পবিত্র রমজান মাসে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বিনামূল্যে ইফতারসামগ্রী বিতরণ করছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্রচেষ্টা ফাউন্ডেশন। রাজধানীর মহাখালী, তেজগাঁও, শিশুমেলা, মিরপুর ও কড়াইল বস্তিতে ডিএনসিসি কর্তৃক ৫টি বুথ স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে প্রতিদিন ভিন্ন রকমের ইফতারি দেওয়া হচ্ছে সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের। এছাড়া প্রচেষ্টার ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে করেও বিভিন্ন জায়গা ঘুরে ঘুরে ইফতারি বিতরণ করা হচ্ছে। এতে বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন। এই কার্যক্রমের জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে বিনামূল্যে রমজান মাসের জন্য মহাখালী কমিউনিটি সেন্টারটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে সকাল থেকে চলে ইফতারি প্রস্তুতের কাজ। এরপর দুপুর থেকে সেগুলো প্যাকেজিংয়ের কাজ শুরু করেন প্রচেষ্টার স্বেচ্ছাসেবকরা। বিকেল গড়াতেই ইফতারের প্যাকেটগুলো নিয়ে বিভিন্ন বুথে পৌঁছে দেন একদল স্বেচ্ছাসেবক। বুথগুলোতে থাকা স্বেচ্ছাসেবকরা সেগুলো গ্রহণ করে বিনামূল্যে পৌঁছে দিচ্ছেন সমাজের হতদরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের হাতে। রিকশাচালক, দিনমজুর, ভিক্ষুকসহ দরিদ্র মানুষেরা নিয়মিত ইফতারি পেয়ে খুশি। 
মাসব্যাপী ইফতারসামগ্রী বিতরণ কর্মসূচিতে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী প্রচেষ্টা ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছেন। এরই মধ্যে প্রায় ১৫ হাজার মানুষকে ইফতার সহায়তা দিয়েছে সংগঠনটি। আলুর চপ, বেগুনি, ফল ও ছোলা, মুড়ি ছাড়াও মুরগির তেহারি, মুরগির খিচুড়ি আর ডিম কিংবা সাদাভাত আর মুরগির মাংস দেওয়া হয় বিভিন্ন দিনে। এই আয়োজন সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রচেষ্টা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ইকরাম উদ্দিন আবির বলেন, ‘পুরো রমজানে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের ইফতারি নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করছি। সামনেও এ ধরনের কার্যক্রম আমরা চালিয়ে যেতে চাই। যেন ঢাকা শুধু নাগরিক ঢাকা নয়, পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য মানবিক ঢাকাও তৈরি করতে পারি।’
এই আয়োজনে অংশগ্রহণ সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রচেষ্টা ফাউন্ডেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক মো.

আতিকুর রহমান আতিক বলেন, ‘আমরা উন্মুক্ত ডোনেশন সংগ্রহ করছি। একজন মানুষের ইফতারের জন্য মাত্র ৯০ টাকা খরচ হয় আমাদের। কেউ চাইলে আমাদের অর্থ সহায়তা দিয়ে অংশগ্রহণ করতে পারেন।’
এই আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত হতে চাইলে  ০১৬৭৫৯১৯৯৫১ অথবা ০১৭৯৭৫৯৯৮৫৬ নম্বরগুলোতে যোগাযোগ করেন। u

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইফত র র জন য ইফত র

এছাড়াও পড়ুন:

জামিন দেওয়াকে কেন্দ্র করে আদালতে হাতাহাতি, স্টেনোগ্রাফার আহত

লক্ষ্মীপুরে আদালতে একটি জামিনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে একজন বিচারকের আদালত বর্জন করেছে আইনজীবীরা। এ সময় আইনজীবীদের সাথে আদালতের কর্মচারীদের হাতাহাতি ও এজলাসে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এতে আহত হন ওই এজলাসের স্টেনোগ্রাফার আশরাফুজ্জামান। 

রবিবার (১৫ জুন) দুপুর ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আদালত বর্জন করায় ভোগান্তিতে পড়েন বিচারপ্রার্থীরা। 

জানা গেছে, রায়পুর প্রিন্সিপাল কাজী ফারুকী স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আহম্মেদ কাউসার উদ্দিন জামান (৩৫) এর বিরুদ্ধে গত ৬ জুন সদর থানায় চুরির মামলা দায়ের করেন তারই প্রতিবেশি জেলা জজ আদালতের আইনজীবী আবু তৈয়ব। মামলায় আরও দুইজনকে আসামি করা হয়। ওই মামলায় আসামি কাউসার ও রুবেল গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন। এরপর গত ১০ জুন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এর বিচারক এম সাইফুল ইসলাম তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। এ নিয়ে তাৎক্ষণিক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দসহ আইনজীবীরা। 

মামলায় অভিযোগ আনা হয়, বাদী এবং আসামিদের মধ্যে পূর্ব বিরোধ রয়েছে। ৫ জুন দিবাগত গভীর রাতে আসামিরা পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে বাদীর ভবনের সামনে থাকা একটি লোহার গেট কেটে নিয়ে এবং গেটের পিলার ভেঙে একটি পিক-আপ গাড়িতে করে রায়পুরের দিকে নিয়ে যায়। রায়পুর বাসাবাড়ি এলাকায় গেলে পিকআপ গাড়িটি টহল পুলিশ আটক করে। পরে গাড়িটি জব্দ ও চালক রুবেলকে আটক করে পুলিশ। মামলায় বাদী আড়াই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।

আদালত সূত্র জানায়, গত ৯ জুন আসামিদের জামিন প্রার্থণা করা হয়। এতে আসামিপক্ষ উল্লেখ করেন, মামলার বাদি আইনজীবী হওয়ায় আদালতে তাদের পক্ষে কোন আইনজীবী জামিন শুনানিতে অংশ নিতে ইচ্ছুক নয়। আসামিরা তাদের পক্ষে আইনজীবী না পেয়ে জামিন শুনানির জন্য লক্ষ্মীপুর লিগ্যাল এইড অফিসে আইনি সহায়তা চান। সেখান থেকে দুইজন আইনজীবীকে শুনানি করতে বলা হলেও তারা অন্য আইজীবীদের দ্বারা হেনস্তার ভয়ে জামিন শুনানিতে অংশ নেননি। অন্যদিকে বাদী পক্ষের আইনজীবী আসামিদের বিরুদ্ধে জামিনের বিরোধিতা করেন। 

আদালত সূত্র আরও জানায়, আসামিরা ৯ জুন জামিনের জন্য আবেদন করলে পরদিন ১০ জুন নথি প্রাপ্ত সাপেক্ষে জামিন শুনানির জন্য রাখা হয় এবং তদন্তকারী কর্মকর্তা ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। 

বিষয়টি নিয়ে আদালতের পর্যালোচনায় উঠে আসে, ঈদুল আজহার বন্ধে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এবং গ্রেপ্তারের পর থেকে আসামিরা জামিনের শুনানির সুযোগ পাননি। চারদিন তাদের হাজতবাস হয়েছে। ৬ জুন আসামি গ্রেপ্তার হলেও বাদী একজন আইনজীবী হওয়ায় আসামিরা জামিন শুনানির জন্য কোন আইনজীবী পাননি এবং লিগ্যাল এইড অফিসের আইনজীবীরাও শুনানিতে অংশ নিতে অনীহার বিষয়টি পরিষ্কার হওয়ায় ১৪ জুন পর্যন্ত ঈদের ছুটিতে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় জামিন অযোগ্য ধারায় গুরুতর অভিযোগ না থাকায় উভয় পক্ষের শুনানি অন্তে উভয় দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হলো। 

আদালত আসামিদের রিমান্ড না মঞ্জুর করে চারদিনের হাজতবাস ও ঈদ বিবেচনা করে আসামি কাউসার ও রুবেলকে ১০০ টাকা বন্ডে একজন গণ্যমান্য ব্যক্তির জিম্মায় জামিন মঞ্জুর করেন। তাদের জামিন হওয়ায় পর থেকেই আইনজীবীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করে। এ ঘটনায় তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে বিচারকের অপসারণের দাবি জানান।

ঈদের বন্ধ শেষে রবিবার (১৫ জুন) আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়। আইনজীবী সমিতি বৈঠক করে ওই আদালতের বিচারক এম সাইফুল ইসলামের আদালতের বর্জনের ঘোষণা দেন। এদিন সকাল থেকে ওই বিচারকের কক্ষে বিচারপ্রার্থীরা এসে উপস্থিত হয়। 

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বিচারপ্রার্থী জানান, আদালতের বিচারক এজলাসে বসা ছিলেন। এ সময় ৭-৮ জন আইনজীবী কক্ষে ঢুকে আদালত বর্জনের ঘোষণা দেন। এতে হট্টগোল দেখা দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিচারক আদালত কর্মচারীদের দরজা বন্ধ করে দিতে বলেন। এ সময় আইনজীবী ও কর্মচারীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। আহত হন এজলাসের স্টেনোগ্রাফার আশরাফুজ্জামান। এতে বিচারকার্য সম্পন্ন না করেই এজলাস থেকে নেমে যান বিচারক। 

আহত আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘‘আইনজীবীরা হট্টগোল করায় বিচারকের নির্দেশে আমি দরজা বন্ধ করতে গেলে আমার ওপর আইনজীবীরা হামলা করে। এতে আমার বাম চোখের পাশে রক্তাক্ত জখম হয়।’’  

উপস্থিত আইনজীবীদের মধ্যে অ্যাডভোকেট আশিকুর রহমান জানান, কয়েকজন আইনজীবী এজলাসে গিয়ে আদালত বর্জনের বিষয়টি জানিয়ে দিতে গিয়েছেন। আদালত কর্মচারীরা উল্টো তাদের ওপর হামলা করেছে। এতে তিনি নিজেও আহত হন।

ঢাকা/লিটন/টিপু 

সম্পর্কিত নিবন্ধ