চাকরি থেকে বিরতি নেওয়া নারীদের জন্য ব্র্যাকের ‘ব্রিজ রিটার্নশিপ’
Published: 19th, January 2025 GMT
কর্মক্ষেত্র থেকে বিরতি নেওয়া নারীদের কাজে ফেরাতে ‘ব্রিজ রিটার্নশিপ’ শীর্ষক উদ্যোগ নিয়েছে ব্র্যাক। এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য- কোনো কারণে পেশা ছাড়তে বাধ্য হওয়া নারীদের কর্মক্ষেত্রে পুনঃপ্রবেশে সহায়তা করা। ছয় মাস মেয়াদি এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের হাতে-কলমে শিক্ষা, পেশাগত উন্নয়ন, বিশেষজ্ঞ পরামর্শ এবং আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে নতুন করে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে।
কর্মক্ষেত্রে পুনঃপ্রবেশের সময় নারীদের অনেকেই বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। অনেক সময় বিরতির কারণে প্রয়োজনীয় দক্ষতার ঘাটতি বা আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখা দেয়। পেশাগত সম্পর্কের মাধ্যমে যে যোগাযোগ বা নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছিল তা সীমিত হয়ে যায়। ফলে প্রথাগত নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কখনো কখনো প্রতিভাবান পেশাজীবীরা উপেক্ষিত হয়ে কর্মজীবন থেকে আরও দূরে সরে যেতে বাধ্য হন। ব্রিজ রিটার্নশিপে এই বিষয়গুলোকে বিবেচনায় রাখা হয়েছে। এই অন্তরায়গুলো দূর করে চাকরি থেকে বিরতি নেওয়া নারীদের কর্মজীবনে ফেরাতে এই উদ্যোগটি হাতে নিয়েছে ব্র্যাক।
ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ বলেছিলেন, ‘আমি আমার জীবনে কখনোই কোনো পরাজিত নারীকে দেখিনি।’
ব্র্যাকের পিপল, কালচার অ্যান্ড কমিউনিকেশনসের ঊর্ধ্বতন পরিচালক মৌটুসী কবীর বলেন, তার এই দারুণ শক্তিশালী উপলব্ধি ব্র্যাক ব্রিজ রিটার্নশিপ প্রোগ্রামের মূলনীতি হিসেবে কাজ করেছে।
তিনি আরও বলেন, জেন্ডার সমতার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থেকে আমরা এমন একটি কর্মপরিবেশ তৈরি করতে কাজ করি, যেখানে পেশাজীবী নারীরা তাদের সম্ভাবনাকে নতুন করে উপলব্ধি করবেন এবং পেশাগত জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন। প্রতিভাবান নারীদের পেশাজীবনে নতুন করে প্রবেশ করার সুযোগ সৃষ্টি এবং এর মাধ্যমে সমাজ ও অন্যান্য ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা রাখার সুযোগ তৈরি করতেই এই উদ্যোগ।
ব্রিজ রিটার্নশিপে অংশগ্রহণকারীরা ব্র্যাকের বিভিন্ন কর্মসূচিতে প্রকল্পের তত্ত্বাবধান, গবেষণা ও অন্যান্য কাজে যুক্ত থাকবেন এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাজগুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন।
অংশগ্রহণকারীরা হাতে-কলমে শেখার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও পেশা সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ পরামর্শও পাবেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন নেতৃত্ব উন্নয়ন কর্মশালায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে পারবেন।
ব্রিজ রিটার্নশিপে অংশগ্রহণকারী নারীদের পেশাগত উন্নয়নের উদ্দেশ্যে এই কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে যেন বাংলাদেশের বর্তমান উন্নয়ন চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় তারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারেন। সফলভাবে ব্রিজ রিটার্নশিপ সম্পন্ন করার পর অংশগ্রহণকারীদের চাকরির জন্য ব্র্যাক এবং এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোতে সুপারিশ করা হবে।
ব্রিজ রিটার্নশিপে আবেদনের জন্য যে কোনো স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে ন্যূনতম তিন বছরের কাজের অভিজ্ঞতা এবং স্বীকৃত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে স্নাতক ডিগ্রি থাকতে হবে। আবেদনকারী নারীদের কর্মজীবন থেকে বিরতির সময়কাল হতে হবে নূন্যতম এক বছর। ব্র্যাক ব্রিজ রিটার্নশিপ প্রোগ্রামের মাধ্যমে আপনার সম্ভাবনাকে পুনরুজ্জীবিত করুন।
এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণে আগ্রহীদের ২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আবেদন করতে হবে। বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন: https://brac.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
চলতি বছর বিশ্বে মন্দার ঝুঁকি বেড়েছে, জরিপে অর্থনীতিবিদদের শঙ্কা
চলতি বছরে মন্দার ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে গেছে বলে জরিপে দেখা গেছে। ৫০টি দেশের অর্থনীতিবিদ এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতির কারণে ব্যবসায়িক পরিবেশের অবনতি হয়েছে।
চলতি বছরে বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে ১৬৭ জন বিশ্লেষকের মধ্যে ১০১ জন ‘উচ্চ’ বা ‘খুব উচ্চ’ ঝুঁকির কথা বলেছেন। ৬৬ জন বলেছেন ঝুঁকি ‘কম’, যার মধ্যে চারজন বলেছেন ‘অত্যন্ত কম’।
জরিপে অংশ নেওয়া অধিকাংশ অর্থনীতি বিশ্লেষক বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের কারণে (যদিও ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে) ব্যবসায়িক আস্থা নষ্ট হয়েছে; সৃষ্টি করেছে অস্থিরতা। ফলে চলতি বছর মন্দার ঝুঁকি অনেকটা বেড়েছে। মাত্র তিন মাস আগেও এই অর্থনীতিবিদদের অধিকাংশ শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। শুধু তা–ই নয়, তাঁরা বলেছিলেন, প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা থাকবে।
কিন্তু ট্রাম্পের বিশ্ববাণিজ্য ‘নতুনভাবে গঠনের’ উদ্যোগ, বিশেষ করে সব আমদানির ওপর শুল্কারোপের সিদ্ধান্ত, অর্থনীতিতে তীব্র অভিঘাত সৃষ্টি করেছে। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শেয়ারবাজারে বাজার মূলধন কমেছে ট্রিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ। ডলারসহ যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদগুলোয় বিনিয়োগকারীদের আস্থা নড়বড়ে হয়েছে।
জরিপে অংশগ্রহণকারী ৩০০ জনের বেশি অর্থনীতিবিদের মধ্যে কেউই বলেননি, ট্রাম্পের শুল্কনীতির ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। ৯২ শতাংশ অর্থনীতিবিদ বলেছেন, ব্যবসায়ীদের মনোবলে এই শুল্কনীতির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। মাত্র ৮ শতাংশ নিরপেক্ষ মত দিয়েছেন, যাঁদের বেশির ভাগই ভারত ও অন্যান্য উদীয়মান অর্থনীতির প্রতিনিধি।
জরিপে ২০২৫ সালের জন্য বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে আনা হয়েছে। জানুয়ারি মাসের জরিপে এই অর্থনীতিবিদেরাই বলেছিলেন, প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩ শতাংশ। এবার তা ২ দশমিক ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পূর্বাভাস অবশ্য একটু বেশি—তারা ২ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির কথা বলেছে। জরিপে অংশ নেওয়া ৪৮টি অর্থনীতির মধ্যে ২৮টি অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে আনা হয়েছে।
২০২৬ সালের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসও আশাব্যঞ্জক নয়। অর্থনীতিবিদেরা মনে করছেন, ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে যে অর্থনৈতিক মন্দার আবহ তৈরি হয়েছে, তা সহজে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। জরিপে অংশগ্রহণকারী ১৬৭ অর্থনীতিবিদের মধ্যে ১০১ জন (৬০ শতাংশ) অবশ্য বলেছেন, চলতি বছর বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার ঝুঁকি বেশি বা খুব বেশি। মাত্র ৬৬ জন এটিকে কম ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন।
চীন ও রাশিয়ার অর্থনীতি তুলনামূলকভাবে ভালো করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জরিপে অংশগ্রহণকারীরা মনে করছেন, চীনের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ; রাশিয়ার হতে পারে ১ দশমিক ৭ শতাংশ। অন্যদিকে মেক্সিকো ও কানাডার প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে দশমিক ২ ও ১ দশমিক ২ শতাংশে নেমে আসতে পারে, গত কয়েক মাসের মধ্যে যা সবচেয়ে বড় অবনতি।
গবেষণাপ্রতিষ্ঠান স্টেট স্ট্রিটের ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার প্রধান কৌশলবিদ টিমোথি গ্রাফ বলেন, এই পরিবেশে প্রবৃদ্ধি নিয়ে আশাবাদী হওয়া কঠিন। আজকের মধ্যে সব শুল্ক তুলে নেওয়া হলেও ট্রাম্পের নীতির কারণে দ্বিপক্ষীয়, বহুপক্ষীয় বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা চুক্তিতে বিশ্বাসযোগ্যতার যে ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে ওঠা কঠিন।
এদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্বজুড়ে যে উচ্চ মূল্যস্ফীতি সৃষ্টি হয়েছিল, নীতি সুদহার বৃদ্ধির মাধ্যমে তা অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু এখন উচ্চ শুল্কের কারণে নতুন করে মূল্যস্ফীতির চাপ তৈরি হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া ও বেকারত্ব বাড়লে স্ট্যাগফ্লেশন (উচ্চ মূল্যস্ফীতি+বেকারত্ব নিম্ন প্রবৃদ্ধি) সৃষ্টি হতে পারে। সেই আশঙ্কা দিন দিন বাড়ছে বলেই মনে করেন গ্রাফ।
জরিপে আরও দেখা গেছে, ২৯টি প্রধান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে ১৯টি ব্যাংক চলতি বছর মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে আগামী বছরের জন্য এ সংখ্যা কিছুটা কমে ১৫-তে নামবে বলে পূর্বাভাস।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের এই বাণিজ্যনীতির অভিঘাত কেবল যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে নয়, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায়ও দীর্ঘমেয়াদি অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। ফলে ভবিষ্যতেও চাপ অব্যাহত থাকবে। এখন দেখার বিষয়, বিশ্বনেতারা কীভাবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেন, অর্থাৎ কীভাবে স্থিতিশীল বাণিজ্যনীতি প্রণয়ন করতে পারেন।