কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়াই কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে খাস জমিতে গড়ে তোলা পাঁচ ভাইয়ের ঘরবাড়ি উচ্ছেদ নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকেলে উপজেলার সদকী ইউনিয়নের বাটিকামারা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ঘরবাড়ি ভেঙে দেওয়ার জন্য গেলে উত্তেজিত জনতার ধাওয়ায় পালিয়ে যান জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদিত্য পাল। পরে জনতা বাদীপক্ষের আধাপাকা টিনশেড ঘর ভাঙচুরের পর লুটপাট চালিয়েছে। 
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার তরুণ মোড়-তারাপুর সড়কের বাটিকামারা এলাকায় সরকারের এক নম্বর খতিয়ানভুক্ত ১০ শতাংশ খাস জমি আছে। এর ৫ শতাংশ জমিতে প্রায় ৩০ বছর আগে ওই গ্রামের দিনমজুর ইসমাইল শেখ বসবাস শুরু করেন। বাকি ৫ শতাংশে প্রায় পাঁচ বছর পর বসবাস শুরু করেন মৃত আছাম উদ্দিনের স্ত্রী বুলু খাতুন। ওই নারী আওয়ামী লীগের এক সাবেক সংসদ সদস্যের বাড়িতে কাজ করতেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে ১০ শতাংশ জমিই নিজের নামে স্থায়ী বন্দোবস্ত করেন বুলু খাতুন। ২০০২ সালে সেখান থেকে ২৫ হাজার টাকায় ৫ শতাংশ জমি কিনে নেন ইসমাইল শেখ। সেখানে ইসমাইলের স্ত্রী আমিরন নেছা ও তাদের পাঁচ সন্তান সাজু শেখ, রাজু শেখ, সাইদ শেখ, লালন শেখ ও কুতুব উদ্দিন বসবাস করছেন।
২০১৭ সালে কুষ্টিয়া আদালতে বুলু খাতুনকে দিয়ে ৫ শতাংশ জমি থেকে ওই পরিবারটিকে উচ্ছেদের জন্য মামলা করান তাঁর নাতি রাজিব হোসেন। আদালত গত ২৭ অক্টোবর পাঁচ ভাইকে জমি থেকে উচ্ছেদের আদেশ দেন। তবে তাদের উচ্ছেদের বিষয়ে কোনো নোটিশ দেওয়া হয়নি। 
গতকাল সোমবার দুপুর দেড়টার দিকে জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদিত্য পাল ওই জমিতে অভিযান শুরু করেন। তিনটি ঘর উচ্ছেদের পর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে কয়েক শত বিক্ষুব্ধ জনতা ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদের ঘেরাও করেন। এ সময় দ্রুত আভিযানিক দল নিয়ে পালিয়ে যান আদিত্য পাল। পরে বিক্ষুব্ধ জনতা বুলু খাতুনের নাতি রাজিবের ঘরবাড়িতে হামলা করে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। বিকেল ৫টার দিকে কয়েকশ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচ ভাইকে নিয়ে উপজেলা পরিষদ চত্বরে গিয়ে বিক্ষোভ করেন।
সরেজমিন বিকেলে দেখা যায়, ইসমাইল শেখের ছেলেদের তিনটি ঘর গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অবশিষ্ট দুইটি ঘরের চাল থাকলেও বেড়া ও ভেতরের কিছুই নেই। বিক্ষুব্ধ জনতা এ সময় রাজিবের ঘরবাড়িতে ভাঙচুর করছিল। পুলিশ সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন। 
ইসমাইলের স্ত্রী আমিরন নেছা ভেজা দু’চোখে বলেন, ‘ব্যাটা, আমার সব শ্যাষ। আর কিছুই নাই। কোনে যাবো, থাকার যাগাও নাই। ছোয়ালরাও সবাই দিনমজুর। কিডা আমারে দেখবিনি। গরিবের পক্ষে কেউ নাই।’
তাঁর ছেলে সাজু শেখ বলেন, ৩০ বছর আগে এখানে সরকারি পুকুর ছিল। তারাই শুরুতে বসবাস শুরু করেন। কিন্তু রাজিব আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে প্রশাসনকে টাকা দিয়ে জমি বন্দোবস্ত নিয়েছে। পরে ২৫ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছেন তারা। তবুও আদালতে মামলা করে রায় পক্ষে নিয়ে সব ভেঙে দিয়েছে। তিনি এর বিচার দাবি করেন। 
আদালত আগে থেকে কোনো নোটিশ করেনি জানিয়ে তাঁর ভাই সাইদ শেখ বলেন, ‘আজ (সোমবার) হঠাৎ করে ভাঙচুর চালিয়েছে। আমি এর বিচার চাই।’
রাজিব হোসেন এ বিষয়ে বলেন, ‘সরকার আমার নানি ও নানার নামে ১০ শতাংশ জমি বন্দোবস্ত দিছে। তার মধ্যে ৫ শতাংশ ওরা জোর করে দখল করেছিল। মামলার পর আদালত উচ্ছেদ চালিয়েছে।’ তাঁর ভাষ্য, ইসমাইলের ছেলেরা সরকারি কাজে বাধা দিয়েছে। তাঁর বাড়িতেও ব্যাপক ভাঙচুর-লুটপাট করেছে। তিনি এর বিচার দাবি করেন। 
তবে এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি পালিয়ে যাওয়া ম্যাজিস্ট্রেট আদিত্য পাল। কুমারখালী থানার ওসি মো.

সোলায়মান শেখ বলেন, আদালতের নির্দেশে উচ্ছেদ অভিযান চলছিল। তবে আগে কোনো নোটিশ না দেওয়ায় জনরোষ সৃষ্টি হয়। এতে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি কুমারখালীর ইউএনও এস এম মিকাইল ইসলাম। আর এসব ঘটনার কিছুই জানা নেই কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. তৌফিকুর রহমানের।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সরক র বসব স ঘরব ড়

এছাড়াও পড়ুন:

শিক্ষার গতিপথ ও উন্নয়ন নিয়ে ঢাবিতে সেমিনার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ‘বাংলাদেশে জুলাই অভ্যুত্থান ও শিক্ষার গতিপথ: প্রত্যাশা অর্জন ও আগামী দিন’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বুধবার (৩০ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৩টায় শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) এলিভেট টকের উদ্যোগে শহীদ ড. সাদাত আলী সম্মেলন কক্ষে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। 

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মনিনুর রশিদের সঞ্চালনায় সেমিনারে বক্তব্যে দেন, ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো: আবদুস সালাম, ড. মো. আহসান হাবীব, ড. মো. শাহরিয়ার হায়দার, ড. সায়রা হোসেন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (ডুজা) সম্পাদক মাহাদী হাসান।

আরো পড়ুন:

জবি দ্বিতীয় ক্যাফেটেরিয়া দ্রুত চালুর দাবি

জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা

এ সময় অধ্যাপক ড. মো. আবদুস সালাম বলেন, “জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অনেকগুলো স্বপ্নের বীজ বপন করেছিল। তারমধ্যে অন্যতম একটি ছিল, শিক্ষার মানোন্নয়ন। কিন্তু দুঃখের বিষয় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সেই শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা আশা রেখেছিলাম নতুন একটা শিক্ষানীতি প্রণয়ন হবে। কিন্তু তারা সেখানে এখন পর্যন্ত হাত দেয়নি।”

শিক্ষার বাজেট নিয়ে তিনি বলেন, “সর্বশেষ যে বাজেট হয়েছিল, সেখানে শিক্ষার বাজেট বৃদ্ধি করা হয়নি। এত স্বল্প বাজেট দিয়ে শিক্ষার মান কখনো বৃদ্ধি করা সম্ভব না। এমনকি শিক্ষকদের মর্যাদার বিষয়ে অনেকদিন থেকে আমরা সংগ্রাম করছি। শিক্ষকদের পরিপূর্ণ মর্যাদা ছাড়া শিক্ষার মান উন্নয়ন কল্পনা করা যায় না।”

শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরিবর্তন নিয়ে অধ্যাপক ড. মো. আহসান হাবীব বলেন, “শিক্ষককে আমরা কিভাবে দেখব? আমরা দেখেছি কোভিডের পরে শিক্ষার্থীরা ক্লাসরুমে সঠিক আচরণ করছে না। কিভাবে কথা বলতে হয় বা কি আচার-আচরণ করতে হয়, তা তারা ভুলে গেছে। আমরা হয়ত জেনারেশন গ্যাপে আছি বা হয়তো তারা অনেক অ্যাডভান্স হয়ে গেছে। তবে ২৪ এর অভ্যুত্থানে আমরা তাদের এক হয়ে লড়াই করতে দেখেছি।”

তিনি বলেন, “আমাদের কারিকুলামে ও বই লেখায় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকতে হবে। শিক্ষার্থীরা কি চায়, কেনো চায়- তা তাদের তুলে ধরার সুযোগ করে দিতে হবে। কোনো ধরনের পলিটিক্যাল বাঁধা ছাড়া সব জায়গায় স্টুডেন্ট ভয়েস রেইজ করার সুযোগ করে দিতে হবে।”

ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো: শাহরিয়ার হায়দার বলেন, “শিক্ষার্থী এবং আমাদের মধ্যে ভালো বন্ধন তৈরি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরীক্ষার রেজাল্টের সময় সি প্লাস বা বি গ্রেড পেলে সে আমাকে অন্য চোখে দেখছে। শিক্ষার্থীদের কাছে আমরা জানতে চাই না, তারা আসলে কি চায়? এজন্য আমাদের এজন্য ক্লাইমেট সার্ভে করা দরকার। তাহলে আমরা তাদের চাওয়া পাওয়া সম্পর্কে জানতে পারব। এমনকি শিক্ষার্থীরা এখনো জানে না কিভাবে অন্য লিঙ্গের বন্ধুদের সঙ্গে আচরণ করতে হবে। এ বিষয়ে মাইক্রো কোর্স চালু করা দরকার।”

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ