আমি আলোচনায় বসব না, আপনার যা ইচ্ছা করুন: ট্রাম্পকে ইরানের প্রেসিডেন্ট
Published: 12th, March 2025 GMT
আলোচিত পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি ও চাপের মধ্যে তেহরান কোনো আলোচনায় যাবে না, এমনটাই স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, “আপনার যা খুশি তাই করুন।”
মঙ্গলবার (১১ মার্চ) ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
ইরানের প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান বলেন, “তারা (যুক্তরাষ্ট্র) যেসব হুকুম ও হুমকি দিচ্ছে, তা আমাদের কাছে অগ্রহণযোগ্য। আমি আপনার (ট্রাম্প) সঙ্গে আলোচনাও করব না। আপনি যা খুশি তাই করুন।”
আরো পড়ুন:
রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধবিরতির মার্কিন প্রস্তাবে রাজি ইউক্রেন
যুক্তরাষ্ট্রে মেডিক্যাল হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত, নিহত ৩
এর আগে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি শনিবার বলেন, হুমকি দিয়ে তেহরানকে আলোচনায় বসানো যাবে না। তার এই মন্তব্য আসে একদিন পর, যখন ট্রাম্প জানান, তিনি ইরানকে নতুন পারমাণবিক চুক্তির আলোচনায় বসানোর জন্য একটি চিঠি পাঠিয়েছেন।
তেহরানের সঙ্গে চুক্তির বিষয়টি প্রকাশ করার পাশাপাশি ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি তার প্রথম মেয়াদের মতো এবারও বিশ্ব অর্থনীতি থেকে ইরানকে বিচ্ছিন্ন করতে এবং তেল রপ্তানি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার জন্য ‘সর্বোচ্চ চাপ’ প্রয়োগ করতে চান।
ফক্স বিজনেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প গত সপ্তাহে বলেছিলেন, ‘ইরানকে দুটি উপায়ে মোকাবেলা করা যেতে পারে। সামরিকভাবে, অথবা আপনি একটি চুক্তি করুন যাতে তেহরান পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন থেকে বিরত থাকে।
এদিকে ইরান দীর্ঘদিন ধরেই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির বিষয়টি অস্বীকার করে আসছে। তবে, তারা ‘নাটকীয়ভাবে’ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ৬০ শতাংশ বিশুদ্ধতা পর্যন্ত ত্বরান্বিত করছে, যা প্রায় ৯০ শতাংশ অস্ত্র-গ্রেড স্তরের কাছাকাছি বলে সতর্ক করেছে আইএইএ।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
কাজের আনন্দই জীবনের সার্থকতা
জন্মদিনের অনুষ্ঠান নয়, তবে অনানুষ্ঠানিক আয়োজনটি ছিল সে উপলক্ষেই। আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষাবিদ ও সুবক্তা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের জন্মদিন ছিল গত ২৫ জুলাই। তাঁর অগণিত অনুরাগীরা চেয়েছিলেন তাঁকে নিয়ে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মিলিত হতে। উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের যে হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে গেছে, তারপর আর জন্মদিনের অনুষ্ঠান করতে কিছুতেই সম্মত হননি তিনি।
শুক্রবার সন্ধ্যায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ষষ্ঠতলায় কেন্দ্রের প্রাক্তনী ও তাঁর কিছু ঘনিষ্ঠজন আলাপচারিতার এক ঘরোয়া আয়োজন করেছিলেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে নিয়ে। সেখানে তিনি বললেন, কাজের মধ্য দিয়ে জীবনে যে আনন্দ পেয়েছেন, সেটিই জীবনের সার্থকতা। এই আনন্দই তাঁকে অনুপ্রাণিত করে, শক্তি জোগায়।
এ আয়োজনে অংশগ্রহণকারীরা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেছেন। তিনি তাঁর চিরপরিচিত সরস অথচ বুদ্ধিদীপ্ত গভীর তাৎপর্যময় কথায় উত্তর দিয়েছেন। কবিতা, সাহিত্য, শিল্প থেকে শিক্ষা, ইতিহাস, দর্শন, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, সংগঠন, প্রেম–ভালোবাসা—সবকিছু উঠে আসে প্রশ্নোত্তরভিত্তিক কথোপকথনে। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল থেকে শুরু করে বিশ্বসাহিত্যের বহু কালজয়ী লেখকের রচনা থেকে প্রচুর উদ্ধৃতি দিয়েছেন তিনি। এক অন্তরঙ্গ প্রাণবন্ত আবহ বিরাজমান ছিল সন্ধ্যা থেকে অনেকটা রাত অবধি এই আয়োজনে।
আবৃত্তিশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় শুরুতেই আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের একটি কবিতা আবৃত্তি করে জানতে চান, তিনি কবিতার চর্চা করেননি কেন? জবাবে তিনি বলেন, কবি শামসুর রাহমান একবার তাঁকে বলেছিলেন, তাঁর মধ্যে কবিত্বের ঘাটতি আছে। তাঁর নিজেরও সে রকম মনে হয়েছে। তারপর সাহিত্য পত্রিকা কণ্ঠস্বর প্রকাশ ও অনেক রকম কাজ করতে গিয়ে আর কবিতা লেখা হয়ে ওঠেনি।
অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রশ্ন করেন, এখন একটা কঠিন সময় যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্মকে কীভাবে দেখেন, কী আশা করেন তাদের কাছে?
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘তরুণেরা কী হবে, তা তরুণদের ওপরে নির্ভর করে না। সেটা নির্ভর করে আমরা তাদের কী বানাতে চাই, তার ওপর। দেখতে হবে তরুণদের গড়ার মতো আমাদের ক্ষমতা কতটা আছে। অর্থাৎ শিক্ষক কেমন হবে, তার ওপরে নির্ভর করে তাঁর ছাত্র কেমন হবে। সক্রেটিস শিক্ষক ছিলেন বলে ছাত্র প্লেটো হয়েছেন। প্লেটোর শিক্ষা পেয়ে ছাত্র অ্যারিস্টটল হতে পেরেছেন। বড়দের যদি বড়ত্ব না থাকে, তবে ছোটরা বড় হতে পারে না। দুর্ভাগ্য যে আমরা বড়রা তাদের সামনে আদর্শ দাঁড় করাতে পারিনি। ফলে এখন বড়দেরই ছোটদের পেছনে দাঁড়াতে হচ্ছে।’
ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম জানতে চান, তিনি এত বিচিত্র ধরনের এত বিপুল কাজ করেছেন। এই প্রাণশক্তি পান কেমন করে?
উত্তর দিতে গিয়ে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘শক্তি আসে আনন্দ থেকে। কাজ করতে পারাটাই আনন্দের। আর সব সময় আশাবাদী থাকি। আশা কখনো শেষ হয় না। আশা শেষ মানে আমি শেষ।’
আলাপচারিতায় আরও অংশ নেন দুদক চেয়ারম্যান এম এ মোমেন, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ, চিকিৎসক আমজাদ হোসেন, অভিনয়শিল্পী খায়রুল আলম সবুজ, কথাশিল্পী আনিসুল হক, ছড়াকার আমিরুল ইসলাম, উপস্থাপক আবদুন নূর তুষার, অভিনয়শিল্পী আফসানা মিমি, মশিউর রহমান, আলী নকী প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রাক্তনী খাদিজা রহমান।