আমাদের আগে ৫০ ওভার ব্যাটিং করতে হবে: মিরাজ
Published: 15th, October 2025 GMT
ওয়ানডে ক্রিকেট বাংলাদেশের গর্বের জায়গা ছিল। ২০১৫ বিশ্বকাপের পর থেকে যে গতিতে পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটে এগিয়েছে বাংলাদেশ, তা বিশ্ব ক্রিকেটের জন্যও বিরাট পাওয়া।
২০১৫ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা, ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে যাওয়া, ঘরের মাঠ ও বাইরে একাধিক বড় সিরিজ জয় বাংলাদেশকে এই ফরম্যাটে এগিয়ে নিয়েছিল বহুদূর।
অথচ সময়ের ব্যবধানে পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে আফগানিস্তানের কাছেও হোয়াইটওয়াশ হতে হয় বাংলাদেশকে। আবুধাবিতে গতকাল ২০০ রানে ম্যাচ হেরেছে বাংলাদেশ। যা আফগানিস্তানের ক্রিকেট ইতিহাসের দ্বিতীয় বড় জয়। বাংলাদেশকে তারা ৯৩ রানে অলআউট করেছে।
দলের মাত্র এক ব্যাটসম্যান সাইফ হাসান কেবল দুই অঙ্কে যেতে পারেন। বাকিরা ছিলেন নিষ্প্রভ। উইকেটে গিয়েছেন, খাবি খেয়েছেন, ফিরে এসেছেন। ব্যাটসম্যানদের দায়িত্ববোধের বিশাল ঘাটতি আছে তা বারবারই বলে আসছেন অধিনায়ক মিরাজ।
এই অবস্থা থেকে উতরানোর পথ একটাই রান করা। ব্যাটিংয়ে পর্যাপ্ত স্কোর করা। এজন্য খেলতে হবে পুরোপুরি ৫০ ওভার। যেই কাজটা করতেই পারছে না দল। আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ওয়ানডেতেই কোনোটিতেই ৫০ ওভার ব্যাটিং করতে পারেনি দল।
সবশেষ গতকাল ৯৩ রানে অলআউট হওয়া ম্যাচে ২৭.
‘‘আমরা স্বীকার করছি যে, আমরা এই সিরিজে ভালো খেলিনি। আমরা রান পাচ্ছি না, আমাদের সুযোগ ছিল কিন্তু আমরা তা কাজে লাগাতে পারিনি। সবাই মেনে নিয়েছে যে আমরা ভালো খেলছি না। তাদের বোলিং আক্রমণ ভালো কিন্তু আমাদের তা সামলাতে হবে।’’
‘‘আমরা বিশেষ কিছু জায়গা নিয়ে চিন্তিত, যেমন অনেক বেশি উইকেট নষ্ট করা। আমাদের টপ এবং মিডল অর্ডারে এবং তারপর শেষের দিকে দায়িত্ব নিতে হবে। আমরা কীভাবে আরও ভালো করা যায় তা নিয়ে কথা বলব।’’
‘‘আমাদের ৫০ ওভার খেলতে হবে, শেষ তিনটি ম্যাচ আমরা তা করতে পারিনি।’’ - বলেছেন মিরাজ।
তবে নিজেদের ভুল শুধরানোর তেমন সুযোগ পাচ্ছেন না মিরাজরা। ১৮ অক্টোবর বাংলাদেশের হোম সিরিজ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। আজ দেশে ফিরে বিশ্রামে থাকবে দল। একদিনের অনুশীলনেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দল মাঠে নামবে।
এখনও দল ঘোষণা করেননি নির্বাচকরা। আজ দেশে ফিরলে কোচিং স্টাফদের সঙ্গে তাদের একটি বৈঠক হওয়ার কথা। সেখানেই সিরিজের রূপরেখা তৈরি হবে।
ঢাকা/ইয়াসিন
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
প্রতি চারজনের মধ্যে তিনজন নারী স্বামীর সহিংসতার শিকার: জরিপ
দেশে প্রতি চারজন নারীর মধ্যে তিনজনের সঙ্গে জীবনে অন্তত একবার জীবনসঙ্গী বা স্বামী সহিংস আচরণ করেছেন।
শারীরিক, যৌন, মানসিক, অর্থনৈতিক সহিংসতা ও নিয়ন্ত্রণমূলক আচরণের শিকার হয়েছেন নারী। তবে সামগ্রিকভাবে এই সহিংসতার হার ২০১৫ সালের চেয়ে প্রায় ১৭ শতাংশ কমে এসেছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও বাংলাদেশে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের ‘নারীর প্রতি সহিংসতা জরিপ ২০২৪’-এ এমন তথ্য জানানো হয়েছে।
আজ সোমবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। ফলাফল তুলে ধরেন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর উপপরিচালক মিনাক্ষী বিশ্বাস।
জরিপের ফলাফলে বলা হয়েছে, দেশের ৭৬ শতাংশ নারীকেই জীবনে অন্তত একবার জীবনসঙ্গীর সহিংসতার শিকার হতে হয়েছে। তাদের মধ্যে ৪৯ শতাংশ গত এক বছরে এ ধরনের সহিংসতার শিকার হয়েছেন। সহিংসতার শিকার হওয়া তিনজনের মধ্যে দুজন ভুক্তভোগী (৬২ শতাংশ) তাঁদের অভিজ্ঞতা কখনো প্রকাশ করেননি।
জরিপের ফলাফলে আরও বলা হয়েছে, ১৫ শতাংশ নারী ১৫ বছর বয়স থেকে সঙ্গী নন এমন ব্যক্তির মাধ্যমে শারীরিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। ২ শতাংশের বেশি যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। তবে স্বামীর সহিংস আচরণ ২০১৫ সালে ৬৬ শতাংশ থেকে কমে ২০২৪ সালে ৪৯ শতাংশে নেমে এসেছে।
জরিপে আরও বলা হয়, কম বয়স, যৌতুক প্রথা, স্বামীর মাদকাসক্তি বা বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক এবং শহুরে বস্তিতে বসবাস করা নারীরা স্বামীর মাধ্যমে বেশি সহিংসতার শিকার হন। স্বামীর উচ্চতর শিক্ষা সহিংসতার ঝুঁকি কমায়। কম বয়স, সীমিত শিক্ষা ও প্রতিবন্ধিতার কারণে নারীরা সঙ্গী নয় এমন ব্যক্তির কাছে বেশি সহিংসতার শিকার হন।
যৌন সহিংসতা বেশি
জরিপের ফলাফলে বলা হয়েছে, অর্ধেকের বেশি নারী (৫৪ শতাংশ) জীবদ্দশায় স্বামীর মাধ্যমে শারীরিক বা যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। যৌন সহিংসতার শিকার নারীদের মধ্যে ৬০ শতাংশ গত ১২ মাসে একাধিকবার সহিংসতার সম্মুখীন হয়েছেন।
বিবাহিত নারীদের মধ্যে ৭ শতাংশের বেশি অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় শারীরিক সহিংসতা এবং ৫ শতাংশের বেশি যৌন সহিংসতার সম্মুখীন হয়েছেন।
ফলাফলে আরও বলা হয়েছে, শাশুড়ি ও পুরুষ আত্মীয়রা নারীর সঙ্গে শারীরিক সহিংসতার ঘটনায় বেশি জড়িত। আর পুরুষ আত্মীয়, বন্ধু ও পরিচিতজনের মাধ্যমে নারীরা বেশি যৌন সহিংসতার শিকার হন।
ডিজিটাল মাধ্যমেও সহিংসতা
জরিপের ফলাফল থেকে দেখা যায়, ৮ দশমিক ৩ শতাংশ নারী প্রযুক্তির মাধ্যমে জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এগুলো যৌন ব্ল্যাকমেল, ছবি নিয়ে অপব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণমূলক আচরণের সঙ্গে সম্পর্কিত।
পরিষেবা চাওয়ার হার কম
জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, সহিংসতার শিকার নারীদের মধ্যে পরিষেবা চাওয়ার হার উদ্বেগজনকভাবে কম। জরিপের ফলাফল বলছে, মাত্র ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ সহিংসতার শিকার নারী চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন। স্বামীর কাছে সহিংসতার শিকার নারীদের মধ্যে মাত্র ৭ দশমিক ৪ শতাংশ আইনি পদক্ষেপ নিয়েছেন এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্থানীয় নেতার কাছ থেকেই সহায়তা চেয়েছেন।
অন্যদিকে জীবনসঙ্গী নয়, সহিংসতার শিকার নারীদের মধ্যে মাত্র ৩ দশমিক ৮ শতাংশ আইনি পদক্ষেপ নিয়েছেন, এবং সবচেয়ে বেশি পুলিশের কাছ থেকেই আইনি সহায়তা চেয়েছেন।
কোথায় অভিযোগ জানাতে হবে ভুক্তভোগী নারীদের মধ্যে সেই সচেতনতাও কম। জরিপের ফলাফলে বলা হয়েছে, প্রতি দুজনের মধ্যে একজনেরও কম নারী (৪৮ দশমিক ৫ শতাংশ) জানেন না যে কোথায় সহিংসতার অভিযোগ জানাতে হয় এবং মাত্র ১২ দশমিক ৩ শতাংশ নারী সহিংসতার সহায়তাকারী হেল্পলাইন ১০৯ সম্পর্কে অবগত।
ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য কাইয়ুম আরা বেগম। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আক্তার এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শবনম মোস্তারি। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) বাংলাদেশ প্রতিনিধি ক্যাথরিন ব্রিন কামকং।