সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নূর আলম। ক্ষুধা মেটাতে কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার সময় ক্যাম্পাসের টংদোকানে বসে চায়ের সঙ্গে খান নানা ধরনের ভাজাপোড়া। খাওয়ার সময় ভালোই লাগে, পরে পেটের অশান্তিতে ভোগেন বলে জানালেন।

ক্যাম্পাসের অন্তত ১০ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে প্রথম আলো। তাঁদের সবার ভাষ্য, দিনের পর দিন এসব ভাজাপোড়া খাবার খেয়ে তাঁদের খাবারে অরুচি হয়, পেটের পীড়ায় ভোগেন, বুক জ্বলাসহ নানা স্বাস্থ্যগত সমস্যায় ভোগেন।

ক্যাম্পাসে ভাজাভুজির চিত্র

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিনই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ভার্সিটি গেট, মদিনা মার্কেট, সুরমা আবাসিক এলাকা, টিলারগাঁও, আখালিয়া, কুমারগাঁও, তেমুখী ও পাঠানটুলা এলাকায় আড্ডা দেন। এসব আড্ডায় থাকে তেলেভাজা নানা মুখরোচক খাবার। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকসংলগ্ন সোনার বাংলার রেস্টুরেন্ট, বিসমিল্লাহ রেস্টুরেন্ট কিংবা রাস্তার পাশের ভাসমান দোকানগুলো থেকে শিক্ষার্থীরা পুরি, শিঙারা, সমুচা, পেঁয়াজু, বেগুনি, পাকোড়া ইত্যাদি খেয়ে থাকেন।

দাঁড়িয়ে থেকে ও দোকানের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এসব দোকানে ভাজাপোড়ার জন্য একই তেল ছয় থেকে আটবার পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়। বারবার ব্যবহারে তেল যখন কালো রং ধারণ করে, তখন সেটা ফেলে দেওয়া হয়।

‘মবিল’ অবস্থা না হওয়া পর্যন্ত ভাজা চলে

একই তেল বারবার ব্যবহারের বিষয়ে একটি গবেষণা করেছিলেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য প্রকৌশল ও চা প্রযুক্তি বিভাগের শিক্ষার্থী মোজাম্মিল ইসলাম। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন পাঠানটুলা, মদিনা মার্কেট, আখালিয়া, কুমারগাঁও ও তেমুখী এলাকার ৩৫টি দোকান থেকে তথ্য সংগ্রহ করেন। এর মধ্যে ১৬টি রেস্টুরেন্ট, ৬টি টং ও ভাসমান ১৩টি দোকান থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এ ছাড়া খাবার ব্যবসায়ী ১৩ জন, দোকানের তত্ত্বাবধায়ক ১৩ জন, ব্যবস্থাপক ৬ জন ও পাচক ১৩ জনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।

ওই গবেষণার ফলাফলের বিষয়ে মোজাম্মিল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘৬৫ শতাংশের বেশি নমুনায় পাঁচ থেকে ছয়বারের বেশি একই তেলে খাবার ভাজা হয়েছে। তেল যখন অত্যধিক কালো রং ধারণ করে, তখন তেলের ঘনত্ব বেড়ে যায়। দোকানদারেরা এটার নাম দেন “মবিল”। তেলের এই “মবিল” অবস্থা হলে তাঁরা সেটা ফেলে দেন। অনেকেই যে তেলটা প্রথম দিন পাঁচ থেকে ছয়বার ব্যবহার করা হয়েছে, সেটা পরের দিন আবারও ব্যবহার করেন। পরের দিন সেটার সঙ্গে নতুন তেল মেশান। এভাবেই চলতে থাকে। এতে বিষাক্ত রাসায়নিক যৌগ তৈরি হয়।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) তেলের মোট পোলার যৌগের (টিপিসি) মাত্রা নির্ধারণে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড দিয়েছে। তেল ভাজার সময় এর রাসায়নিক গঠন ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়। তাদের মান অনুযায়ী, তাজা তেলের টিপিসি সাধারণত ৫ থেকে ৭ শতাংশের মধ্যে থাকে। একবার উচ্চ তাপে ভাজা হলে টিপিসি বেড়ে প্রায় ১০ থেকে ১২ শতাংশ হয়। অন্তত পাঁচবার ভাজা হলে টিপিসি ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ হয়। এর বেশি একই তেলে ভাজা হলে টিপিসি আরও বাড়ে। টিপিসি ২৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেলে ওই তেলকে মানুষের জন্য ‘অনিরাপদ’ হিসেবে গণ্য করা হয়। এটি স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।

স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে অসচেতনতা

একই তেল বারবার ব্যবহার করে তৈরি করা খাবার খেয়ে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে বলে জানালেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য প্রকৌশল ও চা প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক মোজাম্মেল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এসব খাবার খেলে শিক্ষার্থীদের হৃদ্‌রোগ, ক্যানসার, আলসার, গ্যাস্ট্রিকের মতো জটিলতার ঝুঁকি বাড়ে। এমন খাবারের কারণে মানুষের শরীরের কোষের ক্ষতি হয়। এ কারণে বার্ধক্য ত্বরান্বিত হয়।

গবেষণা করা শিক্ষার্থী মোজাম্মিল হোসেন বলেন, দোকানদারের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি দেখেছেন, তেলের পুনর্ব্যবহারের মাত্রা কিংবা ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে তাঁরা তেমন জানেন না। সরকারি কোনো গাইডলাইন তাঁদের কাছে নেই। তিনি মনে করেন, শিক্ষার্থীদেরই সচেতন হওয়া দরকার। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের উচিত নিয়মিত এসব দোকানে তদারকি ও দোকানিদের সচেতন করা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর র ব যবহ র একই ত ল র সময় প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

জীবনেও এত আনন্দ পাইনি: শিবিরের ভিপি প্রার্থী 

রাকসু নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ ভোটের পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তবে তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। 

বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টায় জুবেরী ভবনের সামনে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “ভোটকেন্দ্রের অবস্থা এখন পর্যন্ত ভাল দেখছি। আমরা কারো প্রতি কোন অভিযোগ দিচ্ছি না। তবে আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। কোন অনিয়ম দেখলে আমরা সাথে সাথে নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করব।”

আরো পড়ুন:

রাকসু নির্বাচনে প্রয়োজনে সেনাবাহিনী আসবে: পুলিশ কমিশনার

অত্যন্ত চমৎকার পরিবেশ বিরাজ করছে: রাবি প্রক্টর

মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, “দীর্ঘ ৩৫ বছর পর এই নির্বাচন হচ্ছে। এটাকে দীর্ঘ সময় বন্ধ রেখে শিক্ষার্থীদের ভোটের আনন্দ থেকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছিল। আজ ভোট দিয়ে যে আনন্দ পেয়েছি, তা আর জীবনে কখনও পাইনি।”

তিনি বলেন, “আমরা আশা করছি শিক্ষার্থীরা আমাদের ভোট দেবে। তারা আমাদের গ্রহণ করবে। তারা আমাদের নির্বাচিত করলে আমরা যে ইশতেহার দিয়েছি, সেটা আমরা বাস্তবায়ন করব।

‘নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের প্রতি আহ্বান, তারা যেন সারাদিন সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে। তারা যেন বিমাতাসুলভ আচরণ না করে। ডাকসু ও জাকসুতে কিছু ত্রুটি সামনে এসেছে। সেটা যেন এখানে না হয়।”

এসময় ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন আবিরের মতো ক্যাম্পাসে বহিরাগত না ঢোকার ব্যাপারে নিজের অবস্থান জানিয়ে জাহিদ বলেন, “আমাদের অবস্থানও একই। ক্যাম্পাসে যেন কোনভাবেই বহিরাগত না প্রবেশ করে। ভোট গ্রহণ শেষে যেন সুন্দরভাবে ফল প্রকাশ করা হয়।”

এর আগে মোস্তাকুর রহমান জাহিদ জুবেরী ভবনে নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।

ঢাকা/কেয়া/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ