‘ঠান্ডা বাতাসে কেঁপে কেঁপে উঠি মোরা’
Published: 18th, January 2025 GMT
‘কয়দিন ধইর্যা নদীর বাতাস বাড়ছে। প্রচণ্ড শীতের কষ্টে দিন কাটছে আমাগো। ঠান্ডা বাতাসে কেঁপে কেঁপে উঠি মোরা। কোনো কাঁথা-কাফোড় নাই। আমার ছোট মেয়াডারে গ্রামে পাঠাই, সে কোনোদিন ২০০ পায়, কোনোদিন ১০০ পায়। কোনোদিন খাইয়া থাহি, কোনোদিন না খাইয়া। আমরাগো সরকার যদি কিছু সাহায্য সহযোগিতা করত।’
কথাগুলো বলছিলেন শিল্পী বেগম নামের এক বেদেনি। ফরিদপুর-ভাঙ্গা-বরিশাল মহাসড়কের কুমার নদ জোড়া ব্রিজের নিচে একটি নৌকায় বসবাস করেন তিনি। স্বামী নেই। চার ছেলেমেয়ে নিয়ে কোনোরকমে দিন কাটছে। শিল্পী বলেন, ‘গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়াই। দাঁতের পোকটোক ওঠোই, বাতবুত কাটি। কিন্তু আগের মতোন তো এখন ইনকাম নাই। এখন মনে করেন ডাক্তারের চাহিদা বাড়িয়া যাওয়ায় আমাদের সেই দিন নাই। আগে গ্রামে গেলি ৫০০ টাকা আয় হইত। এহনে কোনোরকম চাইয়া চিন্তায় দিন কাটছে।’
সম্প্রতি ফরিদপুর-ভাঙ্গা-বরিশাল মহাসড়কের কুমার নদ জোড়া ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নদের পারে ১৪টি বেদে পরিবার বসবাস করছে। সেখানে গাছের সঙ্গে রশি বেঁধে বাঁশ-টিন ও কাঠ ব্যবহার করে ছোট ছোট ঘর করেছেন তারা। যেখানে প্রায় ১০টি বসতঘর করা হয়েছে। ঘরগুলো কিছুটা উঁচু। ঘরে ঢোকার জন্য মইয়ের মতো কাঠের সিঁড়ি ব্যবহার করা হয়েছে। কুমার নদের পারে কয়েকটি নৌকায় বসবাস করছেন বেদে পরিবারের আরও কয়েকজন। প্রচণ্ড ঠান্ডা, হিমেল বাতাস ও কুয়াশার মধ্যেই হাসিমুখে খেলছে শিশুরা। তাদের গায়ে তেমন কোনো শীতের পোশাক নেই।
বেদেনি সুমি আক্তার বলেন, এই শীতে তাদের শিশুদের পরার মতো জামা-কাপড় নেই। কয়েক দিনের প্রচণ্ড শীতে শিশুদের জ্বর-সর্দি-কাশি, পাতলা পায়খানা বেড়ছে।
বেদেনি বিথী বেগমের ভাষ্য, গ্রামে ঘুরে ঘুরে আগে সাপের খেলা দেখাতেন, মানুষ আনন্দ পেত। এখন আর সেই দিন নাই। অনেক কষ্টে তাদের দিন কাটছে।
বেদে সর্দার কালাম শেখ জানান, কুমার নদ ঘেঁষে প্রায় ৩০ বছর ধরে বসবাস করছেন তারা। ১৪টি পরিবারের মধ্যে পুরুষ ৮ জন, নারী ১২-১৩ জন, শিশু ও কিশোরীসহ ১৬ জন। তাদের শিশুদের জন্মনিবন্ধন করা প্রয়োজন। পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ছিলাধরচর গ্রামের ভোটার তারা। ভোটার হয়েও পৌরসভার কোনো সুবিধা পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, শীতে তারা প্রচণ্ড কষ্ট পান। তাদের শীতবস্ত্র দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
বেদে সর্দারনী শাহীনূর বেগম ও শিল্পী বেগম জানান, পুরুষরা যে কোনো জায়গায় গোসলসহ মলমূত্র ত্যাগ করতে পারে। কিন্তু নারীদের ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব হয় না। কোনো স্যানিটেশনের ব্যবস্থা না থাকায় খোলা জায়গায় অথবা অন্য কোনোভাবে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে হয় নারীদের। শীতবস্ত্র না থাকায় বিভিন্ন শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে নারী ও শিশুরা। এ অবস্থায় খুবই জরুরি অস্থায়ী দুটি বাথরুম ও একটি টিউবওয়েল। এ ছাড়া তাদের স্থায়ী বসবাসের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবি জানান বেদে পরিবারের সদস্যরা।
ইউএনও মাসুদুর রহমান জানান, বেদে পরিবারগুলোকে সহায়তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর ব র
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।