলারিটির সম্ভাব্য সময়সীমা ক্রমেই কাছাকাছি চলে আসছে। ১০ বছর আগেও বিজ্ঞানীরা মনে করতেন, ২০৬০ সালের আগে এআই মানুষের বুদ্ধিমত্তাকে ছাড়িয়ে যেতে পারবে না। কিন্তু এখন অনেক বিশেষজ্ঞই বলছেন, সেই সময় হয়তো আর দূরে নয়। সম্ভবত কয়েক বছরের মধ্যেই ঘটতে পারে এই ঐতিহাসিক পরিবর্তন।

গণিতে ‘সিঙ্গুলারিটি’ শব্দটি বোঝায় এমন এক বিন্দু, যেখানে পদার্থ এত ঘন হয়ে যায় যে পদার্থবিজ্ঞানের প্রচলিত নিয়ম সেখানে আর কার্যকর থাকে না। পরে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির লেখক ভার্নর ভিঞ্জ ও ভবিষ্যদ্বেত্তা রে কার্জওয়েল এই ধারণাটিকে প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে মিলিয়ে নতুন অর্থে ব্যবহার করেন। তাদের ব্যাখ্যায়, প্রযুক্তিগত সিঙ্গুলারিটি এমন এক পর্যায়, যখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং নিজেই নিজের উন্নয়ন ঘটাতে শুরু করে। অর্থাৎ এমন এক বিন্দু, যেখানে এআইয়ের বুদ্ধিমত্তা মানুষের সম্মিলিত জ্ঞানের সীমা অতিক্রম করে যায়। এ বিষয়ে এআইমাল্টিপলের প্রধান বিশ্লেষক সেম দিলমেগানি বলেন, ‘সিঙ্গুলারিটি একটি কাল্পনিক ঘটনা, যা ঘটলে যন্ত্রের বুদ্ধিমত্তা হঠাৎ করেই বিস্ফোরণের মতো বৃদ্ধি পাবে। এ অবস্থায় একটি সিস্টেম মানুষের মতো চিন্তা করতে পারবে, কিন্তু গতিতে হবে অতিমানবীয় এবং স্মৃতিতে প্রায় নিখুঁত। সিঙ্গুলারিটি ঘটলে যন্ত্রে চেতনার জন্মও হতে পারে। তবে চেতনা কী, তা এখনো স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত না হওয়ায় বিষয়টি এখনো অনুমানের পর্যায়েই রয়ে গেছে।’

সিঙ্গুলারিটি একদিন ঘটবেই এ বিষয়ে বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞ একমত। তবে কবে ঘটবে, সে বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রতিষ্ঠান অ্যানথ্রপিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) দারিও আমোদি তাঁর লেখা ‘মেশিনস অব লাভিং গ্রেস’ প্রবন্ধে জানিয়েছেন, ২০২৬ সালেই সিঙ্গুলারিটি ঘটতে পারে। তখনকার এআই বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নোবেলজয়ী মানুষের চেয়েও বুদ্ধিমান হবে। ফলে তথ্য বিশ্লেষণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের মতো বিষয় মানুষের চেয়ে ১০ থেকে ১০০ গুণ দ্রুত করবে।

এমন পূর্বাভাস শুনে অনেকেরই অবিশ্বাস জাগতে পারে। তবু এই আশাবাদ পুরোপুরি ভিত্তিহীন নয়। সেম দিলমেগানির মতে, জেনারেটিভ এআইয়ের অগ্রগতি এত দ্রুত গতিতে ঘটছে, যা অধিকাংশ বিশেষজ্ঞকেই অবাক করেছে। এ কারণেই সিঙ্গুলারিটি নিয়ে পূর্বাভাসগুলো এখন অনেক দ্রুত এগিয়ে আসছে। বর্তমানে শীর্ষ এআই মডেলগুলোর সক্ষমতা গড়ে প্রতি সাত মাসে দ্বিগুণ হচ্ছে। এই প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ‘বুদ্ধিমত্তার বিস্ফোরণ’ ঘটার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

সূত্র: ডেইলি মেইল

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব দ ধ মত ত এমন এক

এছাড়াও পড়ুন:

এআই প্রযুক্তি কি মানুষের মস্তিষ্কের ক্ষমতাকেও ছাড়িয়ে যাবে

পৃথিবীতে মানুষ আবির্ভূত হওয়ার পর থেকে প্রায় তিন লাখ বছর ধরে প্রাণিজগতে সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রজাতি হিসেবে টিকে আছে মানুষ। কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের দ্রুত উন্নতি সেই শ্রেষ্ঠত্বের অবস্থানকে দীর্ঘদিন অক্ষুণ্ন রাখবে কি না, তা নিয়ে এখনই প্রশ্ন উঠছে। বিজ্ঞানীদের একাংশ মনে করছেন, এমন এক সময় দ্রুত এগিয়ে আসছে, যখন এআই প্রযুক্তি মানুষের মস্তিষ্কের ক্ষমতাকেও ছাড়িয়ে যাবে। এ মুহূর্তটিকেই তাঁরা বলছেন ‘সিঙ্গুলারিটি’। যে বিন্দু থেকে শুরু হবে এমন এক যুগ, যেখানে যন্ত্র চিন্তা করবে মানুষের চেয়েও দ্রুত ও নিখুঁতভাবে। সম্প্রতি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান এআইমাল্টিপল একটি বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে ৮ হাজার ৫৯০ জন বিজ্ঞানী ও উদ্যোক্তার পূর্বাভাস পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সিঙ্গুলারিটির সম্ভাব্য সময়সীমা ক্রমেই কাছাকাছি চলে আসছে। ১০ বছর আগেও বিজ্ঞানীরা মনে করতেন, ২০৬০ সালের আগে এআই মানুষের বুদ্ধিমত্তাকে ছাড়িয়ে যেতে পারবে না। কিন্তু এখন অনেক বিশেষজ্ঞই বলছেন, সেই সময় হয়তো আর দূরে নয়। সম্ভবত কয়েক বছরের মধ্যেই ঘটতে পারে এই ঐতিহাসিক পরিবর্তন।

গণিতে ‘সিঙ্গুলারিটি’ শব্দটি বোঝায় এমন এক বিন্দু, যেখানে পদার্থ এত ঘন হয়ে যায় যে পদার্থবিজ্ঞানের প্রচলিত নিয়ম সেখানে আর কার্যকর থাকে না। পরে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির লেখক ভার্নর ভিঞ্জ ও ভবিষ্যদ্বেত্তা রে কার্জওয়েল এই ধারণাটিকে প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে মিলিয়ে নতুন অর্থে ব্যবহার করেন। তাদের ব্যাখ্যায়, প্রযুক্তিগত সিঙ্গুলারিটি এমন এক পর্যায়, যখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং নিজেই নিজের উন্নয়ন ঘটাতে শুরু করে। অর্থাৎ এমন এক বিন্দু, যেখানে এআইয়ের বুদ্ধিমত্তা মানুষের সম্মিলিত জ্ঞানের সীমা অতিক্রম করে যায়। এ বিষয়ে এআইমাল্টিপলের প্রধান বিশ্লেষক সেম দিলমেগানি বলেন, ‘সিঙ্গুলারিটি একটি কাল্পনিক ঘটনা, যা ঘটলে যন্ত্রের বুদ্ধিমত্তা হঠাৎ করেই বিস্ফোরণের মতো বৃদ্ধি পাবে। এ অবস্থায় একটি সিস্টেম মানুষের মতো চিন্তা করতে পারবে, কিন্তু গতিতে হবে অতিমানবীয় এবং স্মৃতিতে প্রায় নিখুঁত। সিঙ্গুলারিটি ঘটলে যন্ত্রে চেতনার জন্মও হতে পারে। তবে চেতনা কী, তা এখনো স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত না হওয়ায় বিষয়টি এখনো অনুমানের পর্যায়েই রয়ে গেছে।’

সিঙ্গুলারিটি একদিন ঘটবেই এ বিষয়ে বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞ একমত। তবে কবে ঘটবে, সে বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রতিষ্ঠান অ্যানথ্রপিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) দারিও আমোদি তাঁর লেখা ‘মেশিনস অব লাভিং গ্রেস’ প্রবন্ধে জানিয়েছেন, ২০২৬ সালেই সিঙ্গুলারিটি ঘটতে পারে। তখনকার এআই বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নোবেলজয়ী মানুষের চেয়েও বুদ্ধিমান হবে। ফলে তথ্য বিশ্লেষণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের মতো বিষয় মানুষের চেয়ে ১০ থেকে ১০০ গুণ দ্রুত করবে।

এমন পূর্বাভাস শুনে অনেকেরই অবিশ্বাস জাগতে পারে। তবু এই আশাবাদ পুরোপুরি ভিত্তিহীন নয়। সেম দিলমেগানির মতে, জেনারেটিভ এআইয়ের অগ্রগতি এত দ্রুত গতিতে ঘটছে, যা অধিকাংশ বিশেষজ্ঞকেই অবাক করেছে। এ কারণেই সিঙ্গুলারিটি নিয়ে পূর্বাভাসগুলো এখন অনেক দ্রুত এগিয়ে আসছে। বর্তমানে শীর্ষ এআই মডেলগুলোর সক্ষমতা গড়ে প্রতি সাত মাসে দ্বিগুণ হচ্ছে। এই প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ‘বুদ্ধিমত্তার বিস্ফোরণ’ ঘটার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

সূত্র: ডেইলি মেইল

সম্পর্কিত নিবন্ধ