অবৈধ বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানো শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র
Published: 6th, March 2025 GMT
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে অবস্থান করা অন্যান্য দেশের নাগরিকদের মতো বাংলাদেশিদেরও ফেরত পাঠানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে নথিপত্রহীন কয়েকজন বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের ফেরত পাঠালে তাদের গ্রহণ করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গতকাল বুধবার এ বিষয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় প্রস্তুতি সভা হয়েছে। সভায় স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র এবং প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ সভা হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, অন্যান্য দেশের নাগরিকদের মতো অবৈধ বাংলাদেশিদেরও ফেরত পাঠাবে যুক্তরাষ্ট্র। এ-সংক্রান্ত একটি বার্তা ঢাকাকে জানিয়েছে ওয়াশিংটন। বাংলাদেশও যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ হয়ে পড়া নিজ নাগরিকদের ফেরত নেবে।
ওই কর্মকর্তা জানান, আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সভাপতিত্ব করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সচিব মো.
বৈঠকে অবৈধ বাংলাদেশিদের গ্রহণ করার প্রস্তুতির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তাদের যাতে দেশে ফিরতে কোনো সমস্যা না হয়, সেদিকে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা অব্যাহত রাখবে বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেছেন, বাংলাদেশ লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিতে পেরেছে। হাজারখানেক বাংলাদেশিকে নিজের দেশে গ্রহণেও কোনো সমস্যা হবে না।
কবে নাগাদ বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানো শুরু হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা কোনো মন্তব্য না করলেও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এক বাংলাদেশি বলেছেন, বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানো শুরু হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে কয়েকজনকে পাঠানোও হয়েছে।
ট্রাম্প ক্ষমতায় যাওয়ার পর অবৈধ বিদেশিদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে। মেক্সিকোসহ দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের অনেক অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের নিয়েই ট্রাম্প প্রশাসনের দুশ্চিন্তা সবচেয়ে বেশি। তবে, আফ্রিকা ও এশীয়দেরও ফেরত পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। কিছুদিন আগে অবৈধ ভারতীয়দের ফেরত পাঠানো হয়েছে।
নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস এলাকায় বসবাস করা এক প্রবাসী বাংলাদেশি রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেছেন, অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে বৈধ কাগজপত্র ছাড়া যেসব বাংলাদেশি আছেন; তাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। জ্যাকসন হাইটসসহ বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে লোকসমাগম তেমন হচ্ছে না। তবে, যাদের বৈধ কাগজপত্র আছে, তাদের কোনো সমস্যা নেই।
ঢাকায় বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, কয়েকদিন আগে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। তারা ধারণা দিয়েছেন, বৈধ কাগজপত্র ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের যে তালিকা তৈরি করা হয়েছে, সে সংখ্যা হাজারের বেশি নয়। তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। এক্ষেত্রে ঢাকার সহযোগিতা চেয়েছে ওয়াশিংটন। সরকারও ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে।
বিদেশ থেকে বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়ার অন্যতম হলো, তারা বাংলাদেশের নাগরিক কি না, তা যাচাই করা। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত আনার ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াটি মেনে চলা হবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনি প্রচারে অঙ্গীকার করেছিলেন যে, তিনি নির্বাচিত হলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবৈধ বিদেশিদের বিতাড়নের উদ্যোগ নেবেন।
ঢাকা/হাসান/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর মকর ত অব ধ ব
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা
রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।
এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”
আরো পড়ুন:
ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত
ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত
উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”
সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”
এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে।
ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।
ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।
ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।
ঢাকা/ফিরোজ