বাহারি পাহাড়ি পিঠা সাজিয়ে বসেন শিক্ষার্থী
Published: 13th, February 2025 GMT
রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবিপ্রবি) ম্যানেজমেন্ট বিজনেস সোসাইটির (এমবিএস) উদ্যোগে প্রথমবারের মতো পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়। বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. আতিয়ার রহমান।
পিঠা উৎসবে স্থানীয় পাহাড়ি নানা পদের বাহারী পিঠা, গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী পিঠার প্রদর্শনী ও বিক্রি করা হয়। পাহাড়ি পিঠার মধ্যে সান্নে পিঠা, বড়া পিঠা, বিনি হোগা এবং অন্যান্য পিঠা ও খাদ্যের মধ্যে ছিল বড়ই হোরবো, হুরো হোরবু, পাজন তোন, মটর, সেমাই, চিকেন রোল, পাটি সাফটা, জাপানিজ সুসি, পুডিং, চটপটি, হৃদয় হরণ পিঠা, পুলি পিঠা, ফুল ঝুড়ি পিঠা, নারিকেল সুন্দরী পিঠা, মোলিনা পিঠা, ডিম সুন্দরী পিঠা এবং সুজির হালুয়া ইত্যাদি।
পিঠা উৎসবে উদ্বোধনী বক্তব্যে ভাইস-চ্যান্সেলর বলেন, ‘‘যারা খারাপ কাজের মধ্যে রয়েছে, তাদের ভালো কাজের মধ্যে আসতে হবে। যারা পরীক্ষায় বার বার ইম্প্রুভমেন্ট দেয়; এটাও একটা খারাপ কাজ। এ সমস্ত খারাপ কাজ থেকে বের হওয়ার জন্য পিঠা উৎসবের মতো পাঠক্রম বহিঃ কাজের পাশাপাশি পড়াশুনা ঠিক রাখতে হবে।’’
আরো পড়ুন:
নিজস্ব ক্যাম্পাসের দাবিতে নরসিংদী টেক্সটাইল কলেজের শিক্ষার্থীদের অবস্থান
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন
সিরাজগঞ্জ জেলা কমিটি স্থগিত, আন্দোলন প্রত্যাহার
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘প্রতিদিন পুরো ক্যাম্পাসকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব সকলের। একটি ক্লিন ক্যম্পাস গড়ে তোলার জন্য সবার দায়িত্ববোধের মাধ্যমে কাজ করতে হবে।’’ বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে, বেঞ্চে যারা লিখে, তাদের এগুলো না করার আহবান জানান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাবিপ্রবির ব্যবসা প্রশাসন অনুষদের ডিন ও ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সূচনা আখতার, সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি অনুষদের ডিন ও কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ধীমান শর্মা, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাদ্দাম হোসেন, ম্যানেজমেন্ট বিজনেস সোসাইটির (এমবিএস) সহ-সভাপতি ফাহিমুল আনোয়ার, সাধারণ সম্পাদক মো.
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে প্রায় ১০টি স্টলে নানা ধরণের পিঠার পসরা সাজিয়ে প্রদর্শনী ও বিক্রি করেছে। পিঠা উৎসব ঘিরে বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
ঢাকা/শংকর/বকুল
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
প্রার্থনার সুরে শেষ হলো ‘ফাতেমা রানীর’ তীর্থোৎসব
পাহাড়ের আঁকাবাঁকা প্রায় দুই কিলোমিটারেরও বেশি উঁচুনিচু ঢালু পথ পাড়ি দিয়ে আলোক শোভাযাত্রা করে করলেন হাজারো খৃষ্ট ভক্ত। মা মারিয়ার আশীর্বাদপ্রাপ্ত শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত ‘বারোমারি সাধু লিওর খ্রিষ্টধর্মপল্লি’ তে ছিলো এ বছরের আয়োজন।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) সকাল থেকে শুরু হয় ক্যাথলিক খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ‘ফাতেমা রানীর’ তীর্থোৎসব। দুই দিনব্যাপী এই তীর্থোৎসব শেষ হয়েছে গতকাল শুক্রবার জীবন্ত ক্রুশের পথ ও পবিত্র মহাখ্রিষ্টযাগের মধ্যে দিয়ে।
এ উৎসবে শুধু ক্যাথলিক খ্রিষ্টানই নন, অন্য ধর্মাবলম্বীরাও প্রতিবছর অংশ নেন। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। উৎসবের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভ্যাটিকান সিটির রাষ্ট্রদূত কেভিন এস র্যান্ডেল।
এসময় জেলা প্রশাসক (ডিসি) তরফদার মাহমুদুর রহমান ও পুলিশ সুপার (এসপি) আমিনুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আয়োজক কমিটি জানায়, প্রতিবছর অক্টোবর মাসের শেষ বৃহস্পতি ও শুক্রবারে এই তীর্থযাত্রার আয়োজন করা হয়। প্রধান পৌরহিত্যকারী ন্যুনসিওকে বরণ, তীর্থের জুবিলী উদজাপন, পুর্নমিলন সংস্কার, পবিত্র খিষ্টযাগ, জপমালার প্রার্থন, আলোক শোভাযাত্রা, সাক্রান্তের আরাধনা, নিরাময় অনুষ্ঠান, ব্যক্তিগত প্রার্থনা ও নিশি জাগরণের মধ্য দিয়ে প্রথম দিনের অনুষ্ঠান শেষ হয়। শুক্রবার সকাল আটটায় জীবন্ত ক্রুশের পথ অতিক্রম এবং সকাল ১০টায় মহাখ্রিষ্টযোগের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এবারের তীর্থোৎসব।
১৯৪২ সালে ৪২ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় বারোমারি সাধু লিওর ধর্মপল্লি। ১৯৯৮ সালে প্রয়াত বিশপ ফ্রান্সিস এ গোমেজ স্থানটিকে ‘ফাতেমা রানীর তীর্থস্থান’ হিসেবে ঘোষণা করেন। তখন থেকেই প্রতিবছর আয়োজিত হয়ে আসছে এই ধর্মীয় উৎসব। এ বছর প্রায় ৩০-৪০ হাজার দেশি-বিদেশি রোমান ক্যাথলিক তীর্থযাত্রী অংশ নিয়েছেন উৎসবে। সার্বিকভাবে উৎসব এলাকা ছিল আলো, প্রার্থনা ও শান্তির আবহে মোড়ানো।
রংপুর থেকে আসা তীর্থযাত্রী রিপন আরেং বলেন, “সবাই যখন মোমবাতি প্রজ্বলন করে প্রার্থনা করতে করতে পাহাড়ি আকাঁবাঁকা পথ অতিক্রম করছিলেন, তখন পাহাড় আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছিল। তীর্থে আমরা মা মারিয়ার কাছে প্রার্থনা করতে এসেছি।”
চট্টগ্রাম থেকে আসা রীতা নকরেক বলেন, “পুত্রবধূর সন্তান হচ্ছিল না। গতবার মানত করার পর এবার নাতী পেয়েছি। তাই এবার নাতীকে নিয়ে আবার এসেছি।”
গাজীপুর থেকে পরিবারের সঙ্গে আসা শিক্ষার্থী ঝর্ণা আরেং বলেন, “মারিয়ার কাছে এলে মনে একধরনের শান্তি পাই। আমরা প্রার্থনা করি যেন জীবনের দুঃখ-কষ্ট দূর হয়। প্রতিবছর এই সময়টার অপেক্ষায় থাকি।”
শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, “আমরা এই তীর্থযাত্রাকে নিরাপদ ও ঝুঁকি মুক্ত রাখতে তিন স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থায় রেখেছি। পাঁচ শতাধিক পুলিশ পোশাকে এবং সাদা পোশাকে দ্বায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও র্যাব, বিজিবি, এপিবিএন ও সেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। যে কোন ঝুঁকি মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত আছি।”
শেরপুর জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, “উৎসবটি দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ব্যবস্থাপনায়। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন দীর্ঘ ১৫ দিন ধরে সহযোগীতা করে আসছে। এবারের তীর্থযাত্রায় সারাদেশের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে তাদের উৎসব পালন করেছে।”
ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশের বিশপ পনেন পল কুবি সিএসসি বলেন, “এ উৎসবের মাধ্যমে বিশ্ব মানবতার কল্যাণে প্রার্থনা করা হয়েছে। ধর্মীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এ তীর্থে দেশ-বিদেশের হাজারো মানুষ সমবেত হয়েছেন। তাঁরা দুই দিনব্যাপী তীর্থে নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন। মা ফাতেমা রানীর কাছে দেশ ও মানবজাতির কল্যাণে প্রার্থনা শেষে যার যার বাড়ি ফিরে যাবেন।”
ঢাকা/তারিকুল/এস