বিপিএলের খেলা মাঠে থাকবে আর বিতর্কের স্ফুলিঙ্গ ছড়াবে না, তা কি হয়! অতীতের মতো একাদশ বিপিএলও ৩০ ডিসেম্বর মাঠে গড়িয়েছে অনেক কমতি নিয়ে। সেই ঘাটতিগুলোই এখন সমস্যা আকারে প্রকাশ পাচ্ছে। দেশের একমাত্র ফ্র্যাঞ্চাইজি এই লিগ শুরুর ১৫ দিনের মাথায় সম্মানীর দাবিতে বিদ্রোহ হয়েছে দুর্বার রাজশাহীতে।

নির্ধারিত সময়ে প্রথম কিস্তির টাকা না দেওয়া ক্রিকেটারদের মধ্যে অস্বস্তি আগে থেকে ছিল। তার ওপর দেরিতে পাওয়া ২৫ শতাংশ সম্মানীর চেক বাউন্স হয়েছে। কষ্টের টাকা না পেলে ক্রিকেটারদের ক্ষুব্ধ হওয়া স্বাভাবিক। মানসিক অস্থিরতার মধ্যে অনুশীলনে মনোযোগ রাখা কঠিন। তাই গত দু’দিন চট্টগ্রামে অনুশীলনও করেননি রাজশাহীর ক্রিকেটাররা। দলের ভেতরে টুকটাক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার কথাও শোনা গেছে। জানা গেছে, পুরোপুরি গুমট একটা পরিবেশ দলের ভেতরে। এর ভেতরেই কাল সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে ম্যাচ রাজশাহীর।

রাজশাহীকে ফ্র্যাঞ্চাইজি করার সময়ই সমালোচনা ছিল। আর্থিক সক্ষমতা নিয়েও ছিল প্রশ্ন। টুর্নামেন্ট শুরুর পর সে দুর্বলতা টের পেয়ে গেছেন ক্রিকেটাররা। আইকন ক্রিকেটার তাসকিন আহমেদকে পর্যন্ত সম্মানীর টাকা দেওয়া হয়নি বলে গুঞ্জন। জাতীয় দলের এ ফাস্ট বোলার বিষয়টি ভালোভাবে নিতে পারেননি হয়তো। সে কারণেই নিজেকে হোটেলবন্দি করে রেখেছেন তিনি। রাজশাহীর ক্রিকেটাররা কবে নাগাদ টাকা পেতে পারেন, তা কেউ বলতে পারছেন না।

বিসিবি সূত্রে জানা গেছে, এই পরিস্থিতিতে দলের একজন কর্মকর্তা মালিকের পক্ষ নিয়ে কথা বলায় একজন ক্রিকেটারের কাছে হেনস্তার শিকার হয়েছেন। সবচেয়ে বড় কথা, এত কিছু ঘটে যাওয়ার পরও মালিক পক্ষের কেউ খেলোয়াড়দের সঙ্গে দেখা করেননি। ক্রিকেটাররা মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না বলে অভিযোগ। এ ব্যাপারে দলের ম্যানেজার মেহরাব হোসেন অপিকে ফোন করে সাড়া পাওয়া যায়নি।

তবে দলের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘মালিকের স্ত্রী বলের আঘাতে আহত হওয়ায় চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড গেছেন। সেখান থেকে ফিরতে দেরি হওয়ায় টাকা নগদ করা সম্ভব হচ্ছে না। মালিক অপারেশন্স ম্যানেজারকে বলেছেন, দেশে ফিরে ক্রিকেটারদের নগদ টাকা দেবেন। চেক ব্যাংকে জমা না দিতে অনুরোধ করেছেন।’

এ থেকে বোঝা যায়, খেলোয়াড়দের ঠান্ডা রাখতে চেক দেওয়া হয়েছিল। রাজশাহীর মালিক পক্ষের কেউ না এলেও গতকাল সন্ধ্যায় ক্রিকেটারদের আশ্বস্ত করতে চট্টগ্রামে আসেন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ। হোটেল র‍্যাডিসনে ক্রিকেটারদের সঙ্গে বোর্ড সভাপতির মিটিংও হয়েছে। জানা গেছে, ফারুক আশ্বস্ত করায় ক্রিকেটাররা ম্যাচ খেলতে রাজি হয়েছেন।

রাজশাহীর এই ঘটনা বাকি ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোতেও প্রভাব পড়েছে। গতকাল জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আলোচনার বিষয়ই ছিল সম্মানী না পাওয়া। কে কতটা সম্মানী দিয়েছেন, সেই খোঁজ নিচ্ছিলেন খেলোয়াড়রা। লিগের খেলা শেষ হওয়ার আগে সম্মানীর ৫০ শতাংশ টাকা পাওয়া নিয়ে সংশয়ে অনেকে।

জাতীয় দলের একজন ক্রিকেটার নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন, ‘আমরা টাকার জন্য খেলি। সেই টাকা সময়মতো না দিলে মনমানসিকতা ভালো থাকে না। টুর্নামেন্টের অর্ধেক হয়েছে অথচ এখনও ২৫ শতাংশ টাকা দেয়নি। অথচ টুর্নামেন্ট শুরুর আগে চুক্তির অর্ধেক টাকা দেওয়ার কথা। টুর্নামেন্ট শেষ হওয়ার আগে বাকি ২৫ শতাংশ এবং খেলা শেষে ২৫ শতাংশ দেবে। অথচ কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়ম মানছে না। ছয়টি ফ্র্যাঞ্চাইজি মাত্র ২৫ শতাংশ টাকা দিয়েছে।’

অনিয়মই যেখানে নিয়ম, সেখানে সম্মানীর টাকা সময়মতো পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকে না। সবচেয়ে বড় কথা, ব্যাংক জামানতই তো দেয়নি বেশির ভাগ ফ্র্যাঞ্চাইজি। বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে বিসিবি সভাপতিকে ফোন করা হলেও ধরেননি। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব প এল একজন ক

এছাড়াও পড়ুন:

দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা

সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।

উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।

আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’

তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’

আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’

ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।

ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’

পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।

গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।

২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।

তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।

জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।

দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
  • ‘সাংস্কৃতিক জাগরণেই মুক্তি’
  • যদি ঠিক পথে থাকো, সময় তোমার পক্ষে কাজ করবে: এফ আর খান
  • বিবাহবিচ্ছেদ ও খোরপোষ নিয়ে ক্ষুদ্ধ মাহি
  • ফতুল্লায় দুই ট্রাকের মাঝে পড়ে যুবকের মৃত্যু
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ২০ মামলার আসামি নিহত, গুলিবিদ্ধ ৩
  • নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
  • তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের বিজয়ী সামিয়া
  • আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স
  • নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের ৩১ বিভাগকে প্রস্তুতির নির্দেশ ইসির