বিশ্ব ইজতেমা শুরু, মুসল্লিতে পরিপূর্ণ তুরাগ তীর
Published: 30th, January 2025 GMT
গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে আজ বৃহস্পতিবার বাদ মাগরিব আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরায়ে নেজামের (যোবায়ের অনুসারী) ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলার আম বয়ান উর্দু ভাষায় আম বয়ান শুরু করেন। এটি বাংলায় তরজমা করেন মাওলানা জুবায়ের।
তাবলীগ জামাত বাংলাদেশ, শুরায়ী নেজামের মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান জানান, ইজতেমায় অংশ নিতে গতকাল বুধবার থেকেই ময়দানে আসতে শুরু করেন মুসল্লিরা। আজ দুপুর না গড়াতেই ভরে যায় ময়দান। এরপরও আসতে থাকেন মুসল্লিরা।
সরকারিভাবে আগামীকাল শুক্রবার ইজতেমা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তাবলীগ জামাতের হিসেবে দিন ও তারিখ পরিবর্তন হয় প্রতিদিন মাগরিবের পর। সেই হিসেবে আজ থেকে শুরু হয়েছে বিশ্ব ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা।
পুলিশ ও ইজতেমার আয়োজকরা জানান, এ বছর প্রথমবারের মতো তিন পর্বের বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। তাবলিগ জামাতের দু’পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্বের কারণে এ বছরই প্রথম তিন পর্বে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমার আয়োজন করছেন শুরায়ি নেজাম (মাওলানা জুবায়ের) অনুসারীরা।
ইজতেমার ময়দানের দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে লাখ লাখ মুসল্লি অংশ নিয়েছেন। গত দুইদিন ধরে আসতে থাকে মুসল্লিরা। আজ বিকেলের মধ্যেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় ইজতেমার ময়দান।
ইজতেমা উপলক্ষে পুলিশ প্রশাসন এবার নিরাপত্তা জোরদার করেছে। সিসি ক্যামেরা, ড্রোন, চেকপোস্টসহ ডিবি পুলিশের টহল বাড়িয়েছে পুলিশ। পুলিশের পাশাপাশি রয়েছে র্যাব, আনসার ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। এছাড়াও মুসল্লিদের চিকিৎসার জন্য রয়েছে অস্থায়ী চিকিৎসা ক্যাম্প।
আগামী ২ ফেব্রুয়ারি সকালে আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে প্রথম পর্ব। এরপর ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরায়ি নেজাম (মাওলানা জুবায়ের) অনুসারীরা দ্বিতীয় পর্বেও অংশ নেবে। এরপর ৫ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে মাওলানা জুবায়ের অনুসারীদের বিশ্ব ইজতেমা।
এরপর আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হবে মাওলানা সাদ অনুসারীদের বিশ্ব ইজতেমা। ১৬ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ২০২৫ সালের বিশ্ব ইজতেমা।
মাওলানা জুবায়ের অনুসারী মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান জানান, শুরায়ে নেজাম অনুসারীদের আয়োজনে ইজতেমায় লাখ লাখ মুসল্লি অংশগ্রহণ করেছেন। এছাড়াও মুসল্লিদের আগমন অব্যাহত রয়েছে।
তিনি জানান, আরবি মাস অনুযায়ী, সুর্যাস্তের পর থেকে দিন শুরু হয়। এজন্য আমরা আজ বৃহস্পতিবার বাদ মাগরিব থেকে ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেছি।
তিনি আরও জানান, শুক্রবার ফজর নামাজের পর বয়ান করবেন পাকিস্তানের মাওলানা জিয়া উল হক। সকাল ১০টায় বিভিন্ন খিত্তায় খিত্তায় তালিমের আমল হবে। জুমার নামাজ পড়াবেন মাওলানা জুবায়ের।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি-দক্ষিণ) এন এম নাসিরুদ্দিন জানান, এ বছর বিশ্ব ইজতেমার নিরাপত্তা বেশি জোরদার করা হয়েছে। ইজতেমায় নিরাপত্তায় ৭ হাজার পুলিশ সদস্য থাকবে। এছাড়াও আইনশৃঙ্খলা অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরাও নিরাপত্তায় কাজ করবে। সিসি ক্যামেরা, মোবাইল কোর্ট, ড্রোন ও পুলিশের টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইজত ম র ব শ ব ইজত ম ইজত ম র প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতে ব্যবসায়ী জাকিরকে হত্যা করা হয়
রাজধানীর সবুজবাগের প্লাস্টিক ব্যবসায়ী জাকির হোসেনের সঙ্গে থাকা আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতেই ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তাঁকে ছয় টুকরা করে লাশ বস্তায় ঢুকিয়ে কাছের একটি ঝোপের ভেতরে পুঁতে রাখা হয়। এর আগে আজহারুল ইসলাম (গ্রেপ্তার) মুঠোফোনে সবুজবাগের ভাইগদিয়ায় তাঁর ভাড়া বাসায় জাকিরকে (৫৫) ডেকে নেন।
গ্রেপ্তার আজহারুল ইসলাম (৩৯) আজ শুক্রবার আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ কথা বলেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। আদালত তাঁর জবানবন্দি নিয়ে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এ ছাড়া এ হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার শুক্কুর আলী (৪৪), মো. রাজীব (২৬) ও স্বপনকে (২৫) পাঁচ দিন করে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। গ্রেপ্তার শুক্কুর আলী পেশায় রাজমিস্ত্রি এবং বাকিরা রংমিস্ত্রি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সবুজবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সামছুল আমিন আজ প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার আজহারুল, শুক্কুর আলী, রাজীব ও স্বপন জবানবন্দি দিতে রাজি হওয়ায় দুপুরে তাঁদের ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে পাঠানো হয়। এর মধ্যে আজহারুল আদালত জবানবন্দি দেন। অপর তিনজন জবানবন্দি দিতে রাজি হননি। পরে তাঁদের সাত দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানানো হয়। শুনানি শেষে আদালত তাঁদের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার তদন্ত–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আজহারুল আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, জাকির হোসেনের সঙ্গে তাঁদের চারজনের (আজহারুল, শুক্কুর আলী, রাজীব ও স্বপন) বন্ধুত্ব ছিল। তাঁরা একসঙ্গে আড্ডা দিতেন। মাঝেমধ্যে জাকিরের সঙ্গে তাঁর ভাইগদিয়ার ভাড়া বাসায় তাঁরা একসঙ্গে মদ্যপান করতেন। ৪ জুন রাতে জাকির নন্দীপাড়ায় শেখের বাজারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে বাসায় ফিরছিলেন। তখন আজহারুল মুঠোফোনে জাকিরকে তাঁর বাসায় ডেকে নেন। ওই বাসায় আজহার একা থাকতেন। আগেই জাকির তাঁদের জানিয়েছিলেন, তাঁর কাছে কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা আছে এবং ডেমরার আমুলিয়া পশুরহাট থেকে কোরবানির জন্য গরু কিনবেন। জাকির তাঁর বাসায় পৌঁছানোর পর ওই টাকার ওপর তাঁদের সবার লোভ জাগে। তাঁরা টাকা ছিনিয়ে নিতে গেলে জাকির বাধা দেন। তখন ইস্পাতের পাইপ দিয়ে জাকিরের মাথায় সজোরে আঘাত করেন আজহারুল। এতে জাকির অচেতন হয়ে যান। এ সময় তাঁর কাছ থেকে এক হাজার টাকার দুটি বান্ডিল ছিনিয়ে নিয়ে সেই টাকা শুক্কুর আলীর কাছে জমা রাখেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, আজহারুল আদালতকে জানান, জাকিরকে বাঁচিয়ে রাখা হলে তাঁরা সবাই ফেঁসে যাবেন—এমন আশঙ্কায় জাকিরকে হত্যা করে লাশ গুম করার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জাকিরের শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। এরপর শুক্কুর, রাজীব ও স্বপন তাঁর শরীর টুকরা টুকরা করেন। পরে লাশের ছয়টি টুকরা রঙের দুটি পাত্রে ভরে একটি অটোরিকশায় করে দক্ষিণ ভাইগদিয়ায় নিয়ে যান। শুক্কুর, রাজীব ও স্বপন অন্য পথ দিয়ে দক্ষিণ ভাইগদিয়ায় আসেন। তখন তাঁরা সবাই মিলে বালতিভর্তি লাশের টুকরাগুলো পাশের ঝোপে নিয়ে যান। এরপর সেখানে খুঁড়ে লাশের টুকরাগুলো পুঁতে রাখেন।
আজহারুল আদালতকে বলেন, জাকিরের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া টাকা ভাগাভাগি করার আগেই তাঁরা পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।
পুলিশ কর্মকর্তা সামছুল আমিন বলেন, আজহারুলের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাহেরচরে। বাকি তিনজন ঢাকার সবুজবাগের ভাইগদিয়ার স্থায়ী বাসিন্দা।
প্লাস্টিক ব্যবসায়ী জাকির হোসেন সপরিবার সবুজবাগ থানার ভাইগদিয়া এলাকায় থাকতেন। ৪ জুন জাকির হোসেন নিখোঁজ হন। এরপর স্বজনেরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও তাঁর সন্ধান পাননি। পরদিন জাকির নিখোঁজ রয়েছেন বলে তাঁর স্ত্রী রেখা বেগম সবুজবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এর মধ্যে জাকিরের খোঁজ না পাওয়ায় তিনি ১০ জুন আজহার আলীসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে সবুজবাগ থানায় একটি অপহরণের মামলা করেন।
পুলিশ কর্মকর্তা সামছুল আমিন বলেন, এ মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এলাকার ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডে জড়িত আজহারুলকে শনাক্ত করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আজহারের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যায় জড়িত অভিযোগে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে অপর তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল রাতে জাকির হোসেনকে ভাইগদিয়ায় দাফন করা হয়।
সবুজবাগ থানার ওসি ইয়াছিন আলী প্রথম আলোকে বলেন, জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে জাকিরকে হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করলেও তদন্তে এখন পর্যন্ত এর সত্যতা পাওয়া যায়নি। জাকির হত্যায় আরও একজন জড়িত। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।