ডিএসইর প্রধান সূচক টানা পাঁচ দিন বাড়ল
Published: 6th, February 2025 GMT
বুধবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচকের উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। সূচকের সঙ্গে বেড়েছে লেনদেন। গত পাঁচ দিন লেনদেনও প্রতিদিন বেড়েছে। গতকাল নিয়ে টানা পাঁচ দিন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিসএইএক্স বাড়ল।
সূচকটি দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ১৭০ পয়েন্টে। গত ৩০ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার যা ছিল ৫ হাজার ১১২ পয়েন্ট। গতকাল আগের দিনের চেয়ে বেড়েছে ২২ পয়েন্ট। অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৩৫ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৪৪২ পয়েন্টে।
গতকাল সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হওয়া বেশির ভাগ শেয়ারের দর বেড়েছে। ৪০১ কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ২০৭টির। দর কমেছে ১২৯টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ৬৫টির। ডিএসইতে ৪৭১ কোটি ১৫ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে, যা মঙ্গলবারের চেয়ে ২৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকা বেশি। সিএসইতে ১৯৮টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে ১১৫টির দর বেড়েছে, কমেছে ৬৭টির এবং ১৬টির দর অপরিবর্তিত ছিল। সিএসইতে ৫ কোটি ১৮ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।
ডিএসইতে গতকাল দর বৃদ্ধির শীর্ষে ছিল গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক। এর শেয়ারদর বেড়েছে ১০ শতাংশ। শীর্ষ ১০-এর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা এনার্জিপ্যাক পাওয়ারের শেয়ারদর বেড়েছে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। তৃতীয় স্থানে থাকা আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের বেড়েছে ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
দর পতনের শীর্ষে ছিল সিকদার ইন্স্যুরেন্স। কোম্পানিটির শেয়ারদর আগের দিনের চেয়ে ৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ কমেছে।
গতকাল ডিএসইতে লেনদেনের শীর্ষে ছিল মিডল্যান্ড ব্যাংক। কোম্পানিটির ১২ কোটি ৩৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ওরিয়ন ইনফিউশনের লেনদেন হয়েছে ১২ কোটি ৩৩ লাখ টাকার। ১২ কোটি ৫৪ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন নিয়ে শীর্ষ তালিকার তৃতীয় স্থানে ছিল অগ্নি সিস্টেমস। এ ছাড়া লেনদেনের শীর্ষ তালিকায় থাকা ছিল বিচ হ্যাচারি, গ্রামীণফোন, কোহিনূর কেমিক্যাল, সেন্ট্রাল ফার্মা, ম্যারিকো, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স এবং খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড।
বেক্সিমকোর চার শাখা কারখানা লে-অফ ঘোষণা
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বেক্সিমকো লিমিটেড গতকাল ডিএসইর ওয়েবসাইটে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের আরও চারটি শাখা কারখানা লে-অফ ঘোষণা করা হয়েছে। লে-অফ ঘোষণা করা কারখানাগুলো হচ্ছে– ইয়ার্ন ইউনিট-২, টেক্সটাইল, ডেনিম ও নিটিং বিভাগ। তবে গোষ্ঠীর অন্যান্য বিভাগ, যেমন রূপগঞ্জের ইয়ার্ন ইউনিট-১-এর কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
‘ভোল পাল্টে’ সক্রিয় কিশোর গ্যাং, অতিষ্ঠ বাসিন্দারা
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চর আবাবিল ইউনিয়নের উদমারা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। এলাকায় নারীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন, মারামারি, খুনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের এসব সদস্যদের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার ছত্রচ্ছায়ায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। তবে এখন ভোল পাল্টে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভিড়েছে তারা।
সম্প্রতি এলাকাটিতে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন জাহাঙ্গীর আলম (৫২) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন। মসজিদের পাশে জুয়ার আসর বসানো ও মাদক সেবনে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাঁর ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে। গত ৩ এপ্রিল তাঁর ওপর হামলা করা হয়। এরপর গত শনিবার তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
স্থানীয় বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন কয়েকজন স্থানীয় তরুণ। ওই তরুণেরা রাজনীতিতে যুক্ত থাকায় মিছিল-সমাবেশে কিশোরদের ব্যবহার করে আসছেন। ফলে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতাও এসব কিশোরকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে প্রশ্রয় দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আগে এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল চর আবাবিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম ও ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দারের হাতে। তাঁরা এসব কিশোরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই কিশোরেরা ভোল পাল্টে বিএনপির কর্মসূচিতে সক্রিয় হচ্ছে। আবদুর রহিম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি এসব তরুণকে নতুন করে আশ্রয়–প্রশ্রয় দিচ্ছেন। রহিম ইউনিয়ন বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও তাঁর পদপদবি নেই।
জাহাঙ্গীর আলম খুনের ঘটনায় আবদুর রহিমকেও আসামি করা হয়। মামলার পর তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আমি প্রশ্রয় দিচ্ছি—এমন অভিযোগ প্রায় করা হচ্ছে। তবে এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমাকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলায় জড়ানো হয়েছে।’
ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দার বলেন, ‘কিশোর গ্যাংকে আমি কখনো প্রশ্রয় দিইনি। তারা (কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা) আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করত।’ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম আত্মগোপনে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে রায়পুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেড এম নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দলীয় কোনো নেতা-কর্মী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের প্রশ্রয় দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো নেতা-কর্মীর অপকর্মের দায় দল নেবে না।
জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলার ঘটনায় গত ৭ এপ্রিল লক্ষ্মীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ জনের নাম উল্লেখ ও ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলার আবেদন করেন তাঁর স্ত্রী রাজিয়া বেগম। আদালত রায়পুর থানাকে মামলাটি গ্রহণের নির্দেশ দেন। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, মসজিদের আশপাশে জুয়ার আসর ও মাদক সেবন করত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এসব বিষয়ের প্রতিবাদ করাকে কেন্দ্র করে সাব্বির হোসেন, জুবায়ের হোসেনসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে ৮–১০ জন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলা করেছেন। নিহত জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে শারমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, মামলার পর আতঙ্কে দিন কাটছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের। স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিয়ে আসছে।
জানতে চাইলে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশের ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাঈন উদ্দিন পাঠান বলেন, কিশোর-তরুণদের খেলাধুলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের ফেরাতে না পারলে অপরাধ আরও বেড়ে যাবে। কেউ যাতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাইকে তৎপর থাকতে হবে।