সানবিডি২৪ এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মালদ্বীপে বসবাসরত বাংলাদেশিদের বৈধতা দিতে দেশটির সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। একই সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে আরও কর্মী নিয়োগের আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।

মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বিষয়টি জানানো হয়।

বিবৃতিতে জানানো হয়, মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় মালদ্বীপের হাইকমিশনার শিউনীন রশীদের সঙ্গে বৈঠক করেন ড.

ইউনূস। এ সময় মালদ্বীপ প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরেন তিনি।

বিশ্বের বহু দেশের মতো মালদ্বীপেও বহু বাংলাদেশি রয়েছেন। তারা মূলত দেশটির পর্যটন ও মৎস্য খাতে কাজ করছেন। এছাড়াও একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি চিকিৎসকও মালদ্বীপে কর্মরত রয়েছেন।

বর্তমানে মালদ্বীপের অনেক শিক্ষার্থী বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, বিশেষ করে চিকিৎসা বিষয়ে অধ্যয়ন করছেন বলে জানান হাইকমিশনার শিউনীন রশীদ। এজন্য তিনি প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান। জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, মালদ্বীপ থেকে আরও শিক্ষার্থীকে স্বাগত জানাতে বাংলাদেশ প্রস্তুত।

মালদ্বীপের হাইকমিশনার শিউনীন রশীদকে শুভেচ্ছা জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস আশা প্রকাশ করেন যে, তার দায়িত্ব পালনকালে বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে। জবাবে হাইকমিশনার জানান, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের বাণিজ্য সম্পর্কের উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে আমাদের (মালদ্বীপে) আমদানি বেড়েছে, বিশেষ করে ওষুধ শিল্পখাতে। মালদ্বীপের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাংলাদেশ-মালদ্বীপের মধ্যে আরও বেশি সহযোগিতার সুযোগ তৈরি করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

শিউনীন রশীদ আরও জানান, কয়েকটি বাংলাদেশি কোম্পানি ইতোমধ্যে মালদ্বীপে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করেছে। এছাড়া গত বছরে মালদ্বীপে ভ্রমণকারী বাংলাদেশি পর্যটকের সংখ্যা ১৭.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

এছাড়া হাইকমিশনার প্রধান উপদেষ্টার জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমানোর প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন।

তিনি বলেন, আপনার জলবায়ু কর্মপরিকল্পনার প্রতি আমাদের গভীর আগ্রহ রয়েছে। মালদ্বীপ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা চালিয়ে যেতে চায়।

বরাবরই বিদেশি কর্মীদের জন্য মালদ্বীপ একটি পছন্দের গন্তব্য। ভারত মহাসাগরে কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থান এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে পর্যটন, মৎস্যসহ নানা খাতে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের কর্মীদের অবাধে কাজ করার সুযোগ দিয়ে আসছে দেশটি। এবার অবাধে কাজ করা বিদেশি কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ নিতে যাচ্ছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

মালদ্বীপে অবস্থানরত সব অভিবাসীদের সুরক্ষা নীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আগামী ১৫ মার্চের মধ্যে বায়োমেট্রিক আপডেট করার জন্য সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে দেশটি। অন্যথায় অবৈধভাবে অবস্থানকারী এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে এক্সপ্যাট সিস্টেম বা বিদেশি কর্মী নিয়োগকারী ডিজিটাল সিস্টেম থেকে বাদ দেয়া হবে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।

বিএইচ

উৎস: SunBD 24

এছাড়াও পড়ুন:

বাণিজ্যবিরোধ: ভারত কেন ট্রাম্পের নিশানায়

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের বাণিজ্যনীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন। ভারতীয় পণ্যের ওপর হোয়াইট হাউসের শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তুতি নেওয়ার পর থেকেই এ আক্রমণের মাত্রা বেড়েছে।  

ট্রাম্প জানিয়েছেন, তাঁর প্রশাসন আজ শুক্রবার (১ আগস্ট) থেকে ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করছে এবং এর পাশাপাশি অতিরিক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ট্রাম্প যখন বিশ্বের বহু দেশের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছিলেন, তখনই ভারতকে উদ্দেশ করে তাঁর এমন কঠোর অবস্থান সামনে উঠে আসে।

হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

‘ভারতের শুল্ক বিশ্বে অন্যতম সর্বোচ্চ’, গত বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন মন্তব্য করেন ট্রাম্প। জবাবে ভারত সরকার জানিয়েছে, তারা ট্রাম্পের বক্তব্য ‘লক্ষ্য করেছে’ এবং এর ‘প্রভাব মূল্যায়ন’ করবে।

যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্যবিরোধ: পরিস্থিতি কোথায় দাঁড়িয়ে

আজ থেকে ভারতীয় পণ্যের ওপর ট্রাম্পের ধার্য করা ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক গত ২ এপ্রিল হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে ঘোষিত সম্ভাব্য শুল্ক থেকে মাত্র ১ শতাংশ কম।

এ হার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ শুল্কের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে  চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশ শুল্কের চেয়ে কিছুটা কম।

হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এ শুল্ক ভারতের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য আলোচনা আরও জটিল করে তুলতে পারে। একাধিক দফা আলোচনার মধ্য দিয়ে উভয় পক্ষ একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ১২তম বৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার ভারত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে নেওয়া অনেক কোম্পানির নতুন গন্তব্য হয়েছে দেশটি। মে মাসে অ্যাপলের সিইও টিম কুক জানান, যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রির জন্য আইফোন এখন ভারতে উৎপাদিত হচ্ছে; যাতে উচ্চ শুল্ক এড়ানো যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি কার্যালয়ের (ওটিআর) তথ্যমতে, গত বছর ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বাণিজ্যের মোট পরিমাণ ছিল প্রায় ১২৯ বিলিয়ন (১২ হাজার ৯০০ কোটি) ডলার। ভারতের রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে পোশাক, রাসায়নিক, যন্ত্রপাতি ও কৃষিপণ্য।

ট্রাম্প কেন ভারতকে নিশানা করছেন

সম্প্রতি ট্রাম্প একাধিকবার বিভিন্ন পণ্যের ওপর ভারতের ‘অতি উচ্চ’ শুল্ক আরোপের সমালোচনা করেছেন। এর মধ্যে কৃষিপণ্য ও দুগ্ধজাত পণ্যও রয়েছে।

বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প লেখেন, ‘বছরের পর বছর আমরা ভারতের সঙ্গে তুলনামূলকভাবে খুব কম ব্যবসা করেছি। কারণ, তাদের শুল্ক অত্যন্ত বেশি।’

এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্ট

দেশীয় শিল্পকে রক্ষা করতে ভারত কিছু পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশের বেশি শুল্ক আরোপ করেছে।

ওটিআরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে পণ্যবাণিজ্যে প্রায় ৪৫ বিলিয়ন (৪ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের ঘাটতি দেখেছে। এটি আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। তুলনামূলকভাবে গত বছর যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে প্রায় ২৯৫ বিলিয়ন (২৯ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের বাণিজ্যঘাটতিতে ছিল।

আরও পড়ুনভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা, ইরানের পণ্যের বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ ৩১ জুলাই ২০২৫

ট্রাম্প আরও ক্ষুব্ধ যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে।

‘এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা’, বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন ট্রাম্প।

ভারতের প্রতিক্রিয়া

এ সপ্তাহে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ভারত সরকার ট্রাম্পের ওই বক্তব্যে তুলনামূলকভাবে মৃদু, তবে শক্ত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

ভারতের ওপর ধার্য করা শুল্কহার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশের চেয়ে কিছুটা কম।

বুধবার দেওয়া এ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কয়েক মাস ধরে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একটি ন্যায্য, ভারসাম্যপূর্ণ ও পারস্পরিকভাবে লাভজনক দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির লক্ষ্যে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা সেই লক্ষ্য অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সরকার জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে।’

আগস্টের শেষ দিকে দুই দেশের মধ্যে আরেক দফা বাণিজ্য আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

আরও পড়ুনভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য আলাদা ‘দণ্ড’৩০ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনট্রাম্পের ২৫ শতাংশ শুল্কে ভারতের অর্থনীতি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, কী বলছেন অর্থনীতিবিদেরা১৪ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ