পুঁজিবাজার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে জেলা-উপজেলা প্রশাসনকে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ
Published: 21st, October 2025 GMT
দেশব্যাপী বিনিয়োগ শিক্ষা ও পুঁজিবাজার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে সম্পৃক্ত করতে উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
সোমবার (২০ অক্টোবর) বিএসইসির মুখপত্র ও পরিচালক আবুল কালামের স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এর আগে বিএসইসির অনুরোধে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গত ৮ অক্টোবর একটি স্মারক জারি করে সব জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে (ইউএনও) বিনিয়োগ শিক্ষা বিস্তারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বিএসইসি মনে করছে, সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সহযোগিতা দেশের অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি, নিরাপদ বিনিয়োগ চর্চা ও মূলধন বাজারের টেকসই উন্নয়নে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। বিনিয়োগ শিক্ষা ও পুঁজিবাজার সচেতনতা বৃদ্ধি করতে বিএসইসি নিয়মিতভাবে নানা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে, সম্প্রতি জাতীয় তথ্য বাতায়নে বিএসইসির বিনিয়োগ শিক্ষা বিষয়ক ওয়েবসাইট লিংক ও ইউটিউব লিংক সংযুক্ত করা হয়েছে।
বিনিয়োগকারীদের মাঝে সচেতনতা তৈরি ও শিক্ষিত বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে বিএসইসির কার্যক্রমকে বেগবান করতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সহযোগিতা চেয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। তারই পরিপ্রেক্ষিতে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন সংযোগ অধিশাখা গত ৮ অক্টোবর সকল জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছে।
পত্রে সচিব, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়কে অনুলিপি প্রদানসহ সকল জেলা তথ্য অফিসারকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। একইসাথে দেশের সব বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ যেসব বিষয়ে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছে, তা হলো-
১.
২. জেলা/উপজেলায় বিএসইসি কর্তৃক আয়োজিত সেমিনার ও কর্মশালায় সহায়তা ও সমন্বয় সাধন;
৩. মাসিক জেলা সমন্বয় সভায় বিনিয়োগ শিক্ষা ও সচেতনতা বিষয়টি আলোচনায় অন্তর্ভুক্তকরণ;
৪. জেলা তথ্য অফিসের সহযোগিতায় প্রচার ও প্রকাশনার উদ্যোগ গ্রহণ;
৫. জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার/সিনিয়র সহকারী কমিশনার (ব্যবসা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ শাখা) কে বিনিয়োগ সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহ ও সহযোগিতা করতে দায়িত্ব প্রদান।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, বিএসইসি মনে করে, এই উদ্যোগের ফলে দেশব্যাপী বিনিয়োগ শিক্ষা ও পুঁজিবাজার সচেতনতা কার্যক্রম আরও কার্যকর ও বেগবান হবে।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট অংশীজনসহ দেশের সব মহলের সহযোগিতায় বিএসইসি বিনিয়োগ শিক্ষা প্রসারের মাধ্যমে জনগণ ও বিনিয়োগকারীদের আরও শিক্ষিত ও সচেতন করতে চায়। এই সচেতনতা দেশের পুঁজিবাজার ও সামগ্রিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলেই আশা করছে বিএসইসি।
ঢাকা/এনটি/ইভা
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র সহয গ ত ব এসইস র ও উপজ ল উদ য গ ক ত কর অফ স র
এছাড়াও পড়ুন:
এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের অর্থপাচার তদন্তে বিএস
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেসরকারি ব্যাংক এনআরবিসি ব্যাংক পিএলসির চেয়ারম্যান এসএম পারভেজ তমাল ও এসকেএফ ফাউন্ডেশন ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদ আহমেদ লিটনসহ তাদের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাত করার অভিযোগ রয়েছে।
ব্যাংকটির সহযোগী দুই প্রতিষ্ঠান এনআরবিসি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড ও এনআরবিসি ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে জালিয়াতি ও কারসাজি করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করার বিষয়টি তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
আরো পড়ুন:
ডায়রিয়া প্রাদুর্ভারের কারণ জানতে নাটোরে তদন্ত দল
বাকৃবিতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন
পুঁজিবাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় কিছু নির্দেশনা সাপেক্ষে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছে কমিশন।
সম্প্রতি বিএসইসির মার্কেট ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগ থেকে এ বিষয়ে একটি আদেশ জারি করা হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে। তদন্তের বিষয়ে আভিভা ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন- বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মো. কাওসার আলী, উপ-পরিচালক ও সহকারী পরিচালক মো. ফয়সাল ইসলাম।
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) গোয়েন্দা প্রতিবেদনে পারভেজ তমাল, রাশেদ আহমেদ লিটন এবং তাদের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম উঠে এসেছে। এছাড়া ব্যাংকটির সহযোগী প্রতিষ্ঠান এনআরবিসি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড এবং এনআরবিসি ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে জালিয়াতি ও কারসাজির দ্বারা কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের বিষয়টি তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে। তাই পুঁজিবাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে বিএফআইইউর গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লিখিত অন্যান্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পুজিবাজারে জালিয়াতি ও কারসাজির বিষয়টি তদন্ত করবে গঠিত তদন্ত কমিটি।
বিএসইসির তদন্তের আদেশ
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন মনে করে, পুঁজিবাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে এনআরবিসি ব্যাংক পিএলসির চেয়ারম্যান এসএম পারভেজ তমাল ও এসকেএফ ফাউন্ডেশন ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদ আহমেদ লিটন এবং তাদের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তদন্ত করা প্রয়োজন।
তাই, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স, ১৯৬৯ (১৯৬৯ সালের অধ্যাদেশ নম্বর ১৭) এর ধারা ২১, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩ এর ধারা ১৭ক এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ (২০১৫ সালের সংশোধনীসহ) এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে কমিশন তিন কর্মকর্তার সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্ত কর্মকর্তারা এই আদেশ জারির তারিখ থেকে ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করবেন এবং কমিশনের কাছে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করবেন।
তদন্ত কমিটি যেসব বিষয় খতিয়ে দেখবে
বিএসইসির কাছে পাঠানো বাংলাদেশ ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লিখিত এনআরবিসি ব্যাংক পিএলসির চেয়ারম্যান এসএম পারভেজ তমাল ও এসকেএফ ফাউন্ডেশন ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদ আহমেদ লিটন এবং তাদের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এনআরবিসি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড এবং এনআরবিসি ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের মাধ্যমে পুজিবাজারে জালিয়াতি ও কারসাজির দ্বারা কি পরিমাণ টাকা আত্মসাত করা হয়েছে- সে বিষয়টি অনুসন্ধান ও তদন্ত করা প্রয়োজন।
বিগত সরকারের আমলে আইন বা বিধি-বিধান লঙ্ঘন করা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে তেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।
প্রসঙ্গত, এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এস এম পারভেজ তমালের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। একইসঙ্গে দুদকের মামলায় তাকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। এদিকে চলতি বছরের ১২ মার্চ এনআরবিসি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। চতুর্থ প্রজন্মের এসব ব্যাংক ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের এ দফায় সরকারে আসার প্রথম মেয়াদে অনুমোদন পেয়েছিল।
২০১২ সালে একসঙ্গে অনুমোদন পাওয়া ৯ ব্যাংকের মধ্যে ছিল এনআরবিসি ব্যাংক। এগুলোর উদ্যোক্তা হিসেবে ছিলেন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতা এবং বিদেশে ক্ষমতাসীন দলটির বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতা ও অনুসারী প্রবাসীরা। পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার আগ পর্যন্ত মেঘনা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য এইচ এন আশিকুর রহমান, মোহাম্মদ মাহতাবুর রহমান ছিলেন এনআরবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এবং এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন পারভেজ তমাল।
ঢাকা/মেহেদী