জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্যরা গণহত্যার বিচার ও সরকারি স্বীকৃতির দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করেছেন। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ১১টার দিকে তারা এই অবরোধ করেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় অবরোধ তুলে নেন তারা। অবরোধের ফলে ওই এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েন মানুষজন।

দিনভর শাহবাগ অবরোধ করে রাখার পর সন্ধ্যায় সারজিস আলম তাদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন। দাবি-দাওয়া নিয়ে ছাত্র উপদেষ্টা, ছাত্রনেতারা এবং প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বসে আলোচনার আহ্বান জানান সারজিস আলম। পরে শহীদ পরিবারের সদস্যরা তাতে সম্মত হয়ে কর্মসূচি তুলে নেন।

অবরোধের আগে আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা সোয়া ১১টা পর্যন্ত শাহবাগের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে অবস্থান ও সমাবেশ করেন শহীদ পরিবারের স্বজনেরা। তাদের দাবি পাঁচটি হলো- প্রতিটি হত্যার বিচারের লক্ষ্যে আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ১০ দিনের মধ্যে নিশ্চিত করতে হবে; শহীদ ও আহত ভাইদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে হবে; শহীদ পরিবারের দ্রুত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে; শহীদ পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে ন্যায্য সম্মানী দিতে হবে এবং শহীদ পরিবারের মাসিক সম্মানি দিতে হবে।

বিক্ষুব্ধ কয়েকজনের হাতে নিহতদের ছবি এবং ন্যায়বিচারের আহ্বান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। কেউ কেউ সরকারের বিরুদ্ধে উদাসীনতা ও অবহেলার অভিযোগ তোলেন। তারা শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করারও আহ্বান জানান।

পরিবারগুলোর অভিযোগ, তারা গত কয়েক মাস ধরে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করা চেষ্টা করে আসছেন। তবে তাদের সে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। জুলাই গণহত্যায় চলমান বিচারিক কার্যক্রমের সমালোচনা করে শহীদ পরিবারগুলো বিষয়টিকে ‘সার্কাস’ বলেও অভিহিত করেছেন। তারা জানান, মারাত্মক ক্র্যাকডাউনের আদেশ দানকারী এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী অনেকেই এখনো বিচারের সম্মুখীন হয়নি।

সরেজমিনে দেখা যায়, শহীদ পরিবারের স্বজনেরা ব্যারিকেড এবং বাঁশ ও রশি দিয়ে শাহবাগ অবরোধ করে রাখেন। এ সময় চারদিকের সড়কে ব্যাপক যানজটের তৈরি হয়। মোটরসাইকেল চালকদের সঙ্গে তর্কে জড়াতে দেখা যায় শহীদ পরিবারের কয়েকজনকে। অবরোধ চলাকালে অ্যাম্বুলেন্স এবং পুলিশের গাড়িগুলোকে যেতে দেন তারা।

নরসিংদী সদরে আন্দোলনকালে শহীদ হওয়া মো.

সজলের বড় ভাই সেলিম মাহমুদ সন্ধ্যায় সমকালকে বলেন, আমাদের সন্তানেরা-ভাইরা যাদের ডাকে আন্দোলনে গিয়ে প্রাণ দিয়েছে। তারা এখন আর খোঁজ নেয় না। বসতে চাইলে সময় দেয় না। এমন কেন হবে। তবে সারজিস আলম আমাদের সঙ্গে বসতে চেয়েছেন বিধায় আমরা কর্মসূচি তুলে নিয়েছি। আশা করি, দাবির বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করে সমাধান হবে।

যাত্রাবাড়ীর শহীদ ইমাম হাসান তাইমের বড় ভাই রবিউল আউয়াল সমকালকে বলেন, তথ্য উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের সঙ্গে আজ বৃহস্পতিবার রাতেই মন্ত্রীপাড়ায় বৈঠকে বসব আমরা। আগামীকাল শুক্রবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমসহ সমন্বয়কদের সঙ্গে বসব। আগামী রোববার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করব আমরা।

সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সারজিস আলম বলেন, যত দ্রুত শহীদ পরিবারের সহায়তার ব্যবস্থা করা যেত ততটা তাড়াতাড়ি হচ্ছে না। শহীদ পরিবারের সদস্যরা রাস্তায় নেমে এসেছেন এটা আমাদের জন্য লজ্জাজনক। শুক্রবার আমরা শহীদ পরিবারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলব। রোববার তারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। সেদিন তারা নিজেদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরবেন।

সারজিস আরও বলেন, এই সরকার যদি শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের বিচার করতে না পারে, তাহলে এটি হবে এই সরকারের সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা। আমরা সরকারের কাছ থেকে দাবি আদায় করে নেব। সরকারকে শহীদ পরিবারের প্রতিটি যৌক্তিক দাবি পূরণ করতেই হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

গাইবান্ধায় চোর সন্দেহে মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় তিস্তা নদীর দুর্গম চরাঞ্চলে গরু চোর সন্দেহে আব্দুস সালাম (৫০) নামে মানসিক ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করেছে স্থানীয়রা। এ ঘটনায় দুলালী বেগম (৪৩) নামে এক নারীকে আটক করেছে পুলিশ।

শনিবার (১ নভেম্বর) সকালে উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের বেলকা নবাবগঞ্জ গ্রামের তিস্তার চরে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। খবর পেয়ে সুন্দরগঞ্জ থানা পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। 

আরো পড়ুন:

গাজীপুরে যুবককে কুপিয়ে হত্যা

ঝিনাইদহে কৃষকের হাত-পা ও গলা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার

নিহত আব্দুস সালাম একই ইউনিয়নের রামডাকুয়া গ্রামের ওমেদ আলীর ছেলে। স্বজনরা জানান, সালাম দীর্ঘদিন ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছিল। 

আটক দুলালী বেগম বেলকা নবাবগঞ্জ গ্রামের আব্দুল গণি মিয়ার স্ত্রী।

সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হাকিম আজাদ বলেন, ‘‘খবর পাওয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাইবান্ধা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার দুলালী বেগম ছাড়াও যারা জড়িত ছিল, তা শনাক্তে তদন্ত চলছে।’’ 

নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) গভীর রাতে সালাম আব্দুল গণি মিয়ার গোয়ালঘরে প্রবেশ করে। বিষয়টি টের পেয়ে দুলালী বেগম স্বামী ও আশপাশের লোকজনকে খবর দেয়। স্থানীয়রা সালামকে রশি দিয়ে বেঁধে বেধড়ক মারধর করে। একপর্যায়ে তিনি অচেতন হয়ে পড়লে তাকে পুকুরপাড়ে রেখে দেওয়া হয়। ভোরের দিকে আবার তাকে পাশের গোয়ালঘরে নিয়ে নির্যাতন চালানো হয়। এতে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়।

অভিযুক্ত আব্দুল গণি মিয়া বলেন, ‘‘কয়েক দিন আগে শ্যালো মেশিন চুরি হয়ে গেছে। রাতে গোয়ালে সালামকে দেখি। তাই প্রতিবেশীদের খবর দেই। পরে তারা এসে মারধর করে।’’ 

আটক দুলালী বেগম বলেন, ‘‘এক সপ্তাহ আগে মেশিন হারিয়েছে। রাতে শব্দ শুনে দেখি গোয়ালের বাঁধন খুলছে। পরে লোকজন এসে মারধর করে।’’ 

নিহতের স্বজনরা জানান, আব্দুস সালাম দীর্ঘদিন ধরে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন ছিলেন এবং মানুষের সাহায্যে জীবন চলত। তার বিরুদ্ধে আগে কখনো চুরির অভিযোগ ওঠেনি। তারা দাবি করেন, পরিকল্পিতভাবে নির্যাতন করে তাকে হত্যা করা হয়েছে। নিহতের তিনটি ছোট ছেলে রয়েছে, বাবাকে হারিয়ে তারা অসহায় অবস্থায় পড়েছে। 

বেলকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খলিলুল্যাহ জানান, ঘটনাস্থল দুর্গম চরাঞ্চল হওয়ায় খবর পেতে দেরি হয়। স্বজনদের বক্তব্য অনুযায়ী নিহত ব্যক্তি মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) বিদ্রোহ কুমার কুণ্ডু, সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি আব্দুল হাকিম আজাদ এবং স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

ঢাকা/মাসুম/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাইবান্ধায় চোর সন্দেহে মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা