বাড়তি মাশুল আরোপ করায় সাত জাহাজের অনুমতি বাতিল
Published: 16th, October 2025 GMT
চট্টগ্রাম বন্দরে গতকাল বুধবার থেকে বাড়তি মাশুল কার্যকর হয়েছে। এই বাড়তি মাশুল পুষিয়ে নিতে সারচার্জ বা অতিরিক্ত ভাড়া আরোপ করেছিল বিদেশি শিপিং কোম্পানিগুলো। তবে সারচার্জ আরোপ করায় বন্দর কর্তৃপক্ষ ফ্রান্সভিত্তিক একটি শিপিং কোম্পানির সাতটি জাহাজের অনুমোদন বাতিল করেছে।
অন্য শিপিং কোম্পানিগুলোকেও সারচার্জ প্রত্যাহার করার জন্য বলেছে। অন্যথায় তাদেরও জাহাজের অনুমতি বাতিল অর্থাৎ চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হবে না বলে বন্দর থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে—এমন অভিযোগ করেছে কয়েকটি শিপিং লাইন।
এ পরিস্থিতিতে দুটি শিপিং কোম্পানি তাদের সারচার্জ প্রত্যাহার করেছে বলে বন্দরকে জানিয়েছে।
ব্যবসায়ী ও ব্যবহারকারীদের আপত্তি উপেক্ষা করে গত ১৪ সেপ্টেম্বর বন্দরের নতুন মাশুলের গেজেট প্রকাশ করা হয়। এক মাস পর অর্থাৎ গতকাল থেকে সেই বাড়তি মাশুল আদায় শুরু হয়েছে। তাতে বন্দরের বিভিন্ন সেবা মাশুল একলাফে ৪০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী, প্রথম ধাপে বন্দর কর্তৃপক্ষ এই মাশুল শিপিং এজেন্টদের কাছ থেকে আদায় করে। শিপিং এজেন্টরা তাদের গ্রাহক অর্থাৎ আমদানি–রপ্তানিকারকদের থেকে সেই মাশুল আদায় করে। তবে সাধারণত পণ্য পরিবহনের জন্য বার্ষিক ভিত্তিতে শিপিং কোম্পানিগুলো বড় গ্রাহকদের সঙ্গে চুক্তি করে। চুক্তি শেষ হওয়ার আগে পণ্য পরিবহন ভাড়া বাড়ানোর সুযোগ নেই। এ জন্য শিপিং কোম্পানিগুলো তাৎক্ষণিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সারচার্জ আরোপ করে।
সারচার্জ আরোপ করে পরে প্রত্যাহার
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ মাশুল বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার পর ৭ অক্টোবর থেকে ধাপে ধাপে ফ্রান্সের সিএমএ–সিজিএম, সুইজারল্যান্ডের এমএসসি, ডেনমার্কের মায়ের্সক লাইন এবং দেশীয় এইচআর লাইনস– এই চারটি শিপিং কোম্পানি তাদের সেবা ব্যবহার করে পণ্য আমদানি–রপ্তানির ক্ষেত্রে সারচার্জ আরোপ করে।
৭ অক্টোবর প্রথমে ফ্রান্সের শিপিং কোম্পানি সিএমএ–সিজিএম ২০ ফুট লম্বা কনটেইনারে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে কনটেইনারপ্রতি ৪৫ ডলার বাড়তি সারচার্জ আদায়ের ঘোষণা দেয়। তাদের এই বাড়তি সারচার্জ কার্যকর হওয়ার কথা ছিল ২৬ অক্টোবর থেকে।
এমন ঘোষণার পর ১০ অক্টোবর ফ্রান্সের সিএমএ–সিজিএম কোম্পানির সাতটি জাহাজের অনুমোদন বাতিল করে দেয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। অনুমোদন বাতিলের ফলে এসব জাহাজ থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার ওঠানো–নামানো হবে না বা জাহাজ জেটিতে ভিড়তে দেওয়া হবে না। সিএমএ–সিজিএমকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, বন্দরে জাহাজ পরিচালনার অনুমতিপত্রে সারচার্জ আদায় করা যাবে না বলে শর্ত দেওয়া হয়েছিল। এই শর্ত ভঙ্গ করায় সাময়িকভাবে প্রতিষ্ঠানটির সাতটি জাহাজের অনুমোদন বাতিলের কথা জানানো হয়।
শিপিং এজেন্ট বা ব্যবসায়ীরা শুরুতে এই বাড়তি মাশুল পরিশোধ করবে। পণ্যের দামের সঙ্গে এই বাড়তি মাশুল যুক্ত হলে পণ্যের দাম বাড়বে। দিন শেষে ভোক্তার কাঁধে পড়বে এই বাড়তি মাশুলের বোঝাআমির হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী, আহ্বায়ক, চট্টগ্রাম পোর্ট ইউজার্স ফোরামবাতিল করে দেওয়া সাতটি জাহাজের মধ্যে দুটি জাহাজ ইতিমধ্যে কনটেইনার নিয়ে বন্দর জলসীমায় নোঙর করেছে। তবে অনুমোদন বাতিল করায় এসব জাহাজ জেটিতে ভেড়ানোর জন্য বন্দর থেকে অনুমোদন পায়নি। এ পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে ফ্রান্সের কোম্পানিটি সারচার্জ প্রত্যাহার করেছে বলে জানা গেছে।
এ ছাড়া সুইজারল্যান্ডভিত্তিক এমএসসিও কনটেইনারপ্রতি ১০০ ডলার সারচার্জ আদায়ের ঘোষণা দিয়েছিল। তবে বন্দরের চাপে তারা চট্টগ্রাম বন্দর প্রান্তর কোনো মাশুল আদায় করবে না বলে বন্দরকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে।
ডেনমার্কভিত্তিক মায়ের্সক লাইনের ঘোষণা অনুযায়ী, ২০ ফুট কনটেইনারে কোম্পানিটি টার্মিনাল হ্যান্ডলিং চার্জ বা টিএইচসি আগে আদায় করত ১২০ ডলার। গতকাল থেকে তারা এই চার্জ আদায় করবে ১৬৫ ডলার। সেই হিসাবে প্রতি কনটেইনারে ৪৫ ডলার মাশুল বাড়িয়েছে তারা। তবে ৪০ ফুট লম্বা কনটেইনারে এই মাশুল ২০৫ ডলার থেকে বাড়িয়ে ৩১০ ডলারে উন্নীত করেছে। গতকাল থেকে তারা এই বাড়তি মাশুল আদায়ের কথা। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গতকাল (সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা) প্রতিষ্ঠানটি বাড়তি মাশুল প্রত্যাহারের কথা জানায়নি।
একইভাবে দেশীয় শিপিং কোম্পানি এইচআর লাইনস প্রতি একক কনটেইনারে ২৫ থেকে ৩০ ডলার সারচার্জ আরোপ করে। দেশীয় এই কোম্পানি চট্টগ্রাম থেকে স্বল্প দূরত্বে কনটেইনার পরিবহন করে। তারাও সারচার্জ প্রত্যাহার করেনি। বন্দরের হিসাবে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে এই চার শিপিং লাইন মোট কনটেইনারের বড় অংশই পরিবহন করেছে।
জানতে চাইলে বন্দরসচিব ওমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল থেকে নতুন ট্যারিফ কার্যকর হয়েছে। সারচার্জ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জাহাজ কোম্পানিগুলোকে সারচার্জ প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে দুটি কোম্পানি তাদের সারচার্জ প্রত্যাহার করেছে। শিপিং কোম্পানিগুলোকে কোনো চাপ দেওয়া হয়নি।
বন্দর দিয়ে কনটেইনার পরিবহন করছে অন্তত তিন শতাধিক বিদেশি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে শীর্ষ ১০টি কোম্পানিই সিংহভাগ কনটেইনার পরিবহন করে।
চাপ পড়বে ভোক্তার কাঁধে
বন্দর খাতের অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা বলছেন, যে নামেই আদায় হোক, শিপিং কোম্পানিগুলো বন্দরের নতুন মাশুল আমদানি–রপ্তানিকারকের কাছ থেকে আদায় করে নেবে। তাৎক্ষণিকভাবে আদায় করতে না পারলে কনটেইনার পরিবহনের ভাড়া বাড়িয়ে তারা তা আদায় করবে। সে ক্ষেত্রে পণ্য পরিবহনের খরচ বাড়বে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৯৯ শতাংশ কনটেইনার পণ্য পরিবহন হওয়ায় এই প্রভাব বেশি হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ কনটেইনার শিপিং অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও জাপানভিত্তিক ওশেন নেটওয়ার্ক এক্সপ্রেস (ওয়ান) লাইনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফাইয়াজ খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, শিপিং এজেন্টদেরই মূলত বন্দরের বাড়তি মাশুল পরিশোধ করতে হবে। সেটা তারা প্রথমে পরিশোধ করলেও পরে তা গ্রাহক অর্থাৎ আমদানি–রপ্তানিকারকদের কাছ থেকে ভাড়া হিসেবে আদায় করে নেবে।
চট্টগ্রাম পোর্ট ইউজার্স ফোরামের আহ্বায়ক আমির হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, শিপিং এজেন্ট বা ব্যবসায়ীরা শুরুতে এই বাড়তি মাশুল পরিশোধ করবেন। পণ্যের দামের সঙ্গে এই বাড়তি মাশুল যুক্ত হলে পণ্যের দাম বাড়বে। দিন শেষে ভোক্তার কাঁধে পড়বে এই বাড়তি মাশুলের বোঝা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ হ জ র অন ম গতক ল থ ক স এমএ স জ পর বহন র ব ত ল কর র কর ছ অর থ ৎ পর শ ধ প রথম ব যবস আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
যশোর বোর্ডে পাসের হার কমে ৫০.২০ শতাংশ
যশোর শিক্ষা বোর্ডে এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় গড় পাসের হার ৫০.২০ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৫ হাজার ৯৯৫ জন শিক্ষার্থী। গত বছরের তুলনায় এ বছর পাসের হার ও জিপিএ-৫ দুই-ই কমেছে। একইসঙ্গে শূন্য পাসের কলেজের সংখ্যাও বেড়েছে।
বোর্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জুলাই আন্দোলনের প্রভাবের কারণে শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতিতে ঘাটতি ছিল। পাশাপাশি খাতা মূল্যায়নে কঠোরতা ও যথার্থতা বজায় রাখায় ফলাফলে এই পরিবর্তন এসেছে।
আরো পড়ুন:
দিনাজপুরের ৪৩ কলেজের সবাই ফেল
চট্টগ্রাম বোর্ডে জিপিএ-৫ কমে অর্ধেক
বোর্ড কর্মকর্তারা বলছেন, অসুস্থ প্রতিযোগিতা থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছি। তাই, পাসের হার কিছুটা কমেছে।
যশোর শিক্ষা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন ১ লাখ ১২ হাজার ৫৭৪ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে পাস করেছেন ৫৬ হাজার ৫০৯ জন। বিজ্ঞান বিভাগে পাস করেছেন ১৫ হাজার ৯৩১ জন, মানবিক বিভাগে ৩৪ হাজার ৩ জন এবং বাণিজ্য বিভাগে ৬ হাজার ৬৭৫ জন।
জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ছেলে ১ হাজার ৭৭২ ও মেয়ে ১ হাজার ৬০৯, মানবিক বিভাগে ছেলে ৫৪৪ ও মেয়ে ১ হাজার ৬৩৫ এবং বাণিজ্য বিভাগে ছেলে ১৬৪ ও মেয়ে ২৭১ জন।
গত বছর যশোর বোর্ডে পাসের হার ছিল ৬৪.২৮ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ৯ হাজার ৭৪৯ জন। এ বছর শূন্য পাশের কলেজের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০টিতে।
যশোর শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক আব্দুল মতিন বলেছেন, “জুলাই আন্দোলনের কারণে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় কিছুটা ঘাটতি ছিল। আমরা খাতার যথার্থ মূল্যায়ন করেছি এবং অসুস্থ প্রতিযোগিতা পরিহার করেছি। তাই, পাসের হার কমেছে।”
তিনি জানান, শূন্য পাসের কলেজগুলোর বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আসমা বেগম বলেছেন, “এ বছরের ফল নিয়ে আমরা পুরোপুরি সন্তুষ্ট নই। তবে, শিক্ষার মান উন্নয়নে আমরা অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। মেধাবীদের খুঁজে বের করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।”
ঢাকা/রিটন/রফিক