খুলনায় নব-নির্মিত জেলা কারাগারের কার্যক্রম শনিবার (১ নভেম্বর) থেকে শুরু হচ্ছে। আজ পুরাতন কারাগার থেকে সাজাপ্রাপ্ত ১০০ জন কয়েদিকে নতুন কারাগারে স্থানান্তরের মধ্য দিয়ে কার্যক্রম শুরু হবে। তাদেরকে নতুন কারাগারে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানানো হবে। 

এ ব্যাপারে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এরইমধ্যে খুলনায় পৌঁছেছেন খুলনা বিভাগীয় কারা অধিদপ্তরের কারা-উপ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন) মো.

মনির হোসেন। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে খুলনা জেলা কারাগারের সুপার মো. নাসির উদ্দিন প্রধান বলেন, “সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ১০০ জন কয়েদিকে প্রিজন ভ্যানে করে নতুন কারাগারে স্থানান্তর করা হবে।”

তিনি জানান, এরইমধ্যে নতুন কারাগারে ৮৩ জন কারারক্ষী এবং একজন ডেপুটি জেলার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে নতুন কোন সুপার এবং জেলার নিয়োগ না হওয়ায় পুরাতন কারাগারের সুপার অর্থাৎ তিনি নিজে এবং জেলার দুটি কারাগারেই দায়িত্ব পালন করবেন। পুরাতন কারাগার থেকে নতুন কারাগারের দূরত্ব ১০ কিলোমিটার।

ভৈরব নদীর তীরে অবস্থিত জেলখানা ঘাটের বর্তমান কারাগারটি খুলনা মহানগর কারাগার হিসেবে চালু থাকবে। কারাগারটি ১৯১২ সালে নির্মিত। যেখানে বন্দীর ধারণ ক্ষমতা মাত্র ৬৭৮ জন। কিন্তু ধারণ ক্ষমতার প্রায় দ্বিগুণ অর্থাৎ ১৪শ’রও বেশি বন্দী থাকায় সেখানে ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। নতুন কারাগার চালু হলে তা অনেকটাই লাঘব হবে বলে আশা করছেন কারা কর্তৃপক্ষ।

পুরাতন কারাগার থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে খুলনা শহরের বাইপাস সড়কে জিরো পয়েন্টের কাছে ৩০ একর জমির ওপর ২৮৮ কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিক নতুন জেলা কারাগারটি নির্মিত হয়েছে।

গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন এ কারাগারে মোট ৫২টি অবকাঠামো রয়েছে এবং এটি সর্বোচ্চ ৪ হাজার বন্দী ধারণ করতে সক্ষম। এটি একটি সংশোধনাগার হিসেবে নকশা করা হয়েছে, যেখানে বিচারাধীন ও দণ্ডপ্রাপ্ত বন্দীদের জন্য পৃথক ইউনিট ছাড়াও কিশোর ও নারী বন্দীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

এ কারাগারে ৫০ শয্যার হাসপাতাল, ওয়ার্কশপ, পাঠাগার, কারারক্ষীদের সন্তানদের জন্য বিদ্যালয়, ডে-কেয়ার সেন্টার এবং নারী বন্দীদের সন্তানসহ থাকার জন্য বিনোদন কেন্দ্রও থাকবে।

খুলনা জেলা কারাগারের সুপার মো. নাসির উদ্দিন প্রধান বলেন, “নতুন কারাগারে স্থানান্তরিত কয়েদিদের ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানানো হবে। এরইমধ্যে সেখানে কর্মকর্তারা অবস্থান করছেন।”

ঢাকা/নুরুজ্জামান/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর নত ন ক র গ র বন দ দ র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’

পূর্ব সুন্দরবনের নিসর্গঘেরা অভয়ারণ্যে গড়ে তোলা হয়েছে নতুন পর্যটন কেন্দ্র ‘আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার’। সবুজ ম্যানগ্রোভ বনের বুক চিরে, নদীর নোনাজলে ভেসে, প্রকৃতির নীরব সৌন্দর্যে ঘেরা এই কেন্দ্রটি চলতি নভেম্বর মাস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন পর্যটকরা।

পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আওতাধীন আলী বান্দা এরইমধ্যে ভ্রমণপিপাসুদের দৃষ্টি কেড়েছে। শরণখোলা রেঞ্জ অফিস থেকে ট্রলারযোগে মাত্র ৪০ মিনিটের নৌপথ পেরিয়ে পৌঁছানো যায় সেখানে। 

যাত্রাপথে চোখে পড়ে বনের গভীর সবুজ গাছগাছালি, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাওয়া পাখি, কচুরিপানায় ঢাকা জলাশয় এবং সুন্দরী-গেওয়া গাছের সারি যা পর্যটকদের মোহিত করে।

বন বিভাগ জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টারের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়। এখানে তৈরি হয়েছে ছয়তলা ভবনের সমান উচ্চতার একটি ওয়াচ টাওয়ার, যেখান থেকে সুন্দরবনের বিস্তৃত সবুজাভ দৃশ্য চোখে ধরা পড়ে। 

রয়েছে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ফুট ট্রেইল (ওয়াকওয়ে)। পথের দুই পাশে ঘন বনের মাঝে হাঁটলে দেখা যায় প্রকৃতির আসল রূপ। এছাড়া রয়েছে মিষ্টি পানির পুকুর, হরিণ রাখার সেড, জেটি, বিশ্রামাগার, সুভেনিয়ার শপ এবং পর্যটকদের নিরাপত্তায় বনরক্ষী ও স্থানীয় গাইডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান।

ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আলীবান্দা বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর মানুষের জন্য সবচেয়ে সহজগম্য স্পট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কম সময় ও কম ঝুঁকিতে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে এখানে। স্থানীয় পর্যটকরা এরইমধ্যে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা শাহিন বলেন, “আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার চালু হলে স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে স্থানীয় গাইড, নৌযানচালক, হোটেল ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কর্মসংস্থান বাড়বে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব পর্যটনের মাধ্যমে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সচেতনতা বাড়বে।”

তবে পর্যটনকেন্দ্রে প্রবেশ ফি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। আলীবান্দায় প্রবেশের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪৫ টাকা।

শরণখোলা ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল বয়াতী বলেন, ‘‘আলীবান্দায় প্রবেশ ফি ৩৪৫ টাকা, অথচ একই বনের করমজল পর্যটন পয়েন্টে ফি মাত্র ৪৬ টাকা। অনেকেই আলীবান্দায় যেতে আগ্রহী, কিন্তু ফি বেশি হওয়ায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।’’

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “আলীবান্দা এখন প্রায় প্রস্তুত। চলতি মাসেই এখানে হরিণ আনা হবে। বর্তমানে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে স্পটটি। যেহেতু এটি ২০১৭ সালে ঘোষণা করা অভয়ারণ্য এলাকার অন্তর্ভুক্ত, তাই সাধারণ বনাঞ্চলের তুলনায় কিছু বিধিনিষেধ ও প্রবেশ ফি বেশি রাখা হয়েছে। তবে পর্যটকদের দাবির বিষয়টি আমরা সরকারের কাছে জানাব।’’

ঢাকা/শহিদুল/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’