গ্রামের বাজারে যাওয়ার পথের ধারে ছিল বিশাল এক বটগাছ। গাছটা আজ আর আছে কি না জানি না। সেই গাছে ছিল একজোড়া বাজপাখির বাসা। গাছের নিচ দিয়ে যাওয়ার সময় প্রায়ই দেখতাম পাখি দুটোকে। শীতের সকালে যখন সবে কুয়াশা কেটে রোদ উঠত, তখন আরামে পালকে ঠোঁট গুঁজে দিয়ে কিংবা গলাটাকে ছোট করে অলস ভঙ্গিতে কোনো একদিকে তাকিয়ে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে বসে থাকত ওরা। গরমের দুপুরে দেখতাম, বাসার পাশের ডালে পাতার ছায়ায় ঝিমাত। শরতের বিকেলে যখন বিশাল সূর্য অস্ত যেত, লালে লালে ছেয়ে যেত পশ্চিমের আকাশটা, তখন ওরা তাকিয়ে থাকত সেদিকে। প্রকৃতি দেখত কি না কিংবা রং চিনত কি না জানি না, তবে মাঝে মাঝে যেন প্রকৃতির প্রতি সীমাহীন শ্রদ্ধা জানাতেই বিচিত্র কণ্ঠে ছাড়ত লম্বিত ডাক।

পাখি দুটোকে আমার ভালো লাগত। তাই ওই পথ দিয়ে গেলেই মুখ তুলে তাকাতাম বাসাটার দিকে।

একদিন আমার সামনেই পয়েন্ট টু টু রাইফেল দিয়ে গুলি করে মেয়ে পাখিটাকে মেরে ফেলল এক শিকারি। পুরুষটা তখন ছিল না। হয়তো পাশের পুকুরে মাছ শিকার করতে গিয়েছিল। মুরগির মতো গলা উঁচু করে বসেছিল মেয়েটা, এদিক-ওদিক তাকাচ্ছিল উদাসী ভঙ্গিতে। ও জানতই না, মৃত্যু এত কাছে এসে গেছে। গুলির শব্দের পরও ওর কোনো ভাবান্তর দেখলাম না। তেমনি ভঙ্গিতেই বসে রইল। ডাকল না, নড়ল না, কিচ্ছু করল না। কেবল আস্তে করে মাথাটা বসে গেল নিচের দিকে।

অকারণেই পাখিটাকে মেরে রেখে হাসতে হাসতে চলে গেল শিকারি। আমি দাঁড়িয়ে রইলাম। একটু পরেই এল পুরুষ পাখিটা। বাসায় বসে ঠুকরে ঠুকরে তোলার চেষ্টা করতে লাগল সঙ্গিনীকে। কিছুতেই তুলতে না পেরে হাল ছেড়ে দিয়ে বসে রইল চুপ করে। সেদিন যতক্ষণ ছিলাম, একটিবারের জন্য বাসা ছেড়ে যেতে দেখিনি পাখিটাকে।

পরদিন সকালে উঠেই পায়ে পায়ে চলে গেলাম গাছটার কাছে। অবাক কাণ্ড! আগের দিন যে রকম করে বসে থাকতে দেখে গিয়েছিলাম পুরুষ পাখিটাকে, তেমনি বসে আছে। সেদিন প্রায় সারাটা দিনই কাটালাম বাসার কাছে। বাসা ছেড়ে নড়ল না পাখিটা। পাশের পুকুরে মাছ ঘাই মারছে, ফিরেও তাকাল না সেদিকে। কয়েকবার মেয়ে পাখিটাকে তোলার ব্যর্থ চেষ্টা করল। লম্বা করে ডাক ছাড়ল। আমার মনে হলো, কাঁদছে।

পুরো তিনটি দিন বাসা ছেড়ে নড়ল না পাখিটা। চতুর্থ কিংবা পঞ্চম দিনে দেখলাম, ঠুকরে মরা পাখিটাকে বাসা থেকে ফেলে দিল। লাশে তখন পচন ধরেছে, পোকা ধরেছে। ফেলে দিয়ে পুকুরে গেল মাছ ধরতে।

আগ্রহ শেষ হয়ে গেল আমার। তার পরদিন থেকে আর গেলাম না।

সাত-আট দিন পরেই হবে বোধ হয়, বাজারে যাওয়ার সময় কৌতূহলী হয়ে তাকালাম বাসাটার দিকে। অবাক হলাম। একলা নেই আর পুরুষটা। কোথা থেকে আরেকটা মেয়ে পাখি জোগাড় করে নিয়ে এসেছে।

রকিব হাসানের আত্মজীবনী ‘আমার কৈশোর’.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

রাকসু: আচরণবিধি লঙ্ঘন করে ক্যাম্পাসে ছাত্রদল নেতা আমান

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেটের ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন উপলক্ষে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে ক্যাম্পাসে অবস্থান করছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাংগাঠনিক সম্পাদক মো. আমানউল্লাহ আমান।

বুধবার (১৫ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৬টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকিটাকি চত্বরে শাখা ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাকে আড্ডা দিতে দেখা যায়।

আরো পড়ুন:

‘রাকসু নির্বাচনে গুজব প্রতিরোধে কাজ করছে সাইবার ইউনিট’

রাকসু নির্বাচন: একটি ভোটের জন্য ১৪ সেকেন্ড বরাদ্দ

সরেজমিনে দেখা যায়, বুধবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকিটাকি চত্বরে কয়েকজন নেতাকর্মীর সঙ্গে বসে রয়েছেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আমানউল্লাহ আমান। তার সঙ্গে রাবি শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও ফার্সি বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী তাহের রহমানসহ শাখা ছাত্রদলের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে অবস্থান করতে দেখা যায়।

এদিকে, রাকসুর নির্বাচন উপলক্ষে বহিরাগতদের ক্যাম্পাসে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে নির্বাচন কমিশন। এছাড়া কয়েকদিন ধরে হলগুলোতে যাতে কোনো বহিরাগত না থাকে, সেজন্য তল্লাশি কার্যক্রম চালায় নির্বাচন কমিশন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবর রহমান বলেন, “আশ্চর্য! সে কীভাবে ভেতরে ঢুকল, তা আমাদের জানা নেই। প্রতিটি গেটে চেকপোস্ট রয়েছে, আমরা কঠোর নিরাপত্তা দিচ্ছি। তারপরও কীভাবে সে প্রবেশ করল, বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।”

রাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. এফ নজরুল ইসলাম বলেন, “উনি ঢুকলেন কীভাবে? উনার তো আসার কথা না এখানে। আচ্ছা, বিষয়টা আমি দেখছি।”

এ বিষয়ে জানতে ছাত্রদল নেতা আমানউল্লাহ আমানকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল করলে তিনি সাড়া দেননি। হোয়াটসঅ্যাপে ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ