সমাজে আলাদা করে প্রবীণদের নিয়ে চিন্তাভাবনা কিংবা কাজ তেমন হয় না বললেই চলে। প্রবীণরা বরাবরই উপেক্ষিত থেকে যান। সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশে এই উপেক্ষা আর বঞ্চনার হার আরো বেশি। এ অবস্থায় ‘প্রবীণ নারীর জন্য ভালোবাসা’ স্লোগানকে সামনে রেখে বস্তিতে বসবাসরত প্রবীণদের উপহার সামগ্রী দিয়েছেন সমাজের একদল সামর্থ্যবান প্রবীণ।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে বুধবার (৫ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর কল্যাণপুর পোড়াবস্তির কমিউনিটি রিসোর্স সেন্টারে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যৌথভাবে এর আয়োজন করে জনউদ্যোগ, এজিং সাপোর্ট ফোরাম ও ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভলেপমেন্ট (আইইইডি)। অনুষ্ঠানে পোড়াবস্তির ১০০ জন প্রবীণ বাসিন্দাকে উপহার সামগ্রী বিতরণ করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন দৈনিক ইত্তেফাক ও পাক্ষিক অনন্যার সম্পাদক তাসমিমা হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন জনউদ্যোগের আহ্বায়ক ডা.

মুশতাক হোসেন, আইইডির নির্বাহী পরিচালক নুমান আহম্মদ খান, জ্যেষ্ঠ সমন্বয়কারী জ্যোতি চট্টোপাধ্যায়, সমন্বয়কারী সঞ্চিতা তালুকদার, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর জীবন কানাই দাস, এজিং সাপোর্ট ফোরামের সভাপতি হাসান আলী, প্রশিকার চেয়ারম্যান রোকেয়া ইসলাম ও পুষ্টিবিদ ফাউন্ডেশনের জেনারেল সেক্রেটারি রেবেকা সুলতানা প্রমুখ।

অনুষ্ঠান উদ্বোধন করে প্রধান অতিথি তাসমিমা হোসেন বলেন, ‘‘প্রবীণদের নিয়ে কেউ কাজ করতে চায় না। বিশেষ করে প্রবীণ নারীদের পাশে কেউ থাকতে চায় না। জীবনের একটা পর্যায়ে প্রবীণ নারীরা সমাজে অবহেলিত থাকে। আজকে তাদের পাশে দাঁড়াতে পেরে অনেক আনন্দিত বোধ করছি।’’

আইইডির নির্বাহী পরিচালক নুমান আহম্মদ খান বলেন, ‘‘মানুষে মানুষে ভেদাভেদ দূর করে একটি সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে কাজ করে যাচ্ছি আমরা। প্রবীণদের পাশে প্রবীণরাই আজ এগিয়ে এসেছেন। আজকের আয়োজন আরো অনেককে অনুপ্রাণিত করবে বলে আমরা আশাবাদী। এ ধরনের উদ্যোগকে আইইডি সবসময় সাধুবাদ জানায়।’’

এজিং সাপোর্ট ফোরামের সভাপতি হাসান আলী বলেন, ‘‘আমাদের ফোরাম দীর্ঘদিন যাবত প্রবীণদের নিয়ে কাজ করে। সব সময় প্রবীণদের সহযোগিতা করে আসছে। আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে কেন্দ্র করে ‘প্রবীণ নারীর জন্য ভালোবাসা’ স্লোগানে বস্তিতে বসবাসরত নিম্নআয়ের মানুষের জন্য আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।’’

প্রবীণদের প্রতি সহানুভূতিশীল ও দায়িত্ববোধ তৈরির বার্তা দেওয়াই এই আয়োজনের উদ্দেশ্য বলে জানান আয়োজকরা। নাগরিক প্ল্যাটফর্ম জনউদ্যোগ দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের সচেতনতা তৈরিতে কাজ করে আসছে।

ঢাকা/এনএইচ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রব ণ ন র অন ষ ঠ ন ক জ কর র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

মশা নিধনে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে

চট্টগ্রামে এডিস মশার প্রজনন ও লার্ভার ঘনত্ব গত এক বছরে দ্বিগুণ হয়েছে, আর এর সরাসরি ফল ভোগ করছেন নগরবাসী। স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, এবার ডেঙ্গুর চেয়েও চিকুনগুনিয়া ঘরে ঘরে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে, যা এক নতুন উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। মশা নিধনে কার্যকর ও সমন্বিত উদ্যোগের অভাবই এ রোগের দ্রুত বিস্তারের প্রধান কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। চট্টগ্রামে এভাবে জনস্বাস্থ্য ভেঙে পড়ার বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক।

রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, চট্টগ্রাম নগর এডিস মশাবাহিত রোগের জন্য এখন অতি ঝুঁকিপূর্ণ। গত বছর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগ একই ধরনের জরিপ চালিয়েছিল। এই দুই জরিপের তুলনামূলক চিত্র আমাদের সামনে এক ভয়াবহ বাস্তবতা তুলে ধরে—এডিস মশার প্রজনন ও লার্ভার ঘনত্ব দুটিই আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে।

২০২৪ সালে চট্টগ্রামে এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব (ব্রুটো ইনডেক্স) ছিল ৩৬ শতাংশ, যা এবার আইইডিসিআরের গবেষণায় পৌঁছেছে ৭৫ দশমিক ২৯ শতাংশে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মান যেখানে ২০ শতাংশ, সেখানে চট্টগ্রামের এ চিত্র রীতিমতো ভয়াবহ। বাসাবাড়িতেও লার্ভার উপস্থিতি বেড়েছে। গত বছর ৩৭ শতাংশ বাড়িতে লার্ভা পাওয়া গেলেও এবার তা প্রায় ৪৮ শতাংশে পৌঁছেছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবার ডেঙ্গুর চেয়ে চিকুনগুনিয়ার রোগী বেশি পাওয়া যাচ্ছে। আবার অনেকের ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া দুটিই হচ্ছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে জিকা ভাইরাসের উপস্থিতি, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। চলতি বছরেই ৭৬৪ জনের চিকুনগুনিয়া ও ৭৯৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে এবং ডেঙ্গুতে আটজন প্রাণ হারিয়েছেন, যার মধ্যে ছয়জনই মারা গেছেন এই জুলাই মাসে।

সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, আইইডিসিআরের সুপারিশগুলো সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে এবং সে অনুযায়ী কাজ চলছে। সিটি করপোরেশনের মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা শরফুল ইসলাম দাবি করছেন যে মশকনিধনে ক্রাশ কর্মসূচি চলছে এবং নতুন জরিপ অনুযায়ী হটস্পট ধরে কাজ করা হচ্ছে। তবে প্রশ্ন হলো এ উদ্যোগগুলো কি যথেষ্ট? লার্ভার ঘনত্ব যেখানে তিন-চার গুণ বেশি, সেখানে গতানুগতিক কর্মসূচির ওপর নির্ভর করলে চলবে না।

মশাবাহিত রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করার কোনো বিকল্প নেই। এ কাজে সিটি করপোরেশনকে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে হবে। বাসাবাড়িতে নানা জায়গায় জমে থাকা স্বচ্ছ পানিও এডিস মশার প্রজননের জন্য যথেষ্ট। ফলে নাগরিকদের সচেতনতা এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চট্টগ্রাম শহরকে মশাবাহিত রোগের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করতে হলে স্থানীয় প্রশাসন, নগর কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে; নগরবাসীকে দ্রুত তৎপর হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মশা নিধনে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে
  • বরিশাল বিভাগে ডেঙ্গুর প্রকোপ: বরগুনায় তিন মাস ধরে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণহীন