জুলাই সনদ: গণভোট নির্ধারণে কমিশনের বল সরকারের কোর্টে
Published: 15th, October 2025 GMT
দেশের রাজনৈতিক সংস্কারে নতুন দিগন্ত উন্মোচনকারী ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ বাস্তবায়ন নিয়ে উত্তাপ ছড়াচ্ছে দেশের রাজনীতিতে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জানিয়েছে, তারা গণভোটের সময় নির্ধারণ নিয়ে নিজেরা কোনো নির্দিষ্ট সুপারিশ দেবে না। বরং, এ সিদ্ধান্ত নির্বাচনকালীন সরকার ও নির্বাচন কমিশনের হাতে ছেড়ে দেওয়াই যুক্তিযুক্ত হবে বলে তারা মনে করে।
রাজনৈতিক আলোচনার প্রেক্ষাপট ও কমিশনের অবস্থান গত ৮ অক্টোবর রাতে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভা শেষে এই বিষয়ে কমিশনের অভিমত পরিষ্কার হয়। রাত সাড়ে ১১টার দিকে আলোচনা শেষে একটি ফটোসেশনে অংশ নেন কমিশন ও রাজনৈতিক দলের নেতারা।
আরো পড়ুন:
ঐকমত্য কমিশনের ‘অতি জরুরি’ বৈঠক সন্ধ্যায়, অংশ নেবেন প্রধান উপদেষ্টা
কয়েকজন উপদেষ্টা একটি বিশেষ দলের পক্ষে কাজ করছে
আলোচনায় অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও মতবিরোধ ছিল স্পষ্ট। কেউ চাইছে সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোট অনুষ্ঠিত হোক, আবার কেউ বলছে এর আগেই গণভোট আয়োজন করতে হবে। ফলে, ঐকমত্য কমিশন গণভোটের নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করে কোনো সুপারিশ দিতে আগ্রহী নয়।
কমিশন সূত্র জানায়, যদি তারা নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করে, তাহলে তা সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ওপর এক ধরনের চাপ হয়ে দাঁড়াতে পারে। সেজন্যই তারা চাইছেন সময় নির্ধারণের বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করুক।
সনদ স্বাক্ষরের সময় নির্ধারণ এবং পরবর্তী পরিকল্পনা
কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী ১৭ অক্টোবর ‘জুলাই সনদ’ স্বাক্ষরিত হবে। একই সুপারিশ পাঠানো হবে রাজনৈতিক দলগুলোকেও।
বিশেষজ্ঞ মতামত ও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা
এ প্রসঙ্গে জানা গেছে, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, অধ্যাপক এবং অভিজ্ঞ আইনজীবীদের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষজ্ঞ প্যানেল এই বিষয়ে একটি মতামত দিয়েছেন। তারা বলেছেন, গণভোট আয়োজনে যদি নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে নির্বাচন কমিশনের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হতে পারে।
একসঙ্গে দুটি ভোট আয়োজন মানে একাধিক ব্যালট, অতিরিক্ত সময়, নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনার জটিলতা—যা সবকিছুই নির্বাচন কমিশনের দক্ষতা ও প্রস্তুতির ওপর নির্ভর করবে। ঐকমত্য কমিশন মনে করে, এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের যৌথ সিদ্ধান্ত নেওয়াই হবে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ।
দলগুলোর মতানৈক্য ও সন্দেহ
গণভোট ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে বড় রাজনৈতিক দলগুলো একমত নয়। যেমন: বিএনপি চায়, ‘জুলাই সনদ’ নিয়ে কোনো সংবিধান আদেশ (Constitutional Order) না হোক। তারা বলছে, একটি প্রজ্ঞাপন দিয়ে গণভোটের জন্য নতুন অধ্যাদেশ প্রণয়ন করা হোক।
অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মনে করে, একটি ‘জুলাই বাস্তবায়ন আদেশ’ জারি করে তবেই গণভোট আয়োজন করা উচিত।
এই ভিন্নমতগুলো শুধু সময় বা পদ্ধতি নিয়ে নয় বরং সনদের সাংবিধানিক অবস্থান, আইনগত ভিত্তি ও ভবিষ্যৎ রূপান্তরের ধরন নিয়েও বিস্তৃত।
এ বিষয়ে বিএনপির সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “নির্বাচন ও গণভোট একদিনে হলে ফলাফলে তফাৎ হবে না, বরং ব্যয় কমবে।”
এ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা.
এনসিপির আখতার হোসেন বলেন, “সিদ্ধান্ত কমিশনের ওপর নির্ভর করছে।”
ইসলামী আন্দোলনের গাজী আতাউর রহমান বলেন, “জুলাই সনদের আইনি স্বীকৃতি দিতে জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট দরকার। তবে একই দিনে দুটি ভোট সমস্যার হতে পারে।”
তিনি বিশেষজ্ঞ মতামতের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন।
প্রযুক্তিগত ও সাংগঠনিক চ্যালেঞ্জ
একসঙ্গে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট হলে ভোট গ্রহণের সময় বাড়বে। একাধিক ব্যালট, জটিল গণনা, বিভ্রান্তি, ভুল গণনার ঝুঁকি ও ফলাফল ঘোষণায় বিলম্ব সবকিছুই একসঙ্গে সংঘটিত হতে পারে।
তবে, আলাদা দিনে ভোট আয়োজন করলে নির্বাচনী ব্যয় বৃদ্ধি পাবে, প্রশাসনিক ঝামেলা বাড়বে এবং রাজনৈতিক উত্তাপ দীর্ঘায়িত হবে। ফলে, বিষয়টি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের পাশাপাশি কারিগরি সক্ষমতা ও আর্থিক বাস্তবতা বিবেচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।
কমিশন সুপারিশ দেবে, চাপ নয়
এই প্রসঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “কমিশনের দায়িত্ব হলো প্রক্রিয়াগত সহায়তা ও বাস্তবায়নযোগ্য রূপরেখা তৈরি। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে সরকার ও নির্বাচন কমিশন।”
সাবেক সরকারি কর্মকর্তা ও ঢাকা-৭ আসনের ভোটার সানাউল হক বলেন, “জুলাই সনদ নিয়ে গণভোট আয়োজন দেশের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় উন্মোচন করতে পারে। তবে, সে পথে রয়েছে জটিলতা, মতানৈক্য, রাজনৈতিক কৌশল ও বাস্তবায়নের প্রশ্ন। এখন পর্যন্ত কমিশনের অবস্থান বিবেচনায় ধরে নেওয়া যায়, তারা সংবিধান ও বাস্তবতার মধ্যে একটি ভারসাম্য খুঁজছে। তারা চায় তাদের সুপারিশ রাজনৈতিক চাপ বা সংকট বাড়াক।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কার ও গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ অনেকটাই নির্ভর করছে এই গণভোট বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া ও গ্রহণযোগ্যতার ওপর।”
ঢাকা/এএএম/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ ল ই সনদ অন ষ ঠ ত র জন ত ক ই গণভ ট একসঙ গ র ওপর দলগ ল
এছাড়াও পড়ুন:
রোমে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে গ্লোবাল অ্যালায়েন্সের কার্যালয় উদ্বোধন করলেন প্রধান উপদেষ্টা ও ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা ও জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) মহাপরিচালক কু দং ইউ এর সঙ্গে রোমে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে গঠিত গ্লোবাল অ্যালায়েন্সের নতুন কার্যালয় উদ্বোধন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
সোমবার এফএও সদর দপ্তরে তিন নেতা যৌথভাবে অ্যালায়েন্সের নতুন কার্যালয়ের উদ্বোধন করেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রায় এক দশক আগে প্রেসিডেন্ট লুলার উদ্যোগে প্রস্তাবিত এই গ্লোবাল অ্যালায়েন্সের সহ-প্রতিষ্ঠাতা দেশ ব্রাজিল ও বাংলাদেশ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিন নেতা অ্যালায়েন্সের নবনির্মিত কার্যালয়ে একসঙ্গে হাত মিলিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রমের সূচনা করেন। তাঁরা উদ্যোগটিকে বৈশ্বিক ক্ষুধা মোকাবিলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বর্ণনা করে যৌথ পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। বিশেষ করে এমন সময়ে যখন গাজা ও সুদানে দুর্ভিক্ষ চলছে এবং বিশ্বজুড়ে ৩০ কোটির বেশি মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিদের উদ্দেশে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘চলুন, আমরা একসঙ্গে কাজ করি—ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে।’
প্রেসিডেন্ট লুলা ও মহাপরিচালক কু দং ইউও সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে নতুন অংশীদারত্বের তাৎপর্য তুলে ধরেন এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার বিরুদ্ধে সমন্বিত বৈশ্বিক পদক্ষেপের আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে ব্রাজিলের কয়েকজন মন্ত্রী ছাড়াও বাংলাদেশের খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার উপস্থিত ছিলেন।