কক্সবাজারের সাবেক জেলা প্রশাসক রুহুল আমিন, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ সাদিকুল ইসলাম তালুকদারসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের আগে জমি অধিগ্রহণের ২০ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় বাদীর স্বাক্ষর ও নথি জাল করে নিজেদের নাম কেটে দেওয়ার অভিযোগ আছে আসামিদের বিরুদ্ধে।

অন্য আসামিরা হলেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নাজির স্বপন কান্তি পাল এবং জেলা ও দায়রা জজ আদালতের স্টেনোগ্রাফার জাফর আহমদ। 

কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মুন্সী আব্দুল মজিদ ২৩ জানুয়ারি এ নির্দেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করে কক্সবাজার আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) সিরাজ উল্লাহ জানান, জালিয়াতি-সংক্রান্ত দুদকের দেওয়া প্রতিবেদন গ্রহণ করে আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।

জানা গেছে, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও দুদকের কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন গত ১ জুলাই জেলার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা, হুলিয়া ও ক্রোক-পরোয়ানা জারির আবেদন জানান।

আদালত সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ১৯ নভেম্বর তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জমি অধিগ্রহণের প্রায় ২০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে তৎকালীন জেলা প্রশাসক রুহুল আমিনকে প্রধান আসামি করে ২৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন মাতারবাড়ীর বাসিন্দা কায়সারুল ইসলাম চৌধুরী।

আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য দুদককে নির্দেশ দেন। মামলার পরপরই ১ নম্বর আসামি রুহুল আমিনের নাম বাদ দিয়ে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে নথিপত্র পাঠান তৎকালীন জেলা ও দায়রা জজ সাদিকুল ইসলাম তালুকদার। কিন্তু মামলা থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের নাম বাদ দেওয়ার ঘটনা জানতে পেরে কয়েক দিন পর একই আদালতে আবার মামলা করেন কায়সারুল ইসলাম। সে মামলায় জেলা প্রশাসক রুহুল আমিন, জেলা জজ সাদিকুল ইসলাম তালুকদারসহ সাতজনকে আসামি করা হয়। সেই মামলার তদন্ত শেষে গত ১ জুলাই আদালতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় দুদক।

এ ক্ষেত্রে সাবেক জেলা প্রশাসক রুহুল আমিনকে বাদীর স্বাক্ষর ও নথি জালিয়াতিতে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করার অভিযোগ আনা হয়েছে অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে। একই সঙ্গে মামলা থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে দুই আসামিকে। তারা হলেন কক্সবাজার আদালতের সরকারি কৌঁসুলি আবদুর রহিম ও সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এস এম শাহ হাবিবুর রহমান।

প্রতিবেদনে দুদক জানায়, কায়সারুল ইসলামের মামলাটি ফৌজদারি দরখাস্ত রেজিস্টারে লিপিবদ্ধের সময় জেলা প্রশাসক রুহুল আমিনসহ মোট আসামি ছিলেন ২৮ জন। কিন্তু তিনটি পৃষ্ঠায় পরিবর্তন করে এক নম্বর আসামি রুহুল আমিনের নাম বাদ দেওয়া হয়। ২ নম্বর আসামি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জাফর আলমকে করা হয় এক নম্বর আসামি। এতে বাদীর জাল স্বাক্ষরও দেওয়া হয়। পুরো নথিতে কাটাছেঁড়া ও লেখা ঘষামাজা করে দুদকে পাঠানো হয়েছিল। বাদীর জাল স্বাক্ষরের বিষয়টি সিআইডির হস্তলিপিবিশারদের মাধ্যমে প্রমাণিত।

দুদক ও আদালত সূত্র জানায়, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ১ হাজার ৪১৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে চিংড়ি ঘের, ঘরবাড়িসহ অবকাঠামোর বিপরীতে ক্ষতিপূরণ বাবদ বরাদ্দ করা হয় ২৩৭ কোটি টাকা। চিংড়ি ঘের অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের বিপরীতে ৪৬ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। এর মধ্যে মনগড়া ২৫টি চিংড়ি ঘের দেখিয়ে ক্ষতিপূরণের ৪৬ কোটি টাকা থেকে ১৯ কোটি ৮২ লাখ ৮ হাজার ৩১৫ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়। 

জেলা প্রশাসনের তথ্য বলছে, শুরুতে চিংড়ি ঘের অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রায় ২৩ কোটি টাকার চেক বিতরণ করা হয়েছিল। পরে তিনটি চেক বাতিল করা হয়। এরপর অবশিষ্ট ১৯ কোটি ৮২ লাখ ৮ হাজার টাকা যারা নিয়েছেন এবং দিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে। ২০১৪ সালের ৭ ডিসেম্বর কক্সবাজার সদর মডেল থানায় সাবেক জেলা প্রশাসক রুহুল আমিনসহ অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা হয়। দুদক দীর্ঘ তদন্ত শেষে প্রায় ২০ কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পায়।

এ মামলায় ২০১৭ সালের ২২ মে জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে রুহুল আমিনকে কারাগারে পাঠান আদালত। এর আগে তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। তবে বর্তমানে রুহুল আমিন জামিনে আছেন। একই মামলায় ৯ মে ঢাকার সেগুনবাগিচা থেকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জাফর আলম, ৩ এপ্রিল কক্সবাজার শহর থেকে জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার সাবেক উচ্চমান সহকারী আবুল কাশেম মজুমদার, সাবেক সার্ভেয়ার ফখরুল ইসলাম ও কক্সবাজার আদালতের আইনজীবী নুর মোহাম্মদ সিকদারকে গ্রেপ্তার করে দুদক। মামলাটি বর্তমানে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জন র ব র দ ধ র ল ইসল ম পর য় ন তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

২ বছরের ভেতরে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আপত্তি নেই বিএনপির

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জুলাই সনদের খসড়া পাঠানো হয়েছে। সেই খসড়ায় বলা হয়েছে, দুই বছরের মধ্যে ঐকমত্য হওয়া বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। এ বিষয়ে বিএনপির কোনো আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের ২১তম দিনের আলোচনার বিরতিতে সালাহউদ্দিন আহমদ এ কথা বলেন।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা যেটা পেয়েছি, এটা জুলাই জাতীয় সনদ নামে একটা খসড়া পেয়েছি। সেটা ভূমিকা, বিস্তারিত বিষয়গুলো নেই। এই খসড়ার সঙ্গে আমরা মোটামুটি একমত। কিন্তু খসড়ার কিছু বাক্য, শব্দ ও গঠনপ্রণালি নিয়ে কারও কোনো মতামত আছে কি না, তা জানতে রাজনৈতিক দলগুলোকে খসড়াটি দিয়েছে কমিশন। আমাদের যে সংশোধনী থাকবে, আমরা তা কাল জমা দেব।’

খসড়ায় যে অঙ্গীকারের কথা বলা হয়েছে, সে বিষয়ে বিএনপি একমত বলে জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য। তিনি বলেন, ‘খসড়ায় দুই বছরের ভেতরে প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যে অঙ্গীকার চাওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে আমরা একমত।’

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ আইনের মাধ্যমে করতে চাই। এতে আইনি ত্রুটি থাকলে সংশোধন সহজ হবে।’ তিনি বলেন, ‘কার্যকর রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য একটি সক্রিয় নির্বাহী বিভাগ প্রয়োজন। তবে সেই নির্বাহী বিভাগকে চেক অ্যান্ড ব্যালান্সের মধ্যে রাখতে হবে।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সংবিধানে যত বেশি যুক্ত করা হবে, সংশোধন তত বেশি জটিল হয়ে পড়বে। তাই আমরা চাই, আইনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করা হোক এবং সেই আইনে প্রয়োজন অনুযায়ী সংশোধন আনা সহজ হবে।’

নারী প্রতিনিধিত্ব বিষয়ে বিএনপির অবস্থান প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমরা প্রথম ধাপে প্রস্তাব করেছি, আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ৫ শতাংশ অর্থাৎ ১৫টি আসনে নারীদের মনোনয়ন দেওয়া হবে। পরবর্তী নির্বাচনে তা ১০ শতাংশ অর্থাৎ ৩০টি হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই, নারীরা সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হোক। কিন্তু সমাজের বাস্তবতা বিবেচনায় আমরা ধাপে ধাপে অগ্রসর হতে চাই।’

সংস্কার কমিশনের ৭০০–এর বেশি সুপারিশ সম্পর্কে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এর মধ্যে প্রায় ৬৫০টির মতো প্রস্তাবে বিএনপি একমত হয়েছে। বাকিগুলোর বিষয়ে পরামর্শ বা সংশোধিত প্রস্তাব দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘সব প্রস্তাব সনদে আসবে না। তবে যেগুলো মৌলিক, যেমন সংবিধান সংশোধনসংক্রান্ত, সেগুলো অবশ্যই গুরুত্ব পাবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই সনদে আমাদের যে সম্মতি সেটি আইনের ঊর্ধ্বে: সালাহউদ্দিন
  • ওসমানী বিমানবন্দরে বোর্ডিং ব্রিজের চাকা ফেটে তরুণের মৃত্যু
  • সংসদের উচ্চকক্ষে পিআর চালুর প্রস্তাব কমিশনের, আলোচনায় উত্তেজনা
  • টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিবাদ ও প্রতিবেদকের বক্তব্য
  • মানিব্যাগ তুলতে সেপটিক ট্যাংকে নেমে বড় ভাইয়ের মৃত্যু, ছোট ভাই হাসপাতালে
  • সিলেটে সহপাঠীর সঙ্গে বেড়াতে যাওয়া স্কুলছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ
  • ৪ কলেজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ২১টি স্থাপনার নাম বদল
  • ২ বছরের ভেতরে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আপত্তি নেই বিএনপির
  • জুলাই সনদের খসড়ায় ফ্যাসিবাদের দুঃশাসনের চিত্র নেই: ইসলামী আন্দোলন
  • কক্সবাজারের সোনাদিয়া উপকূলে ভেসে এল অজ্ঞাতনামার লাশ, এখনো নিখোঁজ অরিত্র