শাহজালাল বিমানবন্দরে আবারও ই-গেট চালু
Published: 4th, November 2025 GMT
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ই-গেট আবারও চালু করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ই-গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। সামান্য যেসব সমস্যা আছে, তা দ্রুত সমাধান করা হবে।”
তিনি আরও জানান, সভায় মাদক নিয়ন্ত্রণ, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, সীমান্ত পরিস্থিতি ও সার্বিক আইনশৃঙ্খলা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি লুট হওয়া অস্ত্র দ্রুত উদ্ধারের উপায় নিয়েও মতবিনিময় হয়েছে।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “বিএনপির প্রার্থীদের তালিকা ঘোষণার পর কয়েকটি এলাকায় ছোটখাটো কিছু ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো নিয়েও আলোচনা হয়েছে।”
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানিমূলক বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে উপদেষ্টা বলেন, “এসব বক্তব্যের অনেক সময় সত্যতা থাকে না। তবে সাংবাদিকদের প্রতিবেদন সাধারণত সত্যনিষ্ঠ হয়। তাই সাংবাদিকরা যদি যাচাই করে সংবাদ পরিবেশন করেন, তাহলে উস্কানিমূলক প্রচারণা অনেকটাই রোধ করা সম্ভব। কোনো সন্দেহ থাকলে সাংবাদিকদের উচিত সংশ্লিষ্ট সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা।”
সভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমসহ বিভিন্ন বাহিনীর প্রধান উপস্থিত ছিলেন।
প্রায় ১১ মাস পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শেষ করে ২০২২ সালের ৭ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ই-গেইট কার্যক্রম উদ্বোধন হয়।
সেসময় বিমানবন্দরে ২৬টি ই-গেইট স্থাপন করে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট বিভাগ (ডিআইপি)। এর মধ্যে আগমনীতে ১২টি, বহির্গমনে ১২টি ও ভিআইপিতে দুটি ই-গেইট রয়েছে।
ই-পাসপোর্টধারীরা যেন ম্যানুয়াল পদ্ধতির পরিবর্তে এসব গেইট ব্যবহার করে দ্রুত ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে পারেন, সে লক্ষ্যেই এসব গেট চালু করা হয়।
উদ্বোধনের কিছু দিন পরেই সার্ভার জটিলতায় অকেজো হয়ে পড়ে এসব ফটক। ফলে আগের মতোই লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম সম্পন্ন করছিলেন অধিকাংশ যাত্রীরা।
ঢাকা/এএএম/ইভা
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স বর ষ ট র শ হজ ল ল
এছাড়াও পড়ুন:
মানবাধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবতা ভিন্ন
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে দেশি ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর বিস্তর অভিযোগ ছিল বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, খুন, বেআইনি আটকসহ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের। রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও প্রতিষ্ঠানগুলোর শৃঙ্খলা ধ্বংস করে সেগুলোকে রাজনৈতিক প্রয়োজনে ব্যবহার করা হয়েছিল।
অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই-আগস্টের হত্যাকাণ্ডসহ গুম ও অন্যান্য গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলোর তদন্ত ও বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করেছে, সেটি নিশ্চিতভাবেই ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। কিন্তু এ সরকারের ১৪ মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যা, কারা হেফাজতে মৃত্যু, মব সহিংসতায় মৃত্যুসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোও সমানভাবে উদ্বেগজনক।
মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’–এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদন জানাচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ১৪ মাসে ৪০ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে সবচেয়ে বেশি—৯টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল; আর গত তিন মাসে ঘটেছে ১১টি। ৪০ জনের মধ্যে গুলিতে মারা গেছেন ১৯ জন, নির্যাতনে মারা গেছেন ১৪ জন, পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে ৭ জনকে। গত তিন মাসে যে ১১ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন; সেখানে পুলিশ, যৌথ বাহিনী ও সেনাবাহিনীর জড়িত থাকার অভিযোগ করা হয়েছে।
অন্যদিকে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) অক্টোবর মাসের যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে, সেপ্টেম্বর মাসে কারা হেফাজতে যেখানে ৮ জন মারা যান, এক মাস পর সেখানে ১৩ জন মারা গেছেন। বিচারবহির্ভূত হত্যা ও কারা হেফাজতে মৃত্যুর এই তথ্য যেমন মানবাধিকার লঙ্ঘনের ইঙ্গিত দেয়, একই সঙ্গে জনমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তৈরি করে। মানবাধিকার রক্ষায় সরকারের প্রতিশ্রুতি আর মাঠের বাস্তবতার মধ্যে যে বিস্তর ফারাক, সেই চিত্রই পরিষ্কার করে তুলে ধরে।
অন্তর্বর্তী সরকারের ১৪ মাসে মব সহিংসতা ও রাজনৈতিক সহিংসতায় মৃত্যুর পরিসংখ্যানও দিয়েছে অধিকার। এ সময়ে মব সহিংসতায় ১৫৩ জন এবং রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৮১ জন নিহত হয়েছেন। এমএসএফ জানাচ্ছে, সেপ্টেম্বর মাসে ৫২টি ও অক্টোবর মাসে ৬৬টি অজ্ঞাতপরিচয় লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। কোনো পরিসংখ্যানই স্বস্তিদায়ক নয়। এই চিত্র সরকারের দুর্বলতা ও আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার ভঙ্গুরতারই প্রতিচ্ছবি। সীমান্ত হত্যাকাণ্ড বন্ধে ও ভারত থেকে পুশ ইন ঠেকাতে জোরালো কূটনৈতিক উদ্যোগ নিতেও সরকার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।
বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোকে রাজনৈতিক চর্চার বাইরে গিয়ে দেখার অবকাশ নেই। সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে লেখা খোলাচিঠিতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ আন্তর্জাতিক ছয়টি মানবাধিকার সংগঠন, ছয়টি নির্বিচার গ্রেপ্তার বন্ধ এবং গ্রহণযোগ্য তথ্যপ্রমাণ ছাড়া রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলাগুলো দ্রুত প্রত্যাহার ও খারিজের আহ্বান জানিয়েছে।
বিচারবহির্ভূত হত্যা, কারা হেফাজতে মৃত্যুর মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের লাগাম টানতে হলে অবশ্যই সবার আগে বাহিনীগুলোর ওপর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সংস্কারের প্রশ্নটি সে কারণেই সবচেয়ে জরুরি কর্তব্য। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তর তাদের সুপারিশে র্যাব বিলুপ্তি এবং বিজিবিকে সীমান্ত রক্ষা ও ডিজিএফআইকে সামরিক গোয়েন্দা তৎপরতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছিল। অথচ অন্তর্বর্তী সরকার পুলিশের পোশাক পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া ছাড়া বাস্তবে কোনো সংস্কার করতে পারেনি। ফলে নির্বাচন–পরবর্তী রাজনৈতিক সরকারের আমলেও বাহিনীগুলোকে রাজনৈতিক ব্যবহারের সুযোগ থেকেই যাচ্ছে।
শুধু প্রতিশ্রুতি আর কথায় নয়, বাস্তবেও মানবাধিকার রক্ষায় সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। বিচারবহির্ভূত হত্যা, কারা হেফাজতে মৃত্যুর অবসান হতে হবে।