শুরুটা হয়েছিল ক্যারিবীয়দের দাপটে। গত শতকের সত্তরের দশকে ক্লাইভ লয়েড-ভিভ রিচার্ডসদের ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছিল প্রতিপক্ষের কাছে আতঙ্কের নাম। প্রথম দুই বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর তাদের সেই জয়রথ থামিয়েছিল কপিল দেবের ভারত। সেই থেকেই  ক্রিকেটের জোয়ার লেগেছিল ভারতে। 

ওই প্রজন্মের পর ভারত সেটা ধরেও রাখা পারেনি। বরং অস্ট্রেলিয়ার চ্যাপেল ভাইদের রাজত্ব শুরু হয় তখন; যা কিনা পন্টিং, স্মিথদের হাত ধরে হালের কামিন্সরা ধরে রেখেছেন। মাঝে উত্থান দেখা যায় ইমরান খানের পাকিস্তান আর রানাতুঙ্গাদের শ্রীলঙ্কার। কিন্তু এই শতকের শুরুতে ক্রিকেটের নতুন বিশ্বায়নে আর্থিক ব্যাপারটি ভীষণভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায়।

আইসিসি প্রতি বছর একটি করে টুর্নামেন্ট করার সিদ্বান্ত হলে ওয়ানডে বিশ্বকাপের সঙ্গে যোগ হয় টি২০ বিশ্বকাপ, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি এবং বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। হিসাব বলছে সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত আইসিসির টুর্নামেন্ট হয়েছে ৩৪টি।

যার মধ্যে ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত মাত্র সাতটি, আর তারপর থেকে এখন পর্যন্ত মাঠে গড়িয়েছে ২৭টি। আর আইসিসির এ ট্রফির শোকসে সবচেয়ে সমৃদ্ধ অস্ট্রেলিয়া। সব ফরম্যাট মিলিয়ে তারা জিতেছে মোট ১০টি ট্রফি। তাদের ঠিক পেছনেই রয়েছে ভারত। এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতে তাদের মালিকানা সাতটিতে।

যার মধ্যে গত দেড় বছরে তারা জিতেছে দুটি মযার্দাপূর্ণ ট্রফি। রেকর্ড বলছে মহেন্দ্র সিং ধোনির অধিনায়কত্বে ভারত যেখানে জিতেছিল তিনটি ট্রফি, সেখানে রোহিত শর্মা জিতেছেন দুটি। কিন্তু কপিল দেবের পর ভারতীয় ক্রিকেটের শোকেসে একটা বড় শূন্যতা ছিল। সৈয়দ কিরমানি, রবি শাস্ত্রী, ভেঙ্গসরকার, শ্রীকান্ত, আজহার উদ্দিন, শচীন টেন্ডুলকার– তাদের কারো নেতৃত্বেই ভারত বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ জিততে পারেনি। বদলটা শুরু হয় সৌরভ গাঙ্গুলির হাত ধরে তাঁর সাহসী মানসিকতায়।

২০০২ সালে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যৌথভাবে চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। সৌরভের অধীনে মোট তিনটি আসরের ফাইনালে ওঠে ভারত। ২০০০ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আর ২০০৩ বিশ্বকাপ জিততে পারেননি সৌরভ গাঙ্গুলি। ধোনির ভারত ফাইনালে উঠেছিল চারবার, যার মধ্যে শুধু ২০১৪ টি২০ বিশ্বকাপ হেরেছিলেন। বিরাট কোহলির নেতৃত্বে দুটি আসরের ফাইনালেই হেরে যায় ভারত। 

২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে পাকিস্তানের কাছে আর ২০২১ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে নিউজিল্যান্ডের কাছে। ফাইনালের এই ‘চোক’ চলেছিল রোহিতের সময়েও। ২০২৩ সালেই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ এবং বিশ্বকাপের ফাইনালে হেরে যান রোহিত। অবশেষে কপাল খুলেছে তাঁর গতবছরের টি২০ বিশ্বকাপ আর এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি দিয়ে। সে কারণেই আইসিসির ট্রফির শোকেসে দ্বিতীয়তে এখন ভারত। 

আইসিসি ট্রফির শোকেস:

অস্ট্রেলিয়া ১০টি : ১৯৮৭, ১৯৯৯, ২০০৩, ২০০৭, ২০১৫, ২০২৩ (ওয়ানডে বিশ্বকাপ); ২০২১ (টি২০ বিশ্বকাপ), ২০০৬, ২০০৯ (চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি), ২০২২ (বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ)।

ভারত ৭টি: ১৯৮৩, ২০১১ (ওয়ানডে বিশ্বকাপ), ২০০৭, ২০২৪ (টি২০ বিশ্বকাপ), ২০০২, ২০১৩, ২০২৫ (চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি)।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫টি: ১৯৭৫, ১৯৭৯ (ওয়ানডে বিশ্বকাপ), ২০১২, ২০১৬ (টি২০ বিশ্বকাপ), ২০০৪ (চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি)।

পাকিস্তান ৩টি: ১৯৯২ (ওয়ানডে বিশ্বকাপ), ২০০৯ (টি২০ বিশ্বকাপ), ২০১৭ (চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি)।

ইংল্যান্ড ৩টি : ২০১৯ (ওয়ানডে বিশ্বকাপ), ২০১০, ২০২২ (টি২০ বিশ্বকাপ)।

শ্রীলঙ্কা ৩টি : ১৯৯৬ (ওয়ানডে বিশ্বকাপ), ২০১৪ (টি২০ বিশ্বকাপ), ২০০২ (চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি)।

নিউজিল্যান্ড ২টি : ২০০০ (চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি), ২০২১ (বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ)।

দক্ষিণ আফ্রিকা ১টি :  ১৯৯৮ (চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি)।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আইস স ট স ট চ য ম প য়নশ প আইস স র ফ ইন ল

এছাড়াও পড়ুন:

সামরিক শক্তিতে ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে কে এগিয়ে  

ইসরায়েল শুক্রবার ভোরে ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালায়। এর আগে ২০২৪ সালে ইরান ও ইসরায়েল পরস্পরের বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ২ অক্টোবর ইরান ইসরায়েলের বড় বড় শহরে অন্তত ১৮০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। এর পাল্টা জবাবে ২৫ অক্টোবর ইসরায়েল ইরানে প্রায় ২০টি সামরিক স্থাপনায় হামলা চালায়। তবে শুক্রবার ইসরায়েল যে হামলা চালিয়েছে, তা পরিস্থিতির নাটকীয় অবনতি ঘটিয়েছে। এমন পরিপ্রেক্ষিতে দুই দেশের সামরিক সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

ইরান: যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (আইআইএসএস) ২০২৩ সালের ‘দ্য মিলিটারি ব্যালান্স’ প্রতিবেদন অনুসারে, ইরানের ৬ লাখ ১০ হাজার সক্রিয় সৈন্য রয়েছে। এ ছাড়া  রিজার্ভ বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ৩ লাখ ৫০ হাজার। কিছু ব্যতিক্রম বাদে ১৮ বছরের বেশি বয়সী পুরুষদের বাধ্যতামূলকভাবে সামরিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে হয়। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এসআইপিআরআই) ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ইরান সামরিক খাতে ১০ দশমিক ৩ বিলিয়ন (১ হাজার ৩০ কোটি) ডলার ব্যয় করেছে, যা ২০২২ সালের তুলনায় শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ বেশি।  দ্য মিলিটারি ব্যালান্স ২০২৩ অনুসারে, ইরানের আছে ১০ হাজার ৫১৩টির বেশি যুদ্ধ ট্যাঙ্ক, ৬ হাজার ৭৯৮টি আর্টিলারি গান ও ৬৪০টির বেশি সাঁজোয়া যান। সেনাবাহিনীর আছে ৫০টি হেলিকপ্টার এবং আইআরজিসির আছে ৫টি।

এ ছাড়া ইরানের বিমানবাহিনীর কাছে আছে ৩১২টি যুদ্ধোপযোগী বিমান, আর আইআরজিসির আছে ২৩টি। বিমানবাহিনীর রয়েছে দুটি অ্যাটাক হেলিকপ্টার, সেনাবাহিনীর ৫০টি এবং আইআরজিসির ৫টি। ইরানের নৌবাহিনীর আছে ১৭টি ট্যাকটিক্যাল সাবমেরিন, ৬৮টি উপকূলীয় টহল ও যুদ্ধজাহাজ, ৭টি করভেট, ১২টি ল্যান্ডিং শিপ, ১১টি ল্যান্ডিং ক্র্যাফট ও ১৮টি লজিস্টিক ও সহায়ক জাহাজ। 

ফেব্রুয়ারিতে দেশটি ‘আজারাখশ’ (ফার্সি অর্থ বজ্র) নামের স্বল্পপাল্লার ও নিচু উচ্চতায় আঘাত হানতে সক্ষম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করে। এটি ইনফ্রারেড, রাডার ও ইলেকট্রো-অপটিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত ও ধ্বংস করতে পারে এবং যানবাহনে স্থাপনযোগ্য। ইরানের রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের মিসাইল ডিফেন্স প্রজেক্ট অনুসারে, ইরানের কাছে অন্তত ১২ ধরনের স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। 

ইসরায়েল: আইআইএসএসের ২০২৩ সালের ‘দ্য মিলিটারি ব্যালান্স’ প্রতিবেদন অনুসারে, ইসরায়েলের ১ লাখ ৬৯ হাজার ৫০০ সক্রিয় সৈন্য রয়েছে। তাদের রিজার্ভ বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ৪ লাখ ৬৫ হাজার। ১৮-ঊর্ধ্ব বয়সী অধিকাংশ নারী ও পুরুষের জন্য সামরিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়া বাধ্যতামূলক, তবে নির্দিষ্ট কিছু ছাড় আছে। দ্য মিলিটারি ব্যালান্স ২০২৩ অনুসারে, ইসরায়েল ব্যয় করেছে ২৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন (২ হাজার ৭৫০ কোটি) ডলার, যা ২০২২ সালের তুলনায় ২৪ শতাংশ বেশি। এ খাতে ব্যয় বেড়েছে মূলত ৭ অক্টোবরের পর শুরু করা গাজা যুদ্ধের কারণে। ইসরায়েলের আছে প্রায় ৪০০টি যুদ্ধ ট্যাঙ্ক, ৫৩০টি আর্টিলারি গান ও ১ হাজার ১৯০টির বেশি সাঁজোয়া যান। 

ইসরায়েলের রয়েছে ৩৪৫টি যুদ্ধোপযোগী বিমান ও ৪৩টি অ্যাটাক হেলিকপ্টার। ইসরায়েলের রয়েছে ৫টি সাবমেরিন এবং ৪৯টি উপকূলীয় টহল ও যুদ্ধজাহাজ। দেশটির বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মূল ভিত্তি হলো আয়রন ডোম, যা সম্প্রতি ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বড় অংশ প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এ ব্যবস্থায় একটি রাডার আছে, যা ধেয়ে আসা ক্ষেপণাস্ত্র, এর গতি ও দিক নির্ণয় করে। নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র বিশ্লেষণ করে ক্ষেপণাস্ত্রটি জনবসতিপূর্ণ এলাকায় পড়বে কিনা। ইসরায়েলের আছে অন্তত চার ধরনের স্বল্প, মাঝারি ও মধ্যমপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। এর মধ্যে এলওআরএর পাল্লা ২৮০ কিলোমিটার এবং জেরিকো-৩-এর পাল্লা ৪ হাজার ৮০০ থেকে ৬ হাজার ৫০০ কিলোমিটার।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আর্মস কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুসারে, ইসরায়েলের কাছে প্রায় ৯০টি পারমাণবিক বোমা রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। ইরানের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র নেই বলে মনে করা হয়। তবে তাদের একটি সমৃদ্ধ পারমাণবিক কর্মসূচি রয়েছে এবং দেশটি একাধিক পারমাণবিক স্থাপনা ও গবেষণাকেন্দ্র পরিচালনা করে। খবর- বিবিসি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ১৫ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়ে তিন গুণ
  • বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা টেস্ট পরিসংখ‌্যান
  • শাহরুখের পারিশ্রমিক ৪২৩ কোটি টাকা!
  • অন্য বছরের চেয়ে এই জুনে ডেঙ্গু বেশি
  • ইরানকে পরমাণু জগতে ঠেলে দিয়েছে ইসরায়েলই
  • সামরিক শক্তিতে ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে কে এগিয়ে  
  • বেসরকারি খাত পিপিপিতে আকৃষ্ট নয়, বরাদ্দ ৫ হাজার কোটি টাকা
  • তিন চ্যাম্পিয়ন দলসহ যেসব তারকাকে দেখা যাবে না ক্লাব বিশ্বকাপে
  • চার দেশের পাঁচ লাখ অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়ার নির্দেশ
  • চার দেশের পাঁচ লাখ অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করার নির্দেশ