চট্টগ্রামে চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (সিইপিজেড) প্যাসিফিক গ্রুপের একটি কারখানায় শ্রমিকদের দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে প্যাসিফিক গ্রুপের একটি ইউনিটের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কেউ গুরুতর আহত হননি বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে দুই পক্ষের মধ্যে কিল-ঘুষি ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে।

জানা গেছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে ইপিজেডের ভেতরের শিল্প পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। সে ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ইপিজেড থানায় একটি মামলা করে। মামলায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। মামলাটি বর্তমানে শিল্প পুলিশ তদন্ত করছে। মামলার তথ্য-সংগ্রহ নিয়ে শ্রমিকদের এক পক্ষের অসন্তোষ। শ্রমিকদের দাবি, তাঁদের নামে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।

পুলিশ জানায়, পুলিশের মামলা থেকে অব্যাহতির দাবিতে এক পক্ষ কর্মবিরতি পালন করছিল। তবে আরেক পক্ষের কাজে যোগদান করার প্রস্তুত ছিল। কর্মবিরতিতে যাওয়া শ্রমিকেরা তাঁদের বাধা দেন। এ অবস্থায় কারখানা কর্তৃপক্ষ তাঁদের জানিয়ে দেয়, কাজের পরিবেশ না থাকলে কারখানা সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হবে। এরপর দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।

চট্টগ্রাম শিল্প পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, ‘মামলা তদন্তে বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় সন্দেহভাজন শ্রমিকদের বাড়িতে খোঁজখবর নিচ্ছে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে প্যাসিফিক গ্রুপের প্রতিষ্ঠান জিনস ২০০০ লিমিটেডের কয়েকজন শ্রমিক রয়েছেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। তবে কোনো শ্রমিককে বিনা কারণে হয়রানি করা হবে না বলে আমরা জানিয়েছি।’

এদিকে শ্রমিকদের পক্ষ থেকে তিন দফা দাবি দেওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, জোর করে কোনো শ্রমিককে অব্যহতি না দেওয়া এবং কারখানা প্রশাসনের চারজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ। শ্রমিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার কারখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, কোনো শ্রমিককে হয়রানি করা হবে না। পাশাপাশি একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তের পরও কয়েকজন শ্রমিক সেখানে বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে কয়েকজনকে মারধর করা হয়। এরপর দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ইপিজেড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ জামির হোসেন বলেন, ‘কারও গুরুতর আহত হওয়ার খবর পাইনি। তবে কিল–ঘুষির ঘটনা ঘটেছে। কারখানা থেকে সব শ্রমিক বের হয়ে গেছেন। এর আগে গত ৯ অক্টোবরও কর্মবিরতি পালন করেছেন শ্রমিকেরা।’

চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের নির্বাহী পরিচালক মো.

আবদুস সোবহান প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের মামলায় শ্রমিকদের হয়রানি করা হচ্ছে—এমন দাবি করে আবার কর্মবিরতিতে যান কয়েকজন শ্রমিক। সেখানে তাঁরা হট্টগোল করে কাজ বন্ধ করে দেন। কারখানায় এখন কাজ বন্ধ, শ্রমিকেরা বাড়ি চলে গেছেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ঘর ষ হয়র ন র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

সার না পেলে কৃষকদের ডিসি অফিস ঘেরাওয়ের পরামর্শ মির্জা ফখরুলের

কৃষিকাজের জন্য প্রয়োজনীয় সার না পেলে কৃষকদের জেলা প্রশাসকের কার্যালয় (ডিসি অফিস) ঘেরাও করার পরামর্শ দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঠাকুরগাঁওয়ে বিএনপির এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ পরামর্শ দেন। সদর উপজেলার দানারহাট ঈদগাহ মাঠে এ সভার আয়োজন করে বেগুনবাড়ি ইউনিয়ন বিএনপি।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘৩১ দফায় বলেছি, আমরা যদি সরকারে যেতে পারি; তবে ১৫ মাসের মধ্যে এক কোটি বেকারের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করব। কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্যের ব্যবস্থা করব।’

সারসংকটের প্রসঙ্গ তুলে ধরে নিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এখন সারের সংকট চলছে। ডিসিক কইবা হবে (বলতে হবে) আপনার তো বাড়ি হচ্ছে কিশোরগঞ্জ। ওত্তি তো (ওদিক) পানি আর পানি। হামার এত্তি (এদিক) তো পানি বেশি নাই। আমাদের কৃষিকাজ করে খেতে হয়। পানি শ্যালো বা ডিপ টিউবওয়েল আর বরেন্দ্র থেকে নিতে হয়। সারটা আমরা ঠিকমতো চাই।’

একই সময়ে উপস্থিত জনগণকে উদ্দেশ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘মুখ বন্ধ করে থাকলে কেউ কথা শুনবে না। যদি কথা না শুনে, সারের দাবিতে দরকার হলে ডিসি অফিস ঘেরাও করে দেবেন।’

২০১৬ সালে বেগম খালেদা জিয়া ভিশন টুয়েন্টি-থার্টি নামে একটি প্রস্তাব জনগণের সামনে তুলে ধরেছিলেন উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ওই প্রস্তাবনায় তিনি বলেছিলেন দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট দরকার। সেই পার্লামেন্টের প্রতিনিধিরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসবেন, তাঁরাই দেশ চালাবেন। এতে ভারসাম্য থাকবে। ভারসাম্য থাকবে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার মধ্যে। বিচার বিভাগও একদম স্বাধীন থাকবে।

কয়েকটি রাজনৈতিক দল পিআর নিয়ে চিৎকার করছে মন্তব্য করে উপস্থিত জনতার উদ্দেশে বলেন মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা বোঝেন পিআরটা কী? এখন চলছে এক ব্যক্তির এক ভোট। আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব। আর পিআর হচ্ছে কোনো ব্যক্তিকে না, দলকে ভোট দেবে। সর্বনাশ! কাকে ভোট দিচ্ছি, আমি জানব না? দলকে ভোট দিলে তো ওটা কী হবে, তাও ঠিকমতো বলতে পারব না। তবে সেই ব্যবস্থায় আমরা যাব কেন? সবাই যদি একমত হয়, তবে চিন্তা করে দেখবে। সে কারণে আমরা বলছি, আগে নির্বাচনটা হোক। পার্লামেন্টে সিদ্ধান্ত হবে। জনগণ ভোট দিয়ে ঠিক করবে পিআর হবে কি হবে না।’

দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আসুন আমরা সবাই মিলে নির্বাচনটা করি। পরে আমরা সবাই মিলে তর্ক-বিতর্ক করব, তবে মারামারি আর করতে চাই না রে, ভাই।’

এমপিওভুক্ত বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চলমান আন্দোলন নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শিক্ষকেরা নানা দাবি নিয়ে আন্দোলন করছেন। আমরা বলছি বিএনপি সরকার গঠন করলে শুধু শিক্ষক নয়, গোটা শিক্ষাব্যবস্থাকে জাতীয়করণ করা হবে।’

এ সময় ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, সহসভাপতি ওবায়দুল্লাহ মাসুদ, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল হামিদ, সাধারণ সম্পাদক মাহবুব হোসেন, বেগুনবাড়ি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি এসএস আবুল কাসেমসহ বিএনপির নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ