প্রকৃতিতে বিদ্যমান একটি জলজ প্রাণীর রক্তের লিটারপ্রতি মূল্য ১৫ লাখ টাকার বেশি! ঠিকই শুনেছেন। ইংরেজিতে প্রাণীটি ‘হর্স-সু ক্র্যাব’। নামে কাঁকড়া হলেও আদলে এটি কাঁকড়াবিছা ও মাকড়সার নিকটাত্মীয়। গায়ের খোলস উপবৃত্তাকার। অনেকটা ঘোড়ার খুরের মতো। আমাদের দেশে এটি রাজকাঁকড়া নামে পরিচিত।
কেন এর রক্তের দাম এত বেশি? প্রশ্নের জবাবে যাওয়ার আগে প্রাণীটির বিবর্তনগত প্রেক্ষাপট বুঝে নেওয়া দরকার। নিরীহ এই জলজ প্রাণী বিজ্ঞানীদের কাছে এক অপার বিস্ময়। এর পর্যাপ্ত কারণও আছে।
প্রধান কারণ, পৃথিবীতে এর টিকে থাকার সুদীর্ঘ ইতিহাস। ‘সুদীর্ঘ’ বলতে ঠিক কতটা? হ্যাঁ, বিস্ময়ের শুরুটা এখানেই। কমপক্ষে ৩৬০ মিলিয়ন বছর, অর্থাৎ ৩৬ কোটি বছর ধরে এরা পৃথিবীতে একই রূপে টিকে আছে। কোথাও ৪৫ কোটি বছর, আবার কোথাও ৫৫ কোটি বছরের কথাও উল্লেখ আছে। অর্থাৎ ডাইনোসর যুগেরও মোটামুটি ১০-১৫ কোটি বছর আগে এরা পৃথিবীতে এসেছে।
আদিম এই আর্থ্রোপোড বা সন্ধিপদী প্রাণীটি পৃথিবীর অন্যতম জীবন্ত জীবাশ্ম। কী করে এত দিন অবিকৃত অবস্থায় টিকে আছে এরা! বিবর্তনের নানাবিধ ভয়ংকর বিপর্যয় এবং প্রাণঘাতী রোগ থেকে কীভাবে নিজেদের অস্তিত্বকে সুসংহত রাখতে পেরেছে?
এর মূল কারণ এদের দেহের বিশেষ ‘নীল রক্ত’। সেই যে ‘ব্লু ব্লাড’ বলে একটি কথা আছে ইংরেজিতে, ঠিক যেন তা-ই। রাজকাঁকড়ার নীল রক্তের ক্ষমতা অবিশ্বাস্য। সেই অবিশ্বাস্য ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে এরা যেকোনো ব্যাকটেরিয়া, বিষাক্ত পদার্থ বা প্রতিকূল পরিবেশ থেকে নিজেদের রক্ষা করে থাকে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহী-৩ আসনে বিএনপির স্থানীয় প্রার্থীর দাবিতে মহাসড়কে শুয়ে অবরোধ
রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে স্থানীয় প্রার্থীর দাবিতে বিএনপির এক পক্ষের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছেন। আজ শনিবার বিকেলে পবা উপজেলার নওহাটা বাজারে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে তাঁরা রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের নওহাটা কলেজ মোড়ে শুয়ে পড়ে মহাসড়ক অবরোধ করেন।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, রাজশাহীর ছয়টি আসনের মধ্যে পাঁচটিতে স্থানীয় প্রার্থী দেওয়া হলেও রাজশাহী-৩ আসনে বহিরাগত প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ত্রাণ ও পুনর্বাসনবিষয়ক সহসম্পাদক শফিকুল হককে। তিনি দীর্ঘদিন স্থানীয় রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন এবং রাজশাহী-২ (সদর) আসনের ভোটার। এ কারণে তাঁর প্রতি তৃণমূল নেতা–কর্মীদের অনাস্থা তৈরি হয়েছে বলে দাবি করেন তাঁরা।
সমাবেশে অংশ নেন পবা ও মোহনপুর উপজেলার বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা। বিক্ষোভকারীরা জানান, দলের দুঃসময়ে মাঠে ছিলেন স্থানীয় নেতা রায়হানুল আলম। মিছিলে, আন্দোলনে তৃণমূলের পাশে ছিলেন তিনি। তাঁকে বাদ দিয়ে বহিরাগতকে প্রার্থী করায় স্থানীয় নেতারা অপমানিত ও ভেঙে পড়েছেন। স্থানীয় প্রার্থীর দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে তাঁরা জানান।
পারিলা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি খাইরুল ইসলাম বলেন, রাজশাহী-৩ আসন সব সময় আন্দোলনের কঠিন ঘাঁটি। যাঁরা দুঃসময়ে ছিলেন না, তাঁদের হঠাৎ প্রার্থী করা তৃণমূলের প্রতি অবিচার। এতে নেতা–কর্মীদের মনোবল ভেঙে যাবে। দলকে শক্ত করতে হলে আন্দোলনের সময় যাঁরা রাজপথে ছিলেন, তাঁদেরই মূল্যায়ন করা উচিত।
পবা উপজেলা শ্রমিকদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মিজানুর রহমান বলেন, ‘দলের কঠিন সময়ে শ্রমিকদল ছিল রাজপথে। রক্ত দিয়েছি, লাঠির মার খেয়েছি। অথচ আজ আমাদেরই এলাকায় বহিরাগত প্রার্থী চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তৃণমূলকে অপমান করলে দল শক্তিশালী হয় না, দুর্বল হয়। আমরা চাই, স্থানীয়, পরীক্ষিত, একনিষ্ঠ নেতার হাতে এই আসনের দায়িত্ব দেওয়া হোক।’
হড়গ্রাম ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা রাজপথে মার খেয়েছি, মামলা-হামলায় জর্জরিত হয়েছি। এখন নির্বাচন এলে বহিরাগত এসে আমাদের মাথার ওপর বসবে—এটা মেনে নেওয়া যায় না।’
নওহাটা পৌর কৃষক দলের আহ্বায়ক রবিউল ইসলাম বলেন, দলের সিদ্ধান্তে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। তৃণমূলের জীবনসংগ্রামের কথা কেউ শুনছে না।
রাজশাহী–৩ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী শফিকুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই সময় যাঁরা প্রার্থী নিয়ে এই রকম কর্মসূচি দেবেন, তাঁরা আসলে দলের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াতে চান। বিএনপি একটি বড় দল। এই দলের মধ্যে অনেকেরই প্রত্যাশা থাকতে পারে, সেটার প্রতি আমি সম্মান জানাই, শ্রদ্ধা জানাই। কিন্তু তাই বলে তাঁরা বিভ্রান্তি ছড়াবেন, এটা ঠিক না। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার যে ত্যাগ, সেটা মনে রেখে আমি নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে বলতে চাই, সবার উচিত এই ধরনের কর্মসূচি থেকে বিরত থাকা।’
সমাবেশ শেষে নেতা–কর্মীরা মহাসড়কে শুয়ে পড়ে অবরোধ করেন। তাঁরা কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করেন, কেউ কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাঁদের হাতে ব্যানার ও ফেস্টুনে লেখা ছিল ‘স্থানীয় প্রার্থী চাই’, ‘তৃণমূলের রক্ত-ঘামে গড়া আন্দোলনের মূল্যায়ন চাই’।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন হড়গ্রাম ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম, দামকুড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি তরিকুল ইসলাম, হরিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি শামসুল ইসলাম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আওয়াল হোসেন, প্রজন্ম-৭১-এর জেলা আহ্বায়ক মিলন হোসেন প্রমুখ।