যুদ্ধবিরতির পরও শান্তি ফিরছে না গাজায়
Published: 15th, October 2025 GMT
ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতির পর থেমেছে ইসরায়েলের নির্বিচার বোমাবর্ষণ। তবে শান্তি ফেরেনি। একে তো ফিলিস্তিনিরা নিজ ঠিকানায় ফিরে ধ্বংসস্তূপ ছাড়া আর কিছুই পাচ্ছেন না, এরপর আবার চুক্তি অনুযায়ী এখনো গাজায় নির্ধারিত পরিমাণ ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে না ইসরায়েল। এতে উপত্যকাটিতে খাবারের সংকট কাটছে না।
বুধবার ছিল যুদ্ধবিরতির ষষ্ঠ দিন। আগের পাঁচ দিনে চুক্তি অনুযায়ী বন্দিবিনিময় করেছে হামাস ও ইসরায়েল। তবে হামাস মৃত জিম্মিদের ফেরত পাঠাতে দেরি করছে—এমন অজুহাত তুলে ইসরায়েল জানায়, গতকাল থেকে নির্ধারিত পরিমাণের অর্ধেক অর্থাৎ প্রতিদিন ৩০০ ট্রাক ত্রাণ গাজায় প্রবেশ করতে দেবে তারা। দক্ষিণ গাজার রাফা সীমান্ত ক্রসিংও আপাতত চালু না করার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল। তবে পরে ক্রসিংটি খুলে দেওয়া হয়।
যদিও যুদ্ধবিরতির পর থেকেই দিনে নির্ধারিত ৬০০ ট্রাকের অনেক কম ত্রাণ গাজায় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে। বুধবার বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, এদিন তাদের মাধ্যমে মাত্র ১৩৭ ট্রাক ত্রাণ উপত্যকাটিতে সরবরাহ করা হয়েছে। এসব ট্রাকে ময়দা ও চিকিৎসা সরঞ্জামের মতো প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছিল। তবে পানির পরিমাণ ছিল কম। জ্বালানি তো ছিলই না।
যুদ্ধবিরতির পর বাস্তুচ্যুত যেসব মানুষ গাজা নগরীতে ফিরেছেন, তাঁরা পানি নিয়ে সবচেয়ে বড় দুর্ভোগের মুখে পড়ছেন। নগরীর বাসিন্দা গাদা আল কুর্দ বলেন, প্রায় সব এলাকা ধ্বংস হয়ে গেছে। কোনো পানি নেই, বিদ্যুৎ নেই। আর দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের বাসিন্দা মাহমুদ এমাদ রোস্তম বলেন, কিছু ত্রাণ প্রবেশ করায় খাবারের সরবরাহ বেড়েছে। তবে জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া।
এ ছাড়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী গাজার ৫৩ শতাংশ এলাকা এখনো ইসরায়েলি সেনাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সেখানে নিজ ভিটেমাটিতে ফিরতে পারছেন না বাসিন্দারা। এসব এলাকায় ফিরতে যাওয়া ৬ জনসহ মোট ৯ ফিলিস্তিনিকে মঙ্গলবার হত্যা করেছেন ইসরায়েলি সেনারা। বুধবারও সুজাইয়া এলাকায় দুই ফিলিস্তিনিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এ নিয়ে গত দুই বছরের বেশি সময়ে ইসরায়েলের হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৭ হাজার ৯৩৮।
নিয়ন্ত্রণ বাড়াচ্ছে হামাস২০০৭ সালে ফাতাহ ও হামাসের মধ্যে ছয় দিনের সংঘর্ষের পর থেকে গাজা নিয়ন্ত্রণ করছিল হামাস। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর উপত্যকাটিতে ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর থেকে সে নিয়ন্ত্রণ হারায় তারা। এখন কিছু এলাকা থেকে ইসরায়েলি সেনারা সরে যাওয়ার পর আবার নিয়ন্ত্রণ বাড়াচ্ছে হামাস। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, শহর এলাকাগুলোর রাস্তাঘাটে হামাসের সশস্ত্র সদস্যদের উপস্থিতি বেড়েছে।
গাজার এসব এলাকায় এখন আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইসরায়েলের হামলা না থাকলেও বিগত কয়েক দিনে হামাসের সঙ্গে বিভিন্ন গোষ্ঠীর সদস্যদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে কয়েক ডজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। সবশেষ মঙ্গলবার সকালে হামাস নিরাপত্তা বাহিনীর এবং হিল্লেস পরিবারের সদস্যদের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ হয়েছে।
এরই মধ্যে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে দেখা যায়, পিছমোড়া করে হাত বাঁধা সাতজনকে টেনেহিঁচড়ে গাজা নগরীর একটি চত্বরে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁদের বসিয়ে পেছন থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়। পরে হামাসের একটি সূত্র রয়টার্সকে জানায়, ভিডিওটি গত সোমবার ধারণ করা। আর সাতজনকে হামাসের সদস্যরাই গুলি করে হত্যা করেন।
গাজায় প্রবেশ করছে ত্রাণের ট্রাক। বুধবার খান ইউনিসে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র র পর থ র সদস
এছাড়াও পড়ুন:
৩৮ মিলিয়ন ডলার কিনল বাংলাদেশ ব্যাংক
দেশের ব্যাংকগুলোতে ডলার সরবরাহ বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে বাজার স্থিতিশীল রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৬টি ব্যাংক থেকে নিলামে ৩৮ মিলিয়ন ডলার কিনেছে।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ তথ্য জানিয়েছেন।
আরো পড়ুন:
সিএমএসএমই ঋণ সহজ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা
ব্যাংকের কার্ড থেকে নগদ, বিকাশে টাকা পাঠানোর নতুন সুবিধা
তিনি জানান, বাজারে বর্তমানে ডলারের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি। এ কারণে রিজার্ভ থেকে বিক্রি না করে বাজার থেকেই ডলার কিনছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ভবিষ্যতেও এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো থেকে মাল্টিপল অকশন পদ্ধতিতে ৩৮ মিলিয়ন ডলার কেনা হয়েছে। নিলামের বিনিময় হার ছিল ১২১ টাকা ৮০ পয়সা পর্যন্ত। আর এই প্রাইসেই ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক নিলামে ডলার কেনার ফলে বাজারে তারল্য বাড়ছে, আর রিজার্ভে যোগ হচ্ছে নিলামে কেনা ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২৫-২৬ অর্থবছরে মোট দুই হাজার ১২৬ মিলিয়ন ডলার ক্রয় করেছে। এসব ডলার দেশের ব্যাংকগুলো থেকে মাল্টিপল অকশন পদ্ধতিতে কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৯ দফায় ডলার কিনেছিল। এর মধ্যে গত ৬ অক্টোবর ৮টি ব্যাংক থেকে নিলামে ১৪০ মিলিয়ন ডলার কিনেছে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর ২৬টি ব্যাংক থেকে নিলামে ৩৫৩ মিলিয়ন ডলার কিনেছে। গত ৪ সেপ্টেম্বর ১২১ টাকা ৭৫ পয়সা দরে ১৩৪ মিলিয়ন ডলার কিনেছে, ২ সেপ্টেম্বর একই দরে বাংলাদেশ ব্যাংক ৮ ব্যাংক থেকে ৪৭.৫০ মিলিয়ন ডলার কিনেছে, ১৩ জুলাই ১৮টি ব্যাংকের কাছ থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে, একই দরে গত ১৫ জুলাই ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়া গত ২৩ জুলাই ডলার কিনেছে ১২১ টাকা ৯৫ পয়সা দরে। গত ৭ আগস্ট ১২১ টাকা ৩৫ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সায় এবং গত ১০ আগস্ট ১১টি ব্যাংকের কাছ থেকে ১২১ টাকা ৪৭ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সায় ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, দেশে প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) ও রপ্তানি আয়ের প্রবাহ বাড়ায় ডলারের বাজারে স্থিতিশীলতা এসেছে। দেশের ব্যাংকগুলোতে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে, চাহিদা কমেছে। এ কারণে ডলারের দাম কিছুটা কমে গেছে। আর ডলারের দাম আরও কমে গেলে রপ্তানিকারকরা একদিকে সমস্যায় পড়বে অপরদিকে রেমিট্যান্স আয় বৈধ পথে আসা কমে যাবে। এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। যা খুবই যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। তাতে ডলারের বাজার স্থিতিশীল থাকবে ও চাহিদার ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন তারা।
গত ১৫ মে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর সঙ্গে আলোচনার পর ডলারের বিনিময় মূল্য নির্ধারণে নতুন পদ্ধতি চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন থেকে ব্যাংক ও গ্রাহক নিজেরাই ডলারের দর নির্ধারণ করছে।
ঢাকা/নাজমুল/সাইফ