কিশোরগঞ্জ-৪, নতুন করে আলোচনায় ফজলুর রহমান
Published: 4th, November 2025 GMT
রাজনীতির মঞ্চে আবারো আলোচনায় উঠে এসেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান। চলতি বছরের ২৬ আগস্ট বিএনপি থেকে তার প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব দলীয় পদ তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। তবে, মাত্র দুই মাসের মাথায় তিনি পেয়েছেন কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম) আসনে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন।
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিএনপি আসন্ন নির্বাচনে মাঠ পর্যায়ে শক্তিশালী প্রার্থী দিয়ে লড়তে চাচ্ছে। ফজলুর রহমানের মতো অভিজ্ঞ ও তৃণমূলভিত্তিক নেতাকে মনোনয়ন দিয়ে দল কৌশলগতভাবে লাভবান হতে চাচ্ছে। যদিও তার অতীত মন্তব্য বিতর্ক তৈরি করেছিল, তবে দলীয় প্রয়োজনে তাকে পুনরায় সামনে আনা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
গাংনীতে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১০
কক্সবাজারে পুরনোদের ওপর আস্থা রাখল বিএনপি
আরো পড়ুন: তিন মাসের জন্য ফজলুর রহমানের পদ স্থগিত করল বিএনপি
মনোনয়ন ঘোষণার পরপরই কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের হাওর অধ্যুষিত তিন উপজেলায় আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। তারা মনে করেন, এটি ফজলুর রহমানের আরেকটি বিজয়। সামনে আরো একটি বিজয়ের অপেক্ষা মাত্র। তারা সবসময় প্রিয় নেতার পাশে ছিলেন এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন।
বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, ফজলুর রহমান গণমানুষের নেতা। তার প্রতি এখানকার মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা রয়েছে। আগামী নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে প্রিয় নেতার জয়ে তা আবারো প্রমাণিত হবে। তারা মনে করেন, সাময়িক শাস্তি থাকা সত্ত্বেও ফজলুর রহমানের দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, মুক্তিযুদ্ধে অবদান এবং স্থানীয় জনপ্রিয়তা বিবেচনায় নিয়েই তাকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি।
অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা উপজেলার করণসি গ্রামের সন্তান। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন মুজিব বাহিনীর কিশোরগঞ্জ জেলার প্রধান। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত থাকলেও পরবর্তীতে বিএনপিতে যোগ দেন এবং বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬ সালে তিনি কিশোরগঞ্জ-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
আরো পড়ুন: ফজলুল রহমানকে গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ, সতর্ক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে শোকজের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় ফজলুর রহমানের পদ তিন মাসের জন্য স্থগিত করে বিএনপি। গত ২৬ আগস্ট তার পদ স্থগিত করা হয়।
সোমবার (৩ নভেম্বর) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কিশোরগঞ্জ-৪ আসনে প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন পেয়েছেন অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমানের নাম জানান।
মিঠামইন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো.
এলাকা থেকে নির্বাচন না করতে পারতেন, সেটা হতো অনেক কষ্টকর। আমরা আজ খুবই খুশি ও আনন্দিত তিনি মনোনয়ন পাওয়ায়। ফজলুর রহমান মাঠের মানুষ, জনগণের সঙ্গে তার সম্পর্ক গভীর। মনোনয়ন পাওয়াটা সময়ের দাবি ছিল।”
ইটনা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক স্বপন ঠাকুর বলেন, “ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রামের গণমানুষের নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান। আগামী ত্রয়োদশ নির্বাচনে বিএনপি তাকে মনোনয়ন দেওয়ায় আমরা খুবই আন্দদিত। আমরা প্রথমেই ধন্যবাদ জানাই, দেশনেত্রী বেগম খালেদা
জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে। তারা সঠিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ফজলুর রহমানকে মনোনয়ন দেওয়ায় নেতাদের মধ্যে প্রাণ সঞ্চার হয়েছে।”
তিনি বলেন, “আগামী ৮ নভেম্বর ফজলুর রহমানের হাওর এলাকায় আসার কথা রয়েছে। এখন আমাদের একটাই কাজ তাকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা। আমরা শুধু এখন একটি বিজয়ের অপেক্ষায় রয়েছি। আর সেটিও গণমানুষের বিপুল ভোটের মাধ্যমে প্রমাণ করব।”
চলতি বছরের ১০ সেপ্টেম্বর মিঠামইনে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ আয়োজিত গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ফজলুর রহমান বলেছিলেন, “আগামী সংসদ নির্বাচনে আমি ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে চাই। দল আমাকে তিন মাসের স্থগিতাদেশ দিয়েছে, আমি মাথা পেতে নিয়েছি। আমি ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে চাই। দলের কাছে এটাই আমার চাওয়া। আপনারা জনগণ দলের কাছে দুইটা জিনিস চাইবেন। একটা হলো ফজলুর রহমান, আরেকটা হলো
ধানের শীষ মার্কা।”
ঢাকা/রুমন/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ ফজল র রহম ন র ক শ রগঞ জ ৪ ব এনপ র ম ঠ মইন র জন ত উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীতে ৫ কোল পরিবারকে উচ্ছেদের প্রতিবাদে মানববন্ধন
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বাবুডাইং গ্রামে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কোল সম্প্রদায়ের পাঁচটি পরিবার উচ্ছেদ করার প্রতিবাদে মানববন্ধন করা হয়েছে। সোমবার (৩ নভেম্বর) সকালে নগরের সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে মানববন্ধনের আয়োজন করে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ‘‘আদালতের একতরফা রায়ের ভিত্তিতে আদিবাসী পরিবারগুলোকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। এতে তারা নিজ ঘরবাড়ি হারিয়ে এখন বাঁশঝাড়ের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে।’’ বক্তারা অভিযোগ করেন, ‘‘আদালতের কোনো নোটিশ ছাড়াই প্রশাসন ঘরবাড়ি ভেঙে দেয়। ফলে খাট, চেয়ার, টেবিলসহ কোনো আসবাবপত্রও বের করতে পারেননি ভুক্তভোগীরা।’’
আরো পড়ুন:
বিএলআরআই নিয়োগবিধিতে বৈষম্যের অভিযোগে গবিতে মানববন্ধন
সুদানে গণহত্যার প্রতিবাদে জাবি ও জবিতে মানববন্ধন
বক্তারা দাবি করেন, ‘‘যে জমি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে, তা কোল সম্প্রদায়ের মানুষেরই। ১৯৫০ সালের টেনেন্সি আইনের ৯৭ ধারায় আদিবাসীদের কাছ থেকে ভূমি ক্রয়ে জেলা প্রশাসনের অনুমতি প্রয়োজন হলেও এ ক্ষেত্রে অনুমতি নেওয়া হয়নি। প্রকৃত মালিককে হিন্দু দেখিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করে নেওয়া হয়েছে, যাতে অনুমতি গ্রহণ করতে না হয়। এ কারণে বোঝা যায়, জমির রেজিস্ট্রি সঠিক প্রক্রিয়ায় হয়নি এবং জমি আদিবাসীদেরই।’’
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি গণেশ মার্ডি। মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বিমল চন্দ্র রাজোয়াড়, বরেন্দ্র উন্নয়ন প্রচেষ্টার পরিচালক ফয়জুল্লাহ্ চৌধুরী, হাবিবুর রহমান হাসিবুল, সংগঠনের সহ-সভাপতি রাজকুমার শাও, প্রেসিডিয়াম সদস্য ক্রিষ্টিনা বিশ্বাস, সহ-সংগঠনিক সম্পাদক রূপচাঁদ এক্কা, বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব জামাল কাদেরী।
এছাড়াও বক্তব্য রাখেন- আদিবাসী পরিষদের সদস্য আন্দ্রিয়াস বিশ্বাস, মাসাউসের পরিচালক মেরিনা হাঁসদা, জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মুকুল বিশ্বাস, মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক ছোটন সরদার, মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নিলুফা আহমেদ, বাড়ি থেকে উচ্ছেদের শিকার রুমালী হাঁসদা, ভুট্টু কিস্কু, সুজন সরেন, সনাতন সরেন প্রমুখ।
মানববন্ধন থেকে বক্তারা অবিলম্বে উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলোর পুনর্বাসন, জমির মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়া এবং ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান।
আদালতের এক রায়ের প্রেক্ষিতে গত ২৭ অক্টোবর বাবু ডাইং গ্রামের ৭৭ শতক জায়গা থেকে পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়। ১৯৯৮ সাল থেকে এ জমিতে কোল সম্প্রদায়ের পাঁচ পরিবার বাস করছিল।
ঢাকা/কেয়া/বকুল