জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষা গত রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) থেকে শুরু হয়েছে। চলবে আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

নয় দিনব্যাপী এ ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দেখা গেছে অভিভাবক-শিক্ষার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। ভেতরে পরীক্ষা চলতে থাকলেও কেন্দ্রের বাইরে দেখা যায় ভিন্ন এক পরিবেশ। পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে আসা বাবা-মাসহ স্বজনদের কেন্দ্রের বাইরে উৎকণ্ঠা নিয়ে অপেক্ষা করতে দেখা যায়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে থেকেই কেন্দ্রে কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীদের সারি সারি লাইন সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশের পূর্ব মুহূর্তে বাবা-মায়ের কাছ থেকে দোয়া নিচ্ছেন পরীক্ষার্থীরা। তারা কেউ এসেছেন বাবার সঙ্গে, কেউ মায়ের সঙ্গে। আবার কারো বাবা-মা দুজনই এসেছেন।

একদিনে সাধারণত পাঁচটি শিফটে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়। প্রতিটি শিফটে ১ ঘণ্টাব্যাপী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ ১ ঘণ্টার প্রতীক্ষা যেন ১ যুগেরও বেশি সময়ের অনুভূতি দেয় বাইরে অপেক্ষারত অভিভাবকদের। তাদের চোখে-মুখে উৎকণ্ঠার চাপ স্পষ্ট।

পরীক্ষা কেন্দ্রের পাশেই গাছের ছায়ায়, জেলা সমিতি বা বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের সহায়তা কেন্দ্রগুলোতে কিংবা ক্যাম্পাসের ঘাসের ওপর মাদুর পেতে বা মাদুর ছাড়াই বসে থাকেন অভিভাবকরা। কেউ সন্তানদের পরীক্ষায় পাঠিয়ে পুরো সময়ই দাঁড়িয়ে থাকেন কেন্দ্রের সামনে। যেন কথা বলার মতোও সময় নেই তাদের।

তবে অনেক অভিভাবকদের বসে সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অন্যের সঙ্গে কথা বলে সময় পার করতেও দেখা গেছে। কেউ আবার পত্রিকার পাতায় চোখ বুলিয়ে নিচ্ছেন।

মঙ্গলবার সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে ছিল ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদভুক্ত ‘ই’ ইউনিটের দ্বিতীয় শিফটের পরীক্ষা। এ শিফটে ছাত্ররা পরীক্ষা দিচ্ছেন। এর আগে প্রথম শিফটে ছাত্রীদের পরীক্ষা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনের বাগানে ঘাসের উপরে বসে আছেন এক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর মা। সঙ্গে ছিল তার আরেক সন্তান। মধ্যবয়সী এ ভদ্রমহিলার নাম মুহসেনা বেগম। তিনি সাভারের নবীনগর থেকে এসেছেন।

তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, “আমার বাসার কাছেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। ছেলে একাই আসতে চেয়েছিল। কিন্তু আমার মন মানেনি। তাই এক সঙ্গে এসেছি। আমার ইচ্ছা ছেলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাক। বাসার কাছে থাকলে আমারো চিন্তা কম হবে।”

এরপরের শিফটে ছিল গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক অনুষদ এবং ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজিভুক্ত ‘এ’ ইউনিটের পরীক্ষা। পরীক্ষা চলাকালে ঢাকা থেকে আগত ডা.

আনওয়ারুল হককে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংলগ্ন একটি সিড়িতে একা বসে থাকতে দেখা যায়। বয়স ষাটোর্ধ্ব হবে। চেহারায় উৎকণ্ঠার ছাপ।

কেমন আছেন জিজ্ঞেস করতেই তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, “নতুন কলা ভবনে ছোট মেয়ে ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা দিচ্ছে। পরীক্ষায় ঠিকভাবে উত্তর করতে পারছে কি না এ নিয়ে চিন্তা হচ্ছে। উচ্চতর গণিতে কিছুটা দূর্বল সে। পরীক্ষার হলে নার্ভাস হয়ে গেলে সহজ উত্তরও ভুল হতে পারে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনের বাগানে ফুলের গাছের ছায়ায় ঘাসের উপর মাদুর পেতে বসেছিলেন অভিভাবক শামসুল আলম ও রাশেদা খাতুন। কথা হয় তাদের সঙ্গে।

শামসুল আলম বলেন, “ঠাকুরগাঁও থেকে এসেছি। মেয়ে ‘এ’ ইউনিটের পরীক্ষা দিচ্ছে। আমি একাই ওকে পরীক্ষা দিতে নিয়ে আসতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ওর মা একা বাসায় চিন্তা করবে, তাই দুজনই সঙ্গে এসেছি।”

সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে কথা হলো আব্দুল আউয়াল নামের এক বৃদ্ধ অভিভাবকের সঙ্গে। তার নাতনিকে কেন্দ্রে প্রবেশ করিয়ে অপেক্ষা করছেন তিনি।

কথা হতেই জানালেন, তার বড় ছেলের মেয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিচ্ছে। ছেলে ব্যাবসার কাজে দেশের বাহিরে থাকায় তিনি নাতনিকে পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে এসেছেন।

তিনি বলেন, “আমার নাতনি আমার অনেক আদরের। ছোটবেলা থেকেই সে মেধাবী ও পড়ুয়া। সে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করুক এবং মানুষের মত মানুষ হয়ে দেশ, জাতি ও পরিবারের কল্যাণে কাজ করুক, এটাই সৃষ্টিকর্তার কাছে চাওয়া।”

নির্দিষ্ট শিফটের পরীক্ষা শেষ হওয়া মাত্রই দেখা গেল অভিভাবকরা যে যেখানে ছিলেন দ্রুত এসে কেন্দ্রের সামনে জড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন। বের হতেই সন্তানকে জড়িয়ে আদর করলেন, কেউবা পরীক্ষা কেমন হলো জিজ্ঞাসা করলেন। সন্তানের এলোমেলো উত্তরে মনে কিছুটা সংশয় থাকলেও এবার বাড়ি ফেরার পালা। সন্তানদেরকে হাতে ধরে বাড়ির পথে ফিরতে শুরু করলেন তারা।

এবারের ভর্তি পরীক্ষা রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) থেকে শুরু হয়েছে। চলবে আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। নয় দিনব্যাপী এবারের ভর্তি পরীক্ষায় মোট ১ হাজার ৮১৪টি আসনের বিপরীতে ২ লাখ ৬২ হাজার ৪৯০টি আবেদন জমা পড়েছে। সে হিসাবে প্রতিটি আসনের বিপরীতে প্রায় ১৪৫ জন শিক্ষার্থী লড়বেন।

ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলসহ বিস্তারিত তথ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিসংক্রান্ত ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।

ঢাকা/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ট র পর ক ষ পর ক ষ য় পর ক ষ র ইউন ট র এস ছ ন র স মন

এছাড়াও পড়ুন:

এবারের বাজেট ট্রাম্প ও আইএমএফএ’র দুই পায়ে দাঁড়ানো: আনু মুহাম্মদ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, এবারের বাজেট ট্রাম্প ও আইএমএফএ’র দুই পায়ে দাঁড়ানো। আইএমএফের প্রভাবে বাজেটে স্থানীয় শিল্পে ভ্যাট অব্যাহতি হ্রাস পেয়েছে। ট্রাম্প সাহেবকে খুশি করার চেষ্টা ছিলো এই বাজেটে। 

আজ শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা আকরাম খাঁ হলে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি আয়োজিত ‘বাজেট: দেড় দশকের অভিজ্ঞতা ও অর্থনীতির গতিপথ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

আনু মুহাম্মদ বলেন, বাজেটে আয়ের জন্য ভ্যাট ট্যাক্স বাড়ানোর কথা বলা হয়। কিন্তু মার্কিন কোম্পানির কাছে আমাদের যে ক্ষতিপূরণ তা আদায় করতে হবে। মাগুরছড়া ও টেংরাটিলায় গ্যাস বিস্ফোরণে সম্পদ ও প্রাণ প্রকৃতি ধ্বংসে যে ক্ষতি হয়েছে, তার ক্ষতিপূরণ আদায়ের কোন সরকারই চেষ্টা করেনি। এই ক্ষতিপূরণ আদায় অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব।

তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর ডিপি ওয়ার্লডের কাছে ছেড়ে দেওয়া তো শেখ হাসিনার প্রকল্প ছিল। ড. ইউনুস কেন তার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চাইছেন? 

গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য আনু মুহাম্মদ বলেন, গণঅভ্যুত্থানে পরিবর্তনের যে আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করা হয়েছে, বর্তমান সরকারের বাজেটে সেই পরিবর্তনের সূচনা ঘটানোর কথা নেই। সম্পদ সংখ্যাগরিষ্ট জনগণের কাছ থেকে গিয়ে কিছু মানুষের কাছে পুঞ্জীভূত হয়। এবারের বাজেটেও সেই প্রবণতা দেখা গেছে।

তিনি আরও বলেন, এবারের বাজেটে প্রতারণা ও অস্বচ্ছতার যে চিত্র ফুটে উঠেছে, সেটা অব্যাহত থাকুক আমরা চাই না। আগামী ২২ জুন বাজেট অনুমোদনের আগে এর ত্রুটিগুলো দূর করতে হবে। বাজেটে জাতীয় সক্ষমতা সৃষ্টির ন্যূনতম উদ্যোগ নিতে হবে।

সভায় আইইউবিএটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও চেয়ার ড. গোলাম রসুল বলেন, সত্যিকার অর্থে কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য এই বাজেটে তেমন কিছু নেই। কৃষিক্ষেত্রে বৈষম্য দিন দিন বাড়ছে। কৃষিকে আমরা নানাভাবে আন্ডার ভ্যালু করে দিচ্ছি। স্বাস্থ্যখাতে এবার জনপ্রতি বাজেট বেড়েছে ২২ টাকা।

ট্রাম্পের পালটা শুল্ক বিষয়ে আনু মুহাম্মদ বলেন, সরকার বুঝেও না বুঝার ভান করছে। এটা আমাদের বিশাল বিপদে ফেলবে। 
সভায় আরও বক্তব্য দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহা মির্জা,  চিকিৎসক ডা. হারুণ অর রশীদ, লেখক-গবেষক প্রকৌশলী কল্লোল মোস্তফা ও মাহতাব উদ্দীন আহমেদ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৫ আসামিকে বাদ দিতে হলফনামা, বাদী কৃষক দল নেতাকে শোকজ
  • এবারের বাজেট ট্রাম্প ও আইএমএফএ’র দুই পায়ে দাঁড়ানো: আনু মুহাম্মদ