সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ, ভোগান্তি চরমে
Published: 28th, January 2025 GMT
রানিং এলাউন্সসহ বেশি কিছু দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছে রেলওয়ের রানিং স্টাফরা। বন্ধ রয়েছে সারা দেশের ট্রেন চলাচল। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সকালে কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, শত শত যাত্রী ট্রেনের অপেক্ষায় রয়েছেন। রাত পৌনে ১টায় পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ছেড়ে যাওয়ার পর আর কোনো ট্রেন যাত্রা করেনি। আগে থেকেই টিকিট কাটায় এবং ট্রেন চলাচল বন্ধের খবর না জানায় যাত্রীরা স্টেশনে আসেন।
বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রতিদিন ১০০টিরও বেশি আন্তঃনগর ট্রেনসহ ৩৫০টিরও বেশি যাত্রীবাহী ট্রেন পরিচালনা করে।
রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের কর্মবিরতির কারণে এর সবগুলো বন্ধ রয়েছে।
কমলাপুর স্টেশন থেকে খুলনার যাত্রী শহীদুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, “আগে থেকেই অনলাইনে টিকিট কেটে রেখেছিলাম। মধ্য রাত থেকে যে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে এ খবর জানতাম না। রেল কর্তৃপক্ষ এ ধরনের কোনো বার্তা আমাদের জানায়নি। শিডিউল অনুযায়ী ট্রেন না চললে মোবাইলে এসএমএস পাঠিয়ে বিষয়টি জানানো উচিত ছিলো। আবার টাকা কীভাবে ফেরত পাবো সেটাও জানি না।”
হামিদা বেগম তার মাকে নিয়ে স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় আছেন। তারা যাবেন পঞ্চগড়। রাইজিংবিডিকে তিনি বলেন, “মা ক্যান্সারের রোগী। ঢাকায় এসেছিলাম চিকিৎসার জন্য। ট্রেনের যাত্রায় কষ্ট কম হয়। কিন্তু এখন তো আরো বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হলো। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে সবাই দাবি আদায় করতে চায়। আমাদের কষ্টের কথা কেউ ভাবে না।”
মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন দেওয়া এবং আনুতোষিক সুবিধা দেওয়ার দাবি পূরণ না হওয়ায় সোমবার রাত ১২টার পর থেকে কর্মবিরতি ঘোষণা দিয়েছিল বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন।
সমস্যার সমাধানে সোমবার ঢাকার কমলাপুরে আন্দোলনকারী রানিং স্টাফদের সঙ্গে বৈঠক করেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা। তবে বৈঠকে কোনো সমাধান আসেনি।
বৈঠক থেকে বের হয়ে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি মো.
পরে আন্দোলনকারীদের কর্মসূচি প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে রেলের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রানিং স্টাফরা যে কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছে, তাতে সারা দেশে রেল চলাচলে অচলাবস্থা ও চরম যাত্রী ভোগান্তির আশঙ্কা রয়েছে।
“এক্ষেত্রে বাংলাদেশ রেলওয়ে ও রেলপথ মন্ত্রণালয় তাদের দাবি পূরণে যথেষ্ট আন্তরিক ও সর্বোচ্চ সচেষ্ট। এরইমধ্যে রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে রানিং স্টাফদের দাবিগুলো অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে চিঠি চালাচালির পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় আলোচনাও চলছে।
“রেলপথ মন্ত্রণালয়ের প্রচেষ্টার ফলে এরইমধ্যে তাদের রানিং অ্যালাউন্স ৭৫ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। এছাড়া, মাইলেজ অ্যালাউন্স পাওয়ার জন্য সর্বনিম্ন ৮ ঘন্টা ও ১০০ মাইল দূরত্বের শর্তও শিথিল করা হয়েছে। রানিং স্টাফদের অন্যান্য দাবি আদায়েও রেলপথ মন্ত্রণালয় আন্তরিক ও সচেষ্ট আছে।”
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “এই অবস্থায় তাদের পূর্ব ঘোষিত কর্মবিরতি কর্মসূচি প্রত্যাহার করে রেলের স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের সকল কর্মকর্ত-কর্মচারীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানানো হচ্ছে। যাত্রী সাধারণের ভোগান্তি বিবেচনা করে পূর্ব ঘোষিত আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার এবং আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে রানিং স্টাফরা উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলে মন্ত্রণালয় বিশ্বাস করে।”
গত বুধবার চট্টগ্রামে পুরোনো রেলস্টেশনে সংবাদ সম্মেলন করে ২৭ জানুয়ারির মধ্যে দাবি মানার শর্ত দেয় রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন। অন্যথায় ২৮ জানুয়ারি থেকে রেল চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেয় তারা।
মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন এবং আনুতোষিক সুবিধা দেওয়ার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন রানিং স্টাফরা। এই রানিং স্টাফরা হলেন গার্ড, ট্রেনের চালক (লোকোমাস্টার), সহকারী চালক ও টিকিট পরিদর্শক (টিটিই)। এ ধরনের কর্মী রয়েছেন প্রায় দুই হাজার। তাঁরা সাধারণত দীর্ঘ সময় ট্রেনে দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
দৈনিক কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টা হলেও রানিং স্টাফদের গড়ে ১৫–১৮ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। সেজন্য তাদের আগে দেওয়া হত বিশেষ আর্থিক সুবিধা, যাকে রেলওয়ের ভাষায় বলা হয় মাইলেজ। মাইলেজ রানিং স্টাফদের বেতনেরই অংশ।
প্রতি ১০০ কিলোমিটার ট্রেন চালালে রানিং স্টাফরা মূল বেতনের এক দিনের বেসিকের সমপরিমাণ টাকা অতিরিক্ত পেতেন। ৮ ঘণ্টায় এক দিনের কর্মদিবস ধরলে রানিং স্টাফদের প্রতি মাসে কাজ দাঁড়ায় আড়াই বা তিন মাসের সমপরিমাণ। তাদের বেতনও সেভাবেই দেওয়া হত।
এছাড়া মূল বেতনের হিসাবে অবসরকালীন ভাতা যা হয়, তার সঙ্গে অতিরিক্ত আরও ৭৫ শতাংশ টাকা বেশি দিয়ে তাদের পেনশন দেওয়া হত।
২০২২ সালের জানুয়ারিতে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে রানিং স্টাফদের সেই সুবিধা বাতিল করা হয়। এরপর থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করছে।
ঢাকা/রায়হান/ইভা
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ল দ শ র লওয় র লওয় র র কর ম
এছাড়াও পড়ুন:
এসএসসি পরীক্ষা-২০২৫: বিজ্ঞানে ভালো নম্বর পাওয়ার ৮টি টিপস
প্রিয়,
এসএসসি পরীক্ষার্থী, বিজ্ঞান বিষয়টি মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের জন্য। তোমাদের জন্য বিষয়টি একটু কঠিন, ভালো করে রিভিশন দিলে তা সহজ হবে। এ বিষয়ে কীভাবে পরীক্ষায় ভালো নম্বর তোলা যায়, তার টিপস। পুরো পাঠ্যবইতে অধ্যায় রয়েছে ১৪টি। পরীক্ষায় প্রশ্ন কিন্তু পুরো বই থেকেই হবে।
দেখে নাও নম্বর বিভাজন
পরীক্ষায় পুরো বিজ্ঞান বই থেকে বহুনির্বাচনি অংশে মোট ৩০টি প্রশ্ন থেকে সব কটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। নম্বর থাকবে ১x৩০, অর্থাৎ ৩০ নম্বর। প্রতিটি সঠিক উত্তরের জন্য বরাদ্দ থাকবে ১ নম্বর করে। আর সৃজনশীল অংশে প্রশ্ন থাকবে ১১টি। ১১টি প্রশ্ন থেকে যেকোনো ৭টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। নম্বর থাকবে ৭x১০, অর্থাৎ ৭০ নম্বর।
আরও পড়ুনএসএসসি পরীক্ষা ২০২৫-এর রুটিন, কোন পরীক্ষা কবে২০ মার্চ ২০২৫গুরুত্ব দাও পাঠ্যবই
এবারের এসএসসি পরীক্ষা বিজ্ঞানের পুরো সিলেবাসের ওপর ভিত্তি করে হবে। ভূগোল ও পরিবেশ বিষয় কিন্তু অনেক তথ্যভিত্তিক, সিলেবাসও বেশ বড়। মনোযোগ দিয়ে বুঝে পড়লেই ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব। সঠিক প্রস্তুতিই তোমাকে সৃজনশীল প্রশ্ন সহজে বুঝতে এবং বহুনির্বাচনি অংশে অধিক নম্বর তুলতে সহায়তা করবে।
বহুনির্বাচনি অংশ
বহুনির্বাচনিতে ভালো করতে নির্ধারিত অধ্যায়গুলো খুব ভালোভাবে রিভিশন দেবে। প্রতিটি অধ্যায়ে অনেক বিজ্ঞানীর নাম, রক্তের বিভাগের নাম, ভিটামিনের নামসহ বিভিন্ন বিষয়ে মনে রাখতে হবে। হৃদ্যন্ত্রের যত কথা, পলিমার, জীবপ্রযুক্তি, দেখতে হলে আলো চাই, অম্ল, ক্ষারক ও লবণের ব্যবহার অধ্যায়টি বহুনির্বাচনিতে ভালো করলেই সহজে বেশি নম্বর উঠবে। বহুনির্বাচনি অংশে প্রশ্নের উত্তর তোমাকে খুব বুঝে করতে হবে। এটাই তোমার জিপিএ বাড়াতে সাহায্য করবে।
সৃজনশীল অংশ
সৃজনশীল অংশের প্রশ্নের উত্তর অবশ্যই চার ধাপে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে লিখবে। প্রতিটি প্রশ্ন জ্ঞানমূলক, অনুধাবন মূলক, প্রয়োগমূলক ও উচ্চতর দক্ষতা অংশকে প্যারা করে লিখবে। এতে পরীক্ষক খুব সহজেই তোমার লেখা উত্তর বুঝতে পারবে। তবে উত্তর লেখার সময় খেয়াল রাখবে, যাতে নির্দিষ্ট সময়ের লেখা শেষ করতে হবে। উত্তরে কোনো ধরনের অপ্রাসঙ্গিক কিছু লিখবে না। অনেক পরীক্ষার্থী অযথাই অপ্রাসঙ্গিক কিছু লিখে খাতা ভরিয়ে রাখে। এটা কখনোই করবে না ।
আরও পড়ুনপ্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন এক ধাপ বাড়ানোর উদ্যোগ, ভিন্নমত শিক্ষকদের২৮ এপ্রিল ২০২৫রিভিশন দাও
মনে রেখো, বিজ্ঞান পরীক্ষার আগে সময়কে ঠিকভাবে কাজে লাগাবে। পরীক্ষার আগে সময় নষ্ট না করে সময়কে কাজে লাগাও, মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করো, রিভিশন দাও, দেখবে আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে যাবে। লেখা শেষে অবশ্যই পুরো খাতা ভালো করে রিভিশন দেবে। রিভিশন দিলেই চোখে পড়বে পরীক্ষার খাতায় কোনো ভুল আছে কি না। আর ভুল থাকলে তা সহজেই ঠিক করতে পারবে। তাই রিভিশনের বিষয়টি কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ।
কয়েকটি দরকারি কথা
১. জ্ঞানমূলক প্রশ্নের উত্তর সঠিক হতে হবে। সংজ্ঞা বা কাকে বলে ধরনের প্রশ্নের উত্তর লিখতে কখনো বানিয়ে লিখবে না।
২. অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তর লিখতেও পাঠ্যবই অনুসরণ করবে।
৩. খাদ্যের উপাদান, রক্তের উপাদান, সুষম খাদ্যের উপাদান ঠিকমতো বুঝে পড়বে।
৪. আলো প্রতিসরণ, লেন্সের ক্ষমতা, তন্তুর ব্যবহার, মাটির গঠন নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন হবে।
৫. অম্ল, ক্ষারক ও লবণের ব্যবহার অধ্যায়ে অনেক রাসায়নিক বিক্রিয়া রয়েছে, তা ঠিকমতো লিখবে।
৬. দুর্যোগের সঙ্গে বসবাস অধ্যায়ে ভূমিকম্প অংশটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
৭. জীবন বাঁচাতে বিজ্ঞান অধ্যায় থেকে বহুনির্বাচনি ও সৃজনশীল প্রশ্ন হতে পারে।
৮. বিজ্ঞানে বেশ কিছু কঠিন নাম রয়েছে, তার বানান সঠিকভাবে লিখবে।
লেখক: মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান, প্রভাষক, রূপনগর সরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা
আরও পড়ুনএইচএসসি পরীক্ষার দুই মাস বাকি, পরীক্ষার্থীদের করণীয় ১০ পরামর্শ৭ ঘণ্টা আগে