সন্তান পরীক্ষায়, বাবা-মা উৎকণ্ঠায়
Published: 11th, February 2025 GMT
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষা গত রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) থেকে শুরু হয়েছে। চলবে আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
নয় দিনব্যাপী এ ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দেখা গেছে অভিভাবক-শিক্ষার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। ভেতরে পরীক্ষা চলতে থাকলেও কেন্দ্রের বাইরে দেখা যায় ভিন্ন এক পরিবেশ। পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে আসা বাবা-মাসহ স্বজনদের কেন্দ্রের বাইরে উৎকণ্ঠা নিয়ে অপেক্ষা করতে দেখা যায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে থেকেই কেন্দ্রে কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীদের সারি সারি লাইন সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশের পূর্ব মুহূর্তে বাবা-মায়ের কাছ থেকে দোয়া নিচ্ছেন পরীক্ষার্থীরা। তারা কেউ এসেছেন বাবার সঙ্গে, কেউ মায়ের সঙ্গে। আবার কারো বাবা-মা দুজনই এসেছেন।
একদিনে সাধারণত পাঁচটি শিফটে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়। প্রতিটি শিফটে ১ ঘণ্টাব্যাপী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ ১ ঘণ্টার প্রতীক্ষা যেন ১ যুগেরও বেশি সময়ের অনুভূতি দেয় বাইরে অপেক্ষারত অভিভাবকদের। তাদের চোখে-মুখে উৎকণ্ঠার চাপ স্পষ্ট।
পরীক্ষা কেন্দ্রের পাশেই গাছের ছায়ায়, জেলা সমিতি বা বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের সহায়তা কেন্দ্রগুলোতে কিংবা ক্যাম্পাসের ঘাসের ওপর মাদুর পেতে বা মাদুর ছাড়াই বসে থাকেন অভিভাবকরা। কেউ সন্তানদের পরীক্ষায় পাঠিয়ে পুরো সময়ই দাঁড়িয়ে থাকেন কেন্দ্রের সামনে। যেন কথা বলার মতোও সময় নেই তাদের।
তবে অনেক অভিভাবকদের বসে সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অন্যের সঙ্গে কথা বলে সময় পার করতেও দেখা গেছে। কেউ আবার পত্রিকার পাতায় চোখ বুলিয়ে নিচ্ছেন।
মঙ্গলবার সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে ছিল ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদভুক্ত ‘ই’ ইউনিটের দ্বিতীয় শিফটের পরীক্ষা। এ শিফটে ছাত্ররা পরীক্ষা দিচ্ছেন। এর আগে প্রথম শিফটে ছাত্রীদের পরীক্ষা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনের বাগানে ঘাসের উপরে বসে আছেন এক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর মা। সঙ্গে ছিল তার আরেক সন্তান। মধ্যবয়সী এ ভদ্রমহিলার নাম মুহসেনা বেগম। তিনি সাভারের নবীনগর থেকে এসেছেন।
তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, “আমার বাসার কাছেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। ছেলে একাই আসতে চেয়েছিল। কিন্তু আমার মন মানেনি। তাই এক সঙ্গে এসেছি। আমার ইচ্ছা ছেলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাক। বাসার কাছে থাকলে আমারো চিন্তা কম হবে।”
এরপরের শিফটে ছিল গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক অনুষদ এবং ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজিভুক্ত ‘এ’ ইউনিটের পরীক্ষা। পরীক্ষা চলাকালে ঢাকা থেকে আগত ডা.
কেমন আছেন জিজ্ঞেস করতেই তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, “নতুন কলা ভবনে ছোট মেয়ে ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা দিচ্ছে। পরীক্ষায় ঠিকভাবে উত্তর করতে পারছে কি না এ নিয়ে চিন্তা হচ্ছে। উচ্চতর গণিতে কিছুটা দূর্বল সে। পরীক্ষার হলে নার্ভাস হয়ে গেলে সহজ উত্তরও ভুল হতে পারে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনের বাগানে ফুলের গাছের ছায়ায় ঘাসের উপর মাদুর পেতে বসেছিলেন অভিভাবক শামসুল আলম ও রাশেদা খাতুন। কথা হয় তাদের সঙ্গে।
শামসুল আলম বলেন, “ঠাকুরগাঁও থেকে এসেছি। মেয়ে ‘এ’ ইউনিটের পরীক্ষা দিচ্ছে। আমি একাই ওকে পরীক্ষা দিতে নিয়ে আসতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ওর মা একা বাসায় চিন্তা করবে, তাই দুজনই সঙ্গে এসেছি।”
সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে কথা হলো আব্দুল আউয়াল নামের এক বৃদ্ধ অভিভাবকের সঙ্গে। তার নাতনিকে কেন্দ্রে প্রবেশ করিয়ে অপেক্ষা করছেন তিনি।
কথা হতেই জানালেন, তার বড় ছেলের মেয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিচ্ছে। ছেলে ব্যাবসার কাজে দেশের বাহিরে থাকায় তিনি নাতনিকে পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে এসেছেন।
তিনি বলেন, “আমার নাতনি আমার অনেক আদরের। ছোটবেলা থেকেই সে মেধাবী ও পড়ুয়া। সে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করুক এবং মানুষের মত মানুষ হয়ে দেশ, জাতি ও পরিবারের কল্যাণে কাজ করুক, এটাই সৃষ্টিকর্তার কাছে চাওয়া।”
নির্দিষ্ট শিফটের পরীক্ষা শেষ হওয়া মাত্রই দেখা গেল অভিভাবকরা যে যেখানে ছিলেন দ্রুত এসে কেন্দ্রের সামনে জড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন। বের হতেই সন্তানকে জড়িয়ে আদর করলেন, কেউবা পরীক্ষা কেমন হলো জিজ্ঞাসা করলেন। সন্তানের এলোমেলো উত্তরে মনে কিছুটা সংশয় থাকলেও এবার বাড়ি ফেরার পালা। সন্তানদেরকে হাতে ধরে বাড়ির পথে ফিরতে শুরু করলেন তারা।
এবারের ভর্তি পরীক্ষা রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) থেকে শুরু হয়েছে। চলবে আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। নয় দিনব্যাপী এবারের ভর্তি পরীক্ষায় মোট ১ হাজার ৮১৪টি আসনের বিপরীতে ২ লাখ ৬২ হাজার ৪৯০টি আবেদন জমা পড়েছে। সে হিসাবে প্রতিটি আসনের বিপরীতে প্রায় ১৪৫ জন শিক্ষার্থী লড়বেন।
ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলসহ বিস্তারিত তথ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিসংক্রান্ত ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।
ঢাকা/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ট র পর ক ষ পর ক ষ য় পর ক ষ র ইউন ট র এস ছ ন র স মন
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই ডকুমেন্টরিতে ‘ফুটেজ’ না থাকায় জাবি ছাত্রদল নেতার হট্টগোল
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মরণে নির্মিত দেশের প্রথম স্মৃতিস্তম্ভ ‘অদম্য ২৪’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রচারিত ডকুমেন্টরিতে ফুটেজ না থাকায় এক ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে হট্টগোল করা অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ৩৯তম ব্যাচের (২০০৯-১০ সেশন) সাবেক শিক্ষার্থী এবং শাখা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বিকেল ৬টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন ফজিলাতুন্নেসা হলের সামনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ডকুমেন্টরি প্রদর্শন শেষে এ হট্টগোল করেন তিনি।
আরো পড়ুন:
জুলাই শহীদ পরিবারদের সংবর্ধনা দিল জাবি
জুলাই শহীদদের স্মরণে জাবি ছাত্রদলের বৃক্ষরোপণ
এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অন্তবর্তীকালীন সরকারের শিল্প, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
ডকুমেন্টরি প্রদর্শন শেষে ওই ছাত্রদল নেতা উত্তেজিত কণ্ঠে বলতে থাকেন, “এই ডকুমেন্টরিতে ইতিহাস বিকৃতি করা হয়েছে। ডকুমেন্টরিতে ছাত্রদলের অবদানকে অস্বীকার করা হয়েছে। আমরাও আন্দোলন মাঠে ছিলাম, জেল-জুলুম, মামলা আমরাও খেয়েছি।”
এ সময় তার সঙ্গে শাখা ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক রোমান রাশিদুল ও হাসান শাহরিয়ার রমিমকেও হট্টগোল করতে দেখা যায়।
অনুষ্ঠানের আয়োজকরা জানান, ডকুমেন্টরি নির্মাণের জন্য তাদের দুইদিন সময় দেওয়া হয়েছিল। এই সময়ের মধ্যে একটি মাত্র ক্যামেরা দিয়ে ২৫ থেকে ৩০ জনের ইন্টারভিউ নেওয়া খুবই কষ্টসাধ্য কাজ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে পর্যাপ্ত ইকুইপমেন্ট ও সময় না পাওয়ায় তাদের পূর্ণাঙ্গ ডকুমেন্টরি নির্মাণ কাজ বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
তবে এ ঘটনার পেছনে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের এক প্রভাবশালী শিক্ষকের হাত রয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক শিক্ষক।
তারা জানান, ডকুমেন্টরি নির্মাণের পূর্বে তারা জুলাই আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব ছবি ও ভিডিও ফুটেজ চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সব পাবলিক ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করেছিলেন। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের পাঠানো ও সাংবাদিকদের থেকে সংগৃহীত ছবি ও ফুটেজ দিয়ে ডকুমেন্টরি নির্মাণ করা হয়েছে। যে ব্যক্তি দাবি করেছেন তার ছবি বা ফুটেজ দেয়া হয়নি, তার ছবি বা ফুটেজ তাদের কাছে কেউ দেয়নি। এজন্য তারা ডকুমেন্টরিতে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেননি?
এ নিয়ে জাবি উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, “আজ যে একটা বিশেষ পরিস্থিতি দেখেছি, এটাও জাহাঙ্গীরনগরের বৈশিষ্ট্য, এটাও ২৪ এর অর্জন। খারাপভাবে দেখার প্রয়োজন নেই। প্রত্যেকটি কাজের মধ্যে ভুল থাকতে পারে, এখানে শিক্ষার বিষয় রয়েছে। ঠিক একইসঙ্গে প্রতিবাদের যে ভাষা, সেখানেও শিক্ষিত হবার প্রয়োজন রয়েছে।”
তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে সমালোচনা ও কুৎসার পার্থক্য শিখবে। একইসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশংসা ও পূজার পার্থক্য শিখবে ও বুঝবে।”
ঢাকা/আহসান/মেহেদী