বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাংশে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বৃহত্তর মঙ্গোলীয় জাতিগোষ্ঠীভুক্ত নানা ভাষাভাষী লোকজনের বসবাস রয়েছে। তাদের রয়েছে নিজস্ব ইতিহাস, ভাষা ও ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি। পার্বত্য চট্টগ্রামের ভাষাগুলোর মধ্যে চাকমা ভাষা অন্যতম। চাকমারা নিজেদের ‘চাঙমা’ বলে। তাই তাদের ভাষাকে ‘চাঙমা ভাষা’ও বলা যায়।

জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ অনুযায়ী, পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকমাদের জনসংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৮৩ হাজার ২৯৯। পার্বত্য চট্টগ্রামের পার্শ্ববর্তী ভারতের ত্রিপুরা, মিজোরাম, আসামের মিকিরহিল্স এবং অরুণাচলেও চাকমারা বসবাস করে। এখানে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ বনাঞ্চলে এবং সীমান্তবর্তী নাফ নদীর অন্য পারের আরাকানেও ‘দৈংনাক’ নামে চাকমাদের একটি শাখা রয়েছে। তারা এখনো চাকমা ভাষা বুঝতে পারে এবং নিজেদের সেখানে ‘চাঙমা’ বলে।

চাকমাদের লেখার জন্য নিজস্ব বর্ণমালা রয়েছে। এই বর্ণমালা দিয়ে সুদূর অতীত থেকে তাদের প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ আঘর তারা এবং ওষুধ ও চিকিত্সাবিষয়ক গ্রন্থ তাহ্লিক শাস্ত্র লিখিত হয়ে আসছে। উল্লেখ্য, চাকমা বর্ণগুলো আ-কারান্ত ধ্বনিবিশিষ্ট। এসব বর্ণের সঙ্গে মিয়ানমারের শান, আসামের আহোম এবং অরুণাচলের খামতি বর্ণলিপির সাদৃশ্য ও ঐতিহাসিক যোগসূত্র রয়েছে। দূর অতীতের ব্রাহ্মীলিপি থেকে নানা বিবর্তনের মধ্য দিয়ে চাকমা, রাখাইন ও বর্মীসহ এ বইগুলোর উদ্ভব ঘটেছে। চাকমা ভাষায় সমৃদ্ধ লোকসাহিত্য আছে। তাদের ধর্মচর্চা, চিকিত্সা ও সাহিত্যে তাদের বর্ণমালা ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

পরবর্তীকালে পার্বত্য চট্টগ্রামে আধুনিক শিক্ষাবিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে চাকমা সাহিত্যেরও বিকাশ ঘটতে থাকে। ১৯৭০-এর দশক থেকে চাকমা ভাষা ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে লক্ষণীয় অগ্রগতি সূচিত হয়। সে সময় চাকমা ভাষায় বহু নতুন নতুন গান, কবিতা ও নাটক রচিত ও মঞ্চস্থ হয়। চাকমা সংগীতের সঙ্গে সঙ্গে চাকমা নৃত্যও উপভোগ্য হয়ে ওঠে। এরপর ক্রমেই চাকমা ভাষায় রচিত উপন্যাসও প্রকাশিত হয়েছে।

ইতিমধ্যে উদ্ভাবিত হয়েছে কম্পিউটারে ব্যবহারোপযোগী নানা ধরনের চাকমা ফন্ট। এতে চাকমাদের জন্য বাংলা বর্ণের পাশাপাশি তাদের নিজস্ব বর্ণমালাও বই-পুস্তকাদির মুদ্রণকাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের উদ্যোগে শিশু-কিশোরদের জন্য প্রাক্‌-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানোর জন্য চাকমা ভাষা ও বর্ণমালার পাঠ্যবই প্রকাশ করা হয়েছে। ২০১৬ সাল থেকে ধাপে ধাপে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনা মূল্যে সেসব বই বিতরণ করা হচ্ছে। এতে তাদের মধ্যে শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। শিক্ষাক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক অগ্রগতি সাধিত হচ্ছে।

বর্তমানে নানা কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রাথমিক স্কুলগুলোতে চাহিদার তুলনায় শিক্ষকের সংখ্যা অপ্রতুল। চাকমা বর্ণমালা বহু প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকদের অজানা কিংবা স্বল্পজ্ঞাত। চাকমা শিক্ষকদের সবাই নিজেদের ভাষায় কথা বলতে পারলেও অনেকেই চাকমা ভাষায় লেখা বইপত্র থেকে যথাযথ পাঠদান করতে পারছেন না। তাঁদের এ বিষয়ে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া জরুরি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর কার্যকরী উদ্যোগ এবং তদারকির প্রয়োজন রয়েছে।

রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি—এ দুই পার্বত্য জেলায় পাহাড়িদের মধ্যে চাকমারা সংখ্যায় গরিষ্ঠ। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চাকমা ভাষায় প্রকাশিত পাঠ্যবইগুলো প্রাথমিক স্কুলের চাকমা ভাষাভাষী শিক্ষার্থীদের ভালো করে পড়ানো গেলে শিক্ষাক্ষেত্রে সুফল পাওয়া যাবে। এর সুদূরপ্রসারী ইতিবাচক প্রভাবও পড়বে। পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষা, সংস্কৃতি, পর্যটন, ভাষা ও সাহিত্য, সংযোগ ও অর্থনীতিতে অগ্রগতি আরও বেগবান হবে। চাকমা ভাষায় শিক্ষাদানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা, অর্থ বরাদ্দ, উদ্যোগসহ সবার সর্বাঙ্গীণ সহযোগিতা প্রয়োজন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চ কম দ র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

আর্জেন্টাইন গায়িকাকে ছেড়ে কি ইতালিয়ান মডেলের প্রেমে মজেছেন ইয়ামাল

কয়েক মাস ধরে মাঠের ফুটবলের চেয়ে মাঠের বাইরের ঘটনা নিয়েই বেশি আলোচনায় লামিনে ইয়ামাল। গত জুন থেকে এখন পর্যন্ত কয়েকজন নারীর সঙ্গে নাম জড়িয়েছে তাঁর।

তবে ইয়ামাল নাকি প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন শুধু একজনের সঙ্গে—আর্জেন্টিনার গায়িকা ও র‍্যাপার নিকি নিকোল। সম্প্রতি স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, মাত্র তিন মাসেই নিকোলের সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে গেছে ইয়ামালের। চোট, ছন্দহীনতা, বিতর্ক কিংবা ব্যক্তিগত জীবন...সবখানেই হোঁচট খাচ্ছেন বার্সেলোনার এই উদীয়মান উইঙ্গার।

কিছু কিছু সংবাদমাধ্যমে এমনও খবর এসেছে যে ইয়ামাল বিশ্বাসভঙ্গ করাতেই তাঁর কাছ থেকে আলাদা হয়ে গেছেন নিকোল। ইতালির মিলানে এক পার্টিতে দেশটির ২০ বছর বয়সী মডেল আনা গেগনোসের সঙ্গে নাকি বেশ ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখা গেছে ইয়ামালকে। বিষয়টি জানতে পারাতেই নিকোল নাকি ইয়ামালের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন।

তবে এ ধরনের অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন ইয়ামাল। স্প্যানিশ সাংবাদিক হাভি হোয়োসের অনুষ্ঠানে এসে ১৮ বছর বয়সী তারকা জানিয়েছেন, তাঁকে নিয়ে ওঠা সব খবর ভিত্তিহীন।

আরও পড়ুনইয়ামাল কি সত্যিই ১৩ বছরের বড় মডেলের প্রেমে মজেছেন১৮ জুন ২০২৫

ইয়ামাল বলেছেন, ‘আমরা (তিনি ও নিকোল) এখন আর একসঙ্গে নেই। কিন্তু সেটা বিশ্বাসভঙ্গের কারণে নয়। আমরা শুধু আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ব্যস, এইটুকুই। যা বলা হচ্ছে, কিছুই সত্যি নয়। আমি কারও সঙ্গে প্রতারণা করিনি, অন্য কারও সঙ্গেও ছিলাম না।’

ইয়ামালের দাবি, যেসব সংবাদমাধ্যম গল্প বানিয়ে প্রতারণার খবর ছড়াচ্ছে, সেগুলো স্রেফ গুজব।

নিকি নিকোলও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সব গুজব উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘যদি কেউ আমাকে ঠকাত, আমি প্রথমেই সবাইকে জানাতাম। আগেও আমি তাই করেছি।’

২৫ বছর বয়সী এই আর্জেন্টাইন গায়িকা উদাহরণ হিসেবে মেক্সিকান গায়ক পেসো প্লুমার সঙ্গে বিচ্ছেদের বিষয়টি সামনে এনেছেন। গত বছর প্লুমা প্রতারণা করায় নিকোলের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়।

আরও পড়ুনইয়ামালের গাড়ি বা বান্ধবী নয়, ওর খেলা দেখুন: স্পেনের কোচ২৬ আগস্ট ২০২৫

তবে ইয়ামালের সঙ্গে পারস্পরিক সম্মতিতে সম্পর্ক ভেঙেছে। এখানে প্রতারণার কোনো ব্যাপার নেই বলে জানিয়েছেন নিকোল, ‘আমরা আগেই আলাদা হয়েছি, শুধু ঘোষণা করিনি।’

ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করার পর ইয়ামাল এখন ফুটবলে মনোযোগী হতে চাইছেন।

ইয়ামালের গোল উদ্‌যাপন। কাল রাতে এলচের বিপক্ষে

সম্পর্কিত নিবন্ধ