২০২৪ সালের জন্য শেয়ারধারীদের ১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা লভ্যাংশ দেবে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি বা বিএটিবিসি। এই লভ্যাংশের অর্ধেক অর্থাৎ ৮১০ কোটি টাকা অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশ হিসেবে এরই মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। বাকি ৮১০ কোটি টাকা আগামী ২৫ মার্চ বার্ষিক সাধারণ সভা বা এজিএম শেষে বিতরণ করা হবে।

কোম্পানিটি গত বছরের জন্য সব মিলিয়ে ৩০০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। তাতে শেয়ারপ্রতি ৩০ টাকা করে লভ্যাংশ পাবেন শেয়ারধারীরা। যার মধ্যে ১৫০ শতাংশ বা শেয়ারপ্রতি ১৫ টাকা অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করা হয়েছে। আর বাকি ১৫০ শতাংশ বা শেয়ারপ্রতি ১৫ টাকা চূড়ান্ত লভ্যাংশ হিসেবে ঘোষণা করেছে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ।

গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) মাধ্যমে ঘোষিত এই লভ্যাংশের খবর শেয়ারধারীদের জানানো হয়। এর আগে গত বুধবার কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সভায় গত ডিসেম্বরে সমাপ্ত হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়।

কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর কোম্পানিটি ৪৩ হাজার ২৩২ কোটি টাকার সিগারেটসহ তামাকজাত পণ্য বিক্রি করেছে। আগের বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে কোম্পানিটির এই বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪০ হাজার ৩৭৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির বিক্রি বেড়েছে ২ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা বা ৭ শতাংশের বেশি।

আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় বছরে কোম্পানিটির ব্যবসা বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১৯ সালেও ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর বিক্রি করা বিড়ি–সিগারেটসহ তামাকজাতীয় পণ্যের বছরে ব্যবসা ছিল ২৩ হাজার ৩১২ কোটি টাকা। গত বছর শেষে তা বেড়ে ৪৩ হাজার ২৩২ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। ধারাবাহিকভাবেই কোম্পানিটির বিক্রি বাড়ছে। বিএটিবিসির বিড়ি–সিগারেটসহ তামাকজাতীয় পণ্যের বিক্রি ২০২৩ সালে প্রথমবারের মতো ৪০ হাজার কোটি টাকা ছাড়ায়। এরপর গত বছর তা আরও প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে।

বিক্রি বাড়লেও কোম্পানিটির গত বছরের মুনাফা তার আগের বছরের চেয়ে কিছুটা কমেছে। গত বছর সব ধরনের খরচ ও সরকারের রাজস্ব প্রদানের পর কোম্পানিটি ১ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। ২০২৩ সালে যার পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির মুনাফা ৩৭ কোটি টাকা বা ২ শতাংশ কমেছে।

মুনাফা কমলেও শেয়ারধারীদের ২০২৩ সালের চেয়ে ১ হাজার ৮০ কোটি টাকা বেশি লভ্যাংশ বিতরণ করছে কোম্পানিটি। ২০২৩ সালে কোম্পানিটি শেয়ারধারীদের মধ্যে ৫৪০ কোটি টাকা নগদ লভ্যাংশ বিতরণ করেছিল। গত বছর তা বেড়ে ১ হাজার ৬২০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। কোম্পানিটি গত বছর যে মুনাফা করেছে, তার প্রায় ৯৩ শতাংশ শেয়ারধারীদের মধ্যে বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বহুজাতিক ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ১৯৭৭ সালে। দেশের শেয়ারবাজারে এটি ৪৭ বছরের পুরোনো কোম্পানি। সর্বশেষ গত ডিসেম্বরের কোম্পানিটির শেয়ারধারণ–সংক্রান্ত তথ্য অনুযায়ী, এটির শেয়ারের প্রায় ৭৩ শতাংশই রয়েছে বিদেশি উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে। বাকি ২৭ শতাংশ শেয়ারের মধ্যে সরকারের হাতে রয়েছে ৯ শতাংশ, বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে সাড়ে ৪ শতাংশ, এ দেশের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে সাড়ে ৫ শতাংশ ও ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে বাকি ৮ শতাংশ শেয়ার।

শেয়ারধারণের এই তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জন্য কোম্পানিটির পক্ষ থেকে ঘোষিত লভ্যাংশের মধ্যে বিদেশি উদ্যোক্তা-পরিচালকেরা পাবেন ১ হাজার ১৮২ কোটি টাকা। সরকার পাবে প্রায় ১৪৫ কোটি টাকা, বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা পাবেন ৭৩ কোটি টাকা, এ দেশের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা পাবেন ৮৯ কোটি টাকা এবং ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পাবেন ১৩১ কোটি টাকা।

ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানি। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে এটি ব্লু-চিপস কোম্পানি হিসেবে ডিএস-৩০ সূচকে অন্তর্ভুক্ত। ধারাবাহিকভাবে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ভালো লভ্যাংশ দিয়ে আসছে। তবে বাজারে এটির শেয়ারের দাম সেই তুলনায় কম। ২০২০ সালের পর গত বছরের জন্য কোম্পানিটির সর্বোচ্চ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। তা সত্ত্বেও গতকাল শেয়ারবাজারে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম সোয়া ৩ টাকা বা প্রায় ১ শতাংশ কমেছে।

গত এক বছরের ঢাকার শেয়ারবাজারে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ১৬৯ টাকা বা সাড়ে ৩২ শতাংশ কমেছে। গত বছরের ৩ মার্চ কোম্পানিটির শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ৫১৯ টাকা। গতকাল দিন শেষে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৫০ টাকায়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব র ট শ আম র ক ন ট ব য ক গত বছর র ২০২৩ স ল এক বছর র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

আসামি না হয়েও স্বেচ্ছায় কারাগারে যাওয়া সেই যুবক প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার

চট্টগ্রামে মাদকের একটি মামলায় আসামি সেজে আদালতে আত্মসমর্পণের পর কারাগারে যাওয়া এক যুবককে জালিয়াতি ও প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার (শ্যোন অ্যারেস্ট) দেখিয়েছেন আদালত। তাঁর নাম মো. রাকিব। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আলাউদ্দিন মাহমুদ শুনানি শেষে এই আদেশ দেন। কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে প্রকৃত আসামি মো. সুমনের হয়ে আদালতে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেন রাকিব। আদালতের আদেশে ১ জুলাই থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, কারাগারে আটক রাকিবকে জালিয়াতি ও প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করে কোতোয়ালি থানা-পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত তা মঞ্জুর করেন। আসামিকে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।

আদালত সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ৩১ আগস্ট নগরের আকবর শাহ থানার কৈবল্যধাম এলাকায় একটি পিকআপ ভ্যানে অভিযান চালিয়ে ৪০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করে র‌্যাব, যার মূল্য ৪ লাখ টাকা। ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয় গাড়িচালক রাহাত ইসলামকে। পালিয়ে যান চালকের সহকারী (হেলপার) মো. সুমন। এ ঘটনায় র‌্যাব কর্মকর্তা বাদী হয়ে আকবর শাহ থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন। তদন্ত শেষে চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এতে রাহাত ইসলাম ও মো. সুমনকে আসামি করা হয়।

আদালত পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করে পলাতক আসামি সুমনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এরই মধ্যে সুমনের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলা এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। বিষয়টি জানতে পেরে সুমন নিজেকে কারামুক্ত রাখতে তাঁর পরিবর্তে নোয়াখালীর রাকিবকে আদালতে আত্মসমর্পণ করায় ১ জুলাই। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোস্তফা শুনানি শেষে আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। সুমনের হয়ে রাকিব আত্মসমর্পণের সময় তাঁর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ওয়াহিদ মুরাদ।

আদালতে একজনের পরিবর্তে আরেকজন আত্মসমর্পণের বিষয়টি ধরা না পড়লেও কারাগারে গিয়ে ধরা পড়ে। জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটাবেজে (তথ্যভান্ডার) ভোটারদের আঙুলের ছাপ সংরক্ষিত আছে। এ পদ্ধতিকে বলা হয় ফিঙ্গারপ্রিন্ট আইডেনটিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পদ্ধতি ব্যবহার শুরু করে চট্টগ্রাম কারা কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে আঙুলের ছাপে ধরা পড়েছে অনেক বন্দীর আসল পরিচয়। এসব ঘটনায় মামলাও হয়েছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি মাসের জুলাই পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করে জালিয়াতির মাধ্যমে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আসা ১৬ জনের আঙুলের ছাপে শনাক্ত করা হয়।

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মো. ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আদালত থেকে কারাগারে আসা প্রত্যেক নতুন আসামির আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়। সেখানে আসামির জাতীয় পরিচয়পত্রে থাকা আসল পরিচয় উঠে আসে। ইকবাল হোসেন আরও বলেন, ‘সুমনের হয়ে কারাগারে আসা রাকিব স্বীকার করেছেন তিনি মাদক মামলার প্রকৃত আসামি নন। ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি সুমন সেজেছেন। তাঁকে বলা হয়েছে, দ্রুত কারাগার থেকে ছাড়িয়ে নেওয়া হবে। তাই তিনি রাজি হয়েছেন। বিষয়টি চিঠি দিয়ে আদালতকে জানানো হয়েছে।’

আরও পড়ুনচট্টগ্রামে ‘আয়নাবাজি’, ধরা পড়েছে আঙুলের ছাপে০৮ নভেম্বর ২০২৩

কারাগার থেকে চিঠি পাওয়ার পর মামলা করার নির্দেশ দেন চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মিজানুর রহমান। একই সঙ্গে আসামিকে আত্মসমর্পণকারী আইনজীবী ওয়াহিদ মুরাদের কাছে কারণ ব্যাখ্যা চেয়েছেন আদালত। আদালতের প্রসিকিউশন শাখার আকবর শাহ থানার জিআরও সাইদুর রহমান বাদী হয়ে গত রোববার রাতে নগরের কোতোয়ালি থানায় প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় মো. রাকিব ও মো. সুমনকে আসামি করা হয়। সুমন এখনো পলাতক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কলকাতায় বাংলাদেশি অভিনেত্রী গ্রেপ্তার , দাবি ভারতীয় গণমাধ্যমের
  • কলকাতায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশি অভিনেত্রী
  • ওভালে টস হেরে ব্যাটিংয়ে ভারত, একাদশে চার পরিবর্তন
  • কর্মস্থলে অনুপস্থিত, পাঁচ প্রকৌশলী ও এক স্থপতি বরখাস্ত
  • গণপূর্ত অধিদপ্তরের ৫ প্রকৌশলী ও স্থাপত্য অধিদপ্তরের স্থপতি বরখাস্
  • মুক্তিপণ দিয়েও পাঁচ মাস ধরে ১৪ তরুণের খোঁজ পাচ্ছেন না স্বজনেরা
  • দলবদলের বাজারে চেলসিই রাজা, শীর্ষ দশে আর কারা
  • গাজায় হামলার নিন্দা জানালেও ইসরায়েলের সঙ্গে কেন বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে এসব দেশ
  • গাজায় নিহতের সংখ্যা ৬০ হাজার ছাড়ালো
  • আসামি না হয়েও স্বেচ্ছায় কারাগারে যাওয়া সেই যুবক প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার