ব্যবসায়ীদের আপত্তির মুখে চট্টগ্রাম বন্দরের নতুন মাশুল কার্যকর
Published: 15th, October 2025 GMT
ব্যবসায়ীদের আপত্তির পরও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নতুন মাশুল কার্যকর করেছে। বুধবার প্রথম প্রহর অর্থাৎ মঙ্গলবার রাত ১২টার পর থেকে বন্দরের সব সেবা খাতে নতুন মাশুল আদায় শুরু হয়।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর বন্দরের নতুন মাশুলের গেজেট প্রকাশ করা হয়। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বন্দরের বিভিন্ন ধরনের সেবায় আগের তুলনায় গড়ে ৪১ শতাংশ মাশুল বাড়ানো হয়েছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে কনটেইনার পরিবহনের মাশুল। ২০২৩–২৪ অর্থবছরের নিরীক্ষিত হিসাব পর্যালোচনায় দেখা যায়, গড়ে প্রতিটি কনটেইনারে (২০ ফুট লম্বা) বাড়তি মাশুল ধরা হয়েছে প্রায় ৩৯ ডলার (৪ হাজার ৩৯৫ টাকা)।
এই মাশুলের বড় অংশ আদায় করা হবে শিপিং লাইন থেকে। একাংশ পরিশোধ করবে আমদানিকারক ও রপ্তানিকারকেরা। শিপিং লাইন বন্দরের বাড়তি খরচ তুলে নেবে আমদানিকারক–রপ্তানিকারকের কাছ থেকে। আমদানিকারক ও রপ্তানিকারক বাড়তি খরচ পণ্যের দামে যুক্ত করবে।
মাশুল বাড়ানো নিয়ে সরকারের ভাষ্য হলো, ১৯৮৬ সালের পর বন্দরের মাশুল সে অর্থে বাড়ানো হয়নি। ২০০৭ ও ২০০৮ সালে পাঁচটি খাতে মাশুল বাড়ানো হয়েছিল। নৌপরিবহন উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেনও বিভিন্ন সময় বন্দরে এসে সাংবাদিকদের বলেছেন, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে মাশুল বাড়ানো হয়েছে, যা বিশ্বের অনেক বন্দরের চেয়ে এখনো কম।
তবে ব্যবসায়ীদের ভাষ্য হলো, মাশুল বেশি বাড়ানোর চাপ পড়বে উৎপাদনমুখী শিল্প খাত, ভোগ্যপণ্য ও বাণিজ্যিক পণ্যে। আবার রপ্তানিমুখী পণ্যে দুই দফায় বাড়তি মাশুল পরিশোধ করতে হবে। সব মিলিয়ে মাশুল বাড়ার চাপ পড়বে ভোক্তার ওপর।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ব্যবসায়ীরা প্রথম ধাপে বাড়তি মাশুল পরিশোধ করলেও দিন শেষে পণ্যের দামে প্রভাব পড়বে। ভোক্তারা সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস য় দ র নত ন ম শ ল ন ক রক
এছাড়াও পড়ুন:
সুনামগঞ্জের প্রথম শহীদ মিনার ভেঙে স্মারকস্তম্ভ নির্মাণ, সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ-প্রতিবাদ
পুকুরপাড়ে ছায়াঘেরা চত্বর। চত্বরের মাঝখানে কিছু জায়গায় চারদিকে পাকা দেয়াল। উত্তর পাশের দেয়ালের মাঝামাঝি সবুজ বৃত্তের মধ্যে লাল সূর্য। লাল-সবুজের সামনেই বেদি। এটি সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের শহীদ মিনার। ভাষা শহীদদের স্মরণে ১৯৬৬ সালে নির্মাণ করা হয়েছিল।
প্রায় ৬০ বছরের পুরোনো এ শহীদ মিনার এখন ভেঙে ফেলা হচ্ছে। সেখানে নির্মাণ করা হচ্ছে একটি স্মারকস্তম্ভ। বিষয়টি জানাজানির পর ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন কলেজের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। কলেজ ছাত্রদলের পক্ষ থেকে স্মারকস্তম্ভ নির্মাণকাজ বন্ধ এবং শহীদ মিনার আগের অবস্থায় পুনঃস্থাপনের দাবিতে অধ্যক্ষের কাছে গতকাল মঙ্গলবার স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। আজ বুধবার একই দাবিতে কলেজ ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করবেন কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা।
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের হাছননগর এলাকায় ১৯৪৪ সালে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ প্রতিষ্ঠা হয়। সরকারীকরণ করা হয় ১৯৮০ সালে। কলেজের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০২০ সালের ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনী উৎসব হয়। এ উৎসবের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য তখন ক্যাম্পাসে একটি স্মারকস্তম্ভ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর এটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। সরকারি কলেজে স্মারকস্তম্ভ নির্মাণকাজ শুরু হয় মাসখানেক আগে।
এখন শহীদ মিনার ভাঙার প্রতিবাদে অনেকেই সরব হওয়ায় কলেজ কর্তৃপক্ষ এর দায় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছে। আর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর বলছে, তারা কলেজ কর্তৃপক্ষের নির্ধারণ করে দেওয়া স্থানে এটি নির্মাণ করছে। স্থান নির্ধারণে তাদের কোনো ভূমিকা নেই।
সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের ১৯৭৩-৭৪ সালে সহসভাপতি (ভিপি) ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইফুর রহমান। শহীদ মিনার ভাঙার খবর পেয়ে গতকাল বিকেলে ছুটে যান কলেজে; কথা বলেন অধ্যক্ষের সঙ্গে। তিনি জানান, ভাষাশহীদদের স্মরণে ১৯৬৬ সালে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে এ শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। এটিই জেলায় ভাষাশহীদদের স্মরণে নির্মিত প্রথম শহীদ মিনার। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী এটি ভেঙে ফেলে। দেশ স্বাধীনের পর ছাত্রনেতারা এটি আবার নির্মাণ করেন।
সাইফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই শহীদ মিনারেই আমরা সভা–সমাবেশ করতাম। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতো। হাজার হাজার শিক্ষার্থীর আবেগ, স্মৃতি জড়িয়ে আছে এটির সঙ্গে। কলেজে এত জায়গা থাকতে শহীদ মিনার ভেঙে তার ভেতরে কেন স্মারকস্তম্ভ নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো, এটিই বুঝতে পারছি না। এতে খুবই মর্মাহত হয়েছি।’
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুজ্জামান জানান, ‘সুনাম ফলক’ নামের এ স্মারকস্তম্ভের নকশা করেছেন ভাস্কর হামিদুজ্জামান। একইভাবে সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলী উচ্চবিদ্যালয়ের ১২৫ বছর পূর্তির একটি স্মারক নির্মাণ করা হয়েছে। এখন শহরের সরকার সতীশ চন্দ্র বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের ৭৫ বছর পূর্তির দুটি স্মারকস্তম্ভ নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি কলেজের স্মারকটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৬ লাখ টাকা।
কামরুজ্জামান বলেন, কলেজ কর্তৃপক্ষই স্থানটি নির্ধারণ করেছে। কলেজে আরেকটি শহীদ মিনার নির্মাণ করায় পুরোনোটা ভেঙে সেখানে স্মারকস্তম্ভ নির্মাণের সিদ্ধান্ত কলেজ কর্তৃপক্ষের। এখানে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের কোনো ভূমিকা নেই। তাঁদের পরামর্শ ছিল কলেজের প্রধান ফটকের পাশে ভেতরে উত্তর পাশে এটি নির্মাণের, কিন্তু এতে কলেজ কর্তৃপক্ষ রাজি হয়নি। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়াও তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন। এরপর কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এটি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর করছে। তারাই স্থান নির্ধারণ করেছে। এ বিষয়ে শিক্ষা প্রকৌশলীর মন্তব্য জানানোর পর তিনি আবার বলেন,‘আসলে আমরাই তাদের বলেছি, এখানে কাজ করা যাবে কি না। তারা রাজি হওয়ায় এখন কাজ হচ্ছে। এত দিন কেউ কিছু বলেনি। এখন অনেকেই কথা বলছে। আমি ইতিহাস-ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে নই। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলব।’