ছাত্র-জনতা ক্ষমতামুখী না। ক্ষমতামুখী হলে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতা যদি সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নিত তাহলে বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলের তার বিপক্ষে কথা বলার মতো স্পর্ধা ছিল না। আমরা ওই ৫ আগস্টে বিজয় নিশ্চিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সব রাজনৈতিক দলের প্রধানদের সঙ্গে কথা বলেছি। এই অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলনে যত অংশীদার ছিল সবার সঙ্গে কথা বলে, তাদের মতামতের ভিত্তিতে এই উপদেষ্টামণ্ডলী হয়েছে। এখনো আমরা ক্ষমতাকে না, জনতাকে গুরুত্ব দিচ্ছি।

আজ রোববার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার রয়েল রিসোর্টে ‘আপনার চোখে নতুন বাংলাদেশ’ শিরোনামে এক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়কার অন্যতম এই নেতা বলেন, ‘আপনাদের অনেক প্রত্যাশা। এই প্রত্যাশা পূরণ যদি আমরা না করতে পারি, দিন শেষে আমাদের সঙ্গে অতীতের কোনো পার্থক্য পাওয়া যাবে না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার অংশগ্রহণে বাংলাদেশে একটি গণ–অভ্যুত্থান হয়েছে। খুনি হাসিনা ভয়ে লেজ গুটিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। কিন্তু এই খুনি হাসিনা এবং তার কিছু সুবিধাভোগী দালাল দেশের বাইরে থেকে উসকানি দিচ্ছে।’

সারজিস আলম বলেন, ‘সারা দেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মের ব্যানারে অনেকে রাজনীতি করছেন। আপনাদের এখন নেতা চেনার সময় এসেছে, কঠিন সময়ে কোন নেতাকে পেয়েছেন আর কোন নেতা আত্মগোপনে থেকে বা দেশের বাইরে থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সুবিধা আদায় করেছেন। বিগত ১৬ বছরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অনেক নেতা ছিল, যাদের আপনারা খুঁজে পান নাই, কিন্তু তারা নতুন করে বিভিন্ন রূপে বাংলাদেশে এসে আপনার মাথায় হাত বোলাচ্ছে। সময়মতো এরা আবারও আপনাদের ফেলে পালিয়ে যাবে। এই বাংলাদেশে চাঁদাবাজি ছিল, চাঁদাবাজি হচ্ছে; সিন্ডিকেট ছিল, সিন্ডিকেট হচ্ছে। এই সোনারগাঁয়ে আগে যে দখলদারি ছিল তার চেয়ে এখন বেশি হয়। এগুলো বন্ধ করতে চাইলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’

সারজিস আলম বলেন, ‘আপনাদের আশপাশ থেকে আমাদের কাছে অসংখ্য খবর আসে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, যারা ফ্যাসিস্টবিরোধী লড়াইয়ে ছিল; কিন্তু এখন বিভিন্ন সুবিধা, টাকা ও ক্ষমতার আসায় ওই খুনিদেরই প্রশ্রয় দিচ্ছে। আমাদের কাছে অভিযোগ আসে, বিভিন্ন থানার কতিপয় পুলিশ বা বিভিন্ন আদালতের কতিপয় বিচারক এখনো ওই খুনিদের বিভিন্ন কিছুর বিনিময়ে প্রশ্রয় দিচ্ছে।’ কোনো নেতাকে অন্ধ অনুকরণ না করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। প্রত্যেকের যৌক্তিক সমালোচনা করারও আহ্বান জানান সারজিস।

আসন্ন নির্বাচন বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে সেরা ও স্বচ্ছ নির্বাচন হতে হবে বলে মন্তব্য করে জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতা সারজিস আলম বলেন, ‘এতে কোনো রাজনৈতিক দল যদি ৩০০ আসনও পায়, আর কেউ যদি কিছু না পায়, তাতেও আমাদের আপত্তি থাকবে না। কিন্তু এই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে সামনে রেখে নির্বাচন হতে হবে। যদি এই নির্বাচনকে সামনে রেখে যেকোনো শক্তি, পক্ষ বা গোষ্ঠী বিন্দুমাত্র ক্ষমতার অপব্যবহার করার চিন্তা করে, কোনো নির্বাচনী কেন্দ্র প্রভাবিত করার চেষ্টা করে, তাহলে ওই কেন্দ্রটিই হবে আরেকটি অভ্যুত্থানের ক্ষেত্র।’

অভ্যুত্থান-পরবর্তী নতুন রাজনৈতিক দল কেবল ছাত্র নয়, সব ধর্ম, মত, বয়স ও শ্রেণির মানুষের জন্য উন্মুক্ত থাকবে বলেও জানান সারজিস আলম। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি হচ্ছে নতুন দল গঠন করা। নতুন দলে অভ্যুত্থানের অন্যতম সহযোদ্ধা নাহিদ ইসলামকে আমরা আমাদের জায়গা থেকে জানিয়েছি, ওই ক্ষমতার চেয়ার থেকে জনতার চেয়ারে এসে গুরুত্বপূর্ণ একটি দায়িত্ব নেওয়ার জন্য। কিন্তু আপনাদের স্পষ্ট করে বলি, মিডিয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় এমন অনেক মহল রয়েছে, যারা আমাদের মধ্যে বিভাজন ঘটানোর জন্য বিভিন্ন পদের বিপরীতে বিভিন্নজনকে বসিয়ে বিভিন্ন রকমের তথ্য বা নিউজ ছড়াচ্ছেন। আমাদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকতে পারে; কিন্তু দল ও দেশের প্রশ্নে আমাদের মধ্যে বিন্দুমাত্র বিভেদ হবে না। কোনো পদ আমাদের আগামীর বাংলাদেশের পথচলাকে নির্ধারণ করবে না।’

জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সোনারগাঁ উপজেলা শাখার যৌথ উদ্যোগে এ আয়োজনে বক্তব্য দেন জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য তুহিন মাহমুদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে আহত শাকিল আহম্মেদ, শহীদ মেহেদী হাসানের বাবা সানাউল্লাহ ও শহীদ ইমরান হোসেনে মা কোহিনুর আক্তার।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন র জন ত ক আপন দ র আম দ র ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

জাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদের (জাকসু) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। সে অনুযায়ী আগামী ৩১ জুলাই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

বুধবার (৩০ জুলাই) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে উপাচার্যের কাউন্সিল কক্ষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মো. মনিরুজ্জামান তফসিল ঘোষণা করেন।

নির্বাচনি তফসিল অনুযায়ী, আগামী ১২ মে খসড়া ভোটার তালিকা ও খসড়া আচরণবিধি প্রকাশ করা হবে। ২১ মে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোটার তালিকা সম্পর্কে আপত্তি ও মতামত গ্রহণ করা হবে। ৩০ জুন চূড়ান্ত হালনাগাদ ভোটার তালিকা ও চূড়ান্ত আচরণবিধি প্রকাশ করা হবে। 

নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক প্রার্থীগণ ১ থেকে ৩ জুলাই বিকেল ৫টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে পারবেন। ১ থেকে ৭ জুলাই বিকেল ৫টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন প্রার্থীগণ। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ও খসড়া প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে ৯ জুলাই।

মনোনয়নপত্রের বৈধতার বিষয়ে এবং বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন গ্রহণ করা হবে ১১ জুলাই বিকেল ৫টা পর্যন্ত। আপিলের শুনানি গ্রহণ ও রায় ঘোষণা করা হবে ১৩ জুলাই বিকেল ৫টা পর্যন্ত।

মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৪ জুলাই বিকেল ৫টা পর্যন্ত। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে ১৫ জুলাই। ১৬ থেকে ২৮ জুলাই রাত ১২টা পর্যন্ত চলবে নির্বাচনী প্রচারণা। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হবে ১৬ জুলাই।

১৯৯২ সালে সর্বশেষ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দীর্ঘ ৩২ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এবারের জাকসু নির্বাচন।

ঢাকা/আহসান/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ