১২৫ মণ সবজি খিচুড়ির উৎসবে অংশ নিলেন প্রায় সাড়ে ৬ হাজার মানুষ
Published: 25th, January 2025 GMT
পাবনার বেড়ায় অন্যরকম প্রীতিভোজ অনুষ্ঠিত হল। ১২৫ মণ সবজি খিচুড়ির উৎসবে অংশ নিলেন প্রায় সাড়ে ৬ হাজার মানুষ। প্রতি বছরের মতো গতকাল শুক্রবার আয়োজন করা হয়েছিল বেড়া পৌর এলাকার দক্ষিণপাড়া মহল্লায় ‘সবজি খিচুড়ি উৎসব’।
এবার রান্না করা হয় ১২৫ মণ সবজি খিচুড়ি। এবারের খিচুড়িতে ছিল ১০৫ মণ বিভিন্ন ধরনের সবজি, ১৩ মণ চাল আর তিন মণ ডাল। সেই সবজি খিচুড়ি বেড়া পৌর এলাকার দক্ষিণপাড়া, দাসপাড়া, কর্মকারপাড়া, শেখপাড়া, শাহপাড়া ও হাতিগাড়া মহল্লার সাড়ে ছয় হাজার নারী-পুরুষ রাত ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত খাওয়া-দাওয়া করেন।
সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে জানা যায়, স্থানীয় ‘দক্ষিণপাড়া যুবসমাজ’ এর উদ্যোগে ১১ বছর ধরে পালিত হয়ে আসছে এই ‘খিচুড়ি উৎসব’। সুবিধামতো বছরের কোনো একটি দিনকে মহল্লার ছোট থেকে শুরু করে মুরুব্বিরা মিলে উৎসবের জন্য বেছে নেন। তবে শীতের মধ্যে অল্প দামে নানা রকম সবজি পাওয়া যায় বলে শীত মৌসুমেরই কোনো একটি দিনকে সবার সম্মতিতে ‘সবজি খিচুড়ি উৎসব’ হিসেবে বেছে নেওয়া হয়। এবার সবাই মিলে ২৪ জানুয়ারি দিনটিকে সবজি খিচুড়ি উৎসবের দিন হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন।
এলাকাবাসী জানান, ২০১৫ সালে বেড়া পৌর এলাকার দক্ষিণপাড়া মহল্লার ১০ থেকে ১২ জন যুবক এ খিচুড়ি উৎসবের শুরু করেন। ওই বছর সবজি খিচুড়ি রান্না করে খাওয়ানো হয় মহল্লারই শতাধিক নারী-পুরুষকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই আয়োজনের পরিধি প্রতি বছরই বেড়েছে। এক সময় এই আয়োজনের সঙ্গে শুধু দক্ষিপাড়া মহল্লার যুবকেরা জড়িত থাকলেও এখন দলমত ও ধর্মবর্ণ মিলিয়ে আশেপাশের ছয়টি মহল্লার বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। এবারের সবজি খিচুড়ি উৎসব দক্ষিণপাড়া মহল্লায় অনুষ্ঠিত হলেও এতে অংশ নেন দাসপাড়া, কর্মকারপাড়া, শাহপাড়া, শেখপাড়া ও হাতিগাড়া মহল্লার প্রায় ছয় হাজার নারী-পুরুষ।
আয়োজকেরা জানান, শুক্রবার ভোরেই তারা সবজি বিক্রির হাটগুলো থেকে প্রায় ১০৫ মণ বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন সবজি কেনেন। এসব সবজির মধ্যে ছিল আলু, ফুলকপি, বাধাকপি, পেঁপে, মিষ্টি কুমড়া, লাউ, সিম, টমেটো, গাজর, মুলা, কাঁচা মরিচ, বেগুন, শালগম, বরবটিসহ আরও কয়েক রকমের সবজি। সবজি কিনে আনার পর দক্ষিপাড়া, দাসপাড়া ও কর্মকারপাড়া মহল্লার অন্তত ২৫টি বাড়িতে সেগুলো কাটা, বাছা ও ধোয়ার জন্য দেওয়া হয়েছিল। সকাল থেকেই মহল্লার বিভিন্ন বয়সী নারীরা দলবেধে ওইসব বাড়িতে জড়ো হয়ে কোটাবাছায় অংশ নিয়েছিলেন।
সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, এসব বাড়িতে চার থেকে পাঁচ শ’ নারী অন্তত ২৫টি দলে ভাগ হয়ে ১০৫ মণ সবজি গতকাল দুপুরের মধ্যেই কাটা, বাছা ও ধোয়ার কাজ শেষ করেন। দক্ষিণপাড়া মহল্লার সবচেয়ে বড় ফাঁকা জায়গায় রান্না করার জন্য বসানো হয় ১০টি অস্থায়ী চুলা। এর পাশেই তৈরি করা হয় প্যান্ডেল। কাটা সবজি সাজিয়ে রাখার জন্য একের পর এক টেবিল জোড়া দিয়ে বানানো হয় বিশাল আকারের টেবিল। বিকেল চারটা থেকে ১০টি চুলায় ১০টি ডেগ চাপিয়ে শুরু হয় সবজি খিচুড়ি রান্না। রান্নায় ১০৫ মণ সবজির সঙ্গে যোগ করা হয় ১৩ মণ চাল ও তিন মণ ডাল। তিন দফায় এই রান্না শেষ হয়। তবে প্রথম দফা রান্না শেষে হওয়ার পরে রাত ৮টা থেকেই শুরু হয় খাওয়া-দাওয়া। পরে আরও দু’দফা রান্না চলে। রাত ৮টা থেকে শুরু করে ১২টা পর্যন্ত দক্ষিণপাড়াসহ ছয়টি মহল্লার সাড়ে ছয় হাজার নারী-পুরুষ সবজি খিচুরি খাওয়ায় অংশ নেন।
এদিকে খিচুড়ি উৎসব আয়োজনের মধ্যে দিয়ে দক্ষিণপাড়া মহল্লার মানুষ একদিকে যেমন আনন্দে মেতে ওঠেন তেমনি মহল্লাটি পরিণত হয় প্রাণবন্ত মিলনমেলায়। আয়োজকেরা জানান, এই আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য হলো সম্প্রীতি ও সহযোগিতার বন্ধন দৃঢ় করা। তারা জানান, দক্ষিণপাড়াসহ আশেপাশের কয়েক মহল্লার মানুষ সারাবছর ধরে এই সবজি খিচুড়ি উৎসবের জন্য অপেক্ষা করেন।
এদিকে অনেক বাড়িতেই উৎসবকে সামনে রেখে শ্বশুর বাড়ির আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে মেয়েরা বাবার বাড়িতে নাইওর আসেন বলে জানা যায়। এছাড়া দূর-দূরান্তে বাস করা মহল্লার অনেক বাসিন্দাও উৎসবকে সামনে রেখে বাড়ি আসেন।
এদিকে উৎসবটি সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হওয়ায় এত বড় আয়োজনের অনুষ্ঠানে সবজি, চাল, ডালসহ অন্যান্য সামগ্রী সংগ্রহ হয়ে খুব সহজেই। দক্ষিণপাড়া, দাসপাড়া ও কর্মকারপাড়াসহ কয়েকটি মহল্লার লোকজন স্বতস্ফূর্তভাবে সবজি, তেল, চাল, ডাল দিয়ে থাকেন। কেউ কেউ আবার অর্থ দিয়েও সহায়তা করেন। ফলে সবজি খিচুড়ির উপকরণের অভাব কখনোই হয় না। বরং বছর বছর এর পরিমাণ বাড়ছে।
দক্ষিণপাড়া মহল্লার জুয়েল মোল্লা সাভারের একটি ট্রেক্সটাইল কারখানায় চাকুরি করেন। সেখানে তার ভাই, বোনসহ আরও কয়েকজন আত্মীয় কর্মসূত্রে বাস করেন। জুয়েল মোল্লা বলেন, ‘খিচুড়ি উৎসবের জন্য আমাদের পরিবারের সবাই বছরজুড়ে অপেক্ষা করি। আজকের এই খিচুড়ি উৎসবকে সামনে রেখে আমার ভাই, বোনসহ পরিবারের ১২ জন গতকাল বিকেলে গ্রামের বাড়িতে আসি। এ ছাড়া আমার অনেক বন্ধুও এই উৎসবকে সামনে রেখে গ্রামে এসেছে। খিচুড়ি খাওয়া বড় ব্যাপার না, কিন্তু এই উৎসবকে কেন্দ্র করে দূর-দূরান্তে থাকা গ্রামের সবার সঙ্গে দীর্ঘদিন পর দেখা হওয়াটা অনেক বড় ব্যাপার।’
উৎসবের অন্যতম উদ্যোক্তা দক্ষিণপাড়া মহল্লার ফজলুর রহমান বলেন, ‘এই উৎসবটি কয়েকটি মহল্লার মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি ও মিলনমেলার সৃষ্টি করেছে। গত তিন-চারদিন ধরে মহল্লায় উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে আছে। আমাদের মহল্লাসহ আশেপাশের কয়েকটি মহল্লায় অন্তত এক হাজার নারী-পুরুষ এই উৎসবকে ঘিরে দূর-দূরান্ত থেকে বেড়াতে এসেছেন।’
দক্ষিণপাড়া মহল্লার বাসিন্দা ও মনজুর কাদের মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘খিচুড়ি উৎসব এখন এ এলাকার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য হয়ে উঠেছে। দক্ষিণপাড়া মহল্লার তরুণেরা এই উৎসবে মূল ভূমিকা পালন করলেও আশেপাশের মহল্লাগুলোর সর্বস্তরের মানুষ এতে সাহায্য ও পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকেন।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প বন মহল ল য় মহল ল র উৎসব র র জন য এল ক র র সবজ
এছাড়াও পড়ুন:
পূজাকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলায় বাহিনী তৎপর : ডিসি
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, আইনসৃঙ্খলা স্বাভাবিক রয়েছে, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজাকে ঘিরে সকল ধর্মমত, সকল সম্প্রদায় তারা একত্রিত হয়েছে।
সকলেই সার্বিক সহয়তা করছে যাতে করে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজা উৎসব সুন্দর ভাবে পজলন করতে পারে। পূজাকে ঘিরে একটি গোষ্ঠি চাইবে পূজা উৎসব নষ্ট করে দেয়ার জন্য।
সে জন্য আমাদের তৎপরতা রয়েছে। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। তার পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশবাহিহনী সবাই কাজ করছে যাতে করে সুন্দর ভাবে পূজা উৎসব শেষ করতে পারি।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে ৫নং ঘাটে দূর্গা পূজার প্রতিমা বিসর্জনের স্থান পরিদর্শনকালে তিনি এ নির্দেশনা দেন।
দূর্গা পূজা বিজয়া দশমী শেষে প্রতিমা বিসর্জনের সময় যেকোনো অপ্রীতিকর দূর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সুন্দর ভাবে প্রতিমা বিসর্জনের স্থান নিরাপদ রাখতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন জেলা প্রশাসক।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, নারায়ণগঞ্জের ২২৩টি পূজা মণ্ডপে সুষ্ঠুভাবে পূজা উদযাপনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে এবং সম্প্রীতি বজায় রেখে বর্তমানে পূজা উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে।
এসময় তিনি প্রতিটি মণ্ডপে সুষ্ঠুভাবে ও নির্বিঘ্নে পূজা অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথাযথ সহযোগিতার নির্দেশনা দেন।
তিনি বলেন, সকলে মিলে সব উৎসব উদযাপন করাই বাংলার ঐতিহ্য ও গৌরব।
এসময় জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিআইডব্লিউটিএ, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।