এইচএমপিভি ভাইরাস নিয়ে আমাদের যা জানা দরকার
Published: 12th, January 2025 GMT
ভাইরাস দ্বারা শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এই সংক্রমণ কখনো কখনো সব বয়সের মানুষের জন্য গুরুতর অসুস্থতার উৎস এমনকি মৃত্যুর প্রধান কারণ হয়ে ওঠে। ভাইরাল আরটিআইয়ের বৈশিষ্ট্য হলো এটি দ্রুত সংক্রমণ ছড়াতে পারে এবং ব্যাপক বিস্তার লাভ করতে পারে, যা এর প্রতিরোধকে কিছুটা কঠিন করে তোলে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, তীব্র ভাইরাল শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের জন্য প্রধানত কয়েকটি নির্দিষ্ট ভাইরাস দায়ী। এর মধ্যে রয়েছে রেসপিরেটরি সিনসাইটিয়াল ভাইরাস (আরএসভি), ইনফ্লুয়েঞ্জা এ এবং বি, প্যারাইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, করোনাভাইরাস, রাইনোভাইরাস এবং মানব অ্যাডেনোভাইরাস।
এই ভাইরাসগুলোর প্রভাব শুধু ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এদের কারণে জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর বিরাট চাপ সৃষ্টি হয়। ফলে ভাইরাল আরটিআই প্রতিরোধ এবং এর দ্রুত নির্ণয় ও চিকিৎসা নিশ্চিত করা বর্তমান সময়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যগত চ্যালেঞ্জ।
হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি)হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি) একটি নেগেটিভ-সেন্স, একক-সূত্রযুক্ত আরএনএ (রাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড) ভাইরাস, যা নিউমোভিরিডি পরিবারের মেটানিউমোভাইরাস গণের অন্তর্ভুক্ত। এই পরিবারের মধ্যে রেসপিরেটরি সিনসাইটিয়াল ভাইরাসের মতো অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ভাইরাসও রয়েছে। এইচএমপিভির দুটি প্রধান গ্রুপ, এ এবং বি, মানুষের মধ্যে সক্রিয়ভাবে সংক্রমণ ঘটায়।
অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রজনিত ভাইরাসের মতোই মানব মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি) ভাইরাল শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের হার বাড়িয়ে দেয়। এটি প্রধানত শিশু, বয়স্ক এবং দুর্বল রোগ প্রতিরোধক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের মধ্যে গুরুতর সংক্রমণের কারণ হতে পারে।
এই ভাইরাসটি ডাচ্ গবেষক বার্নাডেট জি ভ্যান ডেন হুগেন এবং তাঁর দল প্রথম শনাক্ত করেন ২০০১ সালে। তাঁরা নেদারল্যান্ডসের শিশুদের নাক ও গলার নমুনা পরীক্ষা করে এই ভাইরাস শনাক্ত করেন। এই গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার ভাইরাল শ্বাসযন্ত্রজনিত রোগের কারণ ও প্রতিরোধ সম্পর্কে নতুন ধারণা দিতে সহায়ক হয়েছে।
এইচএমপিভি প্রাদুর্ভাবের বর্তমান চিত্রসম্প্রতি উত্তর চীনে, বিশেষ করে ছোট শিশুদের মধ্যে এইচএমপিভির প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এ বিষয়কে কেন্দ্র করে চীনের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল জনগণকে স্বাস্থ্য ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার জন্য সতর্কতা অবলম্বন করতে আহ্বান জানিয়েছে। এমনকি চীনের বাইরে ভারত, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়াসহ আরও বেশ কিছু দেশে সম্প্রতি এইচএমপিভিসহ অন্যান্য শ্বাসকষ্টজনিত রোগের বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, চীন ও অন্যান্য অঞ্চলে শীতকালে শ্বাসকষ্টজনিত রোগের বৃদ্ধি মূলত মৌসুমি প্রবণতা হতে পারে। ইনস্টিটিউট অব এপিডেমিওলজি, ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ এবং অন্যান্য পর্যবেক্ষণকারী গোষ্ঠী থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা-সদৃশ রোগ বা গুরুতর অ্যাকিউট শ্বাসকষ্টজনিত রোগের কোনো অস্বাভাবিক বৃদ্ধি লক্ষ করা যায়নি।
এইচএমপিভি সংক্রমণের সাধারণ উপসর্গযুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন অনুযায়ী, সাধারণ সর্দির মতো এইচএমপিভি ঊর্ধ্ব ও নিম্ন শ্বাসনালিতে সংক্রমণ সৃষ্টি করে, যা মৃদু অসুস্থতা থেকে গুরুতর এমনকি নিউমোনিয়া বা ব্রঙ্কিওলাইটিস দ্বারা জীবননাশক অবস্থায় পরিণত হতে পারে, যেমন মাঝারি ধরনের ক্ষেত্রে, উপসর্গগুলো সাধারণত ৭-১০ দিনের মধ্যে হ্রাস পায়, তবে নিউমোনিয়া বা অন্যান্য সেকেন্ডারি সংক্রমণের মতো জটিলতা উপস্থিত থাকলে আরোগ্য প্রক্রিয়া দীর্ঘতর হতে পারে। এইচএমপিভি সংক্রমণের সাধারণ উপসর্গগুলো হলো:
• সর্দিকাশি
• জ্বর
• মাথাব্যথা
• নাসারন্ধ্র বন্ধ
• শ্বাসকষ্ট
• কখনো কখনো ত্বকে র্যাশ দেখা যেতে পারে
এইচএমপিভির জন্য উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জনসংখ্যাএইচএমপিভির ইনকিউবেশন পিরিয়ড ৩ থেকে ৬ দিন। ইনকিউবেশন পিরিয়ড হলো সেই সময়কাল, যখন একটি রোগের জীবাণু বা ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করার পর থেকে রোগের প্রথম লক্ষণ বা উপসর্গ প্রকাশিত হতে শুরু করে তবে অসুস্থতার গড় স্থায়িত্ব তার তীব্রতার ওপর নির্ভরশীল, যা অন্যান্য শ্বাসকষ্টজনিত ভাইরাল সংক্রমণের মতোই। ছোট শিশু এবং ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী ব্যক্তিদের hMPV এর কারণে ব্রঙ্কিওলাইটিস বা নিউমোনিয়া সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। যুক্তরাজ্যের ইস্ট অ্যাংলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিনের অধ্যাপক পল হান্টারের মতে, ‘প্রায় প্রতিটি শিশু তাদের পঞ্চম জন্মদিনের মধ্যে অন্তত একটি এইচএমপিভি সংক্রমণের শিকার হবে।’
সংক্রমণ কীভাবে হয়এইচএমপিভির সংক্রমণ প্রক্রিয়া সাধারণ সর্দি, ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং অন্যান্য শ্বাসকষ্টজনিত ভাইরাসের মতোই। এইচএমপিভি মূলত সংক্রমিত ব্যক্তি থেকে অন্যদের মধ্যে ছড়ায় নিম্নলিখিত উপায়ে:
• কাশি বা হাঁচি দেওয়ার ফলে যে স্রাব/শ্লেষ্মা বের হয় তা থেকে।
• আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ শারীরিক যোগাযোগ, যেমন স্পর্শ, হাত মেলানো, অথবা অন্যদের সঙ্গে পানীয় বা খাবারের বাটি শেয়ার করা।
• ভাইরাস দ্বারা দূষিত ফোন, দরজার হাতল, কি–বোর্ড বা অন্যান্য জিনিসপত্র হাত দিয়ে স্পর্শ করা এবং তারপর তা মুখ, নাক বা চোখের সঙ্গে স্পর্শ করা।
জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রতিরোধমূলক কৌশল
এইচএমপিভি ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে নিম্নলিখিত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে:
• অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান ও পানি দিয়ে হাত ভালোভাবে ধোয়া এবং অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক বা মুখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকা।
• সর্দি, জ্বর বা শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ দেখা দিলে রোগীদের মাস্ক পরিধান করা উচিত।
• যারা সর্দি-সদৃশ উপসর্গ প্রদর্শন করছে, তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ শারীরিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলা উচিত।
• অসুস্থ হলে বাসায় বিশ্রাম নেওয়া ও অন্যদের থেকে আলাদা থাকা।
• সম্ভাব্য সংক্রমিত পৃষ্ঠ, যেমন দরজার হাতল, ফোন বা খেলনা, স্যানিটাইজ করা।
এ ছাড়া যেসব ব্যক্তি শ্বাসকষ্টজনিত ভাইরাসের উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে আছেন, বিশেষত বয়স্ক এবং ইমিউনোকম্প্রোমাইজড ব্যক্তিরা, তাঁদের জন্য মাস্ক পরিধান এবং জনসমাগমে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ দেওয়া উচিত।
এইচএমপিভি শনাক্তের পদ্ধতিঅন্যান্য শ্বাসকষ্টজনিত ভাইরাসের মতো নিয়মিত পরীক্ষা এবং উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে এইচএমপিভি শনাক্তকরণ পদ্ধতিগুলো ব্যাপকভাবে উন্নত হয়েছে। শনাক্তকরণের প্রধান পদ্ধতিগুলো নিম্নরূপ:
• হাসপাতালভিত্তিক পর্যবেক্ষণ: সন্দেহভাজন রোগীদের জন্য সিস্টেমেটিক স্ক্রিনিং, ডেটা সংগ্রহ এবং নমুনা বিশ্লেষণ প্রক্রিয়া এর অন্তর্ভুক্ত।
• সেরোলজিক্যাল পরীক্ষা: এনজাইম-লিঙ্কড ইমিউনোসর্বেন্ট অ্যাসে ব্যবহৃত হয়, যা এইচএমপিভির নির্দিষ্ট অ্যান্টিবডি (IgG এবং IgM) শনাক্ত করতে সহায়ক।
• আণবিক শনাক্তকরণের পদ্ধতি: এইচএমপিভি শনাক্ত করার সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হলো রিয়েল টাইম রিভার্স ট্রান্সক্রিপটেশন পলিমেরেজ চেইন রিঅ্যাকশন (RT-PCR), যা F এবং N জিন লক্ষ্য করে এইচএমপিভি শনাক্ত করতে সক্ষম।
বাংলাদেশে কোভিড-১৯ মহামারির সময়কাল থেকে শ্বাসকষ্টজনিত ভাইরাস দ্রুত শনাক্ত করতে RT-PCR সিস্টেম ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে পয়েন্ট-অব-কেয়ার র্যাপিড ডায়াগনসিস এবং অন্যান্য শনাক্তকরণ পদ্ধতির ব্যবহার মহামারি প্রতিরোধ ও দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে আরও কার্যকর হতে পারে।
এইচএমপিভির চিকিৎসাগত কৌশলবর্তমানে এইচএমপিভির চিকিৎসার জন্য কোনো অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ নেই। তবে উপসর্গগুলোকে কমাতে কিছু সাধারণ পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে:
• পর্যাপ্ত পানি পান করা, যাতে শরীরে পানির অভাব না হয়।
• ভালোভাবে বিশ্রাম নেওয়া, যা শরীরের প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
• যদি প্রয়োজন হয়, প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন খাওয়া।
• শ্বাসকষ্ট হলে ইনহেলার বা নেবুলাইজার ব্যবহার করা।
তবে কোনো ওষুধ সেবনের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
এইচএমপিভি চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিকের ভূমিকা
অ্যান্টিবায়োটিকগুলো ভাইরাল সংক্রমণের বিরুদ্ধে কার্যকর নয় এবং শুধু ব্যাকটেরিয়াল রোগজীবাণুদের বিরুদ্ধে কাজ করে। যেহেতু এইচএমপিভি একটি ভাইরাসজনিত রোগ, এটি অ্যান্টিবায়োটিক দ্বারা নির্মূল করা সম্ভব নয়। তবে যাঁরা এইচএমপিভি থেকে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন, তাঁদের মধ্যে কখনো কখনো ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ (সেকেন্ডারি সংক্রমণ) হতে পারে। যদি আপনার চিকিৎসক অ্যান্টিবায়োটিক দেন, তবে তা মূলত সেকেন্ডারি রোগের চিকিৎসার জন্য।
এইচএমপিভির বৈশ্বিক স্বাস্থ্য প্রতিক্রিয়া যেমন হওয়া উচিতচীনে এইচএমপিভির সাম্প্রতিক প্রাদুর্ভাব বিশ্বব্যাপী এর ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বাড়িয়েছে, কারণ এটি শ্বাসকষ্টজনিত ড্রপলেটের মাধ্যমে ছড়ায়, যা কিনা সংক্রমিত দেশ থেকে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ এবং বাণিজ্য সীমান্তে ছড়ানোর আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। তাই আন্তর্জাতিক পোর্টগুলোতে বৈশ্বিক এইচএমপিভি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে নজরদারি জোরদার করা প্রয়োজন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করেছে যে শীতকালে শ্বাসকষ্টজনিত রোগ বাড়তে পারে, তাই দেশগুলোকে আরও সতর্ক থাকতে হবে। তবে আন্তর্জাতিক সহযোগিতাপূর্ণ গবেষণা উদ্যোগ, বিশ্বব্যাপী মুক্ত ডেটা শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম নির্মাণ এর ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। পাশাপাশি উন্নত পর্যবেক্ষণ, দ্রুত সঠিক তথ্যের বিস্তার এবং জনস্বাস্থ্য কাঠামোসমূহের কার্যকর ব্যবস্থাপনা এইচএমপিভি মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
এইচএমপিভি ভ্যাকসিন উন্নয়নে অগ্রগতিবর্তমানে এইচএমপিভির জন্য কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল চিকিৎসা নেই এবং এর প্রতিরোধে কোনো ভ্যাকসিনও উপলব্ধ নয়। তবে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা সাহায্য করতে পারে। এইচএমপিভি ভাইরাসটি আরএসভির (রেসপিরেটরি সিনসিটিয়াল ভাইরাস) কাছাকাছি একটি ভাইরাস, যার জন্য সম্প্রতি ভ্যাকসিন ও মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডির মতো চিকিৎসাপদ্ধতি তৈরি করা হয়েছে। বর্তমানে কোভিড ভ্যাকসিন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মডার্না এর প্রথম পর্যায় বা ফেজ ১ ট্রায়াল করছে, যেখানে ১৮ থেকে ৪৯ বছর বয়সী ব্যক্তিদের ওপর ভ্যাকসিনটি পরীক্ষা করা হবে। তবে এইচএমপিভি ভ্যাকসিন বাজারে আসতে অনেক বছর সময় লাগতে পারে, যেহেতু বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন পাওয়া এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রক্রিয়া জটিল ও সময়সাপেক্ষ।
বাংলাদেশে সম্প্রতি কভিড মহামারি থেকে লব্ধ জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে পর্যবেক্ষণ প্রযুক্তি বা সার্ভিলেন্স ব্যবস্থা জোরদারের মাধ্যমে এইচএমপিভির মৌসুমি প্রবণতাকে চিহ্নিত করা যেতে পারে। যেহেতু প্রাদুর্ভাবের খবর ছড়িয়ে পড়ছে, তাই এইচএমপিভি এবং অন্যান্য শ্বাসকষ্টজনিত ভাইরাসের তথ্য নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ করা জরুরি, যাতে স্থানীয় জনস্বাস্থ্য নীতি ঠিকভাবে নির্ধারণ করা যায়। যদিও এখনো পর্যন্ত এইচএমপিভি বড় সমস্যা নয়, ভাইরাসটি সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণ করতে সরকারি–বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকেরা একসঙ্গে কাজ করলে আরও জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রতিরোধব্যবস্থা জোরদার হতে পারে। আগেভাগে শিক্ষা ও পরিকল্পনা গ্রহণ করে বাংলাদেশকে ভবিষ্যতে মহামারি থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে এবং যেকোনো পরিস্থিতি দ্রুত ও সমন্বিতভাবে মোকাবিলা করা সহজ হবে।
ড.
পল্লব ভট্টাচার্য্য, এমএস (বায়োটেকনোলজি), পিএইচডি (বায়োলজিক্যাল কন্ট্রোল), সিনিয়র রিসার্চ অফিসার-ল্যাব, প্রজন্ম রিসার্চ ফাউন্ডেশন
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জরায়ুর ফাইব্রয়েড কতটা ভয়ের
প্রতিবছর জুলাই মাস বিশ্বব্যাপী ‘জরায়ুর ফাইব্রয়েড সচেতনতা মাস’ হিসেবে পালিত হয়। এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য নারীদের মধ্যে জরায়ুর ফাইব্রয়েড বা টিউমার নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো, এর সঠিক চিকিৎসা ও পরামর্শের সুযোগ নিশ্চিত করা এবং সুস্থ জীবনযাত্রার গুরুত্ব তুলে ধরা।
ফাইব্রয়েড হলো জরায়ুর একধরনের নন ক্যানসারাস টিউমার বা মাংসপিণ্ড, যা প্রজননক্ষম নারীদের হতে পারে। লেইওমায়োমা বা মায়োমা নামেও এটি পরিচিত। জরায়ুতে নানা ধরনের টিউমারের মধ্যে বেশি দেখা যায় ফাইব্রয়েড। সাধারণত ৩০ থেকে ৫০ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে এ সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটি নিরীহ হয়। তবে সঠিক সময়ে এর চিকিৎসা না করলে জীবনমানের ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলে।
লক্ষণ বা উপসর্গ
এই টিউমার লক্ষণ প্রকাশ ছাড়াও থাকতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অন্য কোনো সমস্যায় পেটের আলট্রাসাউন্ড করতে গিয়ে ধরা পড়ে। তবে যেসব লক্ষণ দেখা যেতে পারে—
অতিরিক্ত ও দীর্ঘ সময় ধরে ঋতুস্রাব।
তলপেটে চাপ বা ব্যথা। শরীর ফুলে যাওয়া।
ঘন ঘন প্রস্রাব বা মূত্রনালির সমস্যা।
সহবাসের সময় ব্যথা অনুভব করা।
গর্ভধারণে সমস্যা বা বন্ধ্যত্ব।
বয়স ও বংশগতির প্রভাব।
ওজনাধিক্য, হরমোন পরিবর্তন ইত্যাদি।
নির্ণয় ও চিকিৎসা
আলট্রাসাউন্ড, পেলভিক ইমেজিং, এমআরআই বা জরুরি ক্ষেত্রে হাইফু বা হিস্টেরস্কোপি ব্যবহারের মাধ্যমে জরায়ুতে ফাইব্রয়েড শনাক্ত করা যায়।
টিউমার ছোট হলে বা উপসর্গ না থাকলে ওষুধ ও পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। গুরুতর ক্ষেত্রে মায়োমেকটমি, ইউটেরাইন আর্টারি এম্বোলাইজেশন, এমআরআই গাইডেড ফোকাসড আলট্রাসাউন্ড বা জরায়ু অপসারণ করা হয়। চিকিৎসার ধরন বাছাইয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
কেন সচেতনতা জরুরি
ফাইব্রয়েড খুবই পরিচিত একটি সমস্যা। কিন্তু অনেক নারী উপসর্গ পেয়েও সময়মতো এর চিকিৎসা নেন না। এতে করে দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা হতে পারে। মাসিকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, ক্ষুধা, ক্লান্তি, বন্ধ্যত্ব নিয়ে উদ্বেগ, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা—এসব ঝুঁকি মোকাবিলায় মানসিক সহায়তার প্রয়োজন হতে পারে।
এই টিউমার ডিজেনারেটিভ, ইনফেকশন অথবা সারকোমেটাজে পরিবর্তিত হয়ে থাকে। এর মধ্যে সারকোমেটাজ বা জরায়ু ক্যানসারে রূপ নেয় মাত্র শূন্য দশমিক ১ শতাংশ ক্ষেত্রে। তাই ক্যানসার ভেবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
ফাইব্রয়েড নিয়ে গবেষণা এখনো সীমিত। এর জন্য প্রয়োজন সচেতনতা ও সময়মতো চিকিৎসা। ফাইব্রয়েড হলে সন্তান হবে না, এমন ধারণাও অমূলক। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগনির্ণয় ও চিকিৎসার মাধ্যমে অনেক জটিলতা এড়ানো যায়। এ জন্য স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
ডা. শারমিন আব্বাসি, স্ত্রীরোগ ও বন্ধ্যত্ববিশেষজ্ঞ