সাংবাদিকতা ক্রমেই চরম চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর আক্রমণ বিরাটভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে দৈনিক প্রথম আলোর ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা জানাতে এসে মাহ্‌ফুজ আনাম এসব কথা বলেন।

 মাহ্‌ফুজ আনাম বলেন, ‘আমার সবচেয়ে বড় অনুভূতি হচ্ছে সত্যিকার অর্থে সাংবাদিকতা একটা চরম চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। পৃথিবীময় প্রযুক্তি, আদর্শ, বর্ণবাদ ও পপুলিজম—এ সবকিছুর ভেতরে সাংবাদিকেরা এখন কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। এ সবকিছুর মধ্যে আমরা বাংলাদেশের সাংবাদিকেরা এবং সাংবাদিকতা ও প্রথম আলোর মতন একটা সুপ্রসিদ্ধ–সুপ্রতিষ্ঠিত কাগজের জন্যে একটা মহাচ্যালেঞ্জ সামনে আসছে।’

 সাংবাদিকেরা সাধারণত সরকারে নিপীড়নের শিকার হন উল্লেখ করে মাহ্‌ফুজ আলম আনাম বলেন, ‘আমরা সাংবাদিকেরা সাধারণত সরকারের নিপীড়নের শিকার হই। কারণ, আমাদের মানসিকতা থাকে জনগণের কথা বলা, নিপীড়নের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো ও মানবাধিকারের পক্ষে থাকা। কিন্তু সরকার সমালোচনা পছন্দ করে না, তারা প্রশংসা চায়। তাই স্বাধীন সাংবাদিকতা সব সময়ই সরকারের চাপের মুখে পড়ে।’

পৃথিবীময় সাংবাদিকতা বিভিন্ন দেশের সরকারের নিপীড়নের বিরুদ্ধেই সংগ্রাম করে প্রস্তুত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন মাহ্‌ফুজ আনাম। তিনি বলেন, বর্তমানে স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপরে আক্রমণটা বিরাট আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সাংবাদিকতার ওপর নতুন ধরনের নিপীড়ন আসছে। আমি মনে করি সংবাদপ্রবাহের মাধ্যমেই সাংবাদিকতার সবচেয়ে বড় হুমকি আসছে।’

মাহ্‌ফুজ আনাম ব্যাখ্যা করে বলেন, আগে সংবাদ মানুষের কাছে পৌঁছাত সংবাদপত্র, রেডিও বা টেলিভিশনের মতো প্রাতিষ্ঠানিক মাধ্যমে। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সংবাদপ্রবাহে বিপ্লব ঘটিয়েছে। এতে ইতিবাচক দিক যেমন আছে, তেমনি নেতিবাচক দিকও আছে। সোশ্যাল মিডিয়া সংবাদপ্রবাহকে গণতান্ত্রিক করেছে—এখন সবাই নিজে নিজে তথ্য প্রকাশ করতে পারে। কিন্তু এর ফলে অসংখ্য মিথ্যা ও ঘৃণামূলক খবরও ছড়িয়ে পড়ছে, যা সত্যিকারের সাংবাদিকতার জন্য ভয়াবহ হুমকি।

মাহফুজ আনাম আরও বলেন, বাংলাদেশে এখন অনেক সময় দেখা যায়—কোনো ভিত্তিহীন, তথ্যহীন, সম্পূর্ণ মনগড়া খবর ভাইরাল হচ্ছে, আর মানুষ তা বিশ্বাস করছে। এটা শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্বব্যাপী এক বড় সংকট। তিনি সতর্ক করে বলেন, আগে সাংবাদিকতার ওপর হুমকি আসত সরকারের দিক থেকে, এখন আসছে সংবাদপ্রবাহের দিক থেকে—বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার থেকে।

ডেইলি স্টার সম্পাদক বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিথ্যা তথ্যের বন্যা বইছে। অথচ পাঠকেরা এখনো সত্য জানতে প্রথম আলো কিংবা অন্যান্য দায়িত্বশীল গণমাধ্যমের কাছেই ফিরে আসে। তাই সাংবাদিকদের অবশ্যই বস্তুনিষ্ঠতা, সততা ও জনসেবার নীতিতে অটল থাকতে হবে।

সম্পাদক পরিষদের এই সভাপতি আরও বলেন, বর্তমানে প্রিন্ট মিডিয়ার আর্থিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়েছে। বিজ্ঞাপনের প্রায় ৮০ শতাংশ রাজস্ব চলে যাচ্ছে ফেসবুক ও গুগলের হাতে। এই বাস্তবতায় সাংবাদিকদের এখন মাল্টিপ্ল্যাটফর্ম সাংবাদিকতায় দক্ষ হতে হবে—অর্থাৎ টেক্সট, ভিডিও ও ডিজিটাল কনটেন্ট—সব মাধ্যমেই কাজ করতে জানতে হবে।

শেষে মাহ্‌ফুজ আনাম বলেন, ‘সাংবাদিকতার এই রূপান্তরের সময় আমাদের সত্যভিত্তিক, মূল্যবোধনির্ভর সাংবাদিকতার অবস্থান আরও শক্ত করতে হবে। মিথ্যা ও ঘৃণামূলক খবর জনপ্রিয় হতে পারে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত টিকে থাকবে সত্য ও দায়িত্বশীল সাংবাদিকতাই।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব দ কত র ওপর সরক র র

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে ৫ কোল পরিবারকে উচ্ছেদের প্রতিবাদে মানববন্ধন

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বাবুডাইং গ্রামে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কোল সম্প্রদায়ের পাঁচটি পরিবার উচ্ছেদ করার প্রতিবাদে মানববন্ধন করা হয়েছে। সোমবার (৩ নভেম্বর) সকালে নগরের সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে মানববন্ধনের আয়োজন করে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ। 

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ‘‘আদালতের একতরফা রায়ের ভিত্তিতে আদিবাসী পরিবারগুলোকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। এতে তারা নিজ ঘরবাড়ি হারিয়ে এখন বাঁশঝাড়ের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে।’’ বক্তারা অভিযোগ করেন, ‘‘আদালতের কোনো নোটিশ ছাড়াই প্রশাসন ঘরবাড়ি ভেঙে দেয়। ফলে খাট, চেয়ার, টেবিলসহ কোনো আসবাবপত্রও বের করতে পারেননি ভুক্তভোগীরা।’’ 

আরো পড়ুন:

বিএলআরআই নিয়োগবিধিতে বৈষম্যের অভিযোগে গবিতে মানববন্ধন

সুদানে গণহত্যার প্রতিবাদে জাবি ও জবিতে মানববন্ধন

বক্তারা দাবি করেন, ‘‘যে জমি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে, তা কোল সম্প্রদায়ের মানুষেরই। ১৯৫০ সালের টেনেন্সি আইনের ৯৭ ধারায় আদিবাসীদের কাছ থেকে ভূমি ক্রয়ে জেলা প্রশাসনের অনুমতি প্রয়োজন হলেও এ ক্ষেত্রে অনুমতি নেওয়া হয়নি। প্রকৃত মালিককে হিন্দু দেখিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করে নেওয়া হয়েছে, যাতে অনুমতি গ্রহণ করতে না হয়। এ কারণে বোঝা যায়, জমির রেজিস্ট্রি সঠিক প্রক্রিয়ায় হয়নি এবং জমি আদিবাসীদেরই।’’ 

মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি গণেশ মার্ডি। মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বিমল চন্দ্র রাজোয়াড়, বরেন্দ্র উন্নয়ন প্রচেষ্টার পরিচালক ফয়জুল্লাহ্ চৌধুরী, হাবিবুর রহমান হাসিবুল, সংগঠনের সহ-সভাপতি রাজকুমার শাও, প্রেসিডিয়াম সদস্য ক্রিষ্টিনা বিশ্বাস, সহ-সংগঠনিক সম্পাদক রূপচাঁদ এক্কা, বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব জামাল কাদেরী।

এছাড়াও বক্তব্য রাখেন- আদিবাসী পরিষদের সদস্য আন্দ্রিয়াস বিশ্বাস, মাসাউসের পরিচালক মেরিনা হাঁসদা, জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মুকুল বিশ্বাস, মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক ছোটন সরদার, মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নিলুফা আহমেদ, বাড়ি থেকে উচ্ছেদের শিকার রুমালী হাঁসদা, ভুট্টু কিস্কু, সুজন সরেন, সনাতন সরেন প্রমুখ।

মানববন্ধন থেকে বক্তারা অবিলম্বে উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলোর পুনর্বাসন, জমির মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়া এবং ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান। 

আদালতের এক রায়ের প্রেক্ষিতে গত ২৭ অক্টোবর বাবু ডাইং গ্রামের ৭৭ শতক জায়গা থেকে পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়। ১৯৯৮ সাল থেকে এ জমিতে কোল সম্প্রদায়ের পাঁচ পরিবার বাস করছিল। 

ঢাকা/কেয়া/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ