দেশে গ্যাস-সংকটের কারণে সুতার ব্যবসা ভারতে চলে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল। তিনি বলেন, ‘গত বছর ভারত থেকে ২৭০ কোটি ডলারের সুতা এসেছে। এতে তাদের প্রায় দেড় লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। আমাদের সেদিকে কোনো মনোযোগ নেই।’

বাংলাদেশ বস্ত্রকল সমিতির (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, সুতা উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। তবে গ্যাস–সংকটের কারণে বস্ত্রকলগুলো অর্ধেক চলে, অর্ধেক চলে না। কিছু বন্ধও হয়েছে। এদিকে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতে আগামী ৩-৪ মাস ভালো ক্রয়াদেশ আছে। তবে গ্যাস–সংকটের কারণে তাদের প্রয়োজনীয় সুতা সরবরাহ করতে পারছে না দেশীয় বস্ত্রকলগুলো। সে জন্য ব্যবসা অন্য দেশে (ভারতে) চলে যাচ্ছে।

বিটিএমএর সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। বস্ত্র খাতের যন্ত্রপাতির সবচেয়ে বড় প্রদর্শনী ডিটিজি নিয়ে বিস্তারিত জানাতে আজ মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন।

গ্যাসের দাম দ্বিগুণ করলে একটার পর একটা কারখানা বন্ধ হবে বলে মন্তব্য করেন বিটিএমএর সভাপতি। তিনি বলেন, গ্যাসের দাম দ্বিগুণ করলে বাংলাদেশে বস্ত্র খাত কোনো দিন টেকসই হবে না। একটার পর একটা কারখানা বন্ধ হবে। অনিশ্চয়তা থাকলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ হবে না। গত ছয় মাসে কোনো নতুন বিনিয়োগ হয়নি। ব্যাংকগুলো নতুন কোনো প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে পারেনি। উল্টো পুরোনো শিল্পকারখানা মেরে ফেলার চক্রান্ত চলছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

প্রসঙ্গত, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের কথা বলে দুই বছর আগে শিল্পে ১৫০ থেকে ১৭৮ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়ানো হয়েছিল গ্যাসের। গত বছরও দাম কিছুটা বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু দুই বছর পরও শিল্পে গ্যাস-সংকট কাটেনি। জ্বালানি বিভাগের অনুমোদন নিয়ে দাম বাড়াতে গত মাসে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। এতে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ৩০ টাকা ৭৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৭৫ টাকা ৭২ পয়সা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে পুরো গ্যাস বিল হবে নতুন দামে। তবে পুরোনোদের ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় থাকছে প্রস্তাবে।

শওকত আজিজ রাসেল বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন কবে হবে আমরা জানি না। তবে নির্বাচনের তারিখ জানা থাকলে আমাদের জন্য সুবিধা হয়; তা যখনই হোক। তাহলে আমাদের একটি প্রস্তুতি থাকে—বিনিয়োগ করব কি করব না।’ তিনি আরও বলেন, এখন যদি সরকার থেকে একটা ঘোষণা না আসে তাহলে বিনিয়োগ করব না। কারণ ঘুম থেকে উঠে যদি দেখি গ্যাসের ইউনিট ৭৫ টাকা তাহলে তো ব্যবসা টেকানো যাবে না।

বস্ত্র খাতে চলতি মূলধনের ঘাটতি নিয়েও অভিযোগ করেন বিটিএমএ সভাপতি। তিনি বলেন, ‘টাকার অবমূল্যায়নের কারণে আমাদের বস্ত্র খাতের ব্যবসায়ীদের পুঁজি অর্ধেক হয়ে গেছে। ব্যাংকে আবেদন করলেও তারা সেটি দিতে পারছে না। অথচ কিছু কিছু ব্যাংককে টাকা দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই টাকাটা কেন দিচ্ছে? কারণ সেসব ব্যাংকের টাকা চুরি হয়েছে। সেই চুরির টাকাটা ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। লুট হওয়া ব্যাংক টিকিয়ে রাখতে অর্থ দিলেও ব্যবসায়ীদের যে তারল্যসংকট, সেটি আমলে নিচ্ছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বিদেশি বিনিয়োগ আনার বিষয়ে শওকত আজিজ রাসেল বলেন, ‘চীনে কারখানা বন্ধ হচ্ছে। সেই বিনিয়োগ আসার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার তালিকায় ছিল বাংলাদেশ। তবে আমরা ডলার–সংকট, ব্যাংকের অর্থায়নের অপর্যাপ্ততাসহ বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে আছি। এর মধ্যে যদি রাতারাতি গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ে তাহলে বিদেশিরা আসবে না। সে জন্য সরকারকে পরিষ্কার করে বলতে হবে আগামী এত বছর গ্যাসের দাম এই থাকবে।’

বিটিএমএ ও হংকংয়ের ইয়র্কার্স ট্রেড অ্যান্ড মার্কেটিং সার্ভিস কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে চার দিনব্যাপী ডিটিজি ঢাকার পূর্বাচলের ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) আগামী বৃহস্পতিবার শুরু হবে। এবারের প্রদর্শনীতে চীন, জার্মানি, ভারত, ইতালি ও জাপানসহ ৩৩ দেশের ১ হাজার ১০০ ব্র্যান্ডের ১ হাজার ৬০০টি স্টল থাকবে।

প্রদর্শনীতে তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের যন্ত্রপাতি, কাপড়, ফিলামেন্ট, রাসায়নিক, ডাইং প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম প্রদর্শন করা হবে। প্রদর্শনীতে ফ্যাশন শো থাকবে। প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম দ র ব যবস র একট

এছাড়াও পড়ুন:

ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পের বিমা দাবি নিষ্পত্তির অনুরোধ বিটিএমএর

গত বছরের জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের সময় ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পকারখানার বিমা দাবি নিষ্পত্তি করে ক্ষতিপূরণ দিতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে বস্ত্রকলের মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ। তাদের অভিযোগ, বিমা কোম্পানিগুলো নানা ধরনের পদ্ধতিগত জটিলতা ও পলিসির শর্তের অপব্যাখ্যা করে বিমা দাবি পরিশোধে বিলম্ব করছে। অনেক ক্ষেত্রে দাঙ্গা, হাঙ্গামা ও রাজনৈতিক অস্থিরতা–সংক্রান্ত ক্ষতির অজুহাতে বিমা দাবি সরাসরি প্রত্যাখ্যানের ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে, যা বিমাশিল্পের মূলনীতির পরিপন্থী।

আজ বুধবার অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদকে দেওয়া এক চিঠিতে বিমা দাবি পরিশোধের অনুরোধ জানান বিটিএমএর সভাপতি শওকত আজিজ। তিনি বলেন, ‘গত বছরের জুলাই-আগস্টে দেশব্যাপী সৃষ্ট অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে আমাদের অনেক সদস্যের কারখানা, গুদাম ও অন্যান্য স্থাপনা ব্যাপক ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের শিকার হয়েছে। আকস্মিক এই সহিংসতায় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদনব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে।’

বিটিএমএ সভাপতি বলেন, সব ধরনের অপ্রত্যাশিত ক্ষতি মোকাবিলায় প্রায় প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানই যথাযথ প্রিমিয়াম পরিশোধের মাধ্যমে বিমা কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে অগ্নিসহ বিভিন্ন ঝুঁকির বিপরীতে বিমা পলিসি নিয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত, ঘটনার পর বছর পেরিয়ে গেলেও অধিকাংশ বিমা দাবি নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই।

চিঠিতে বিটিএমএ সভাপতি জানান, গত ৩ মার্চ সাধারণ বীমা করপোরেশনের প্রধান কার্যালয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পকারখানার উত্থাপিত বিমা দাবি নিয়ে সভা হয়। এতে বিমা দাবি নিয়ে বিভিন্ন বিমাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা বিভিন্নভাবে ক্ষতির বিবরণ ও ব্যাখ্যা দেন। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ঘটনাগুলো গণ-অভ্যুত্থানের সময়ে হওয়ায় তা স্ট্যান্ডার্ড ফায়ার পলিসি (এসএফপি) বা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অল রিস্ক (আইএআর) পলিসির আওতায় কোনো বিমা দাবি পরিশোধযোগ্য হবে না। এমন পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পকারখানার মালিকেরা চরম হতাশায় ভুগছেন।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) থেকে সব নন-লাইফ বিমা কোম্পানিকে সুস্পষ্ট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে গত বছরের জুলাই-আগস্টের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বিমা দাবি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে নিষ্পত্তির জন্য নির্দেশনা দেওয়ার অনুরোধ করেছেন বিটিএমএর সভাপতি শওকত আজিজ। তিনি বলেন, বিমা আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে দাবি নিষ্পত্তির বিধানটির কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করা দরকার।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পের বিমা দাবি নিষ্পত্তির অনুরোধ বিটিএমএর