পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পবিপ্রবি) ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও প্রকাশ্যে কর্মীসভা করেছে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।

রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির কনফারেন্স হলে এই কর্মীসভা অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকার পরও প্রকাশ্যে এই কর্মসূচি আয়োজন করায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

কর্মীসভায় অংশগ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর গণরুম থেকে শিক্ষার্থীদের জোরপূর্বক কর্মীসভায় নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গণরুমের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, প্রোগ্রামে অংশ না নিলে তাদের বিছানাপত্র ফেলে দেওয়া এবং হল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে। এমনকি প্রোগ্রাম শেষে তাদের সাথে দেখা করার জন্য পুনরায় আসবে এমন মন্তব্যও করেছে। প্রতিবেদকের হাতে এ সংক্রান্ত বেশ কিছু তথ্য ও প্রমাণ সংরক্ষিত রয়েছে।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বরিশাল ক্যাম্পাসের নিয়মিত বাস শিডিউল বন্ধ রেখে কর্মী সম্মেলনে বাস নিয়ে আসার অভিযোগ উঠেছে। এতে বরিশাল ক্যাম্পাস থেকে বরিশাল শহরগামী শতাধিক নিয়মিত শিক্ষার্থী ভোগান্তির শিকার হয়েছেন।

কর্মী সম্মেলনের সামনের সারিতে অতীতে ছাত্রলীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু সক্রিয় কর্মীকে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে বলেও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।

২৩-২৪ সেশনের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান অনুষদের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের তথাকথিত ছাত্রদল নেতারা যে ধরনের আচরণ করেছে, তা যেন বিগত সময়ের ফ্যাসিস্ট ছাত্রলীগের অনুরূপ। আমরা এ বিষয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী সামাদ নকিব বলেন, নামমাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ রেখে প্রশাসনের ছত্রছায়ায় ছাত্রদলের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। গণরুমে ঢুকে যেভাবে ছাত্রদল নেতারা উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করেছে, তা বর্তমান পবিপ্রবির জন্য অশনিসংকেত।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড.

মো. ইকতিয়ার উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ছাত্রদলের কর্মী সম্মেলন সম্পর্কে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও প্রক্টর যথাযথভাবে অবগত রয়েছেন। আমি শুধু উপাচার্যের আদেশ বাস্তবায়ন করি, এর বাইরে আমার কোনো ক্ষমতা নেই।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আবুল বাশার খানকে জিজ্ঞেস করলে তিনি ছাত্রদলের কর্মসূচির বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে মন্তব্য করেন।

বিষয়টি নিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলামের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও কীভাবে টিএসসি কনফারেন্স রুমে ছাত্রদলের কর্মীসভা হয়েছে, সে বিষয়ে আমি জানি না। তবে আমি প্রক্টর ও ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টাকে ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে বলেছি। তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ রয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ১৩ আগস্ট শিক্ষার্থীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে তৎকালীন রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. এস এম হেমায়েত জাহান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে পবিপ্রবি থেকে সকল ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ছ ত রদল ছ ত রদল র ক উপ চ র য র জন ত

এছাড়াও পড়ুন:

ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু : পুলিশের দাবি, বাড়ির ছাদ থেকে পড়েছেন, হত্যার অভিযোগ পরিবারের

ভোলা সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাইফুল্লাহ আরিফকে (৩০) হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ভোলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে তাঁর বাবা বশির উদ্দিন (মাস্টার) এই অভিযোগ করেন।

এ সময় বশির উদ্দিন বলেন, পুলিশ দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ার কোনো সুযোগ নেই; সেখানে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক।

এর আগে গত শনিবার পুলিশ সুপার শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক তদন্তের তথ্য অনুযায়ী অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে সাইফুল্লাহ আরিফ মারা গেছেন।

সাইফুল্লাহ আরিফ ভোলা পৌরসভার কালীবাড়ি রোডে নবী মসজিদ গলি এলাকার বশির উদ্দিনের ছেলে। গত ৩১ আগস্ট ভোরে নিজ বাড়ির সামনে থেকে সাইফুল্লাহ আরিফের লাশ উদ্ধার করা হয়।

আজ দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বশির উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলে দুর্ঘটনায় নয়, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এর কিছু প্রমাণ আছে। আরিফের শরীরে একাধিক কাটা ও ভাঙা জখম ছিল, এমনকি হাতের রগ কাটা ছিল। পুলিশের দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যুর সুযোগ নেই, কারণ, ছাদে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশ সুপার আমার ছেলেকে নেশাগ্রস্ত আখ্যা দিলেও তাঁর কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ছাড়া পুলিশ কীভাবে এমন কথা বলতে পারে। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

বশির উদ্দিন আরও বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফ কোনো ধরনের মাদকের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। সে ছাত্রলীগের সহসভাপতি হলেও কখনো ক্ষমতার অপব্যবহার করেনি। হত্যাকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ সত্য গোপন করছে। সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে মামলাটি সিআইডি বা পিবিআইয়ের কাছে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বশির উদ্দিন বলেন, তাঁর ছেলের সঙ্গে অনেকের বিরোধ ছিল। তবে জমিজমার বিরোধ ও মাদক ব্যবসার বিরোধ নিয়ে তাঁর ছেলে খুন হয়নি। এগুলোর সঙ্গে সে জড়িত ছিল না।

শনিবার পুলিশ শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফের মৃত্যুর রহস্য উদ্‌ঘাটনে প্রাথমিক তদন্ত শেষে জানা যায়, তিনি অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মারা গেছেন। ৩০ আগস্ট দিবাগত রাত অনুমান ১২টা ১৫ মিনিটে রাতের খাবার শেষে সাইফুল্লাহসহ পরিবারের সবাই নিজ নিজ ঘরে ঘুমাতে যান। ভোর ৫টা ১০ মিনিটে ফজরের নামাজের জন্য বের হওয়ার সময় তাঁর বাবা বশির উদ্দীন (৭০) বাড়ির সামনে গেটের পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় ছেলের মরদেহ দেখতে পান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ভোলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। সুরতহালে দেখা যায়, আরিফের মাথা ও হাতে গুরুতর আঘাত ছিল। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, আরিফ দীর্ঘদিন ধরে নেশায় আসক্ত ছিলেন এবং হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় প্রায়ই ছাদে যেতেন। ঘটনার দিন রাতেও তিনি ছাদে ওঠেন এবং অসতর্কতাবশত রেলিংবিহীন অংশ থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর জখমপ্রাপ্ত হয়ে মারা যান।

পরিবারের অভিযোগ সম্পর্কে আজ দুপুরে পুলিশ সুপার শরীফুল হক মুঠোফোনে বলেন, ‘ওই ঘটনায় তদন্ত চলমান। সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক তদন্তের কথা জানানো হয়েছে। তদন্তে তথ্য সংযোগ-বিয়োগের সুযোগ রয়েছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আগামী সরকারের মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি কেনার অতি আগ্রহের কারণ কী, প্রশ্ন টিআইবির
  • মুসলিম পরিবারে শিশুর নিরাপত্তা
  • পুরোপুরি বিলুপ্তির পর উগান্ডায় আবার ফিরল গন্ডার
  • ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু : পুলিশের দাবি, বাড়ির ছাদ থেকে পড়েছেন, হত্যার অভিযোগ পরিবারের